উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কোন জীবিত বা মৃত ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে জান্নাতি বা জাহান্নামী বলা শরীয়ত সম্মত নয়। কোন দ্বীনদার-তাকওয়াবান ব্যক্তির ব্যাপারে যেমন নির্দিষ্টভাবে জান্নাতের সাক্ষ্য দেয়া জায়েয নাই তেমনটি কোন গুনাহগারকে নির্দিষ্টভাবে জাহান্নামের সাক্ষ্য দেয়া বৈধ নয়। এমনকি নির্দিষ্টভাবে কোন কাফেরকেও একথা বলা যাবে না যে, অমুক ব্যক্তি জাহান্নামী।
,
তবে সাধারণভাবে বলা যাবে যে, “যে ব্যক্তি শিরক অবস্থায় তওবা ছাড়া মারা যাবে সে জাহান্নামে যাবে।”
সাধারণভাবে কাফের, মুশরিক, মুরতাদ, নাস্তিক, মুনাফিক ইত্যাদি কে জাহান্নামী বলতেও কোন দোষ নেই।
অনুরূপভাবে এভাবে বলতেও কোন দোষ নেই যে “যে ব্যক্তি এই এই আমল করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” যে ব্যাক্তি এই এই আমল করবে,সে জাহান্নামে যাবে,কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে “এই ব্যক্তি জান্নাতি” আর “ওই ব্যক্তি জাহান্নামী” এভাবে বলা শরীয়ত সম্মত নয়।
এটি কেবল ওহীর মারফতেই বলা সম্ভব।
কুরআন-সুন্নায় যাকে জান্নাতি বা জাহান্নামী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আমারা কেবল তাদেরকেই জান্নাতি বা জাহান্নামী বলতে পারি।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহীর মারফতে অনেক সাহাবীর ব্যাপারে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করেছেন। বলেছেন, উমুক উমুক জান্নাতি। যেমন দশজন জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত সাহাবী, হাসান রা. হুসাইন রা., ফাতিমা রা., বিলাল রা. প্রমুখ।
আবার অনেকের ব্যাপারে নির্দিষ্টভাবে জাহান্নামী হওয়ার দু:সংবাদও দিয়েছেন। যেমন, তাঁর চাচা আবু তালেব, আবু লাহাব (কুরআনের সুরা লাহাব) এবং বদর যুদ্ধে নিহত আবু জাহেল, উতবা বিন রবিয়া, শায়বা বিন রবিয়া প্রমুখ।
,
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ ۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٤٩:١١]
মুমিনগণ,কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। (সূরা হুজরাত, আয়াত-১১)
কতেক লোক কারো ব্যাপারে বলে দেয় যে সে তো জাহান্নামী,তার অমুক দোষ ইত্যাদি। নাউযুবিল্লাহ! কথাটি অনেক মারাত্মক কথা। জান্নাত-জাহান্নামের ফয়সালা আল্লাহ তা’আলার হাতে। কাউকে এ ধরনের কথা বলা উচিত নয়।
আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন। বাহ্যিক কাউকে খারাপ,বদকার,ফাসেক মনে হলেও হযরত হাকীমুল উম্মত থানভী (রহ.)-এর পরামর্শ হলো,তার ব্যাপারে এই চিন্তা করবে যে হতে পারে আল্লাহ তা’আলা তার ভেতর এমন কোনো ভালো গুণ রেখেছেন,যার বদৌলতে তার সাথে আল্লাহর সাথে এমন মজবুত সম্পর্ক হয় যার উসিলায় তোমার চেয়ে মর্যাদায় আগে বেড়ে যাবে। আজ যদিও মন্দ মনে হচ্ছে,কাল হয়তো আল্লাহর রহমতে এমন পরিবর্তন হবে যে সবাইকে পেছনে ফেলে দেবে।
কাউকে দেখে নিজেকে বড় মনে করা,তার থেকে নিজেকে উত্তম মনে করা এবং ওই ব্যক্তিকে ছোট মনে করাকেই তাকাব্বুর বা অহংকার বলা হয়। অহংকার মারাত্মক ক্ষতিকর একটি জিনিস।
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে (ইসলাম বিরোধী পাপ কাজের নিন্দা করে বলি এর বিনিময়ে আস্তে আস্তে তুমি/সে জাহান্নামি হবা) এহেন কথা বলা উচিত নয়।
,
আপনি তাকে এই ভাবে বলতে পারেন যে এহেন কাজ মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে।
"এর বিনিময়ে আস্তে আস্তে তুমি জাহান্নামি হবা" এরকম শক্ত কথা বলবেননা।
.
(তাকে শক্ত কথা না শুনিয়ে হেকমতের সহিত দ্বীনের দাওয়াত দিন,আল্লাহত কাছে দোয়া করতে থাকুন,আশা করি তিনি দ্বীনের পথে ফিরবেন।ইনশাআল্লাহ)