আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
1,835 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by
পশ্চিম দিকে পা দিয়ে বসা কি হারাম?আমাদের এলাকায় প্রায় সবাই হারাম মনে করেন।এর কারণ কি? জানতে চাই।সায়েখ জাযাকাল্লাহ ।

1 Answer

+1 vote
by (590,550 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

ক্বিবলার দিকে পা রাখা-এ নিয়ে ইদানিংকাল কিছুটা বিতর্ক পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ কেউ ঢালাওভাবে জায়েয বলছেন।আবার কেউ কেউ সম্পূর্ণরূপে হারাম বলছেন। আসলে বিষয়টা কি?মতবেদের মূল কারণ কি? 
আমাদেরকে স্বরণ রাখতে হবে, 
কোনো বিষয় ততক্ষণ পর্যন্ত হারাম সাব্যস্ত হবে না যতক্ষণ না হারাম হওয়ার অকাট্য দলিল পাওয়া যাবে।পশ্চিম দিকে পা রাখা হারাম মর্মে কোরআন-হাদীসে অদ্য কোনো অকাট্য দলিল পাওয়া যাচ্ছে না। যে জন্য পশ্চিম দিকে পা রাখাকে ঢালাও ভাবে হারাম বলা যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদেরকে স্বরণ রাখতে হবে যে, কা'বা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে অন্যতম বিশেষ একটি নিদর্শন। আর আল্লাহ তা'আলা র নিদর্শন সমূহকে সর্বোচ্ছ সম্মান প্রদর্শন করা সমস্ত মানুষের উপর ফরয। 
 আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
 ذَٰلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ [٢٢:٣٢ 
এটা শ্রবণযোগ্য কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তাতো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতি প্রসূত। [সূরা হাজ্জ্ব-৩২] 

সম্মান প্রদর্শন একটা আপেক্ষিক বিষয়; আমরা জানি- এক জায়গায় কোনো একটা কাজকে সম্মান বলা হলেও ভিন্ন জায়গায় ঐ কাজকে অসম্মানের মনে করা হয়। তাই যে সমাজে কোনো কিছুর দিকে পা রাখাকে অসম্মানের মনে করা হয় সে সমাজে অবশ্যই কা'বা অবস্থানের দিকের প্রতি পা রাখা জায়েয হবে না। এমনকি অসম্মানের জন্য যদি কেউ কা'বা র দিকে পা রাখে তাহলে সেটা কুফুরী কাজ হবে। 

