উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মা বাবার সর্বদায় আনুগত্য করতে হবে,তাদের কথার নাফরমানী করা যাবেনা।
তাদের সাথে সর্বদায় ভালো ব্যবহার করতে হবে।
তারা কষ্ট পায়,এমন কাজ কখনোও করা যাবেনা।
সন্তানদের জন্য এহেন কাজ করা নাজায়েজ।
তবে তারা যদি শরীয়ত বহির্ভূত কাজের আদেশ করে,তাহলে তা মানা যাবেনা।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سِمْعَانَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِىْ مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ»
নাও্ওয়াস ইবনু সিম্‘আন (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রতিপালকের অবাধ্যতার মাঝে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য নেই।
(শারহুস্ সুন্নাহ্ ২৪৫৫, সহীহ আল জামি‘ ৭৫২০।)
.
وَعَنْ عَلِىٍّ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «لَا طَاعَةَ فِىْ مَعْصِيَةٍ إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوْفِ».
‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নাফরমানির ক্ষেত্রে আনুগত্য নেই। আনুগত্য শুধু সৎকর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
(বুখারী ৭২৫৭, মুসলিম ১৮৪০, আবূ দাঊদ ২৬২৫, নাসায়ী ৪২০৫, আহমাদ ৭২৪।)
.
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ مَرْزُوقٍ، أَخْبَرَنَا شُعْبَةُ، عَنْ زُبَيْدٍ، عَنْ سَعْدِ بْنِ عُبَيْدَةَ، عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ السُّلَمِيِّ، عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ جَيْشًا وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ رَجُلًا، وَأَمَرَهُمْ أَنْ يَسْمَعُوا لَهُ وَيُطِيعُوا، فَأَجَّجَ نَارًا وَأَمَرَهُمْ أَنْ يَقْتَحِمُوا فِيهَا، فَأَبَى قَوْمٌ أَنْ يَدْخُلُوهَا وَقَالُوا: إِنَّمَا فَرَرْنَا مِنَ النَّارِ، وَأَرَادَ قَوْمٌ أَنْ يَدْخُلُوهَا، فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: لَوْ دَخَلُوهَا أَوْ دَخَلُوا فِيهَا لَمْ يَزَالُوا فِيهَا. وَقَالَ: لَا طَاعَةَ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوفِ
‘আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সেনাদল প্রেরণ করলেন এবং একজনকে এর সেনাপতি বানিয়ে তাদেরকে সেনাপতির কথা শোনার ও আনুগত্য করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর ঐ সেনাপতি আগুন জ্বালিয়ে তাদেরকে তাতে ঝাঁপ দেয়ার নির্দেশ দিলেন। একদল লোক তাতে ঝাঁপ দিতে অস্বীকার করে বললো, ‘আমরা তো আগুন থেকেই পালিয়েছি (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্যই ইসলাম কবূল করেছি)। আবার কিছু লোক আগুনে ঝাঁপ দেয়ার মনস্থ করলো। বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কানে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ তারা যদি আগুনে ঝাঁপ দিতো তাহলে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে যেতো। তিনি আরো বললেনঃ আল্লাহর অবাধ্যতায় কারোর আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবল সৎ কাজে।
(আবু দাউদ ২৬২৫)
,
★★উল্লেখিত ছুরতে আপনার মা যদিও পুরোপুরি হেদায়েতের পথে না চলুক,যদি পরিবারে শুধু শুধু অশান্তি করুক,তারপরেও তার সাথে আপনাদের ভালো ব্যবহার করে যেতে হবে।
তার হেদায়াতেত জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।
,
পতিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়,এমন কাজ যেনো আপনাদের দ্বারা প্রকাশ না পায়,এই দিকে সদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا، أَحْسَنَهُمْ خُلُقًا، وَأَلْطَفَهُمْ بِأَهْلِهِ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিকতর পূর্ণ মুমিন, যে ব্যক্তি সদাচারী এবং নিজ পরিবারের জন্য কোমল এবং অনুগ্রহশীল। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬১২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪২০৪}
,
তিনি যাদেত কথা শুনেন,যাদেরকে মানেন,তাদের দ্বারা তাকে বুঝাইতে হবে।
দরকার পড়লে বাড়িতে নিয়মিত "ফাযায়েলে আমাল" কিতাবের তা'লিম চালু করুন।
রাসুল সাঃ এর হাদীস নিয়মিত শুনলে এমনিতেই মন গলে যাবে,ইনশাআল্লাহ।
বিশেষ করে নামাজের কথা ভালোভাবে বুঝাইতে হবে।
