উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(১.২.৩)
বড় পুকুর যার একদিকে পানি নাড়া দিলে অন্যদিকে নড়ে না—এ ধরনের পুকুরে বা খালে যদি পর্যাপ্ত পানি থাকে এবং পুকুরে বিল্ডিংয়ের পয়নিষ্কাশনের পানি গিয়ে পড়া,পানির রং সবুজ বা কালো হওয়ার পরেও পানির তারল্য বহাল থাকে তাহলে যেকোনো কারণে পানির রং ও গন্ধ পরিবর্তন হয়ে গেলেও তা দ্বারা অযু-গোসল করা সহীহ হবে।
ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৭; ফাতহুল কাদীর ১/৬৫; হালবাতুল মুজাল্লী ১/২৭৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৪১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৭৭; রদ্দুল মুহতার ১/১৮১
,
বড় পুকুর যার একদিকে পানি নাড়া দিলে অন্যদিকে নড়ে না—এ ধরনের পুকুরের একদিকে নাপাকি পড়লে অন্যদিক দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করা জায়েজ। (হিদায়া : ১/৩৬)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، وَالْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ الأَنْبَارِيُّ، قَالُوا حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ، عَنِ الْوَلِيدِ بْنِ كَثِيرٍ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّهُ قِيلَ لِرَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم أَنَتَوَضَّأُ مِنْ بِئْرِ بُضَاعَةَ وَهِيَ بِئْرٌ يُطْرَحُ فِيهَا الْحِيَضُ وَلَحْمُ الْكِلَابِ وَالنَّتْنُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " الْمَاءُ طَهُورٌ لَا يُنَجِّسُهُ شَىْءٌ "
আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আমরা কি (মদীনার) ‘বুযাআহ’ নামক কূপের পানি দিয়ে অযু করতে পারি? কূপটির মধ্যে মেয়েলোকের হায়িযের নেকড়া, কুকুরের গোশত ও যাবতীয় দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস নিক্ষেপ করা হত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ পানি পবিত্র, কোন কিছু একে অপবিত্র করতে পারে না।
(তিরমিযী (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ পানিকে কোনো জিনিস অপবিত্র করতে পারে না, হাঃ ৬৬, ইমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদীসটি হাসান), নাসায়ী (অধ্যায়ঃ পানি, অনুঃ বুদ‘আহ কূপের বর্ণনা, হাঃ ৩২৫), আবু দাউদ ৬৬. আহমাদ (৩/১৫, ১৬, ৩১, ৮৬), দারাকুতনী (১/৩০-৩১)
সুতরাং উল্লেখিত ছুরতে আপনাদের পুকুর যদি বড় পুকুর হয় (যার একদিকে পানি নাড়া দিলে অন্যদিকে নড়ে না) তাহলে সেই পুকুরের পানির তারল্যতা থাকলে সেখান থেকে অযু গোসল করা যাবে।
কোনো সমস্যা নেই।
(০৪)
প্রশ্নের উত্তরের আগে কিছু মাসয়ালা লক্ষ্য করুনঃ
★ইসলামি শরীয়াহ মতে মেঝেতে কোন নাপাকি পড়লে তা সরিয়ে মেঝে মুছে ফেলতে হবে। তারপর তা শুকিয়ে গেলে ও নাপাকির প্রভাব নিঃশ্চিহ্ন হয়ে গেলে সেই মেঝে নাপাকি থেকে পাক হয়ে যাবে। তারপর খালি পায়ে বা ভেজা পায়ে ঐ জায়গায় চলাচলে কোন অসুবিধা নেই।
মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা ১/৪৩১; ইলাউস সুনান ১/৩৯৬; নাসবুর রায়া ১/২৭৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪২
,
