আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
77 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (22 points)
আসসালামু আলাইকুম।

একটি ২৮/২৯ বছরের মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে কার পছন্দ অগ্রাধিকার পাবে? মেয়েটির নিজের না তার বাবা মায়ের। মেয়েটি ৫ বছর ধরে চাকুরি করছে। বাবা মা বা পরিবার এতদিন বিয়ের ব্যাপারে কোনই আগ্রহ দেখায়নি। মেয়েটি মনে মনে একজনকে পছন্দ করে যিনি ইসলামের রুকনগুলো মেনে চলেন, আলহামদুলিল্লাহ এবং চাকুরীকরেন। এখন মেয়েটি যখন পরিবারে তার নিজের পছন্দের ব্যাপারে জানিয়েছে এবং ছেলের পরিবার থেকে প্রস্তাব এসেছে তখন পরিবার বলছে নিজে কাউকে পছন্দ করা হারাম। মেয়ের বাবা বলছেন যেহেতু তিনি বাবা তাই তিনিই একমাত্র অধিকার রাখেন মেয়ের বিবাহের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার। এবং বাবার অনুমতি ছাডা যিনাহই হবে শুধু বিয়ে নয়। আর মেয়েটিকে বাবার কথা শুনতেই হবে নতুবা ৫০ লক্ষ টাকা দিতে হবে কেননা তার বাবা অনেক খরচ করেছেন তার জন্যে। উল্লেখ্য চাকরি শুরুর পর থেকেই মেয়েটি তার বেতনের অর্ধেকেরও বেশী অংশ পরিবারে দিচ্ছেন প্রতিমাসে পিতা মাতাকে। মেয়েটির মা বলছেন কাউকে পছন্দ করে রাখা হারাম, নাফসের দাসত্ব, শিরক। তিনি সুরা বনী ইসরাইল এর আয়াত এক রেফারেন্সে বলছেন বাবা মাকে উহ বলতেও নিষেধ করা হয়েছে। আর এটাতো নাফরমানী তাদের কথার বিরোধিতা। মেয়েটি আগেও বহুবার পরিবারকে বলেছে এ বিয়ের ব্যাপারে তারা চাননি তখন বিয়ে দিতে।
প্রশ্ন হলো, বিয়ের মত এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপারেও কি মেয়েদের কোন অধিকারই নেই। ২৮ বছরের একজন নারী যিনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তার কি কোনই অধিকার নেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার? দয়া করে জানাবেন।

জাযাকাল্লাহুল খাইরান।

1 Answer

0 votes
by (684,760 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


শরীয়তের বিধান মতে বালেগাহ মেয়ের বিবাহের ক্ষেত্রে তার পছন্দের অগ্রাধিকার রয়েছে।
এখানে বাবা মার পছন্দের অগ্রাধিকার নেই।
তারা মেয়ের অনিচ্ছায় জোড় করে কোথাও বিবাহ দিতে পারবেনা।  
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عن بُرَيْدَةَ بن الحصيب قال : جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقَالَتْ : إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ لِيَرْفَعَ بِي خَسِيسَتَهُ .
فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا .
فَقَالَتْ : قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي ، وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ لَيْسَ إِلَى الْآبَاءِ مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ.
رواه ابن ماجه (1874) ، وصححه البوصيري في مصباح الزجاجة (2/102) ، وكذا قال الشيخ مقبل الوادعي : " صحيح على شرط مسلم " ، انتهى من الصحيح المسند صـ 160

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. বলেন, একবার এক তরুণী তাঁর কাছে এসে বলল, আমার বাবা আমাকে তার ভাতিজার সাথে বিবাহ দিয়েছে-উদ্দেশ্য আমার দ্বারা তার হীনাবস্থা ঘুচানো-কিন্তু আমার তাতে সম্মতি ছিল না।

উম্মুল মুমিনীন বললেন, তুমি বসো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসুন। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলে তিনি তাঁকে সে ঘটনা অবগত করলেন। তা শুনে তিনি মেয়েটির বাবাকে ডেকে পাঠালেন।

তারপর মেয়েটিকে নিজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দিলেন। মেয়েটি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার বাবা যা করেছেন আমি তা অনুমোদন করলাম। আমার উদ্দেশ্য কেবল নারীদেরকে জানানো যে, এ বিষয়ের ক্ষমতা বাবাদের হাতে নয়। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ৫৩৯০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৮৭৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৫০৮৭)

হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন এক মেয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা, কতইনা উত্তম পিতা। আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সঙ্গে (আমাকে) বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি।
এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে (মেয়েটির) পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ বিয়ে হবে না, (মেয়েটিকে বললেন) তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও’। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)


অন্য এক হাদীসে নবী কারীম ﷺ ইরশাদ করেন—

الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا

অর্থ : সাবালিকা মেয়ের নিজ বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অভিভাবক অপেক্ষা তার নিজেরই বেশি। (মুসলিম : ১৪২১; আবু দাউদ : ২০৯৮; তিরমিযী : ২০৯৮)

ولا تجبر البالغة البكر علي النكاح لإنقطاع الولاية.

অর্থ : অভিভাবকত্বের অধিকার চলে যাওয়ার কারণে প্রাপ্তবয়স্ক কুমারী মেয়েকে (নির্দিষ্ট কোথাও) বিয়েতে বাধ্য করা যাবে না৷ (আদ্দুররুল মুখতার : ৪/১৫৯)

‘পরিবারের পছন্দনীয় ছেলেকে বিয়ে করতে হবে’-এ মর্মে প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো মেয়ের ওপর জোর করার কোনো নিয়ম ইসলামে নেই।

হাদিসের আলোকে পাত্র নির্বাচনে মেয়ের মতামত নেয়া আবশ্যক। বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র নির্বাচনে কোনোভাবেই কোনো প্রাপ্তবয়স্ক  মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর খাটানো ঠিক হবে না। তবে কোনো পিতামাতাই চান না তার মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাক।
তাই পিতা মাতার পরামর্শ মেনে ভালো পাত্র পেলে সেখানেই বিবাহ করার পরামর্শ থাকবে।
তবে ছেলে নির্বাচনের আগে অবশ্যই মেয়ের সঙ্গে পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পরামর্শ করা জরুরি। কেননা সারা জীবন সংসার করবে মেয়েটি। 

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে পাত্র পাত্রীর মাঝে কুফুর সামঞ্জস্যতা থাকলে পরিবারকে ছেলের অবস্থা ইত্যাদি বলে বুঝিয়ে বিবাহে রাজি করানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন। 

আরো জানুনঃ 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...