আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
578 views
in সালাত(Prayer) by (11 points)
edited by
দেরি করে নামাজ পড়া সবচেয়ে বড় গুনাহ,? "এটি কতটা হাদিস সম্মত। আযানের অনেকক্ষণ আগেই নামাজের সময় হয়ে যায়, মহিলারা ইচ্ছে করে, অথবা কোন কাজের জন্য (যেহেতু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ নামাজ)আজানের পরে নামাজ পড়লে কোন অসুবিধা আছে কি? এতে কি নামাজের প্রতি অবহেলা প্রকাশ পায়?

Google গুগল থেকে নামাজের সময় সূচির জানা ও তার উপর আমল করা কতটা শরীয়ত সম্মত।

1 Answer

0 votes
by (675,600 points)
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم 

দেড়িতে নামাজ পড়া জায়েয আছে,তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে কোনোভাবেই যেনো ওয়াক্ত শেষ না হয়ে যায়। 
যেহেতু দেড়ি করলে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার প্রবল আশংকা থাকে,তাই শরীয়ত দেড়ি না করার আদেশ করেছেন।
তবে ওয়াক্তের মধ্যে নামাজ পড়লে নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
কোনো সমস্যা নেই। 

  আল্লাহ তায়ালা বলেন 
      إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا [٤:١٠٣
নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। {সূরা নিসা-১০৩}
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ  
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ بْنُ فُضَيْل عَنِ الْأَعْمَشِ عَنْ أَبِيْ صَالِحٍ عِنْ أِبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ الله صلى الله عليه و سلم إِنَّ لِلصَّلَاةِ أَوَّلًا وَآخِرًا وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ صَلَاةِ الظُّهْرِ حِيْنَ تَزُوْلُ الشَّمْسُ وَآخِرَ وَقْتِهَا حِيْنَ يَدْخُلُ وَقْتُ الْعَصْرِ وَإِنَّ أَوَّلَ صَلَاةِ الْعَصْرِ حِيْنَ يَدْخُلُ وَقْتُهَا وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِيْنَ تَصْفَرُّ الشَّمْسُ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْمَغْرِبِ حِيْنَ تَغْرُبُ الشَّمْسُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِيْن يَغِيْبُ الْأُفُقُ وَإِنَّ أَوَّل وَقْتِ الْعِشَاءِ الْآخِرَةِ حِيْنَ يَغِيْبُ الْأُفُقُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِيْنَ يَنْتَصِفُ اللَّيْلُ وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْفَجْرِ حِيْنَ يَطْلُعُ الْفَجْرُ وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِيْنَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়, সালাতের রয়েছে প্রথম ও শেষ ওয়াক্ত। এবং নিশ্চয়, যোহরের আউয়াল ওয়াক্ত হল ‘যখন সূর্য ঢলে যায় এবং তার আখের ওয়াক্ত হল’ যখন আসরের ওয়াক্ত চলে আসে। আর আসরের আউয়াল ওয়াক্ত হল, যখন তার ওয়াক্ত আসে আর তার আখের ওয়াক্ত হল, যখন সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এবং মাগরিবের আউয়াল ওয়াক্ত হল, যখন সূর্য ডুবে যায় এবং তার আখের ওয়াক্ত হল যখন আকাশের প্রান্ত অদৃশ্য হয়ে যায়। এবং এশার আউয়াল ওয়াক্ত যখন আকাশের প্রান্ত অদৃশ্য হয়ে যায় এবং তার আখের ওয়াক্ত হল যখন মধ্যরাত হয়। আর ফজরের আউয়াল ওয়াক্ত যখন ফজর উদিত হয় আর তার আখের ওয়াক্ত যখন সূর্য উদিত হয়।

(জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫১ । মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭১৭২। মুসনাদে বায্যার, হাদীস ৯২১০)
,

