আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
75 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (56 points)
আসসালামু আলাইকুম
১. একজন আমাকে ধরেন টাকা দিলো কিছু বই বা অন্য কিছু কিনার জন্য। আমি যদি বাজার দরের কমে কিনে বাকি টাকা নিজে রেখে দেই তাহলে সেটা আমার জন্য হালাল হবে? দরেন যে টাকা দিছে সে যেই দাম জানে ওই দামই তার থেকে রাখা হইছে। বাকি আমি পরিচিত কারো কাছ থেকে কম দামে কিনেছি।

২. আমার মা সারাদিন আমার স্ত্রীর দোষ ধরে। আমার স্ত্রী আমাদের বাড়িতে কাউকে কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। মাঝে মাঝে তার বাবার বাড়িতে গেলে আমার মায়ের এসব কথা কিছু কিছু তার মায়ের কাছে বলে। আমার মা এসব জানতে পেরে সারাদিন এখন আমার স্ত্রীর সাথে কথা শুনাত থাকে। আমি কিছু বুঝাতে বা বলতে গেলে আমাকেও যাচ্ছেতাই ভাষায় বলে। এক্ষেত্রে করণীয় কি?

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/55107/  নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি যে,

স্ত্রীর ভরণ-পোষণ স্বামীর উপর সর্বাবস্থায় ফরযস্ত্রীর নিজের সম্পদ থাকুক বা না থাকুক।

 আল্লাহ তাআলা বলেন-

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ ۚ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ ۚ

পুরুষেরা নারীদের অভিভাবকঐ (বিশেষত্বের) কারণেযার দ্বারা আল্লাহ তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং ঐ সম্পদের কারণেযা তারা ব্যয় করেছে। সুতরাং সৎ নারীরা হল অনুগত, (স্বামীর) অবর্তমানে (নিজের সতিত্ব ও স্বামীর সম্পদ) রক্ষাকারীআল্লাহ রক্ষা করার কারণে ... -সূরা নিসা : ৩৪

 

এই আয়াতে স্ত্রীর উপর স্বামীর অভিভাবকত্বের দুটো কারণ বলা হয়েছে : প্রথমত দৈহিক শক্তি-সামর্থ্য ও বিচার-বিচক্ষণতার মতো গুণাবলিদ্বিতীয়ত মোহরানা ও ভরণ-পোষণের জন্য ব্যয়বহন।

 

এই আয়াতে ‘পুরুষের ব্যয়কৃত সম্পদ’ মানে স্ত্রীর মোহরানাখোরপোষ ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচকুরআন ও সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী যা বহন করা অবশ্যকর্তব্য। এ আয়াত প্রমাণ করেস্ত্রীর নাফাকা ও খোরপোষ স্বামীর উপর ফরয। -তাফসীর ইবনে কাছীর ১/৪৯২আহকামুল কুরআনজাসসাস ২/১৮৮

 

 হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .

সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেনতিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যেতোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)

 

স্বামীর জন্য জরুরি হলো স্ত্রীর অধিকার রক্ষা করাতার সাথে সদব্যবহার করা।

  

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

ألا واستوصوا بالنساء خيرا، فإنما هن عوان عندكم ليس تملكون منهن شيئا غير ذلك

শোন হে! তোমরা আমার পক্ষ হতে নারীদের প্রতি সদাচরণের উপদেশ গ্রহণ কর। তারা তো তোমাদের কাছে আটকে আছে। তোমরা তাদের কাছ থেকে এছাড়া আর কিছুর অধিকার রাখো না। (জামে তিরমিযীহাদীস: ১০৮৩

 

সুতরাং স্ত্রীর উপর স্বামীর খেদমত আবশ্যক,শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা স্ত্রীর জন্য একটি অতিরিক্ত কাজ। এটা তার দায়িত্ব নয়আবশ্যক নয় কিন্তু বর্তমান সমাজে মনে করা হয়এটা তার অপরিহার্য দায়িত্ব বরং এটিই যেন তার প্রধান দায়িত্ব। আমাদের সমাজের আবহমান কালের চলমান রীতি হলোযৌথ পরিবারগুলোতে পুত্রবধূরা শ্বশুর-শাশুড়ির সেবাযত্ন করে থাকেন। এটাকে পারিবারিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে।

ছেলের জন্য বউ আনাই হয় শ্বশুর-শাশুড়ির সেবার জন্য। এ সবই পরিমিতিবোধের চরম লঙ্ঘন। মা-বাবার সেবা করা সন্তানের দায়িত্বপুত্রবধূর নয়। (আল-বাহরুর রায়েক ৪/১৯৩কিফায়াতুল মুফতি ৫/২৩০)

