উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
প্রথমে একটি হাদীস দেখে নেইঃ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
تفكَّروا في كلِّ شيءٍ , ولا تتفكَّروا في اللهِ
তোমরা সব কিছু নিয়ে গবেষণা কর। কিন্তু আল্লাহর সত্ত্বা নিয়ে গবেষণা করো না।
ইমাম যুরকানী রহঃ বলেন, হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী। [মুখতাসারুল মাকাসিদ, বর্ণনা নং-৩১৮]
আল্লাহর আকার নিরাকার ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা নিষেধ। আল্লাহ তাআলা আছেন। তিনি সকল কিছুর স্রষ্টা। তার কাছেই আমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তিনিই রিজিকের মালিক। ইত্যাদি আকীদা রাখা আবশ্যক।
কিন্তু তিনি দেখতে কেমন? তার আকৃতি কেমন? ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। সালাফে সালেহীনগণ এসব বিষয়ে আলোচনা করাকে অপছন্দ করতেন। আমরাও এসব নিয়ে আলোচনা করাকে অপছন্দ করি।
তাই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ বলে মনে করি।
যাদের মনের মাঝে ফিতনা রয়েছে। কেবল তারাই এসব মুতাশাবিহাত বিষয়ে কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করে থাকে।
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছেঃ
هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ [٣:٧]
তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট,সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে,তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর,তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। {সূরা আলে ইমরান-৭}
তাই আল্লাহর সত্ত্বার আকার নিরাকার নিয়ে কথা বলা সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ বিষয়। কারণ এসব মুতাশাবিহাত এর অন্তর্ভূক্ত। যার সঠিক অবস্থান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।
আমরা আল্লাহর “হাত, পা, চেহারা” ইত্যাদি অর্থ প্রকাশক শব্দের উপর ঈমান আনি। কিন্তু এগুলোর অবস্থা কেমন? আকার আছে নাকি নেই? ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করি না। মন্তব্য করি না।
আমরা কুরআনে বর্ণিত গভীর জ্ঞানীদের কাতারে শামিল হতে চাই। এসবের বাহ্যিক অর্থ বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফিতনা বিস্তার করতে চাই না।
হাত পা ইত্যাদি থাকলে সেগুলোর আকার থাকতে হবে। এমনটি মাখলুকের জন্য জরুরী। আকার ছাড়া হাত পা হওয়া অসম্ভব। কিন্তু স্রষ্টার জন্যও কি তা জরুরী?
যদি বলা হয়, মাখলুক দৃশ্যমান হবার জন্য যেমন আকৃতি জরুরী। তেমনি খালেকের দৃশ্যমান হবার জন্যও আকৃতি জরুরী। তাহলে স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করা হয়। সৃষ্টির জন্য যা আবশ্যক, স্রষ্টার জন্যও তা আবশ্যক করে ফেলা হচ্ছে।
অথচ স্রষ্টা সৃষ্টির মত নন। তিনি তার মতই। তিনি সৃষ্টির সাদৃশ্যতা গ্রহণ করেন না।
কুরআনে পরিস্কার ঘোষিত হয়েছেঃ
فَاطِرُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَمِنَ الْأَنْعَامِ أَزْوَاجًا ۖ يَذْرَؤُكُمْ فِيهِ ۚ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ [٤٢:١١]
তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং চতুস্পদ জন্তুদের মধ্য থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন। কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন। [সূরা শোরা-১১]
খেয়াল করুন! উক্ত আয়াতে কারীমায় ঘোষণা করা হচ্ছেঃ মহান রব সকল কিছুর স্রষ্টা। তার মত কিছুই নেই। তিনি সব কিছু শুনেন ও দেখেন।
যদি বলা হয়, শোনা ও দেখার জন্য মাখলুকের মতই স্রষ্টারও তার শান অনুপাতে আকার বিশিষ্ট কান ও চোখ প্রয়োজন। তাহলে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে তারতম্য রইল কোথায়?
