আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
2,515 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (19 points)
কেউ যদি আল্লাহকে ওয়াদা করে বলে যে ' হে আল্লাহ আমি ওয়াদা করলাম অমুক কাজ কখনো করবো না,১) ' তাহলে কি এটা তাওবাহ হিসেবে গন্য হবে?  নাকি ওয়াদা হয়ে যাবে? এরপর যদি সে এই চিন্তা করে যে হয়তো কখনো শয়তানের ধোকায় পরে এই ওয়াদা ভঙ্গ হয়ে যাবে  !   তাই   সে যদি আল্লাহ কে বলে ' হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে করা অমুক ওয়াদা বাতিল করে দিলাম ' কিংবা সে যদি আল্লাহর  কাছে ওয়াদা করে ভঙ্গ করে ফেলে ২)এর জন্য তার কি কঠিন গুনাহ হবে? এ জন্য কি কাফফারা করতে হবে?  আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরেও? এবং ২)অতীতে মানুষের সাথে কৃত কতগুলি ওয়াদা ভঙ্গ হয়ে গেছে তা না জানলে কিভাবে কাফফারা করতে হবে? ৪)কেউ যদি ওয়াদা ভঙ্গের কাফফারা না করে মারা যায় তার কি কঠিন শাস্তি হবে?   'ওয়াদা বা অঙ্গিকারের পরিবর্তে সামান্য বিনিময় গ্রহন '  এই ব্যাপারে কুরআন শরীফে আল্লাহ যা বলেছেন আমি তার সারমর্ম জানতে  চাই।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم 

তওবা প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন 
انَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧]وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا [٤:١٨

অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ।
আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। {সূরা নিসা-১৭-১৮}

★তাওবা করার পদ্ধতি
তওবা হওয়ার জন্য শর্ত তিনটি। যথা-

১- গোনাহ ছেড়ে দেয়া।
২- গোনাহের কাজটি ভবিষ্যতে আর না করার দৃঢ় অঙ্গিকার করা।
৩- পূর্ব গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।

এ তিনটি কাজ পাওয়া গেলে এরই নাম তওবা। নিজে উপরোক্ত তিনটি কাজ করার দ্বারাই তওবা পূর্ণ হয়ে যায়।
,
(০১) সুতরাং  এটাকে পুরোপুরি তওবা বলা যায়না।
এটা ওয়াদা বলে সাব্যস্ত হবে। 
হ্যাঁ একথা বলার সময় যদি গুনাহ ছেড়ে দেওয়ার প্রতি মন থেকে দৃঢ় অঙ্গিকার থাকে,এবং সেই গুনাহ ছেড়ে দেন,তাহলে তওবা বলে গৃহিত হবে।
,

★★আল্লাহর কাছে ওয়াদা করুন বা মানুষের কাছেই ওয়াদা করু, ওয়াদা ভঙ্গের কাফফারা দিতে হয়না।শরীয়তের এর কোন নিয়ম নেই।তবে ওয়াদা ভঙ্গ করা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। কারণ, হাদিসে মুনাফিক দের একটি নিদর্শন হিসেবে ওয়াদা ভঙ্গ করাকে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
ওয়াদা ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহ  

হাদীস শরীফে এসেছে  
عن أبي هريرة عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( آية المنافق ثلاث إذا حدث كذب وإذا وعد أخلف وإذا اؤتمن خان 
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি। যথা- যখন সে কথা বলে তখন মিথ্যা বলে, আর যখন ওয়াদা করে তখন তা পূর্ণ করে না, আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, তখন সে তা আত্মসাৎ করে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৫৩৬, ৩৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১০৭}
,
★সুতরাং ওয়াদা ভঙ্গ করলে আল্লাহর কাছে খালেছ দিলে তওবা করতে হবে। 
তওবার মাধ্যমে সকল গোনাহই ক্ষমা হয়ে যায়।
وَأَذَانٌ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الْحَجِّ الْأَكْبَرِ أَنَّ اللَّهَ بَرِيءٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ ۙ وَرَسُولُهُ ۚ فَإِن تُبْتُمْ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ غَيْرُ مُعْجِزِي اللَّهِ ۗ وَبَشِّرِ الَّذِينَ كَفَرُوا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ [٩:٣] 
আর মহান হজ্বের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা করে দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরেকদের থেকে দায়িত্ব মুক্ত এবং তাঁর রসূলও। অবশ্য যদি তোমরা তওবা কর, তবে তা, তোমাদের জন্যেও কল্যাণকর,আর যদি মুখ ফেরাও,তবে জেনে রেখো, আল্লাহকে তোমরা পরাভূত করতে পারবে না। আর কাফেরদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। [সূরা তওবা-৩] 


إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ [٢:٢٢٢
নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। [বাকারা-২২২] 

إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧] وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا [٤:١٨

অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়,তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। {সূরা নিসা-১৭-১৮}

عَنْ أَبِي عُبَيْدَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ»
হযরত ইবাদা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, গোনাহ থেকে তওবাকারী গোনাহ করে নাই ব্যক্তির মত হয়ে যায়। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০] 

,
ওয়াদা রক্ষা ইমানের মূলধন।  
মুমিন চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ওয়াদা রক্ষা করা। ওয়াদা রক্ষা করা পবিত্র কোরআনের নির্দেশ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমার সঙ্গে করা ওয়াদা তোমরা পূর্ণ কর। আমিও তোমাদের সঙ্গে করা ওয়াদা পূর্ণ করব। আর আমাকেই ভয় কর।’ (সূরা বাকারা : ৪০)। 

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ এবং পরস্পরের সঙ্গে করা ওয়াদা পূর্ণ কর। আর আল্লাহকে সাক্ষী রেখে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ কর না।’ (সূরা নাহল : ৯১)।

 নবী-রসুলরা ছিলেন ওয়াদা রক্ষাকারী সত্যনিষ্ঠ মহামানব। হজরত ইসমাইল (আ.) সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এ কিতাবে স্মরণ কর ইসমাইলের কথা। সে ছিল ওয়াদা রক্ষাকারী সত্যনিষ্ঠ নবী এবং রসুল।’ (সূরা মারয়াম : ৫৪)। 

আবদুল্লাহ ইবনে হাসমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবুওয়তের আগে আমি রসুল (সা.) থেকে কিছু দ্রব্য ক্রয় করি এবং বলি আপনি এখানে দাঁড়ান আমি টাকা নিয়ে আসছি। বাড়িতে গিয়ে আমি রসুল (সা.)-এর কথা ভুলে গেলাম। তিন দিন পর মনে হওয়া মাত্রই ওই স্থানে গিয়ে দেখি হুজুর (সা.) দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আমাকে দেখে শুধু বললেন, তুমি আমাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেললে। আমি তিন দিন পর্যন্ত তোমার জন্য এখানে অপেক্ষা করছি।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৯৬)।

 পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে ওয়াদা রক্ষাকারীর প্রশংসা ও মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘প্রকৃত মোত্তাকীরা যখন ওয়াদা করে, তখন তা রক্ষা করে।’ (সূরা বাকারা : ১৭৭)। ‘

হ্যাঁ! কেউ যদি ওয়াদা রক্ষা করে এবং আল্লাহকে ভয় করে, তবে সে জেনে রাখুক, আল্লাহ এমন খোদাভিরুদের ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান : ৭৬)। 

ওয়াদা রক্ষা না করা কবিরা গুনাহ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ওয়াদা রক্ষা না করার অপরাধে আমি বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত করেছি। আর তাদের অন্তরগুলোকে করে দিয়েছি কঠিন।’ (সূরা মায়েদা : ১৩।) 

‘তিনি তাদের অন্তরে মুনাফিকি স্থায়ী করে দিলেন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার দিন পর্যন্ত। কারণ তারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত ওয়াদা রক্ষা করেনি বরং মিথ্যাচার করেছে।’ (সূরা তাওবা : ৭৭)। 

 আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা ওয়াদা রক্ষা কর। ওয়াদা রক্ষার ব্যাপারে তোমাদের প্রশ্ন করা হবে।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৩)। 

হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘ধ্বংস তার জন্য! ধ্বংস তার জন্য! ধ্বংস তার জন্য! যে ওয়াদা করল অতঃপর তা রক্ষা করল না।’ (মু’জামুল আওসাত : ৩৬৪৮, তারিখে দিমাশক : ৫৬১১৯)।
 , 
(০২) এর জন্য আল্লাহর কাছে খালেছ দিলে ক্ষমা চাইতে হবে। 

(০৩)   ওয়াদা ভঙ্গের যেহেতু কাফফারা নেই,তাই
অতীতে মানুষের সাথে কৃত কতগুলি ওয়াদা ভঙ্গ হয়ে গেছে তার কোনো কাফফারা দিতে হবেনা।
আল্লাহর কাছে খালেছ দিলে ক্ষমা চাইতে হবে। 

(০৪) ওয়াদা ভঙ্গ করা কবিরাহ গুনাহ। 
এর কোনো কাফফারা নেই।
কেহ যদি তওবা না করর,
আর আল্লাহ তায়ালা যদি তাকে মাফ না করেন,তাহলে আল্লাহ চাহেন তো তাকে শাস্তি দিতে পারেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...