ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/18326/?show=18326#q18326 নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি যে,
কোনো মানত সহিহ
হওয়ার জন্য এবং শরিয়তের দৃষ্টিতে তা মানত হিসেবে ধর্তব্য হওয়ার জন্য কয়েকটি
অপরিহার্য শর্ত রয়েছে। নিচে সংক্ষিপ্তভাবে আমরা সেই বিষয়গুলো উল্লেখ করার প্রয়াস
পাবো।
১. মানতকৃত
বিষয়টি মৌলিক ইবাদত হতে হবে, অন্য কোনো ইবাদতের ভূমিকা বা সহায়ক নয়। যেমন— নামাজ,
রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদি মৌলিক ইবাদত;
কিন্তু উজু করা,
রোজার নিয়ত করা,
হজ আদায়ের উদ্দেশ্যে সফর করা,
যাকাত প্রদানের মানসে খাদ্য-বস্ত্র ক্রয় করা
ইত্যাদি মৌলিক ইবাদত নয়; বরং পূর্বোক্ত ইবাদতসমূহের ভূমিকা ও সহায়ক।
২. মানত সহিহ
হওয়ার জন্য মানতকৃত বিষয়ের শ্রেণিভুক্ত কোনো কিছু পারিভাষিক ওয়াজিব বা ফরজে আইন
হতে হবে। মানতকৃত বিষয়ের শ্রেণিভুক্ত কোনো কিছু যদি ফরজে আইন বা পারিভাষিক ওয়াজিব
না হয়ে থাকে, তাহলে মানত সহিহ হবে না। যেমন কেউ যদি
মাদরাসায় পড়ার বা পড়ানোর মানত করে, কিবা মসজিদে প্রবেশের মানত করে,
অথবা রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণের মানত করে,
কিবা কোনো অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করার মানত
করে ইত্যাদি ক্ষেত্রে তার মানত শরিয়তের দৃষ্টিতে মানত হিসেবে ধর্তব্য হবে না।
(মানত হিসেবে ধর্তব্য না হলেই যে তা আর করা যাবে না— এমন তো নয়।)
মানতকৃত বিষয়টির
শ্রেণিভুক্ত কোনো কিছু যদি পারিভাষিক ওয়াজিব বা ফরজে আইন হয়ে থাকে,
তখনই মানত সহিহ হবে। যেমন কেউ শাওয়ালের ছয়
রোজা রাখার মানত করলো, তার এই মানত সহিহ হয়ে যাবে;
যেহেতু শাওয়ালের ছয় রোজার শ্রেণিভুক্ত কোনো
কিছু ফরজে আইন রয়েছে, আর তা হলো রমযানের রোজা। রোজা,
নামাজ, সদকা, ইতিকাফ, ওয়াকফ, তাওয়াফ, দাসমুক্তি, কোরআন তেলাওয়াত, দুরুদ পাঠ, তাসবিহ আদায় ইত্যাদি ক্ষেত্রে মানত সহিহ হবে।
৩. মানতের
ক্ষেত্রে মনের নিয়তের বিবেচনা করা হয় না; বরং মুখে উচ্চারিত শব্দের বিবেচনা করা হয়। ভুলেও যদি কোনো
কিছুর মানত মুখে উচ্চারণ করে বসে, তাহলেও তা পূর্ণ করা অপরিহার্য হয়ে যায়। বিয়ে,
তালাক, কসম এবং মানতের ক্ষেত্রে ভুল বা দুষ্টুমির কোনো বিবেচনা
নেই। ভুলে বা দুষ্টুমি করে কোনো কিছু বললেও তা অবধারিত হয়ে যায়।
৪. মানত
শর্তযুক্ত হতে পারে, আবার শর্তহীনও হতে পারে। শর্তহীন মানত,
যেমন আমি এ বছর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবো (এই
বলে কেউ মানত করলো)। আর শর্তযুক্ত মানত,
যেমন আমার ছেলে যদি সুস্থ হয়,
তাহলে আমি এতো টাকা সদকা করবো।
মানত সম্পর্কে আরো জানুন- https://ifatwa.info/16066/?show=16066#q16066
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. হ্যাঁ, পশু বা প্রাণীও মানত করা যায়। এভাবে মানত করতে হবে যে, যদি এই কাজটা হয় তাহলে একটা ছাগল কুরবানী দিবো অথবা একটা ছাগল আল্লাহর রাস্তায় সদকাহ করে দিবো। ইত্যাদি
২. মসজিদ, মাদরাসা, এতিম খানার নামে মান্নত করা
যায় না। আর মান্নত করলেও তা মান্নত হয় না। সুতরাং মসজিদের নামে মান্নত করলেও মান্নত
হবে না। কেউ যদি মসজিদের নামে মান্নত করে সেখানে টাকা পয়সা দেয় তাহলে সেটা নফল দান
হিসেবে গণ্য হবে। দ্বিতীয়ত মান্নত পূর্ণ হলে মান্নতের টাকা বা সম্পদটা সদকায়ে ওয়াজিবা
বা আবশ্যিক দান হিসেবে গণ্য হয়। আর আবশ্যিক দানের খাত একমাত্র উপযুক্ত দরিদ্র গরিব
মিসকিন। এ অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। সুতরাং মান্নতের টাকা মসজিদে দেয়া
যাবে না। তবে মাদ্রাসা ও এতিম খানার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দেওয়া যাবে। কারণ, তা থেকে
গরীব ছাত্রদের পিছনে ব্যয় করা হয়।