এইভাবে তাকে হেকমতের সহিত বুঝিতে হবে যেঃ
নামাজ মুমিনের অন্যতম প্রধান ইবাদত। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার উপর আরোপিত সকল ইবাদতের মধ্যে নামাজ এমন একটি ইবাদত যা ব্যক্তিজীবনকে গড়ে তুলে মুমিন হিসেবে আর সমাজ জীবনে ব্যক্তি কে গড়ে তুলে সুবাসিত পুষ্প তুললে। নামাজের মাধ্যমেই জীবনের সর্বাঙ্গীন সফলতা লাভ করা যায়।ইসলামী শরীয়ত প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির উপর দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছে।
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে এই ৫ ওয়াক্ত নামাজ কে ফরজ ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে: আর তারা যা বলে সে সম্পর্কে আপনি ধৈর্যধারণ করুন আর আপনি নামাজ আদায় করুন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে, রাত্রিকালে এবং দিবসের প্রান্ত সমূহে, যাতে করে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার। (সূরা ত্বহা: ১৩০)
ঈমানের পরে নামাজের স্থান। নামাযই এমন এক এবাদত যা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মুসলমানের উপর সর্বদা সর্বাবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা ফরজ। নামাজের গুরুত্ব এতই বেশি যার কারণে পবিত্র কোরআনের ৮২ স্থানে বিভিন্ন ভাবে নামাজের আবশ্যকীয়তা বুঝানো হয়েছে।নামাজের ফরজ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকারকারী কাফের। নামাজ অস্বীকার করলে সে ব্যক্তির আর নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেওয়ার কোন অধিকার থাকেনা।
নামাজের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন:অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর, যারা তাদের নামাজ সম্বন্ধে বে-খবর (সূরা মাউন ৩ ও ৫ নং আয়াত)
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে,
নিঃসন্দেহে নামাজ যথেষ্ট কঠিন কাজ, তবে যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয়ভীতি আছে তাদের পক্ষে মোটেই কঠিন নয়. (সূরা বাকারা ৪৫)
রাসুল সা. এর বানিতেও নামাজের গুরুত্বের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়,
তোমাদের ছেলে মেয়েদের বয়স ৭ বছর হলে নামাজ পড়তে আদেশ কর এবং ১০ বছরে (নামাজ না পড়লে) প্রহার কর এবং তাদের শয্যা পৃথক করে দাও। (তিরমিজি, আবু দাউদ)
সফরের সময় বা অসুস্থ অবস্থায় রোজা ফরজ নয় তেমনি ভাবে গরিব হলে হজ্ব আদায় করতে হয় না, নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলে যাকাত ফরজ নয় কিন্তু সর্বাবস্থায় নামাজ ফরজ। কোন অবস্থাতেই নামাজ মাফ হয় না।
এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো, যদি না পারো তবে বসে পড়ো। তাতেও অপারগ হলে শুয়ে বা ইশারায় পড়ো তবুও নামাজে মাফ নেই। (বুখারী)
★সাহাবায়ে কেরামগণ কি পরিমাণ গুরুত্ব দিয়ে নামাজ আদায় করতেন তার কিছু নমুনা নিম্নে দেওয়া হল:
সাহাবায়ে কেরাম যখন নামাজে দাঁড়াতেন, পাখিরা তাদেরকে বৃক্ষ মনে করে তাদের মাথার উপর বসে জিকিরে সুর তুলত।
নামাজে থাকা অবস্থায় হযরত আলী রা. এর শরীর থেকে তীর বের করা হলে তিনি টেরো পেলেন না অথচ প্রচণ্ড ব্যথা পাচ্ছিলেন বলে নামাজের বাহিরে থাকা অবস্থায় এই তীর বের করা সম্ভব হচ্ছিল না।
★নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে ঈমামদের অভিমত:
ইমাম আবু হানিফা নামাজ ত্যাগকারীকে তওবা করে নামায আদায় না করা পর্যন্ত কোরা মারতে ও কয়েদখানায় বন্দী করে রাখতে আদেশ দিতেন। (ইসলামের আলোকে জীবন বিধান- পৃষ্ঠা নং ৪৯১ )
ইমাম মালিক ও ইমাম শাফি নামাজ ত্যাগকারীকে তওবা করে আমল ও আকীদা দুরস্ত না করলে হত্যা করার হুকুম দিতেন। (মুস্তাদরকে হাকিম)
হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ) বেনামাজিদের সম্পর্কে কঠোর মন্তব্য করেছেন যে, নামাজ ত্যাগকারী কাফের, তাদের জানাজা পড়ো না এবং তাদেরকে মুসলমানদের গোরস্থানে দাফন করিও না। (গুনইয়াতুত তালিবিন)
এমন কি স্বেচ্ছায় নামাজ ত্যাগকারীদেরকে সাহাবায়ে কেরামদের অনেকে কাফের বলে মনে করতেন। (তিরমিজি রাসূলুল্লাহ এর নামাজ ১৭)
,
সব কিছু হেকমতের সহিত বুঝাইতে থাকুন,আর মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকুন,ইনশাআল্লাহ তিনি পুরোপুরি হেদায়েতের পথে আসবেন।