আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
148 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (98 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ!
১. আজকে আছরের সময় সাদাস্রাব চেক করতে যেয়ে লজ্জাস্থানে টিস্যু প্রেস করে দেখি টিস্যু ভেজা আর অরেঞ্জ কালার বের হয়েছে!  কোনো স্রাব বা ব্লাড বের হয় নি তখনো!  কিন্তু বুঝেছিলাম যে পিরিয়ড হয়েছে বা মাগরিবের পর ই হবে!  টিস্যু সামান্য অরেঞ্জ কালার দেখায় আছরের নামায পরি নি আর! মাগরিবের পর ব্লাড দেখা গিয়েছে!  আছরের নামাজ কি পরা উচিত ছিলো?!  নামাজ না পরে ভুল করেছি?!

২. রমাদান মাসে হায়েজ অবস্থায় দিনের বেলা খাওয়া যাবে?  খেলে গুনাহ হবে?!
৩. হায়েজ সাহরির আগে ভালো হলে সাহরি খেয়ে ফজরের আজানের পর ফরজ গোসল করলে কি উক্ত রোজা শুদ্ধ হবে?!

 ৪. সাহরি খেয়ে ফরজ গোসল করতে করতে ফজরের আজান দিয়ে দিলো, গোসল পরিপূর্ণ হয় নি তখনো বা গোসল করার মাঝে ওজু ভাঙার কোনো কারণ হলো তাই আবার নতুন করে ফরজ গোসলের নিয়মগুলো পালন করতে হবে কিন্তু ফজরের আজান দিয়ে দিয়েছে এমতাবস্থায় করনীয় কি?!

৫. ফরজ গোসলের ৩ টি ফরজ পালন করলেই তো ফরজ গোসল হয়ে যাওয়ার কথা তাই না?! এক জায়গায় দেখেছিলাম যে, শুধু ৩ টা ফরজ পালন করলে গোসল শুদ্ধ হয় না, প্রথমে হাত ধুয়ে ওজু করে  সকল সুন্নাহ সহ ফরজ পালন করেই ফরজ গোসল করতে হয়, নয়তো হবে না ফরজ গোসল এমন! এটা কি সঠিক?

৬. ফরজ গোসলে নাকের নরম হাড় পর্যন্ত পানি পৌঁছানোর কথা বলা আছে! নাকের নরম হাড় কতটুকু বুঝি না! হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি আর সর্বকনিষ্ঠ আঙুল নাকের যত দূর পর্যন্ত যাবে ততটা? নাকি আরও কম!
৭. রোজাবস্থায় ফরজ গোসলেও নাকের নরম হাড় পর্যন্ত পানি পৌঁছাতে হবে?!  নাকি রোজাবস্থায় কোনোরকম সামান্য নাকে পানি দিলেই হবে, যেহেতু নাক হতে গলায় পানি প্রবেশের আশংকা থাকে?
৮. রোজাবস্থায় পায়ুপথে পানি প্রবেশ করলে রোজা ভেঙে যায়!  প্রসাব-পায়খানা শেষে পানি দিয়ে মলদ্বার পরিস্কার করার সময় পানি মলদ্বারের ভিতরে প্রবেশ করে কিনা বুঝতে পারি না! রোজা ভেঙে যায় কিনা সন্দেহ হয়!  এভাবে কি পানি মলদ্বারে প্রবেশ করতে পারে?!
৯.  তাছাড়া গোসলের সময় শরীরে সাবান দেয়ায় মলদ্বারে সাবান লাগলে ভিতরে সাবান যায় কিনা বুঝতে পারি না, সন্দেহ হয় রোজা ভেঙে যায় কিনা! এজন্য রোজাবস্থায় গোসলের সময় মলদ্বারে সাবান দেই না, পানি দিয়েই কোনো রকম পরিস্কার করি! তাও শরীরের সাবান মলদ্বারে লেগে যায় প্রায়! এতে কি রোজা ভাঙতে পারে?!  বুঝিয়ে বলবেন দয়া করে ইন শা আল্লাহ!
১০. রোজাবস্থায় মেসওয়াক করলে মেসওয়াকের আঁশ ২/১ টা মুখে থেকে যায় প্রায় পানি দিয়ে কুলি করার পরও! সেই আঁশ কখনো কখনো গলার ভিতর থাকে মনে হয়! ভুলবশত মেসওয়াকের আঁশ গলার ভিতর চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে?!

১১.মোনাজাতে দু আ করার সঠিক নিয়ম কি?! দুই হাত তুলে প্রথমে সুরা ফাতিহা, তারপর দুরুদ পড়ে দু আ শুরু করবো আবার দুরুদ, সুরা ফাতিহা পড়ে মুনাজাত শেষ করবো এমন? নাকি দুই হাত তুলে প্রথমে কোনো দু আ পড়তে হয়, তারপর সুরা ফাতিহা আর দুরুদ পড়তে হয়, আবার শেষে যেয়ে দুরুদ, সুরা ফাতিহা পড়লাম এমন?!

১২. দু আ কবুলের সময় গুলোতে সবসময় ওজু বা পবিত্র থাকা হয় না! কোনো কিছু নিয়ে ব্যাস্ত বা অপ্রস্তুত অবস্থায় দু আ কবুলের সময় হলে তখন কিভাবে দু আ করবো?  হাঁটতে হাঁটতে,  কোনো কাজ করতে করতে দু আ করা যাবে?! নাকি ওজু থাকা জরুরি আর দুই হাত তুলেই মোনাজাত করতে হয়?
জাযাকাল্লাহ খইর!

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

أَخْبَرَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، قَالَ أَنْبَأَنَا عَلِيٌّ، - يَعْنِي ابْنَ مُسْهَرٍ - عَنْ سَعِيدٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ مُعَاذَةَ الْعَدَوِيَّةِ، أَنَّ امْرَأَةً، سَأَلَتْ عَائِشَةَ أَتَقْضِي الْحَائِضُ الصَّلاَةَ إِذَا طَهُرَتْ قَالَتْ أَحَرُورِيَّةٌ أَنْتِ كُنَّا نَحِيضُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ نَطْهُرُ فَيَأْمُرُنَا بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلاَ يَأْمُرُنَا بِقَضَاءِ الصَّلاَةِ .

আলী ইবনু হুজর (রহঃ) ... মুআযা আদাবীয়া (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক মহিলা আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করল যে, ঋতুবতী মহিলা যখন ঋতু থেকে পবিত্র হবে তখন কি সে সালাত কাযা করবে? তিনি বললেন, তুমি কি হারুরী গোত্রের মহিলা? আমরা তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে ঋতুবতী হতাম এবং যখন পবিত্র হতাম তখন আমাদেরকে সাওম কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হল কিন্তু সালাত কাযা করার নির্দেশ দেওয়া হত না।
(নাসায়ী শরীফ ২৩২০।)

★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তো উক্ত স্রাব বের হয়ে আসেনি,বরং লজ্জাস্থানে টিস্যু প্রেস করে তারপর সেটি দেখেছেন।

এখানে যেহেতু সেটা আপনা আপনি বের হয়ে আসেনি,তাই আপনার হায়েজ সেই সময় শুরু হয়নি।
সুতরাং আপনার আছরের নামাজ পড়া উচিত ছিলো।

পরবর্তীতে এটির কাজা আদায় করে নিবেন।   

(০২)
শরীয়তের বিধান হলোঃ 
রমজান মাসে মহিলাদের পিরিয়ডের রোজা না রাখলে অথবা রোজা রাখার পর পিরিয়ড শুরু হলে তার জন্য পানাহার করা বৈধ। তবে অন্য লোকদের সামনে পানাহার করা উচিত নয়। দিনের বেলায় যদি ঋতু বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, তাহলে দিনের বাকি অংশে রোজাদারের মতো পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করা ওয়াজিব। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪২০) 


