আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
420 views
in সালাত(Prayer) by (1 point)
আসসালামু  আলাইকুম।
নামাজ ত্যাগকারী কাফির এটার অনেকগুলো দলিল দেখলাম।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলেন

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

এ বিষয়টি বুঝতে হলে প্রথমে আমরা পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত ও তারপর কয়েকটি হাদীস দেখে নেই-

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا [٤:١١٦]

নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না,যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা,ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। [সূরা নিসা-১১৬] 

عَنْ سَلَمَةَ بْنِ نُعَيْمٍ، قَالَ: وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مَنْ لَقِيَ اللهَ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَإِنْ زَنَى، وَإِنْ سَرَقَ ” 

হযরত সালামা বিন নুআইম রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ এর একদল সাহাবা রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হয় [মৃত্যুবরণ করে] যে সে শিরক করেনি, তাহলে সে ব্যক্তি জান্নাতী হবে। যদিও সে যিনা এবং চুরি করে থাকে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮২৮৪, ২১৪৩৪, বুখারী, হাদীস নং-১২৩৭] 

হযরত আবু জর গিফারী রাঃ থেকে একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন-

فَقَالَ: “مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، ثُمَّ مَاتَ عَلَى ذَلِكَ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ ” قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: “وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ ” قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: “وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ ” ثَلَاثًا، ثُمَّ قَالَ فِي الرَّابِعَةِ: “عَلَى رَغْمِ أَنْفِ أَبِي ذَرٍّ “

যে ব্যক্তি বলে আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তারপর সে উক্ত হালাতে ইন্তেকাল করে তাহলে সে  জান্নাতী হবে। আমি বললাম, যদি সে যিনা করে এবং চুরি করে তাহলেও? রাসূল সাঃ ইরশাদ করলেন, যদিও সে যিনা করে বা চুরি করে। আমি আবার বললাম- যদি সে যিনা করে এবং চুরি করে তাহলেও? রাসূল সাঃ ইরশাদ করলেন, যদিও সে যিনা করে বা চুরি করে। এভাবে তিনবার বললাম, তখন চতুর্থবারের সময় রাসূল সাঃ বললেন, যদিও আবু জরের নাক কুঞ্চিত হয় তবু। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২১৪৬৬] 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ الخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ،

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কোন যিনাকারী যিনা করার সময় মুসলমান থাকে না, কোন মদ পানকারী মদ পান করার সময় মুসলমান থাকে না, কোন চুরিকারী ব্যক্তি চুরি করার সময় মুসলমান থাকে না। [বুখারী, হাদীস নং-২৪৭৫, ২৩৪৩] 

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا مَمْلُوكٍ تَزَوَّجَ بِغَيْرِ إِذْنِ سَيِّدِهِ، فَهُوَ عَاهِرٌ»

অনুবাদ- হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে গোলাম মনীবের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে তাহলে সে জিনাকারী। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৭৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪২১২, সুনানে দারামী, হাদীস নং-২২৭৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১১১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২৭০৫}

★এবার দেখুন নামায তরককারী সম্পর্কে হাদীস-

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ»

হযরত আবু বুরাইদা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূ সাঃ ইরশাদ করেছেন, আমাদের ও [মুনাফিকদের মাঝে] অঙ্গিকার রয়েছে তাহল নামায। সুতরাং যে নামায ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে গেল। [ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১০৭৯] 

সারকথা

উপরোক্ত আয়াতে কারীমা এবং হাদীসগুলো সামনে রাখলে আমরা দেখতে পাই-

কুরআনের আয়াত বলছে শিরক ছাড়া আল্লাহ তাআলা যেকোন অপরাধ ক্ষমা করে দিতে পারেন। মানে শিরক ছাড়া এমন কোন অপরাধ নেই যা কাফেরদের মত চিরস্থায়ী জাহান্নামী বানায়।

৩ নাম্বারে উদ্ধৃত হাদীসটি বলছে যিনা বা চুরি করলে ব্যক্তি মুসলমান থাকে না, কিন্তু ১ ও ২ নং হাদীস বলছে যিনা বা চুরি করলেও ব্যক্তি জান্নাতী হবে। মানে এসব অপরাধের কারণে ব্যক্তি কাফের হয় না। কারণ কাফের চিরস্থায় জাহান্নামী। অথচ হাদীস বলছে যিনা বা চুরি করলেও ব্যক্তি জান্নাতী হবে।

আর চার নং হাদীসটি প্রমাণ করছে মনিবের অনুমতি ছাড়া বিয়েকারী যিনাকারী। কিন্তু উক্ত ব্যক্তির উপর যিনার শরয়ী শাস্তি প্রয়োগ হবে একথা কেউ বলেন না। কারণ এখানে আসলে যিনাকারী সাব্যস্ত করা উদ্দেশ্য নয়, বরং একাজটি গর্হিত অন্যায় এটি বুঝানো উদ্দেশ্য।

উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসগুলো সামনে রাখলে আমাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে। আসলে নামায ছেড়ে দেয়া মারাত্মক গোনাহের কাজ। এটি কাফেরদের মত কাজ। কিন্তু ব্যক্তি এতে করে কাফের হয়ে যায় না।

যেমন  চার নং হাদীসে গোলামটিকে যিনাকারী বলা হলেও তার উপর যিনার শাস্তি আসে না। মানে সে আসলে যিনাকারী হয় না। বরং ধমকের জন্য এটি বলা হয়েছে।

সুতরাং নামায ছেড়ে দিলেই ব্যক্তি কাফের হবে না। বরং কাফেরদের মত কাজ হয়। যদি কাফের হয়ে যেত তাহলে তার জন্য জান্নাতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীস আসতো। অথচ নামায ছেড়ে দিলে চিরস্থায় জাহান্নামী হবার কোন হাদীস বা আয়াত বর্ণিত হয়নি।  বরং আল্লাহ তাআলা এবং রাসূল সাঃ পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন শিরক ছাড়া আর যত গোনাহই হোক না কেন, আল্লাহ তাআলা তা মাফ করে দিতে পারেন।

তবে হ্যাঁ, যদি কেউ নামায পড়া ফরজ নয় মনে করে নামায ছেড়ে দেয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তি কাফের। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিংবা নামাযকে তাচ্ছিল্য করে নামায পড়া ছেড়ে দেয় তাহলেও উক্ত ব্যক্তি কাফের। কিন্তু অলসতাবশত নামায ছেড়ে দিলে ব্যক্তি কাফের হয়ে যায়না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...