বাই মুয়াজ্জাল (বাকিতে বিক্রি)। এর মানে হলো, নির্ধারিত সময়ে দাম পরিশোধ করার শর্তে বাকিতে বিক্রি। অর্থাৎ ভবিষ্যতে নির্ধারিত সময়ে একসঙ্গে বা কিস্তিতে সম্মত মূল্য পরিশোধের শর্তে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরিয়ত অনুমোদিত পণ্য বিক্রি করাকে বাই মুয়াজ্জাল বলা হয়।
বাই মুয়াজ্জালের বৈশিষ্ট্য হলো, নির্ধারিত দামে বাকিতে বিক্রি করা হয়। পণ্য ক্রয় করে মালিকানা লাভ করে বিক্রি করতে হবে। বাই মুয়াজ্জাল চুক্তির সময় পণ্যের অস্তিত্ব থাকতে হবে এবং তা ক্রয়যোগ্য হতে হবে।
বাকিতে বিক্রির ক্ষেত্রে অবশ্যই মূল্য পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে।
নতুবা এটি বৈধ হবেনা।
এটি ধোকার দিকে নিয়ে যাবে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا»
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়। {মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৩১৪৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৫৮৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২২২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৯০৫}
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ মুসলমানগণ তার শর্তের উপর থাকবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৪, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২৮৯০, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪০৩৯}
: یلزم أن تکون المدة معلومة في البیع بالتأجیل والتقسیط (مجلة الأحکام العدلیة مع شرحہا :درر الحکام لعلي حیدر، ۱:۲۲۷، ۲۲۸۔ط: دار عالم الکتب الریاض)،
সারমর্মঃ
কিস্তি ও বাকিতে বিক্রির ক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধের সময়সীমা জানা থাকতে হবে।
أما الأئمة الأربعة وجمہور الفقہاء والمحدثین فقد أجازوا البیع الموٴجل بأکثر من سعر النقد بشرط أن یبتّ العاقدان بأنہ بیع موٴجل بأجل معلوم بثمن متفق علیہ عند العقد (بحوث فی قضایا فقہیة معاصرة، ص:۷)،
সারমর্মঃ
কিস্তির ক্রয় বিক্রয় চার মাযহাব মতে জায়েজ আছে,তবে মূল্য নির্দিষ্ট করতে হবে, মূল্য পরিশোধের সময়সীমা নির্দিষ্ট করতে হবে।
وصح بثمن حال وھو الأصل وموٴجل إلی معلوم؛ لئلا یفضي إلی النزاع (الدر المختار مع رد المحتار، کتاب البیوع، ۷: ۵۲، ط: مکتبة زکریا دیوبند)۔
নগদ ক্রয় বিক্রয় জায়েজ,আর বাকিতে ক্রয় বিক্রয় মূল্য পরিশোধের সময়সীমা নির্দিষ্ট করার শর্তে জায়েজ,যাতে করে ঝগড়াঝাটিতে না পৌছে।
শরীয়তের বিধান হলো কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয় করলে নগদের চেয়ে বেশি মূল্য নেওয়া জায়েয।
তবে কিস্তির বিক্রির ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত শর্তের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে-
১. পণ্যের মূল্য ও আদায়ের তারিখ সুনির্দিষ্ট হতে হবে।
২. চুক্তির সময় পণ্যের মূল্য চূড়ান্ত হওয়ার পর কিস্তি আদায়ে বিলম্ব বা পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে পুনরায় মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না।
৩. কিস্তি আদায়ের জন্য পণ্য আটকে রাখা যাবে না; বরং চুক্তির পরই পণ্য ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
(মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী জিদ্দা ৭/২/৩২-৩৬; বাইউত তাকসীত ওয়া আহকামুহু, সুলাইমান আততুরকী পৃষ্ঠা : ২২৮; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছিরা, আল্লামা তাকী উসমানী ১/৭)
,
কিস্তির মেয়াদ কম বেশি হওয়ার কারণে পণ্যের মূল্য কম বেশি করা জায়েয। তবে শর্ত হল, কেনা বেচার সময় মেয়াদ অনুযায়ী একটা মূল্য চূড়ান্ত করে দিতে হবে। অর্থাৎ গ্রাহক যদি পণ্যটি কিস্তিতে নেয় তবে তা কত মাসে পরিশোধ করবে এবং মোট কত টাকা পরিশোধ করবে তা চুক্তির সময়ই নির্ধারণ করে নিতে হবে। বেচাকেনা সম্পন্ন হওয়ার পর কোনো কিস্তি আদায়ে বিলম্ব হলেও মূল্য বাড়ানো যাবে না। অথাৎ পূর্ব নির্ধারিত মূল্য অপরিবর্তীত থাকবে। তাই গ্রাহকের দায়িত্ব হবে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কিস্তি আদায় করে দেয়া। যেন বিলম্বের কারণে বিক্রেতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
(জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩১; আলমাবসূত, সারাখসী ১৩/৭; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ২/৩৭; রদ্দুল মুহতার ৫/৯৯,মাবসূত ১৩/৮; রদ্দুল মুহতার ৫/১৪২; বুহুস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআসিরা ১/৭-৮)
প্রশ্নের বিবরণ মতে উক্ত ক্রয় বিক্রয়ে কোনো ধোকার আশ্রয় না নেয়া হলে এতে সমস্যা দেখছিনা।
তবে আপনি যে পরিচিত সাপ্লায়ার থেকে বাকিতে কাচামাল নিবেন,সেখানে তাকে মূল্য পরিশোধের সময়সীমা নির্দিষ্ট করবেন।