আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
139 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (98 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ!
১. হাজব্যান্ড - স্ত্রী  ঢাকাতেই থাকেন! হাজব্যান্ডের বাবার বাড়ি ঝালকাঠি!  ঈদে দুইজন ই গ্রামের বাড়িতে যান! এক্ষেত্রে  স্ত্রী কি শ্বশুরবাড়ি তে কসর নামাজ পড়বে?

২. আমার দাদাবাড়ি ঝালকাঠি!   দাদার জমিতেই দাদাবাড়ীর পাশে চাচা বাড়ি করেছেন! দাদাবাড়ী নেই এখন আর সেখানে! এখন সেই চাচার বাড়িতে বেড়াতে গেলে আমার নামাজ কসর হবে?!

৩. উক্ত প্রশ্নের প্রেক্ষিতে আমার মায়ের শ্বশুরবাড়ি ঝালকাঠি!  শ্বশুরবাড়ি তো নেই এখন, সেই জমির এক পাশে আমার চাচা বাড়ি করেছেন! আমার মা ঢাকা থেকে ঝালকাঠি তার ভাসুরের বাড়িতে বেড়াতে গেলে সেখানে নামাজ কসর হবে যেহেতু শ্বশুরবাড়ির জমির উপর করা?
৪. কারো  দাদাবাড়ী কসর এর দূরত্ব  হলে দাদাবাড়ীতে নামাজ কসর হয়?!

৫. কসরের নিয়ত কিভাবে করতে হয়?  নিয়ত ছাড়া  ১৫ দিনের কম থাকলেও কসর হয় না শুনেছি!

৬. লঞ্চে করে গ্রামের বাড়িতে গেলে প্রায় দেড় দিন সময় লাগে!  লঞ্চের কেবিনে কোনোরকম  নামাজ পড়া গেলেও মেয়েদের জন্য  ওজু করার অবস্থা নেই জানামতে,  মেয়েদের পর্দার ব্যাপার আছে যেহেতু! লঞ্চে নদীর পানি সরবরাহ করা হয় নাকি পানির লাইনে! সেই পানি দিয়ে ওজু হওয়ার কথাও না!      তাছাড়াও লঞ্চের পরিবেশে ওয়াশরুম সেরে পবিত্র থাকার সুব্যবস্থা নেই, ওয়াশরুমগুলো কেমন থাকে! শরীর অপবিত্র থেকে যেতে পারে এতে, কাপড়ও অপবিত্র হয়ে যায় আর ওয়াশরুম শেষে নদীর পানি দিয়ে পবিত্র হওয়া যায় না!
এমতাবস্থায় লঞ্চে কিভাবে সালাত আদায় করবো?! বুঝিয়ে বলবেন দয়া করে,  এতোগুলো ওয়াক্ত কাজা হয়ে যাবে!
৭. যে কোনো গাড়িতে করে দূরে কোথাও গেলে বা গ্রামে গেলে নামাজের ওয়াক্ত পড়ে যায় কিছু ! পুরুষ থাকে গাড়িতে অনেক, মেয়েরা গাড়িতে কিভাবে নামাজ আদায় করবে তখন?! ওজুরও ব্যবস্থা নেই, নন মাহরাম পুরুষদের সামনে নামাজ পড়াও যায় না!
নামাজে ফেইস খুলে রাখা লাগে, কিন্তু বাইরে পর্দা করেই যাওয়া হয়, নামাজের জন্য আলাদা হিজাব ইউজ করি! কিভাবে এগুলো মেইনটেইন করবো গাড়িতে??

৮. হায়েজের ৫/৬ দিন পর  কোনো ব্লাড  বা ভিন্ন কালারের স্রাব যায় না, কিন্তু  লজ্জাস্থানে ভিতরের দিকে টিস্যু প্রেস করলে মেটে কালার বা সামান্য লাল কালার  কিছু লেগে আসে!  যেহেতু কোনো লাল স্রাব যায় না, ভিতরে থাকে সামান্য সেটাকে কি হায়েজ শেষ মনে করবো?
সাদাস্রাবও ও তেমন হয় না, হলেও সম্পুর্ন সাদা না, হলদে হলদে থাকে আর স্রাব গড়িয়ে পড়ে না!
৯. উক্ত অবস্থায় হায়েজ শেষ মনে করে ফরজ গোসল করার পর যদি দেখি ভিতরে মেটে কালার বা সামান্য লাল কালারের মতো কিছু রয়ে যায় বা থাকে, কিন্তু সেগুলো বাইরে বেরিয়ে আসে না, টিস্যু দিয়ে প্রেস করলে বুঝা যায়!  এক্ষেত্রে কি আবার ফরজ গোসল করতে হবে?!
১০.  একজনের প্রশ্নোত্তরে দেখেছিলাম  হায়েজ শেষ হওয়ার পর পবিত্র না হয়ে সাহরি খেলে সেই রোজা হবে না কারণ সাহরি খাওয়া অবস্থায় ব্যাক্তি অপবিত্র থাকে!  কিন্তু আমি এখানে প্রশ্ন করেছিলাম এ ব্যাপারে, উত্তর দিলো যে রোজা হবে!  সঠিক কোনটা?!

