بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সত্যের নিকটবর্তী থাকো এবং সরল-সোজা পথ অবলম্বন করো। মুমিনের যে কষ্টই হোক না কেন, এমনকি তার গায়ে যদি কোনো কাঁটা বিঁধে বা সে কোনো বিপদে পতিত হয়—সব কিছুই তার গুনাহর কাফফারা হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩০৩৮)
অসুস্থতা দ্বারা মুমিন বান্দার স্তর উন্নত হয়। অসুস্থতাকে অশুভ নিদর্শন হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ যার মঙ্গল চান তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪৫)
সুস্থতা আল্লাহর নেয়ামত। আবার অসুস্থতার মাধ্যমে মুমিনদের পাপ মোচন হয়। সুস্থতার জন্য আল্লাহর দরবারে যেমন দোয়া করা উচিৎ তেমনি অসুস্থ হলেও তা থেকে পানাহ পাওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা উচিৎ।
রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভের দোয়া:
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ مُذْهِبَ الْبَاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شَافِيَ إِلاَّ أَنْتَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বান-নাসি মুজহিবাল বা’সি, ইশফি আনতাশ-শাফি, লা শাফি ইল্লা আনতা শিফায়ান লা য়ুগাদিরু সুকমা।
অর্থ: হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক, কষ্ট দূরকারী। আমাকে আরোগ্য দিন, আপনি আরোগ্যকারী; আপনি ছাড়া কোনো আরোগ্যকারী নেই। এমন আরোগ্য দিন যেন কোনো রোগ অবশিষ্ট না থাকে।
হাদিসে এসেছে, আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিদের ঝাড়-ফুঁক করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭৪২)
তবে ইসলামে আহার্য ও পানীয় বস্তুতে ফুঁ দিতে নিষেধ করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন—রাসূলুল্লাহ (সা.) পানপাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে ও তার মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৬৮৬)
মধু ও কালোজিরা ইত্যাদি বিভিন্ন খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তার (মৌমাছির) উদর থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয় (মধু), যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য।’ (সূরা : নাহল, আয়াত : ৬৯)
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ‘কালোজিরার মধ্যে মৃত্যু ছাড়া অন্য সব রোগের আরোগ্য রয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২৮৬)
উসমান ইবনে হুনাইফ (রা.) থেকে বর্ণিত, এক অন্ধ ব্যক্তি নবী (সা.) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আমার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করুন, যেন আমাকে তিনি আরোগ্য দান করেন। তিনি বলেন, তুমি কামনা করলে আমি দোয়া করব, আর তুমি চাইলে ধৈর্য ধারণ করতে পারো, সেটা হবে তোমার জন্য উত্তম। সে বলল, তার কাছে দোয়া করুন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে উত্তমভাবে অজু করার হুকুম করলেন এবং এই দোয়া করতে বললেন,
اللَّهمَّ إنِّي أسألُكَ وأتوجَّهُ إليكَ بنبيِّكَ محمدٍ صَلَّى اللَّهُ عليْهِ وعلى آلهِ وسلَّمَ نبيِّ الرحمةِ ، يا محمدُ إنِّي أتوجَّهُ بكَ إلى ربِّي في حاجَتي هذه فتَقضى، وتُشفعُني فيه وتشفعُهُ فيَّ
আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহু ইলাইকা বিনাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যির রহমাতি ইন্নি তাওয়াজ্জাহতু বিকা ইলা রব্বি ফি হাজাতি হাজিহি লিতুকদ্বা লি, আল্লাহুম্মা ফাশাফফি’হু ফিয়্যা।
(তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৭৮; ইবনু খুজাইমা, হাদিস : ২/২২৫; মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস : ১/৭০৭; তাবরানি)
★ ইবাদত, আমল ও সুষ্ঠু জীবনাচারে নির্ভর করে ইহকাল ও পরকালের সফলতা। ইবাদতের প্রতি যাতে আমাদের আগ্রহ বাড়ে সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হয়। ইবাদতে আগ্রহ বাড়ার দোয়া হলো-
اللَّهُمَّ أعِنَّا عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আ-ইন্নি আলা জিকরিকা, ওয়া শুকরিকা, ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা।
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনার জিকির করতে, আপনার শোকরিয়া আদায় করতে এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন।
মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) তার হাত ধরে বলেন, ‘হে মুআজ, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালোবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালোবাসি। তিনি বলেন, হে মুআজ, আমি তোমাকে অসিয়ত করছি, তুমি প্রত্যেক নামাজের পর এ দোয়া কখনো পরিহার করবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২২)
প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনি ভাই / বোন!
উপরে উল্লেখিত আমলগুলি করলে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে সুস্থতার নেয়ামত দান করবেন বলে আশা রাখি ইনশাআল্লাহ ।