আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
139 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (49 points)
১. চুরির পরিমাণ অনুযায়ী কি হাতের অংশ কাটতে হয়? যেমন : একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চুরি করলে শুধু আঙ্গুল, এরচেয়ে বেশি করলে কব্জি পর্যন্ত, তার বেশি করলে আরো বেশি হাতের অংশ কাটা হবে এমনকি?
নাকি ১ গ্রামের সমান বা যত বেশি চুরি করুক হাতের কব্জি কাটা হবে?

২. চোরকে সম্পদের মালিক ক্ষমা করে দিলেও কি হাত কাটা হবে?

৩. কেউ কোন প্রতিবেশীর / অন্যকারো গাছ থেকে কোন ফল বা সবজি খাওয়ার জন্য ছিঁড়ে নিল এইভেবে যে যার গাছ, সে নিলে কোন আপত্তি করবে না, তবেও কি গুনাহ হবে বা শাস্তি হবে?

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/13900/?show=13900#q13900  নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি যে,

শরীয়তের বিধান মতে বান্দা যেকোনো অবস্থাতেই হোক, তার জন্য চুরি করা হারাম।

 

ইসলামে চুরির শাস্তিঃ

আল্লাহ্ তাআলা বলেন:

«وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوْا أَيْدِيَهُمَا جَـزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِّنَ اللهِ، وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ»

‘‘তোমরা চোর ও চুন্নির (ডান) হাত কেটে দিবে তাদের কৃতকর্মের (চৌর্যবৃত্তি) দরুন আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে শাস্তি সরূপ। বস্তত আল্লাহ্ তাআলা অতিশয় ক্ষমতাবান মহান প্রজ্ঞাময়’’। (মায়িদাহ্ : ৩৮)

 

আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

 

لَا تُقْطَعُ يَدُ السَّارِقِ إِلاَّ فِيْ رُبْعِ دِيْنَارٍ فَصَاعِدًا.

‘‘সিকি দিনার তথা এক গ্রাম থেকে একটু বেশি স্বর্ণ (অথবা উহার সমমূল্য) এবং এর চাইতে বেশি চুরি করলেই কোন চোরের হাত কাটা হয়। নতুবা নয়’’। (বুখারী ৬৭৮৯, ৬৭৯০)

 

আব্দুল্লাহ্ বিন্ উমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قَطَعَ رَسُوْلُ اللهِ  يَدَ سَارِقٍ فِيْ مِجَنِّ ثَمَنُهُ ثَلَاثَةُ دَرَاهِمَ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক চোরের হাত কাটলেন একটি ঢাল চুরির জন্য যার মূল্য ছিলো তিন দিরহাম তথা প্রায় নয় গ্রাম রূপা কিংবা উহার সমমূল্য’’। (বুখারী ৬৭৯৫)

,

চোরের শাস্তি সম্পর্কে শায়েখ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী হাফিঃ লিখেছেনঃ

 

কারোর ব্যাপারে তার নিজস্ব স্বীকারোক্তি অথবা গ্রহণযোগ্য যে কোন দুজন সাক্ষীর মাধ্যমে চৌর্যবৃত্তি প্রমাণিত হয়ে গেলে অথচ চোরা বস্ত্তটি যথাযোগ্য হিফাযতে ছিলো এবং বস্ত্তটি তার মালিকানাধীন হওয়ার ব্যাপারে তার কোন সন্দেহ ছিলো না এমনকি বস্ত্তটি সোয়া চার গ্রাম স্বর্ণ অথবা পৌনে তিন গ্রাম রূপা সমমূল্য কিংবা এর চাইতেও বেশি ছিলো তখন তার ডান হাত কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলা হবে, আবার চুরি করলে তার বাম পা, আবার চুরি করলে তার বাম হাত এবং আবার চুরি করলে তার ডান পা কেটে ফেলা হবে।

 

কারোর চুরির ব্যাপারটি যদি বিচারকের নিকট না পৌঁছায় এবং সে এতে অভ্যস্তও নয় এমনকি সে উক্ত কাজ থেকে অতিসত্বর তাওবা করে নেক আমলে মনোনিবেশ করে তখন আল্লাহ্ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন। এমতাবস্থায় তার ব্যাপারটি বিচারকের নিকট না পৌঁছানোই উত্তম।

,

আল্লাহ্ তাআলা বলেন:

«فَمَنْ تَابَ مِنْ بَعْدِ ظُلْمِهِ وَأَصْلَحَ فَإِنَّ اللهَ يَتُوْبُ عَلَيْهِ، إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٍ»

