দুনিয়াতে আগমন না করে কিয়ামতের ময়দানে শরীরে রুহ প্রদান করে হিসাব নিকাশ ইত্যাদি হলে সেটিকে পরিভাষায় পুনর্জন্ম বলেনা।
★পুনর্জন্ম বা জন্মান্তরবাদ বলতে জীবের মৃত্যুর পর পুনরায় কোনো দেহে জন্ম হওয়াকে বোঝায়। এটি একটি ধর্মীয় মতবাদ যা প্রধাণত হিন্দুধর্ম, জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম, শিখধর্ম সহ রসিক্রুশিয়ান, থিওসফিস্ট, স্পিরিটিস্টগণ এবং উইক্কানদের বিশ্বাস ব্যবস্থায় প্রচলিত।
তাদের ধারণামতে, মানুষ পৃথিবীতে সৎ কর্মশীল হলে মৃত্যুর পর তারা সৎ মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে পুনর্জন্ম লাভ করে ফিরে আসে। আর অসৎ মানুষ কুকুর, বিড়াল, শূকর ইত্যাদি বিভিন্ন পশু ও কীটপতঙ্গের সুরতে পুনর্জন্ম লাভ করে। কারো কারো মতে, অসৎ মানুষ পৃথিবীতে অন্ধ, বধির, খোঁড়া হিসেবে পুনর্জন্ম লাভ করে। এসব তাদের পাপের প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ।
কোনো মানুষ মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম লাভ করে পুনরায় দুনিয়ায় আগমন করতে পারে না।
কেননা মৃত্যুর পর ইমানদার সত্কর্মশীল মানুষের রুহ ‘ইল্লিয়্যিন’ নামক জায়গায় অবস্থান করে বলে কোরআনে কারিমে রয়েছে। তাতে তারা কিয়ামত পর্যন্ত পরম শান্তিতে অবস্থান করবে। হাশরের দিন বিচারকার্য শেষে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর অবিশ্বাসী ও পাপী লোকদের রুহ ‘সিজ্জিন’ নামক জায়গায় অবস্থান করে। এটি একটি বন্দিখানা, এতে তারা হাশরের মাঠে বিচারকার্য শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত অশান্তি ভোগ করতে থাকবে। বিচারকার্য শেষে তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সারমর্মঃ সুরা মুতাফিফফীন : ৭-১৮)
এরূপ কোনো কোনো হাদিসমতে শহীদদের রুহ সবুজ পাখির সুরতে আল্লাহর আরশের নিচে উড়তে থাকবে। ছোট শিশুদের রুহও মৃত্যুর পর ঊর্ধ্বাকাশের কোনো আনন্দময় জায়গায় বিচরণ করবে। হাশরের দিবসে সবার দুনিয়াবি শরীরের সঙ্গে রুহ একত্রিত হয়ে পুনরুত্থিত হবে।
★কোনো মানুষের পক্ষে মৃত্যুর পর পুনরায় দুনিয়াতে আগমন সম্ভব নয়। এ ছাড়া কোরআন-হাদিসের অসংখ্য বর্ণনায় তা-ই প্রমাণিত, সে অনুসারে মৃত্যুর পর কেবল আলমে বরজখ, হাশর ও জান্নাত-জাহান্নাম। পেছনে আসার কোনো সুযোগ নেই।
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে,
حَتّٰۤی اِذَا جَآءَ اَحَدَہُمُ الۡمَوۡتُ قَالَ رَبِّ ارۡجِعُوۡنِ ﴿ۙ۹۹﴾ لَعَلِّیۡۤ اَعۡمَلُ صَالِحًا فِیۡمَا تَرَکۡتُ کَلَّا ؕ اِنَّہَا کَلِمَۃٌ ہُوَ قَآئِلُہَا ؕ وَ مِنۡ وَّرَآئِہِمۡ بَرۡزَخٌ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ ﴿۱۰۰﴾ فَاِذَا نُفِخَ فِی الصُّوۡرِ فَلَاۤ اَنۡسَابَ بَیۡنَہُمۡ یَوۡمَئِذٍ وَّ لَا یَتَسَآءَلُوۡنَ ﴿۱۰۱﴾ فَمَنۡ ثَقُلَتۡ مَوَازِیۡنُہٗ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۰۲﴾ وَ مَنۡ خَفَّتۡ مَوَازِیۡنُہٗ فَاُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ خَسِرُوۡۤا اَنۡفُسَہُمۡ فِیۡ جَہَنَّمَ خٰلِدُوۡنَ ﴿۱۰۳﴾ۚ
“অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু আসে, সে বলে, ‘হে আমার রব, আমাকে ফেরত পাঠান, যেন আমি সত্কর্ম করতে পারি, যা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম।’ কখনো নয়, এটি একটি বাক্য যা সে বলবে। যেদিন তাদের পুনরুত্থিত করা হবে সেদিন পর্যন্ত তাদের সামনে থাকবে বরজখ। অতঃপর যেদিন শিঙায় ফুঁক দেওয়া হবে, সেদিন তাদের মধ্যে কোনো আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না, কেউ কারো বিষয়ে জানতে চাইবে না। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম। আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজদের ক্ষতি করল, জাহান্নামে তারা হবে স্থায়ী।” (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৯৯-১০৩)
حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ، يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ إِسْحَاقَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا قُبِرَ الْمَيِّتُ - أَوْ قَالَ أَحَدُكُمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ أَسْوَدَانِ أَزْرَقَانِ يُقَالُ لأَحَدِهِمَا الْمُنْكَرُ وَالآخَرُ النَّكِيرُ فَيَقُولاَنِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ فَيَقُولُ مَا كَانَ يَقُولُ هُوَ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ . فَيَقُولاَنِ قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ هَذَا . ثُمَّ يُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ سَبْعُونَ ذِرَاعًا فِي سَبْعِينَ ثُمَّ يُنَوَّرُ لَهُ فِيهِ ثُمَّ يُقَالُ لَهُ نَمْ . فَيَقُولُ أَرْجِعُ إِلَى أَهْلِي فَأُخْبِرُهُمْ فَيَقُولاَنِ نَمْ كَنَوْمَةِ الْعَرُوسِ الَّذِي لاَ يُوقِظُهُ إِلاَّ أَحَبُّ أَهْلِهِ إِلَيْهِ . حَتَّى يَبْعَثَهُ اللَّهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ . وَإِنْ كَانَ مُنَافِقًا قَالَ سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُولُونَ فَقُلْتُ مِثْلَهُ لاَ أَدْرِي . فَيَقُولاَنِ قَدْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُولُ ذَلِكَ . فَيُقَالُ لِلأَرْضِ الْتَئِمِي عَلَيْهِ . فَتَلْتَئِمُ عَلَيْهِ . فَتَخْتَلِفُ فِيهَا أَضْلاَعُهُ فَلاَ يَزَالُ فِيهَا مُعَذَّبًا حَتَّى يَبْعَثَهُ اللَّهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ "
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মৃত লোককে বা তোমাদের কাউকে যখন কবরের মধ্যে রাখা হয় তখন কালো বর্ণের এবং নীল চোখ বিশিষ্ট দু'জন ফেরেশতা আসেন তার নিকট। তাদের মধ্যে একজনকে মুনকার এবং অন্যজনকে নাকীর বলা হয়। তারা উভয়ে (মৃত ব্যক্তিকে) প্রশ্ন করেনঃ তুমি এ ব্যক্তির (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) প্রসঙ্গে কি বলতে? মৃত ব্যক্তিটি (যদি মুমিন হয় তাহলে) পূর্বে যা বলত তাই বলবেঃ তিনি আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত আর কোন মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসূল।
তারা উভয়ে তখন বলবেন, আমরা তো জানতাম তুমি একথাই বলবে। তারপর সে ব্যক্তির কবর দৈর্ঘ্য-প্রস্থে সত্তর গজ করে প্রশস্ত করা হবে এবং তার জন্য এখানে আলোর ব্যবস্থা করা হবে। তারপর সে লোককে বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাক। তখন সে বলবে, আমার পরিবার-পরিজনকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আমি তাদের নিকট ফিরে যেতে চাই। তারা উভয়ে বলবেন, বাসর ঘরের বরের মত তুমি এখানে এমন গভীর ঘুম দাও, যাকে তার পরিবারের সবচাইতে প্রিয়জন ব্যাতিত আর কোন ব্যাক্তি জাগিয়ে তুলতে পারে না।
অবশেষে আল্লাহ তা'আলা কিয়ামাতের দিন তাকে তার বিছানা হতে জাগিয়ে তুলবেন। মৃত লোকটি যদি মুনাফিক হয় তাহলে (প্রশ্নের উত্তরে) বলবে, তার প্রসঙ্গে লোকেরা একটা কথা বলত আমিও তাই বলতাম। এর বেশি কিছুই আমি জানি না। ফেরেশতা দু'জন তখন বলবেন, আমরা জানতাম, এ কথাই তুমি বলবে। তারপর যমীনকে বলা হবে, একে চাপ দাও। সে লোককে এমন শক্ত করে যমীন চাপা দেবে যে, তার পাজরের হাড়গুলো পরস্পরের মাঝে ঢুকে পরবে। (কিয়ামাতের দিন) আল্লাহ তাকে তার এ বিছানা হতে উঠানো পর্যন্ত সে লোক এভাবেই আযাব পেতে থাকবে।
(হাসান,তিরমিজি ১০৭১ মিশকাত (১৩০), সহীহাহ (১৩৯১)
আল্লাহ তাআ'লা কিয়ামত এর দিন সবাই কে আবার জীবিত করবেন এটাকে পরিভাষায় পুনর্জন্ম বলা হয়না।
কেননা এখানে কুফরি আকীদা বলতে মানুষ মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম লাভ করে পুনরায় দুনিয়ায় আগমন করাকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে।