উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
এনজিও সাধারণত সুদভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হয়।
সুতরাং সম্পূর্ণ কাজটাই যদি তাদের সুদভিত্তিক হয়, তাহলে এখানে চাকরী করা, উপার্জন করা হারাম হবে।
সুদকে আল্লাহতায়ালা হারাম করেছেন। ইসলামে এটি একটি নিষিদ্ধ বিষয়। যদি এ সুদের লেনদেনে আপনি নিজেও একজন অংশীদার হন, তাহলে আপনার এ উপার্জন হারাম হবে এবং আপনি গুনাহগার হবেন। যেহেতু আপনি সুদের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন
يا ايها الذين امنوا لا تاكلوا الربا اضعافا مضاعفه واتقوا الله لعلكم تفلحون
‘হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেও না। আল্লাহকে ভয় করো। তাহলে তোমরা সফল হতে পারবে। ’ -সূরা আল ইমরান: ১৩০
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং-৪৯৮১)
কিন্তু যদি আপনার কাজটা এমন হয় যে, আপনার কাজের সঙ্গে সুদের কোনো সম্পর্ক নেই।
অর্থাৎ যদি এমন কাজ করেন,যেখানে সুদী কাজে জড়িত না হতে হয়, বরং তার কাজের ধরণ এমন হয় যেমন ড্রাইভার, ঝাড়ুদার, দারোয়ান, জায়েজ কারবারে বিনিয়োগ ইত্যাদি হয় তাহলে যেহেতু এসবে সরাসরি সুদের সহায়তা নেই তাই এমনটি করার সুযোগ আছে।
,
অফিসে যে কাজ আছে, সে কাজ সুদ সম্পৃক্ত নয়। অথচ ব্যাংকের বা অফিসের অন্যান্য লেনদেনের সঙ্গে কিছু সুদ থাকলেও সেটা আপনার বিষয় নয়। সে ক্ষেত্রে আপনার এই বেতনটা জায়েজ হবে, হারাম হবে না।
আপনি বেতন নিতে পারবেন, যেহেতু সরাসরি সুদের সঙ্গে আপনার কাজের কোনো সম্পর্ক নেই।
কিন্তু যদি হারাম আমদানী বেশি হয় হালালের তুলনায়, বা হারাম কাজে জড়িত হতে হয় তাহলে উক্ত জায়গায় চাকরী করা জায়েজ নয়। এ থেকে বেতন নেওয়াও জায়েজ নয়। বেতন নিলে তা হারাম হিসেবে গণ্য হবে। {ফাতওয়ায়ে উসমানী-৩/৩৯৪-৩৯৬}
হারাম কাজের সহায়তার বিভিন্ন স্তর আছে। শরীয়তে সর্ব ধরণের সহায়তা হারাম নয়। বরং সেসব সহায়তা হারাম যাতে সরাসরি হারাম কাজে জড়িত হওয়া হয়। যেমন সুদী লেনদেন করা। সুদী লেনদেন লেখা। সুদী টাকা উসুল করা ইত্যাদি।
,
,
তাহলে মূলনীতি কী? মূলনীতিটা হলো, কোনো ব্যক্তি যদি এমন কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে, যে কাজটি সরাসরি সুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাহলে তার উপার্জন এবং সুদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য তার এই কাজ—দুটিই হারাম হবে। কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি সরাসরি এমন কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন, যে কাজের সঙ্গে সরাসরি সুদের কোনো সম্পর্ক নেই বা যে কাজের মধ্যে সুদ সরাসরি কোনোভাবে আসে না, সে প্রতিষ্ঠানের যদি সুদের সঙ্গে অন্য কোনোভাবে সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তির উপার্জন হারাম হবে না; বরং জায়েজ হবে। এ ক্ষেত্রে তার চাকরি করাটাও জায়েজ হবে।
ولا يجوز قبول هدية أمراء الجور لأن الغالب في مالهم الحرمة إلا إذا علم أن أكثر ماله حلال بأن كان صاحب تجارة أو زرع فلا بأس به لأن أموال الناس لا تخلو عن قليل حرام فالمعتبر الغالب (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الثاني عشر في الهدايا والضيافات-5/342)
অনুবাদ-জালেম বাদশাহর হাদিয়া গ্রহণ জায়েজ নয়। কেননা তার অধিকাংশ মাল হয় হারাম। তবে যদি জানা যায় যে, তার অধিকাংশ মাল হালাল, এ হিসেবে যে সে ব্যাবসায়ী বা জমিদার, তাহলে তার থেকে হাদিয়া গ্রহণ করাতে সমস্যা নেই। কেননা সাধারণত মানুষের মাল অল্প হারাম থেকে মুক্ত নয়। তাই এতে আধিক্যের বিষয়টি বিবেচিত হবে। { ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৪২}
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে এনজিও কোম্পানিতে চাকরীর বেতনটি যদি হালাল ও হারাম মালের সাথে মিশ্রিত হয়, আর হারাম মাল বেশি হয়, তাহলে তা নেয়া জায়েজ নয়,চাকরী করাও জায়েজ নয় । তবে যদি হারাম মাল কম হয় তাহলে বেতন নেয়া জায়েজ হবে,চাকরি করাও জায়েজ আছে ।
,
তবে সতর্কতামূলক মুসলমানদের জন্য এহেন কোম্পানিতে চাকরী না করা উচিত।