★পাকা ঘরের মেঝের নাপাক স্থানটুকু শুকনা বা ভেজা কাপড় দ্বারা মুছে দেয়ার পর যদি বাতাসে বা রোদে শুকিয়ে নাপাকীর চিহ্ন দূর হয়ে যায়, তাহলে ঐ স্থানটুকু পাক হয়ে যাবে । তবে নাপাকীর সামান্য চিহ্ন থাকলেও তা পাক হবে না । এজন্যে প্রথমে প্রস্রাবটুকু মুছে নিয়ে একটি পাক কাপড় ভিজিয়ে উক্ত জায়গাটা প্রাথমিকভাবে ২/৩ বার মুছে নিবে, যাতে শুকিয়ে যাওয়ার পর প্রস্রাবের দু্র্গন্ধ বা চিহ্ন না থাকে।
[প্রমাণঃ আবু দাউদ শরীফ, ১ : ৫৫ # ফাতাওয়া হিন্দিয়া, ১ : ৪৪, আহসানুল ফাতাওয়া, ২ : ৯২]
★পাকা মেঝে বা ফ্লোর নাপাক হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে তা পাক করার সহজ পদ্ধতি হল, নাপাক জায়গায় পানি ঢেলে ভালভাবে ঝাড়ু দিয়ে ধুয়ে দিবে এভাবে তিনবার ধুয়ে নিলে জায়গাটা পাক হয়ে যাবে । আর যদি পানি গড়িয়ে বের করার ব্যবস্থা না থাকে , তাহলে প্রথমে একটি শুকনো বা ভেজা কাপড় দিয়ে প্রস্রাবটুকু মুছে দিবে । অতঃপর কাপড়টি ভাল করে ধুয়ে নাপাক জায়গাটা আবার মুছে দিবে । এক্ষেত্রে প্রতি বারই নতুন পানি ব্যবহার করবে । এভাবে তিনবার পাক কাপড় দিয়ে মুছে শুকিয়ে নিলে জায়গাটা পাক হয়ে যাবে । উল্লেখ্য যে, নিচতলা এবং উপরতলার হুকুমের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ।
[প্রমাণঃ রদ্দুল মুহতার, ১ ৩১৩ # ফাতাওয়া আলমগীরী, ১ : ৪৩ # হিন্দিয়া, ১ : ৪৩-৪৪]
★উল্লেখিত নিয়মাবলীর কোন এক নিয়মে নাপাক জায়গা পাক হয়ে যাওয়ার পর সেখানে ভিজা পায়ে হাঁটলে পা নাপাক হবে না । আর যদি উক্ত জায়গাটি উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে পাক না করা হয়ে থাকে, তাহলে সেখানে খালি পায়ে হাঁটলে নাপাক হয়ে যাবে । সেক্ষেত্রে নামায পড়তে হলে, পা দ্বিতীয়বার ধুয়ে নিতে হবে ।
قال في الشامي: ولو اريد تطهيرها عاجلا يصب عليها الماء ثلاث مرات وتجفف في كل مرة بخرقة طاهر- [الشامي 1/311]
[প্রমাণঃ হালবী কাবীর, ১৫৬ # আদ-দুররুল মুখতার, ১ : ৩১১ # খাইরুল ফাতাওয়া, ২ : ১৫০ # ফাতাওয়া দারুল উলূম, ১ : ৩৩২]
,
★মাটিতে পেশাব পড়ার পর তা শুকিয়ে গেলে এবং নাপাকির চিহ্ন তথা রং গন্ধ দূর হয়ে গেলেই উক্ত জমীন পাক হয়ে যায়। এছাড়া নাপাকী দ্বারা ভেজা জমীন বেশি পরিমাণ মাটি দ্বারা লেপে দিলেও তা পাক হয়ে যাবে।
-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৬২৯; শরহুল মুনয়া পৃ. ১৮৭; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ১/৪৯; ফাতহুল কাদীর ১/১৭৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২২৬।
,
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
মেঝেতে বা দেয়ালে প্রস্রাব থাকলে,পানি ঢালা জরুরী নয়।বরং উক্ত মেঝে বা দেয়াল শুকিয়ে গেলেই পবিত্র হয়ে যাবে।
এই অবস্থায় শুকানোর পর ভেজা পা দিয়ে তার উপর চলা ফেরা করলে পা নাপাক হয়ে যাবেনা।
হ্যাঁ যদি নাপাকির গন্ধ বা কোনো চিন্হ পায়ে প্রকাশ পায় তাহলে পা নাপাক হয়ে যাবে।
শুধু পা ধৌত করতে হবে।
,
যদি আপনার ঘরের মেঝে মাটির হয়,তাহলে পেশাব শুকানোর সাথে সাথে যদি নাপাকির চিহ্ন তথা রং গন্ধ দূর হয়ে যায়,তাহলে তা পাক হয়ে যাবে,সেখানে ভেজা পা নিয়ে গেলেও পা নাপাক হবেনা।