★★আযান হচ্ছে নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশের ঘোষক।কিন্তু যেহেতু আযানের পরপরই নামায শুরু করাটা সুবিধাজনক। তাই ওয়াক্ত প্রবেশের সাথে সাথেই আযান না দিয়ে বরং হাদীসে বর্ণিত মুস্তাহাব ওয়াক্তের কিছু পূর্বে আযান দেয়া হয়ে থাকে।

সুতরাং প্রত্যেক নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেলে আযান হোক বা নাই হোক, শোনা যাক বা নাই যাক।
নামায পড়ে নিলে নামায আদায় হয়ে যাবে।
তবে প্রত্যেক নামাযের মুস্তাহাব ওয়াক্তেই নামায পড়া উত্তম।


★ফজরের নামায একটু ফর্সা করে পড়া উত্তম। এতটুকু সময় হাতে নিয়ে পড়া উচিত যে, মাসনূন কিরাত অনুপাতে সালাত শেষ করার পরও এতটুকু সময় বাকি থাকে যে, যদি কোন কারণে নামায না হয়ে থাকে, তাহলে সূর্য উদয়ের আগেই যেন আবার পড়া যায়।

হাদীসের মাঝে ফর্সা করে ফজরের নামায পড়া বিষয়ে অধিক সওয়াবের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।

عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَسْفِرُوا بِالفَجْرِ، فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلأَجْرِ»

হযরত রাফে বিন খাদীয রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমি শুনেছি যে, তোমরা ফজরের নামায ফর্সা করে পড়, কেননা এর সওয়াব অনেক বেশি। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৫৪] 
হাদীসটি সহীহ।
,
★জোহরের নামাজ গরমকালে একটু দেড়িতে পড়াই উত্তম। 
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন
ابردوا بالظهر
জোহর নামাজ একটু ঠান্ডা করেই পড়।
,
★আছরের নামাজও একটু দেড়িতে পড়াই উত্তম।        
★মাগরিবের আজানের পর বেশি দেরী না করে দ্রুত নামায পড়ে নেয়াই সুন্নাহ সম্মত আমল।

বাকি যদি মুসল্লিদের আস্তে দেরী হয়, তাহলে কিছুটা দেরী করা যায়। বাকি দ্রুত নামায শুরু করাই উত্তম।

হযরত সালামা রাঃ বলেন,
كنا نصلى مع النبى صلى الله عليه وسلم المغرب اذا توارت بالحجاب (صحيح البخارى)
সূর্য অস্ত যাবার সাথে সাথেই আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মাগরিবের নামায আদায় করতাম। [বুখারী-১/৭৯] 
,
★ইশার নামাযের সময় পশ্চিমাকাশের লালিমা দূরিভূত হয়ে যে সাদা আভা দেখা দেয় তা দূরিভূত হবার পর থেকে নিয়ে রাতের তিন ভাগের এক ভাগের মাঝে পড়া মুস্তাহাব।

তিনভাগ অতিক্রান্ত হবার পর থেকে নিয়ে অর্ধেক রাত পর্যন্ত পড়া জায়েজ। এতে কোন কারাহাত নেই।
আর অর্ধেক রাত থেকে নিয়ে সুবহে সাদিক পর্যন্ত পড়া মাকরূহের সাথে জায়েজ। অর্থাৎ নামায আদায় হয়ে যাবে। বাকি বিলম্ব করার কারণে মাকরূহ হবে। {হেদায়া-১/৫০-৫১, শরহে নুকায়া-১/৫৩-৫৫, কাবীরী-২২৯-২৩৫. তামহীদ-৮/৯২}

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-
وَإِنَّ أَوَّلَ وَقْتِ الْعِشَاءِ الْآخِرَةِ حِينَ يَغِيبُ الْأُفُقُ، وَإِنَّ آخِرَ وَقْتِهَا حِينَ يَنْتَصِفُ اللَّيْلُ،

