জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তের বিধান হলো মৃত ব্যাক্তির সন্তান থাকলে তার মা (প্রশ্নে উল্লেখিত দাদী) ৬ ভাগের এক ভাগ সম্পদ পাবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন
ولابويه لكل واحد منهما السدس مما ترك ان كان له ولد
অনুবাদ মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে মৃত ব্যাক্তির মা বাব ৬ ভাগের এক ভাগ সম্পদ পাবে।
★শরীয়তের বিধান হলো মৃত ব্যাক্তির কোনো এক ছেলে জীবিত থাকলে তার নাতী সম্পদ পাবেনা।
হ্যাঁ যদি মৃত ব্যাক্তির ছেলেরা (চাচারা) মৃত ব্যাক্তির নাতীকে নিজ থেকে কিছু অংশ দেয়,তাহলে এটা তার প্রতি কেবল অনুগ্রহ,দান মাত্র,অধিকার নয়।
নতুবা নাতী এক্ষেত্রে কোনো সম্পদেরই হকদার নয়।
এক্ষেত্রে দেশীয় আইন ভিন্নরুপ হতে পারে,তবে শরীয়তের আইন এটাই।
আর যদি মৃত ব্যাক্তির কোনো ছেলেই জীবিত না থাকে,শুধু মেয়ে আর নাতী, তাহলে নাতী সম্পদ পাবে।
বিস্তারিতঃ
উত্তরাধিকার বন্টনের জন্য কুরআন যে মূলনীতি নির্ধারণ করেছে তা এই নয় যে, যারা অভাবগ্রস্ত অথবা সহানুভুতি পাওয়ার যোগ্য তাদেরকে এই সম্পত্তি দেয়া হবে। বরং তা হচ্ছে এই যে, আত্মীয়তার দিক থেকে যে ব্যক্তি মৃতের “নিকটতর” (الاقرب) কেবল তারাই তার উত্তরাধিকারী হবে। নিকটতর আত্মীয়ের বর্তমানে অপেক্ষাকৃত দূর সম্পর্কের আত্মীয় ওয়ারিস হবে না।
للرجال نصيب مما ترك الوالدان و الاقربون و للنساء نصيب مما ترك الوالدان و الاقربون
অর্থাৎ, “মা-বাপ ও নিকটতম আত্মীয়-স্বজনরা যে ধন-সম্পত্তি রেখে গেছে তাতে পুরুষদের অংশ রয়েছে। আর মেয়েদেরও অংশ রয়েছে সেই ধন-সম্পত্তিতে, যা মা-বাপ ও নিকটতম আত্মীয়-স্বজনরা রেখে গেছে।” (নিসা ৭)
কারা কারা মৃত ব্যক্তির নিকটতম তা মানবীয় বুদ্ধি বিবেচনার মাধ্যমে উদ্ঘাটনের জন্য ছেড়ে না দিয়ে কুরআন নিজেই তার ব্যাখ্যা প্রদান করেছে।
এখানেই শেষ নয়; ব্যাখ্যার মাঝখানেই কুরআন পরিস্কার ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছেঃ
لا تدرون ايهم اقرب لكم نفعا فريضة من الله ان الله كان عليما حكيما
অর্থাৎ, “তোমরা জানো না তাদের কে কে উপকারের দিক দিয়ে তোমাদের বেশী নিকটবর্তী। এসব অংশ আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর আল্লাহ অবশ্যী সকল সত্য জানেন এবং সকল কল্যানময় ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন।” (নিসা ১১)
,
মীরাছের বিধান উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন :
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ * وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ
অর্থ : এইসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরন করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত। তারা সেখানে স্থায়ী হবে এবং এটা মহা সাফল্য। আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হবে এবং নির্ধারিত সীমাকে লঙ্ঘন করবে তাকে দোযখে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং সেখানে তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। সূরা নিসা-১৩-১৪
আল্লাহ তাআলা ওয়ারিশদের প্রত্যেকের অংশ নির্ধারন করে দিয়েছেন অতপর সতর্ক করে দিয়েছেন যে, এই বন্টন না মেনে নিজ থেকে করলে আল্লাহর দেওয়া সীমা লঙ্ঘনের ফলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
,
★মৃত ব্যাক্তির ছেলে সন্তান জীবিত থাকলে নাতী কোনো সম্পদ পাবেনা।
দলিলঃ
সহীহ বুখারীতে হযরত যায়েদ বিন সাবেত রা. এর ফাতওয়া উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বলেন-
ولا يرث ولد الابن مع الابن
অর্থ : ছেলে থাকাবস্থায় (মৃত) ছেলের সন্তানাদি কোন মীরাস পাবে না। (সহীহ বুখারী ২/৯৯৭)
* উত্তরাধিকার বন্টনের ক্ষেত্রে নিকটবর্তী দূরবর্তীর উপর প্রাধান্য পাবে। হাদীস শরীফে আছে :
عن ابن عباس رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : الحقوا الفرائض بأهلها، فما بقي فهو لأولى رجل ذكر.
‘‘যাবিল ফুরুযের (কুরআনে যাদের অংশ নির্ধারিত তাদের) অংশ তাদেরকে দিয়ে দাও। এরপর যা অবশিষ্ট থাকবে তা সবচেয়ে নিকটবর্তী পুরুষ আত্মীয় পাবে।’’-সহীহ বুখারী ৬৭৩৫
এই বিধান অনুযায়ী মৃতের সম্পত্তি থেকে সর্বপ্রথম যাবিল ফুরুয অংশ পাবে। এর পর আসাবা। যাবিল ফুরুয এবং আসাবা না থাকলে যাবিল আরহাম অংশ পাবে।
* ‘‘ইজমা’’ শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ অকাট্য দলীল।
ছেলের বর্তমানে নাতী, নাতনীর মীরাস না পাওয়া সাহাবায়ে কেরামের ইজমা এবং এর পরবর্তী সকল আহলে ইলমের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত।
أجمع أهل العلم على أن بني الابن وبنات الابن لا يرثون مع بني الصلب شيئًا.
সকল আহলে ইলম এর ইজমা যে, ছেলের ছেলে-মেয়ে মৃতের ছেলে থাকাবস্থায় কোন উত্তরাধিকার পাবে না।-আলআওসাত ৭/৩৮৩
* মুআত্তা মালেকেও ইজমার কথা উল্লেখ হয়েছে।
قال مالك : الأمر المجتمع عليه عندنا والذي أدركت عليه أهل العلم ببلدنا في فرائض الميراث ... فإن اجتمع الولد للصلب وولد الابن فكان في الولد للصلب ذكر فإنه لا ميراث معه لأحد من ولد الابن.
ইমাম মালেক রহ. বলেন, আমাদের নিকট এবং আমাদের শহর মদীনাতে সকল আহলে ইলমকে যে সব বিষয়ে একমত পেয়েছি তা হল, যদি (মৃতের) ছেলে এবং ছেলের সন্তান নাতী থাকলে ছেলের বর্তমানে নাতীরা কেউ মীরাস পাবে না।-মুআত্তা মালেক পৃষ্ঠা : ৩২৩
,
★যদি মৃত ব্যাক্তির কোনো ছেলেই জীবিত না থাকে,শুধু মেয়ে আর নাতী, তাহলে নাতী সম্পদ পাবে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عن عبد الله قال : قضى رسول الله صلى الله عليه وسلم في ابنة وابنة الابن وأخت، أعطى البنت النصف، وابنة الابن السدس تكملة الثلثين وللأخت ما بقي.
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক কন্যা, এক নাতনী ও এক বোনের উত্তরাধিকার বিষয়ে ফয়সালা দিয়েছেন যে, মেয়ে অর্ধেক, নাতনী এক ষষ্ঠাংশ যেন এই দুই অংশ নিয়ে দৃই তৃতীয়াংশ পূর্ণ হয়ে যায়। আর বোন অবশিষ্টাংশ (এক-তৃতীয়াংশ) পাবে।- সহীহ বুখারী ৬৭৪২, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৩১৭২৫, সহীহ ইবনে হিববান ৫/৪৫৩ (৬০৪৩), আলমুজামুল কাবীর তাবারানী ৯৮৬৯, আলআওসাত, হাদীস : ৬৮৪৮, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ১৯০৩২
,
(০২) যেহেতু পিতা মারা গেছে দাদি জীবিত আছে, এখন দাদি মারা গেলে পিতা যে পরিমান সম্পদ পেত,আপনি সেই পরিমান সম্পদ পাবেননা।
কারন আপনার চাচা জীবিত আছে।
(০৩) চাচা ও ফুফু যদি দাদির মৃত্যুর পর আমাকে সম্পদ দিতে রাজি না হয় তবে আমি কি আইনে আশ্রয় নিলে তা জায়েয হবেনা।
والقربى من اى جهة كانت تحجب البعدى من اى جهة كانت (السراجى فى الميراث-30)
নিকটস্থ আত্মীয় থাকা অবস্থায় দূরবর্তী আত্মীয় কিছু পায় না।
তারা মাহরুম হয়।