‘‘অনন্তর যে ব্যক্তি যুলুম তথা চুরি করার পর (আল্লাহ্ তাআলার নিকট) তাওবা করে এবং নিজ আমলকে সংশোধন করে নেয় তবে আল্লাহ্ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাআলা পরম ক্ষমাশীল অতিশয় দয়ালু’’। (মায়িদাহ্ : ৩৮)

,

আর যদি কোন ব্যক্তি চুরিতে অভ্যস্ত হয় এবং সে চুরিতে কারোর হাতে ধরাও পড়েছে তখন তার ব্যাপারটি বিচারকের নিকট অবশ্যই জানাবে। যাতে সে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে অপকর্মটি ছেড়ে দেয়।

কারোর নিকট কোন কিছু আমানত রাখার পর সে তা আত্মসাৎ করলে এবং কেউ কারোর কোন সম্পদ লুট অথবা ছিনতাই করে ধরা পড়লে চোর হিসেবে তার হাত খানা কাটা হবে না। পকেটমারের বিধানও তাই। তবে তারা কখনোই শাস্তি পাওয়া থেকে একেবারেই ছাড় পাবে না। এদের বিধান হত্যাকারীর বিধানাধীন উল্লেখ করা হয়েছে।

,

জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَيْسَ عَلَى خَائِنٍ، وَلَا مُنْتَهِبٍ وَلَا مُخْتَلِسٍ قَطْعٌ.

‘‘আমানত আত্মসাৎকারী, লুটেরা এবং ছিনতাইকারীর হাতও কাটা হবে না’’। (আবূ দাউদ ৪৩৯১)

 

কেউ কারোর কোন ফলগাছের ফল গাছ থেকে ছিঁড়ে খেয়ে ধরা পড়লে তার হাতও কাটা হবে না। এমনকি তাকে কোন কিছুই দিতে হবে না। আর যদি সে কিছু সাথে নিয়ে যায় তখন তাকে জরিমানাও দিতে হবে এবং যথোচিত শাস্তিও ভোগ করতে হবে। আর যদি গাছ থেকে ফল পেড়ে নির্দিষ্ট কোথাও শুকাতে দেয়া হয় এবং সেখান থেকেই কেউ চুরি করলো তখন তা হাত কাটার সমপরিমাণ হলে তার হাতও কেটে দেয়া হবে।

রাফিবিন্ খাদীজ ও আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا قَطْعَ فِيْ ثَمَرٍ وَلَا كَثَرٍ.

‘‘কেউ কারোর ফলগাছের ফল গাছ থেকে ছিঁড়ে খেলে অথবা কারোর খেজুর গাছের মাথি-মজ্জা খেয়ে ফেললে তার হাতও কাটা হবে না’’

(আবূ দাউদ ৪৩৮৮; তিরমিযী ১৪৪৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৬৪২, ২৬৪৩; ইব্নু হিববান ১৫০৫ নাসায়ী ৮/৮৮; আহমাদ ৩/৪৬৩)

আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/13900/?show=13900#q13900  

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. চোরের শাস্তি সম্পর্কে শায়েখ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী হাফিঃ লিখেছেনঃ

কারোর ব্যাপারে তার নিজস্ব স্বীকারোক্তি অথবা গ্রহণযোগ্য যে কোন দুজন সাক্ষীর মাধ্যমে চৌর্যবৃত্তি প্রমাণিত হয়ে গেলে অথচ চোরা বস্ত্তটি যথাযোগ্য হিফাযতে ছিলো এবং বস্ত্তটি তার মালিকানাধীন হওয়ার ব্যাপারে তার কোন সন্দেহ ছিলো না এমনকি বস্ত্তটি সোয়া চার গ্রাম স্বর্ণ অথবা পৌনে তিন গ্রাম রূপা সমমূল্য কিংবা এর চাইতেও বেশি ছিলো তখন তার ডান হাত কব্জি পর্যন্ত কেটে ফেলা হবে, আবার চুরি করলে তার বাম পা, আবার চুরি করলে তার বাম হাত এবং আবার চুরি করলে তার ডান পা কেটে ফেলা হবে।

উল্লেখ্য যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ বা তার থেকে যত বেশী চুরি করুক তার হাতের কব্জি পর্যন্ত কাটা হবে। আর এই বিধান কার্যকর করার দায়িত্ব সরকারের উপর বর্তাবে, সাধারণ জনগণের উপরে নয়।

 

২. হ্যাঁ, চোরকে সম্পদের মালিক ক্ষমা করে দিলেও উক্ত বিধান কার্যকর করা হবে।

৩. না, এভাবে মালিকের অনুমতি ছাড়া তার গাছের ফল বা সবজি খাওয়া জায়েজ হবে না, খেলে গোনাহ হবে। তবে পরে অবশ্যই তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নিতে হবে অথবা তার মূল্য পরিশোধ করে দিতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 431 views
...