উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
,
(০১)
(এ সংক্রান্ত আছারী আকিদা পন্থিদের দেওয়া তথ্য নিচে তুলে ধরছিঃ)
আছারী বা আসারি (আরবি: الأثرية—আল-আসারিয়া বা আল-আথারিয়া) হল একটি ইসলামী পাণ্ডিত্যনির্ভর আন্দোলন, যা ৮ম শতাব্দীর শেষের দিকে উদ্ভূত হয়, যারা কোরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থবাচকতার সমর্থনের ফলশ্রুতিতে যুক্তিবাদী ইসলামী ধর্মতত্ত্বকে (কালাম) প্রত্যাখ্যান করে থাকে।
,
এই নামটি কৌশলগত দৃষ্টিকোণ হতে আরবি শব্দ "হাদীস" এর অনুবাদ হিসেবে আছার (প্রথা বা ঐতিহ্য) নামক শব্দ থেকে এসেছে। একে মাঝেমধ্যে অন্যান্য নামেও ডাকা হয়।
,
ঐতিহ্যবাদী ধর্মতত্ত্বের অনুসারীগণ কুরআনের জাহির (আক্ষরিক, প্রত্যক্ষ) অর্থে বিশ্বাস করে এবং হাদিস হল তাদের বিশ্বাস ও আইনকানুনের সকল বিষয়ে বিধিবিধানের একমাত্র ভিত্তি; এবং তাদের কাছে যৌক্তিক সমালোচনা হল নিষিদ্ধ, এমনকি যদি তা সত্য যাচাই করার জন্য হয় তবুও।
,
তারা কুরআনকে আক্ষরিক অর্থে পড়ে থাকে, এবং তারা কুরআনকে রূপকার্থে ব্যাখ্যা করার (তাউইল) বিরোধিতা করে। তারা কিয়াসকে অস্বীকার করে, এবং তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের বাস্তবতা শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে সমর্পণ করা উচিৎ, যাকে তাফউইদ বলা হয়।
,
ঐতিহ্যবাদী ধর্মতত্ত্ব বা আছারী মতবাদ মুহাদ্দিসদের মাঝে বিস্তৃতি লাভ করে, যারা পরবর্তীতে আহমদ ইবনে হাম্বলের (খ্রীঃ ৭৮০-৮১৫) অনুসরণে "আহলুল হাদিস" নামে একটি আন্দোলনের মাধ্যমে সংগঠিত হন।
,
ধর্মবিশ্বাসের বিষয়সমূহে, তারা মুতাজিলা ও সমসাময়িক অন্যান্য ধর্মতত্ত্বের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, এবং তারা সেসকল ধর্মতত্ত্বের মূলনীতির বিভিন্ন বিষয়কে দোষারোপ করতো, যার মধ্যে অন্যতম ছিল অন্যান্যদের নিজস্ব আত্মরক্ষামূলক যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যাপদ্ধতি।
,
১০ম শতাব্দীতে, আশআরী ও মাতুরিদি ধর্মতত্ত্ব মুতাজিলা যুক্তিবাদ ও হাম্বলি আক্ষরিকতাবাদের মাঝখানে মুতাজিলাদের যুক্তিনির্ভর ব্যখাপদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে মধ্যস্থতা তৈরি করে, যাকে মুতাজিলাগণ আছারীদের অধিকাংশ বিশ্বাসকে প্রতিহত করতে ব্যবহার করত।
,
যদিও যে সকল হাম্বলি পণ্ডিত এই সংমিশ্রণকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা ছিল সংখ্যালঘু, তাদের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি তাদের আবেগপ্রবণ ও বর্ণনা-ভিত্তিক পদক্ষেপ কিছু এলাকার শহুরে লোকজনের মধ্যে প্রভাবশালী অবস্থায় থেকে গিয়েছিল, আর তা ছিল প্রধানত আব্বাসীয় খিলাফতের শাসনামলে বাগদাদ এলাকায়।
,
যদিও আশআরী ও মাতুরিদি মতবাদকে প্রায়শই সুন্নি "সনাতন ধারা" বলে ডাকা হয়, আছারী মতবাদও এদের পাশাপাশি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, যার অনুসারীরা একে সনাতন সুন্নি ধর্মবিশ্বাস বলে দাবি করে আসছে।
,
আধুনিক যুগে, ইসলামী ধর্মতত্ত্বের উপর আছারী মতবাদের একটি ধারণাতীত প্রভাব রয়েছে, যা ওয়াহাবি ও অন্যান্য সমসাময়িক ঐতিহ্যবাদী (আছারী) সালাফি অনুসারীদের দ্বারা অনুসৃত হচ্ছে এবং তা হাম্বলি মতাদর্শের সীমা অতিক্রম করে আরও বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।
,
(০২) আসারীদের কিছু আকীদাঃ
★কুরআন সম্পাদনা
আছারীগণ বিশ্বাস করে যে, কুরআনের সকল অংশ হল অসৃষ্ট (গাইর মাখলুক)।
আশআরি মাতুরিদিরা মনে করেন যে কুরআন যেটা আল্লাহ তায়ালার কালাম,সেটা মাখলুক নয়,তবে দুনিয়াতে আমরা যেই লিখিত পান্ডুলিপি আকারে কুরআন দেখি,সেটা মাখলুক।
,