১১. হসপিটালে ভর্তি থাকা লাগলে রোগীর সাথে যারা থাকি তাদের সেখানে পবিত্র থাকা সম্ভব হয় না মুলত ওয়াশরুমের জন্য!  যত ভালো হসপিটাল ই হোক, ওয়াশরুম সুন্দর কিন্তু অনেক রোগী সেখানে যায়, পর্দা করে ওয়াশরুমে যেয়ে  বোরকা, জামা পড়ে  সামলে ওয়াশরুম থেকে পবিত্র হওয়া অসম্ভব ব্যাপার একরকম!  হয় শরীরে ছিটে ফোটা লাগে আবার জামাকাপড়েও! নামাজের জায়গা আছে কিন্তু অপবিত্র অবস্থায় কিভাবে নামাজ পড়বো বলবেন বুঝিয়ে দয়া করে!
জাজাকাল্লাহ খাইরান

1 Answer

0 votes
by (676,960 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
শরীয়তের বিধান হলো ওয়াতনে আসলী (স্থায়ী নিবাস) তে এক দিনের জন্য গেলেও পুরো নামাজ পড়তে হবে।
    
ব্যক্তি নিজের স্থায়ী নিবাসে গেলে কখনো মুসাফির হয়না। স্থায়ী নিবাস বলে এমন স্থানকে-“যেখানে ব্যক্তির বসবাসের জন্য স্থায়ী গৃহ থাকে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে যেখানে সর্বদার জন্য থাকার নিবাস হয়”।

শরীয়তের বিধান হলো কোন স্থানে গিয়ে সেখানে যদি কমপক্ষে পনের দিন থাকার নিয়ত না করে, তাহলেও কসর পড়তে হবে। বেশি দিন থাকার নিয়ত করলে কসর করতে পারবে না।

৭৮ কিলোমিটার হল সফরের দূরত্ব। এর কম নয়। সুতরাং কেউ যদি ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বের সফরের নিয়তে বের হয়,সেখানে গিয়ে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করে,তাহলেই কেবল সেই ব্যক্তি কসর পড়বে।
চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত কর আদায় করবে।  
এরচে’কম দূরত্বের সফরের জন্য কসর পড়া জায়েজ নয়।

আয়েশা রাযি. বলেন,

فُرِضَتِ الصَّلَاةُ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ فِي الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ، فَأُقِرَّتْ صَلَاةُ السَّفَرِ، وَزِيدَ فِي صَلَاةِ الْحَضَرِ

মুকিম ও মুসাফির অবস্থায় নামায দু’দু রাক’আত ফরজ করা হয়েছিল। পরে সফরের নামায ঠিক রাখা হল কিন্তু মুকিমের নামাযে বৃদ্ধি করা হল। (বুখারী ১০৪০ মুসলিম ৬৮৫)

অপর হাদিসে এসেছে,

عِيسَى بْنُ حَفْصِ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ صَحِبْتُ ابْنَ عُمَرَ فِى طَرِيقٍ – قَالَ – فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَقْبَلَ فَرَأَى نَاسًا قِيَامًا فَقَالَ مَا يَصْنَعُ هَؤُلاَءِ قُلْتُ يُسَبِّحُونَ. قَالَ لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلاَتِى يَا ابْنَ أَخِى إِنِّى صَحِبْتُ رَسُولَ اللَّهِ – ﷺ – فِى السَّفَرِ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ عُمَرَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَصَحِبْتُ عُثْمَانَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَقَدْ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ (لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

ইবনে উমর রাযি. বলেন, নিশ্চয় আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফর করেছি, তিনি মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি আবু বকর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও আমরণ সফরে ২ রাকাতই পড়েছেন। আমি উমর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি  উসমান রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মাঝে রেখেছি উত্তম আদর্শ। (মুসলিম ১৬১১)