یجب علی الصحیح وقیل یستحب "الإمساک بقیة الیوم علی من فسد صومہ" ولو بعذر ثم زال "وعلی حائض ونفساء طہرتا بعد طلوع الفجر".... "وعلی حائض ونفساء طہرتا" وأما فی حالة تحقق الحیض والنفاس فیحرم الإمساک لأن الصوم منہما حرام والتشبہ بالحرام حرام (حاشیة الطحطاوی علی مراقی الفلاح شرح نور الإیضاح ص: 678،ط: اشرفی، دیوبند)
সারমর্মঃ
রমজান মাসে ওযর বশত (যেমন হায়েজ) রোযা ভেঙ্গে গেলে বাকি দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব।
আর যদি আগে থেকেই হায়েজ নেফাস চলে,তাহলে পানাহার থেকে বিরত থাকা হারাম। 
কেননা তাদের জন্য রোযা হারাম,তাই রোযাদারদের সাথে সাদৃশ্যও হারাম।

البحرالرائق :
"ومن لم یکن علی تلك الصفة لم یجب الإمساك کما في حالة الحیض والنفاس، ثم قیل: الحائض تأکل سرًّا لاجهرًا. وقیل: تأکل سرًّا وجهرًا". (2/289 ط: سعید)
সারমর্মঃ
হায়েজাহ মহিলারা গোপনে খানা খাবে,তাদের উপর পানাহার থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব নয়।    

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
রমদান মাসে হায়েজ আসলে বাকি দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব।  
তবে হায়েজের অন্যান্য দিন বা আগে থেকেই হায়েজ চললে পানাহার থেকে বিরত থাকা জায়েজ নেই।
অনেকেই এটিকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তাই এমতাবস্থায় রোযাদার থেকে অপ্রকাশ্যে পানাহার চালিয়ে যেতে হবে।    

রোযা অবস্থায় হায়েজ চলে আসলে অপ্রকাশ্যে পানাহার করলে গুনাহ হবেনা। 

বিস্তারিত জানুনঃ  

(০৩)
হ্যাঁ উক্ত রোযা  শুদ্ধ হবে।

(০৪)
এমতাবস্থায় আপনি রোযাদারদের ন্যায় করবেন।
অর্থাৎ গড়গড়িয়ে কুলি করবেননা,নাকের নরম জায়গায় পানি দিবেননা।
হালকা পানি দিবেন।

উক্ত রোযা হয়ে যাবে।

(০৫)
এই নিয়ম সুন্নাত।
আবশ্যক নয়।
আবশ্যক শুধুমাত্র তিনটি ফরজ।

(০৬)
হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি আর সর্বকনিষ্ঠ আঙুল নাকের যত দূর পর্যন্ত যাবে যথাসম্ভব  ততটা দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
হালকা একটু আঙ্গুল দিলেও হবে।
তবে রোযা অবস্থায় নরম স্থান পর্যন্ত আঙ্গুল দেয়া যাবেনা।  

(০৭)
আঙ্গুল ভিজিয়ে নিয়ে সামান্য কিছু অংশ নাকে প্রবেশ করাবেন।

(০৮)
স্বাভাবিক এভাবে পানি মলদ্বারে প্রবেশ করতে পারেনা।
তবে ভেজা আঙ্গুল ভিতরে গেলে সমস্যা হবে।

বিস্তারিত জানুনঃ  

(০৯)
স্বাভাবিক এভাবে মলদ্বারে বা মহিলাদের লজ্জাস্থানে সাবান লাগলে ভিতরে সাবান যায়না।

তবে ভেজা আঙ্গুল ভিতরে গেলে সমস্যা হবে।

(১০)
এতে রোযা ভেঙ্গে যাবেনা।

(১১)
 উভয়টিই করা যাবে।
তবে এগুলো আবশ্যক কিছু না।

(১২)
ওজু থাকা জরুরি নয়।
এটি আদব।

আর দুই হাত তুলেই মোনাজাত করাও জরুরি নয়।
এটিও আদব। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

...