উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তের বিধান হলো হালাল এবং হারাম মাল দিয়ে তৈরীকৃত বাসা বাড়ি,দোকান ইত্যাদিতে যতটুকু হারাম মাল ছিলো, ততটুকু পরিমাণ টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দেয়া অবশ্যক।
,
যদি ততটুকু পরিমাণ সম্পদ সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করা না হয় তাহলে উক্ত প্রপার্টিজের পুরোপুরি মালিক ঐ ব্যাক্তি হবেন না।
যদি হারাম টাকা পরিমাণ টাকা দান করে দেয়া হয়, তাহলেই কেবল সে টাকা দিয়ে যে সম্পত্তি করা হয়েছে তার মালিক ঐ সাব্যস্ত হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন
يا ايها الذين امنوا لا تاكلوا الربا اضعافا مضاعفه واتقوا الله لعلكم تفلحون
‘হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেও না। আল্লাহকে ভয় করো। তাহলে তোমরা সফল হতে পারবে। ’ -সূরা আল ইমরান: ১৩০
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং-৪৯৮১)
فى معارف السنن- من ملك بملك خبيث ولم يمكنه الرد الى المالك فسبيله التصدق على الفقراء (معارف السنن، كتاب الطهارة، باب ما جاء لا تقبل صلاة بغير طهور-1/34، الفتاوى الشامية، باب البيع الفاسد، مطلب فى من ورث مالا حراما-7/301، كتاب الحظر والإباحة، فصل فى البيع-9/554، بذل المجهود، كتاب الطهارة، باب فرض الوضوء- 1/37)
কেহ যদি হারাম সম্পদের মালিক হয়,তাহলে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না হলে গরীব মিসকিনকে ছদকাহ করে দিতে হবে।
,
★★বর্তমানে আমাদের দেশে যারা নিজেদেরকে শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক বলে দাবী করে,( আমার জানা মতে) ০৮ টি।
1. ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। Islami Bank Bangladesh Limited
2. আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। Al-Arafah Islami Bank Limited
3.এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যাংক অফ বাংলাদেশ লিমিটেড । Export Import Bank of Bangladesh Limited
4.সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড । Social Islami Bank Limited
5.শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। Shahjalal islami Bank Limited
6.ফার্ষ্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। First Security Islami Bank Limited
7.ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড। Union Bank Limited
8.আই সি বি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড। ICB Islamic Bank Limited
,
আমাদের দেশে যারা নিজেদেরকে শরীয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক বলে দাবী করে,
তারা যদি বাস্তবেই ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক ব্যাংক চালায়,যেমনটি তারা দাবী করে থাকে,এর বিপরিত যদি কোনো কিছু প্রমাণিত না হয়, তাহলে সেখানে টাকা রাখা,লভ্যাংশ নেওয়া জায়েয হবে।
সাধারণত সকলেই ইসলামী ব্যাংকগুলোতে মুরাবাহা পদ্ধতিতে টাকা জমা রাখে।
,
তাই সেক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তে জায়েজ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত আছে।
সেগুলো মানতে হবে।
,
আলমুরাবাহা লিল আমির বিশশিরা অর্থাৎ ব্যাংগুলোতে প্রচলিত মুরাবাহা জায়েয হওয়ার শর্তাবলি নিম্নরূপ :
১. ব্যাংকের মালিকানায় ও দখলে পণ্য আসার পূর্বে তা বিক্রি করতে পারবে না। অর্থাৎ বিনিয়োগগ্রহীতা ব্যাংকের নিকট পণ্য চাওয়ার পর প্রথমে ব্যাংককে তা খরিদ করতে হবে এবং হস্তগত করতে হবে। এরপর সে ক্লায়েন্ট-এর নিকট তা বিক্রি করতে পারবে।
২. কোনো না জায়েয-হারাম পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না।
৩. ব্যাংক যে পণ্য গ্রাহকের নিকট বিক্রি করবে তা যদি এমন হয় যে, গ্রাহক নিজেই এর মালিক এবং সে ব্যাংকের নিকট তা নগদে কম মূল্যে বিক্রয় করে পরে আবার বাকিতে বেশি মূল্যে তা ক্রয় করে নিচ্ছে তবে কারবারটি হারাম হবে এবং সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে। অর্থাৎ যার নিকট বিক্রি করবে তার থেকেই এ মুহূর্তে পণ্যটি খরিদ করেছে এমন হওয়া চলবে না।