.
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে উক্ত মহিলা ঢাকায় যেখানে থাকেন, যদি সেই বাড়িকেই ওয়াতলে আসলী তথা মূল বাড়ি হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। অর্থাৎ সেখানেই তিনি মূলত থাকেন পরিবার নিয়ে।
তার নিজ শশুর বাসায় তথা স্বামীর বাবার বাসায় বা বাবার বাসার সেই এলাকায় স্থায়ী ভাবে থাকার যদি কোনো নিয়ত তাদের না থাকে ,স্থায়ী ভাবেই যদি পিতার বাসা,সেই এলাকা ত্যাগ করে থাকে,  আর তার শশুরের বাসা ঢাকার এই বাসা থেকে ৭৮ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি দুরত্বে হয়, তাহলে তিনি পিতার শশুর বাসায় গিয়ে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে মুসাফির হবেন। 
সেখানে কসরের নামাজ পড়বেন।।
,
যদি তিনি যেখানে আছেন,সেটাকে ওয়াতনে আসলী (স্থায়ী নিবাস) হিসেবে ঠিক না করে,তাহলে তিনি নিজ শশুর বাসায় মুসাফির বলে গন্য হবেননা। 
,
সেক্ষেত্রে সফরের দুরত্ব যতই হোকনা কেনো,পূর্ণ নামাজই আদায় করতে হবে।
  
বিস্তারিত জানুনঃ  

(০২)
আপনি কোথায় থেকে সেই চাচার বাসায় যাবেন?
যদি ৭৮ কিলোমিটার দুরত্ব থেকে সফর করে নিজেদের বাড়ির সীমানায় না গিয়ে অন্য এলাকা দিয়ে সরাসরি  সেই চাচার বাসায় যান,তাহলে সেখানে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে কসর করতে হবে।

আর যদি নিজ এলাকার সীমানা অতিক্রম করে তারপর সেই চাচার বাসায় যান,তাহলে আপনি মুসাফির থাকবেননা।
কেননা ৭৮ কিলোমিটার দুরত্ব সফর করে নিজ এলাকার সীমানায় প্রবেশের সাথে সাথেই ব্যাক্তি আর মুসাফির থাকেনা।

(০৩)
আপনার মা তো শশুরবাড়িতে আর কোনো দিন স্থায়ী ভাবে থাকবেননা,উনি তো এখন স্থায়ী ভাবে ঢাকায় থাকছেন,তাই তিনি ঝালকাঠিতে গেলে সেখানে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে তাকে কসর করতে হবে।

(০৪)
হ্যাঁ সেখানে সে ১৫ দিনের কম থাকার নিয়তে গেলে কসর করবে। 

দাদার বাড়ি তো কারো স্থায়ীনিবাস নয়।

(০৫)
মনে মনে সেখানে কয়দিন থাকবে,এটি নির্দিষ্ট করবে।

(০৬)
জানামতে লঞ্চের সরবরাহকৃত  উক্ত পানি পাক।
নদির সেই পানি পাক।
সুতরাং ঐ পানি দিয়ে অযু করে কিবলা নির্ণয় করে নামাজ আদায় করতে হবে।

সতর্কতা অবলম্বন করে ওয়াশরুম ব্যবহার করতে হবে।

(০৭)
এ সংক্রান্ত জানুনঃ  

(০৮)
হ্যাঁ হায়েজ শেষ মনে করবেন।

(০৯)
পুনরায় ফরজ গোসল করতে হবেনা।

(১০)
রোযা হবে।
এটিই সঠিক।
পরে পবিত্র হলেও চলবে।
রোযার সাথে পবিত্রতার সম্পর্ক নেই। 

(১১)      
অপবিত্র অবস্থায় নামাজ পড়া যাবেনা।
ওয়াশরুমে গিয়ে কাপড় সতর্কতামূলক তুলে নিয়ে ওয়াশরুম ব্যবহার করতে হবে। 
আগে পুরো ওয়াশরুম ধুয়ে নিবেন।
নাপাকি থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
প্রয়োজনে ওয়াশরুমে গিয়ে বোরকা খুলে ওয়াশরুম ব্যবহার করবেন।  
,
কাপড় নাপাক হলে কাপড় পাক করে বা চেঞ্জ করে নামাজ পড়তে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 104 views
0 votes
1 answer 76 views
...