 সু-প্রিয় পাঠকবর্গ! 
 উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব যে,পশ্চিম দিকে পা রাখা- জায়েয/নাজায়েয নির্ভর করবে,সম্মান প্রদর্শন হওয়া না হওয়া এর উপর। অসম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নাজায়েয।আর না হলে নাজায়েয হবে না। ফুকাহায়ে কেরামদের নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে বিষয়টা আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, অক্ষম ব্যক্তি নামাযের পদ্ধতি বর্ণনা করতে যেয়ে ফুকাহায়ে কেরামগণ বর্ণনা করেন- যদি কোনো অসুস্থ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বা বসে নামাজ পড়তে না পারেন, তাহলে কিবলা মুখ করে এক পাশে শুয়ে নামাজ আদায় করবে। যদি সেটাও না পারেন তাহলে চিত হয়ে শুয়ে কিবলার দিকে পা দিয়ে নামাজ পড়বে। যদি পশ্চিম দিকে পা রাখা যদি সর্বাবস্থায় হারাম বা নাজায়েজ হতো তাহলে সলাত আদায়ের সময় ও তা হারাম হতো। তবে যেহেতু সম্মান বা অসম্মান প্রদর্শন - একটা লুকায়িত বিষয়টা। সুতরাং কেউ অসম্মান প্রদর্শনের নিয়্যাত ব্যতীত ও যদি পশ্চিম দিকে পা লম্বা করে,অন্যজন অসম্মান মনে করে নিবে,এ জন্য যে,আমাদের সমাজে তা অসম্মান ই ভাবা হয়, তাই ফুকাহায়ে কিরামগণ স্বাভাবিকত তা মাকরুহ বলে থাকেন। 
 যেমন ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত আছে,
 الفتاوى الهندية- ويكره مد الرجلين إلى الكعبة في النوم وغيره عمدا (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الباب الخامس في آداب المسجد والقبلة والمصحف-5/319 
 কাবার দিকে ইচ্ছেকৃত পা লম্বা করা মাকরূহ। ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায়। {৫/৩১৯,} আরো বর্ণিত রয়েছে..... আল মুহিতুল বুরহানী-৮/১০, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৯/১৭৪} 
অনিচ্ছায় হলে সমস্যা নেই।কিন্তু অসম্মান প্রদর্শনের নিয়তে হলে ঈমান চলে যাবার আশংকা থাকবে। ফুকাহায়ে কেরামদের ভাষ্যমতে স্বাভাবিক অবস্থায় পশ্চিম দিকে পা রাখা মাকরুহ। নিম্নোক্ত হাদীস থেকে এর সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে- ইমাম যারকানী মুওয়াত্তা মালিকের ব্যখ্যা গ্রন্থে সহীহ ইবনে খুযাইমা ও সহীহ ইবনে হাব্বানের বরাতে নিম্নোক্ত হাদীসে মারফু উল্লেখ করেন-
 " ﻣﻦ ﺗﻔﻞ ﺗﺠﺎﻩ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﺟﺎﺀ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻭﺗﻔﻠﻪ ﺑﻴﻦ ﻋﻴﻨﻴﻪ " 
 যে ব্যক্তি ক্বিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করবে,কিয়ামতের দিন তাকে এমনভাবে উত্তোলন করা হবে যে,তার থুথু তার দু চক্ষুর মাঝখানে থাকবে।
 ﻭﻻﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ، ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻣﺮﻓﻮﻋﺎ : " ﻳﺒﻌﺚ ﺻﺎﺣﺐ ﺍﻟﻨﺨﺎﻣﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻭﻫﻲ ﻓﻲ ﻭﺟﻬﻪ " 
ইমাম যারকানী রাহ ইবনে হিব্বান এবং আবু দাউদ রাহ এর বরাতে আরেকটি বর্ণনা করেন-
 ﻋﻦﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﺧﻼﺩ : " ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﺃﻡ ﻗﻮﻣﺎ ﻓﺒﺼﻖ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ، ﻓﻠﻤﺎ ﻓﺮﻍ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - : " ﻻ ﻳﺼﻠﻲ ﻟﻜﻢ " ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ، ﻭﻓﻴﻪ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﻟﻪ : " ﺇﻧﻚ ﺁﺫﻳﺖ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ " ﻭﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ، ﻭﻣﺴﻠﻢ ﻋﻦ ﻳﺤﻴﻰ [ ﺹ : 663 ] ﺍﻟﺘﻤﻴﻤﻲ ، ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺑﻪ 
এক সাহাবী নামাযের ইমামতি করার সময় সামন তথা ক্বিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করলেন,যখন তিনি নামায থেকে ফারিগ হলেন তখন তিনি বললেনঃ সে মূলত তোমাদেরকে নিয়ে নামাযই পড়ায়নি।উক্ত হাদীসে আরো বর্ণিত রয়েছে,রাসূলুল্লাহ সাঃ উনাকে বলেন- নিশ্চয় তোমি আল্লাহ এবং তার রাসূলকে কষ্ট দিয়েছ।
 ﺷﺮﺡ ﺍﻟﺰﺭﻗﺎﻧﻲ ﻋﻠﻰ ﻣﻮﻃﺄ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻣﺎﻟﻚ» ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ » ﺑﺎﺏ ﺍﻟﻨﻬﻲ ﻋﻦ ﺍﻟﺒﺼﺎﻕ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ 
 শরহে যারকানী-পৃষ্টা-662

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ! 
অসম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্য পশ্চিম দিকে পা রাখা, থুথু নিক্ষেপ,কোনো কিছু নিক্ষেপ করা কুফুরী। অপারগ অবস্থায় রাখা জায়েয। অনিচ্ছাকৃত হলে জায়েয। ইচ্ছাকৃত তবে অসম্মান প্রদর্শনের নিয়তে নয়,এমন হলে মাকরুহ।কেননা আমাদের সমাজে অসম্মানই গণ্য করা হয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (53 points)
মাশাআল্লাহ, চমৎকার উত্তর।
by
মাশা'আল্লাহ! জাযাকাল্লাহ।  বেশ সুন্দর গোছানো পরিপাটি উত্তর।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...