নিশ্চয় ইশার নামাযের সময় শুরু হয় পশ্চিমাকাশের শাদা আভা দূরিভূত হওয়া থেকে। আর শেষ সময় হল অর্ধেক রাত অতিক্রান্ত হলে। [মানে এটি মাকরূহ ছাড়া মুবাহ সময়, এরপরও সময় থাকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত, কিন্তু সেটি মাকরূহ ওয়াক্ত, তাই সময় শুধু অর্ধেক রাত পর্যন্ত বলা হয়েছে] {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৭১৭২, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৫১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৯৪১}

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لأَمَرْتُهُمْ أَنْ يُؤَخِّرُوا العِشَاءَ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ أَوْ نِصْفِهِ.

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, উম্মতের কষ্ট হওয়ার ভয় যদি আমার না হত তাহলে আমি তাদেরকে আদেশ করতাম, তারা যেন ইশার নামায রাতের এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক পর্যন্ত বিলম্বিত করে। {সুনানে তিরমিজী-১/২৩, হাদীস নং-১৬৭}

عَنْ عُبَيْدِ بْنِ جُرَيْجٍ , أَنَّهُ قَالَ لِأَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: مَا إِفْرَاطُ صَلَاةِ الْعِشَاءِ؟ قَالَ: «طُلُوعُ الْفَجْرِ»

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল, ইশার নামাযের সময় কখন শেষ হয়? তখন তিনি বলেন, ফজরের সময় হলে। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৯৫৯, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৭৬২}
,

নামাজের ওয়াক্ত নির্ণয় করা অনেক সময়েই আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে কঠিন।
বিশেষ করে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত নির্ধারন।
বিষয়টি একটু জটিল। সুবহে সাদিক, সুবহে কাযিব নির্ণয় করার ক্ষমতা সবার নেই। পশ্চিমাকাশে লম্বা সাদা আভা দেখা দেয়া হল সুবহে কাযিব। এর কিছুক্ষণ আড়াআড়িভাবে বড় আকারে সাদা আভা প্রকাশিত হওয়া হল সুবহে সাদিক। যার পর ধীরে ধীরে আলো ফুটতে থাকে।

এ বিষয়টি একটু সুক্ষ্ম বিষয়। সবার চোখে এ পার্থক্য সহজে প্রতিভাত হওয়া আসলে সম্ভব নয়।

তাই  নামাজের ওয়াক্তের ক্ষেত্রে আবহাওয়াবীদদের গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের উপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গবেষকগণ এ বিষয়ে গবেষণা করে প্রতি বছরই পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের টাইম নির্দিষ্ট করে থাকেন। সেই সাথে সুবহে সাদিক তথা কখন ফজর শুরু হয়, কখন সূর্য উঠে এবং সূর্য অস্ত যায়, তা নির্ণিত করে থাকেন।

যেহেতু বিষয়টি জ্যোর্তিবিদ্যা, মহাকাশ ও আবহাওয়া বিষয়ক। তাই এসব বিশেষজ্ঞদের মতামত আমরা সাধারণত মেনে চলছি।

সেই হিসেবেই ফাউন্ডেশন কর্তৃক সময় নির্ধারণী ক্যালেন্ডার অনুপাতেই আমভাবে আমল করা হয় পুরো বাংলাদেশে। কিছু কিছু ব্যক্তি ছাড়া।

তাই  ক্যালেন্ডারের সময়সূচি অনুপাতে নামায পড়তে পারেন। সতর্কতা স্বরূপ একটু পরে পড়াই উত্তম বলে মনে হয়।
,
★★উল্লেখ্য যে গুগলের থেকে নামাজের যেই সূচি পাওয়া যায়,এটা আমাদের পাওয়া তথ্য মতে ইসলামী ফাউন্ডেশন এর ক্যালেন্ডার। 
তাই এই অনুযায়ী নামাজ পড়তে কোনো সমস্যা নেই।     কয়েক মিনিট দেড়ি করে পড়াই ভালো।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...