উভয়তো একই হয়ে গেল।
যেমন আমরা বলি যে, আমরাও শুনতে পাই, আবার হাতিও শুনতে পায়। আমাদের শোনার জন্য যেমন কান প্রয়োজন। তেমনি হাতির শোনার জন্যও কান প্রয়োজন।
তবে পার্থক্য হল, আমাদের কান হল ছোট। আর হাতির কান হল তার মত। অর্থাৎ বড়।
তেমনি আমাদের শোনা ও দেখার জন্য কান ও চোখ প্রয়োজন। আবার স্রষ্টারও শোনাও দেখার জন্য কান ও চোখ প্রয়োজন [নাউজুবিল্লাহ]
ব্যাখ্যা করলাম, আমাদের কান ও চোখ আমাদের মত। আর স্রষ্টার কান ও চোখ তার শান মুতাবিক।
তাহলে খেয়াল করুন। উভয় উদাহরণ হুবহু মিলে যাচ্ছে।
উভয় ক্ষেত্রেই আমরা সমতায় চলে আসছি। অর্থাৎ স্রষ্টাও সৃষ্টি উভয়ের জন্যই একটি আকার বিশিষ্ট বস্তুর প্রয়োজনীয়তাকে আবশ্যক করে নিচ্ছি।
তাহলে স্রষ্টা আর সৃষ্টির মাঝে পার্থক্য রইল কোথায়?
সৃষ্টির জন্য আকার প্রয়োজন, আবার স্রষ্টার জন্যও আকার সাব্যস্ত করলে আমরাতো স্রষ্টাকে সৃষ্টির মতই সাব্যস্ত করে ফেলছি। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পরিস্কার ঘোষণা করলেন যে, তিনি মাখলুকের মত নন। তিনি সম্পূর্ণই আলাদা।
তাই আকার নিরাকার বিষয়ক আলোচনা করা থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকাই বুদ্ধিমান ও সুক্ষ্মদর্শী ঈমানদের দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলা অহেতুক আলোচনা করে ফিতনা সৃষ্টি করা থেকে আমাদের হিফাযত করুন। আমীন।
.
★★সুতরাং আমরা আল্লাহর “হাত, পা, চেহারা” ইত্যাদি অর্থ প্রকাশক শব্দের উপর ঈমান আনি। কিন্তু এগুলোর অবস্থা কেমন? আকার আছে নাকি নেই? ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা না করি । মন্তব্য না করি।
তিনি তার মতোই,তার কোনো কিছুই আমাদের মতো নয়।
,
(০২)
শরিয়ত কোনো মুসলমানকে অপর অবিশ্বাসী বা কাফের, ধর্মের প্রতি কটাক্ষকারী অথবা বিভ্রান্ত ব্যক্তি, ইত্যাদি দোষারোপ করতে নিষিদ্ধ করেছে। এটি হচ্ছে সাধারণ নীতি। এমনকি একজন অন্যজনকে অবিশ্বাসী (কাফের) বলে সন্দেহ করার ক্ষেত্রেও এ বিধান প্রযোজ্য হবে। একইভাবে কোনো মুমিন ব্যক্তি যদি দেখতে পান, তার মতোই একজন মুসলমান এমন কথা উচ্চারণ বা কাজ করেছে যাতে মনে হবে যে, সে হয়তো কাফের হয়ে গেছে, তা সত্ত্বেও তাকে অবশ্যই সন্দেহের সুবিধা দিতে হবে এবং সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোনোক্রমেই তাকে কাফের বলা যাবে না।
.
যদি কোনো মুসলমান এমন কথা বলে বা এমন কাজ করে, যার কুফরির পর্যায়ে পড়ার কেবল একটা সম্ভাবনা থাকে, তাহলেও তাকে ধর্মত্যাগী বা অবিশ্বাসী বলা যাবে না। ইমাম আবু হানিফার মতে, কোনো কথার যদি ৯৯ শতাংশই অবিশ্বাসের বোঝায় এবং মাত্র ১ শতাংশ বিশ্বাস (ঈমান) অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তাকে কাফের বলা যাবে না। একই দৃষ্টিভঙ্গির বিবরণ উল্লেখ করে আবু জাহরাহ আরো ব্যাখ্যা করে বলেন, এমন এক পরিস্থিতিতে কথাটি উচ্চারিত হয়েছে যে; তা অবিশ্বাসের বলে মনে হতে পারে। যেমন যে প্রেক্ষাপটে কথাটি বলা হয়েছে অথবা যে উৎস থেকে দৃষ্টিভঙ্গিটির উৎপত্তি হয়েছে, তাতে যদি সন্দেহজনক ব্যাখ্যার অবকাশ থাকে; তাহলে তার কুফরির পর্যায়ে পড়ার বিষয় বাতিল হয়ে যাবে।
.
কাহারো উপর কাফেরের হুকুম লাগানো সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুন
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত "কেহ যদি এতদিন আল্লাহর আকার এর ব্যাপারটা নিয়ে ভুল আকীদা পোষণ করে থাকে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবেনা।
তবে তাকে আমরা বলবো যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা বিরোধী সে আকীদা পোষন করেছে।
,
তার নামাজ রোযা হয়েছে।
এটার আর কাজা করার দরকার নেই।