৪.বাস্তবভিত্তিক ক্রয়-বিক্রয় হতে হবে। এমন হওয়া চলবে না যে, কোনো দোকানে আগে থেকেই ব্যাংকের এমন চুক্তি রয়েছে যে, আমরা তোমার কাছ থেকে কোনো পণ্য খরিদ করে গ্রাহকের নিকট বিক্রি করলে সে আবার তোমার নিকট কম মূল্যে তা বিক্রি করে দিবে। অর্থাৎ বাস্তবভিত্তিক ক্রয়-বিক্রয় হতে হবে, হীলা-বাহানা হলে চলবে না।
৫. কারবারটি এমন হতে হবে যাতে বাস্তবেই ক্রেতার (ক্লায়েন্ট) ঐ পণ্যের জন্য অর্থায়ন দরকার। যদি এমন হয় যে, শুধু পণ্যের নাম ব্যবহার করে নগদ টাকা বিনিয়োগ নিচ্ছে পণ্য খরিদের কোনো ইচ্ছা নেই তাহলে কারবারটি হারাম হবে।
৬. ব্যাংকের নিকট বিনিয়োগপ্রার্থী (ক্লায়েন্ট) যদি এমন জিনিস খরিদের নামে টাকা নেয়, যা আগেই সে খরিদ করে ফেলেছে অথবা তা কাজেও লাগিয়ে ফেলেছে এখন সে সব পণ্যের বকেয়া মূল্য পরিশোধের জন্য অথবা টাকার অন্য কোনো প্রয়োজন হওয়ায় ঐ পণ্যের নামে ব্যাংকের সাথে মুরাবাহা করছে তবে তা-ও হবে হারাম ও সুদী কারবার।
উল্লেখ্য যে, ৫ ও ৬ নং-এর ত্রুটিগুলো হয়ে থাকে এজন্য যে, ব্যাংক অনেক ক্ষেত্রেই নিজে পণ্য খরিদ করতে যায় না এবং তা নিজ রিস্কেও নেয় না।
৭. মুরাবাহার একটি অপরিহার্য শর্ত হল, পণ্যটি কিছুক্ষণের জন্য হলেও ব্যাংকের দায়িত্বে ও তার রিস্কে যেতে হবে। যে সময়ের মধ্যে সেটি নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্থ হলে তা ব্যাংকের ক্ষতি বলেই ধর্তব্য হবে। যদি মুরাবাহার পণ্য ক্লায়েন্ট (গ্রাহক) কে বিক্রির পূর্বে এমন কোনো ঝুঁকি (রিস্ক) ব্যাংক বহন না করে তবে কারবার হারাম হবে।
হযরত মাওলানা তকী উছমানী এবং অন্যান্য ফকীহগণের (যারা ব্যাংকের মুরাবাহার অনুমোদন দিয়েছেন) মতে এটিই একমাত্র শর্ত যা মুরাবাহাকে সুদী কারবার থেকে ভিন্ন করে। কারণ সুদী লোনের মধ্যে ব্যাংক ক্লায়েন্টকে টাকা দেওয়ার পর তার কোনো রিস্ক সে বহন করে না। এখন যদি মুরাবাহাতেও এমনটি ঘটে এবং গ্রাহক তথা ক্লায়েন্টকে পণ্য হস্তান্তরের পূর্বে ব্যাংক তার ঝুঁকি বা রিস্ক গ্রহণ না করে তবে কারবারটি হবে সুদী লেনদেনের নামান্তর।
৮. মুরাবাহার আরেকটি শর্ত হল ক্লায়েন্টের নিকট নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করে দেওয়ার পর তা আর বৃদ্ধি করা যাবে না। অর্থাৎ সনাতনী ব্যাংকগুলো যেমন বছরান্তে বা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সুদের হার বাড়িয়ে দেয় সেভাবে মুরাবাহা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না। করলে তা সুদ হবে।
,
আমাদের জানা মতে বাংলাদেশে কোন ব্যাংকই সঠিক পদ্ধতিতে ইসলামীক রুলস মেনে ব্যাংকিং করছে না। তাই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ব্যাংকে টাকা না রাখা ভাল। কিন্তু প্রয়োজন হওয়ার কারণে কারেন্ট একাউন্ট খোলা জায়েজ। ডিপোজিট এ জাতীয় দীর্ঘমেয়াদী কোন একাউন্ট খোলা জায়েজ হবে না।
عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং-৪৯৮১)
তবে যেহেতু বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকগুলো ছাড়া বাকি ব্যাংকগুলো আমভাবে সুদী কারবার করে থাকে। শরয়ী বিধানের কোন তোয়াক্কাই করে না। সেই হিসেবে ইসলামী ব্যাংকগুলো শরয়ী বিধান পালনের কিছুটা হলেও চেষ্টা করে থাকে। যদিও পূর্ণাঙ্গ শরয়ী রুলস তারাও অনুসরণ করে না বলেই আমরা জানি। কিন্তুর মন্দের ভাল অবশ্যই। তাই অন্য ব্যাংকে একাউন্ট খোলার তুলনায় ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খোলা নিরাপদ বলেই মনে হয়। বাকি আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।
আর যদি কারেন্ট একাউন্ট খোলা সম্ভব না হয়, তাহলে বাধ্য হলে ডিপোজিট ও দীর্ঘমেয়াদী একাউন্টও জায়েজ আছে। তবে ডিভিডেন্টটি সওয়াবের নিয়ত ছাড়া দান করে দিবে।
فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٢:١٧٣
অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু। (সূরা বাকারা-১৭৩)