 

যদি স্বামীর মা-বাবার খেদমতের প্রয়োজন হয়তাহলে স্বামীর কর্তব্য হলো তাঁদের সেবা-যত্ন করা। তবে কোনো স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে স্বামীর মা-বাবার সেবা করেনএটা তাঁর পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। এর বিনিময়ে তিনি অনেক সওয়াব পাবেন। তবে এসব করতে আইনত তিনি বাধ্য নন। যদিও কাম্য এটাই যে স্বামীর মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান ও সমীহের চোখে দেখবেন। তাঁদের মনেপ্রাণে ভালোবাসবেন এবং তাঁদের সেবা করতে পারাকে নিজের জন্য পরম সৌভাগ্য মনে করবেন। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়িও পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদর ও খাতির করবেন। তার সুখ-সুবিধার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন।

আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/10894/ 

 

ইসলামের দিক-নিদের্শনা হচ্ছে বিবাহের পরে স্বামীর প্রথম কতর্ব্য হলো স্ত্রীর জন্য এমন একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেখানে স্ত্রী মানুষের দৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকবে। কেননা পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। আর এই বিধান পালন করার জন্য স্বামীর কতর্ব্য স্ত্রীকে সাহায্য করা। সেই সাথে অন্যান্য সকল কষ্ট থেকে স্ত্রীর আরামের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে স্ত্রীকে শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথেই থাকতে হবে এমন বাধ্যও করা যাবে না। কেননা এমন কোন অধিকার স্বামীর নেই। তবে এই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কে সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করেও কিছু কাজ করতে হবে।

যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বামীর পরিবারের সাথে অথবা অন্য আত্মীয়ের সাথে থাকার কথা বলে কিন্তু স্ত্রী কারো সাথে থাকার কথা রাজি না হয় তাহলে স্ত্রীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা স্বামীর কতর্ব্য। কেননা স্ত্রীর সকল কিছু রক্ষা করা ও নিরাপদে বসবাস করার দায়িত্ব স্বামীর।

 

 ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে রয়েছে-

تجب السكني لها عليه في بيت خال

মর্থার্থ: স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াত১/৬০৪)

আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/46394/  

আরো জানুন- https://ifatwa.info/26113/?show=26113#q26113  

 

 

 সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

 

১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু তিনি আপনাকে কম দামে কেনার জন্যই টাকাটা দিয়েছে তাই সেখান থেকে আপনার খরচ ছাড়া অতিরিক্ত লাভ করা জায়েজ হবে না। বরং কিছু টাকা থেকে গেলে মূল মালিকের কাছে ফেরত দিতে হবে। তবে তিনি যদি আপনাকে টাকা দেওয়ার সময় এভাবে বলে দেন যে, এর থেকে কম দামে কিনতে পারলে সেই অতিরিক্ত টাকাটা আপনার। তখন ঐ টাকাটা নিজের জন্য রাখতে পারবেন, অন্যথায় নয়। আবার আপনি তাদেরকে এভাবে বলে দিতেন পারেন যে, আমিও এখান থেকে কিছু লাভ করবো। তাহলে তখন রাখতে পারবেন।

উল্লেখ্য যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নি:স্বার্থ ভাবে খেদমত করার কারণে আপনার অনেক অনেক সওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ।

 

২. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার সামর্থ্য থাকলে আপনার স্ত্রীর জন্য আলাদা বাসস্থান ব্যবস্থা করা আপনার উপর আবশ্যক এবং আলাদা বাসস্থানে থাকা তার জন্য জরুরী হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনে পাশা পাশি কোনো বাসাও ভাড়া নিতে পারেন।

আপনার স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে আপনার মার সাথে থাকেন এটা তাঁর পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। এর বিনিময়ে তিনি অনেক সওয়াব পাবেন। তবে এসব করতে আইনত তিনি বাধ্য নন। যদিও কাম্য এটাই যে স্বামীর মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান ও সমীহের চোখে দেখবেন। তাঁদের মনেপ্রাণে ভালোবাসবেন এবং তাঁদের সেবা করতে পারাকে নিজের জন্য পরম সৌভাগ্য মনে করবেন। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়িও পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদর ও খাতির করবেন। তার সুখ-সুবিধার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (56 points)
উত্তর টা দেন শায়খ

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...