বর্ণিত আছে যে আহমদ ইবনে হাম্বল বলেছেন, "কুরআন হল আল্লাহর বাণী, যা তিনি ব্যক্ত করেছেন; এটি অসৃষ্ট। যে এর বিপরীত দাবি করবে, সে একজন জাহমিয়া, একজন কাফির। আর যে বলে, 'কুরআন আল্লাহর বাণী,' কিন্তু এটা বলে না যে এটি 'অসৃষ্ট,' সে পূর্বোক্তের তুলনায় আরও জঘন্য কথা বলে।"
★কালাম ও মানবীয় যুক্তিসম্পাদনা
আছারীদের কাছে, মানবীয় যুক্তির নির্ভুলতা হল সীমিত, আর ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কিত বিষয়ের যৌক্তিক প্রমাণের উপর আস্থা রাখাও যায় না, বিশ্বাস করাও যায় না, তাই তাদের মতে, কালাম হল একটি নিন্দনীয় বিদআত।
★আল্লাহর গুণাবলি সম্পাদনা
আছারীগণ দৃঢ়ভাবে আল্লাহর গুণাবলির অস্তিত্বের স্বীকৃতি দেয় এবং এবং সেগুলোর সবগুলোকেই তারা সমানভাবে চিরন্তন হিসেবে গণ্য করে। তারা কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক আয়াতকে যেভাবে আছে সেভাবেই গ্রহণ করে, তাদের কোন যৌক্তিক বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যাকে বর্ধিত করার চেষ্টা করে না।
,
(এটার উপরে বিস্তারিত জানতে আকীদার কিতাব পড়ুন)
★ঈমান সম্পাদনা
আছারীগণ বিশ্বাস করে যে, ইসলামে নির্দেশিত রীতিনীতি ও কর্তব্য পালন করা ও না করার মধ্য দিয়ে ঈমান বৃদ্ধি ও হ্রাস পায়, যেমন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়।
তারা বিশ্বাস করে মানুষের ঈমান তার অন্তরে, মৌখিক স্বীকৃতিতে এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কাজকর্মের মধ্যে নিহিত থাকে।
মাতুরিদিরা মনে করে যে ঈমান বাড়েওনা,কমেওনা।
★তাওহীদের শ্রেণিবিভাগসম্পাদনা
কিছু আছারী ধর্মতত্ত্বের পণ্ডিত তাওহীদকে তিনটি শাখায় বিভক্ত করেছেন; তাওহীদ আল-রুবুবিয়াহ ("প্রভুত্বের একত্ববাদ", যে বিশ্বাসের অর্থ হল আল্লাহ পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা ও বিশ্বের রক্ষক) ও তাওহীদ আল-উলুহিয়াহ ("ঈশ্বরত্বের একত্ববাদ", যার অর্থ হল আল্লাহকে একমাত্র ঈশ্বর হিসেবে উপাসনা করা বা ঈশ্বরকে এককভাবে উপাসনা করা) আর তাওহীদ আল-আসমা ওয়াস সিফাত ("নামসমূহ ও গুণাবলির একত্ববাদ", যার অর্থ হল আল্লাহর কিছু নির্দিষ্ট গুণাবলি আছে যেগুলো একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়)।
ইসলামী আলেমদের মধ্যে ইবনে তাইমিয়া সর্বপ্রথম এই পার্থক্যকে মানুষের কাছে স্বতন্ত্রভাবে সুপরিচিত করে তোলেন বলে মনে করা হয়।
,
মাতুরিদিদের কিছু আকীদাঃ
(আশআরিদের আকিদাও এর কাছা কাছিই।
একটু মতবিরোধ রয়েছে।)
★আল্লাহ কাউকে শক্তির বাইরে কষ্ট দেননা।
★আল্লাহর সকল কাজ কল্যানের উপর ভিত্তিশীল।
★জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় লাভ।
★আল্লাহ যুলুম করেননা,তার জালেম হওয়া জ্ঞাংত দিক দিয়ে অসম্ভব।
★ইমান হ্রাস পায়না,বৃদ্ধিও পায়না।
★আল্লাহকে যথাযথভাবে চেনা অসম্ভব।
★ জীবন সম্পর্কে হতাশ হওয়া অবস্থাতেও তওবা কবুল হয়।
★মাতুরিদিয়্যা ফিরকা মনে করেন,
আল্লাহ তা'আলা যে সমস্ত ওয়াদা করেছেন, জান্নাত জাহান্নাম সম্পর্কে।এগুলোর বিরোধী কোনো ফয়সালা আল্লাহ কখনো করবেন না।অন্যদিকে আশায়েরা ফিরকা মনে করেন,আল্লাহর জন্য জায়েয রয়েছে,নিজ ওয়াদার খেলাফ কিছু করা।
নজমুল ফারাঈদ-২৯
আল্লাহ কখনো ফে'লে কাবীহ সংগঠিত করবেন না।তথা কামিল ঈমানদারকে আযাব প্রদান,আম্ববিয়ায়ে কেরাম কে আযাব প্রদান,কাফিরকে জান্নাতে প্রবশ করানো, এ সব আল্লাহ কখনো করবেন না।তবে আশায়েরা ফিরকা মনে করে,এ গুলো আল্লাহ জন্য জায়েয রয়েছে।তিনি চাইলে এগুলো করতে পারবেন।(নজমুল ফারাঈদ-৩০)
,
(০৩)
আশআরি ও মাতুরিদি আকীদায় অনেক অনেক ভুল আছে।" এটি অপবাদ দেওয়া হয়েছে।
আরো জানুনঃ
,
★আছারী সম্পর্কে অনেক উলামায়ে কেরাম আহলে হক তথা আহলে সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন।
তবে আরো উলামায়ে কেরামগন এর বিপরিত মতও পোষন করেছেন।