আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
161 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (49 points)
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ্ ,,


উস্তাদজী ,
১/ কোন ছেলের গলায় যদি কিছু সময়ের জন্য স্বর্ণ চেইন পড়ানো হয় তবে কি গোনাহ হবে ? বিয়ে করতে আসছে এমন ছেলে ।
২/ আজকাল দেখা যায়, প্রায় বিয়ে হলুদ দেওয়া হয় , অপসংস্কৃতি বললেও কেউ মানে না ,বলে এমনি দিচ্ছি ইসলামে এটি সমর্থন কতটুকু , গোনাহ হবে কি ?

৩/ মেয়ে বাড়িতে ছেলেরা আসে বিবাহের সময় অনেক লোক নিয়ে তাদের পক্ষ থেকে , খেয়ে দেয়ে মেয়ে নিয়ে যায় , মেয়ে পক্ষ থেকে খুশি হয়ে খাট পালঙ্ক বিভিন্ন তৈজসপত্র দেয় এগুলো ইসলামের কেমন বিয়ে ? জায়েয কতটুকু ?

৪/ একজন মেয়ের জন্য সহীহ সুন্নাহ বিয়ে কোনটি ? পদ্ধতি কি কি ছেলে বাড়ি যাওয়ার পূর্বে পর্যন্ত ।

ওয়ালিমা কোনটি , ? আজকাল খাওয়া দাওয়া হয় মেয়ে বাড়িতে অথচ জানতাম ছেলেদের সব খরচ হয় ইসলামে ।

৫/ কোন মেয়ে যদি বলে আমি ৭ ভরি স্বর্ণ নিচে বিয়ে করবো না তবে কি সেটা জায়েয হবে ?
মোহরানা যদি মেয়ের অধিকার হয় তবে কি সে যা খুশি তাই ধরতে পারে?

৬/ কোন মেয়ের ১২ দিন ১২ রাত পাক থাকল এবং এরপর ব্লিডিং আসলো সেটা তো তাহলে ইস্তেহাযা গন্য হবে এবং আরো ৩ দিন ৩ রাত ইস্তেহাযা ধরে মোট ১৫ দিন সালাত, কুরআন পড়লো , এরপরে ও ব্লিডিং চলতেছে , তো ১৫ দিন ১৫ রাত ধরার পরে বাকি দিন গুলো হায়েজ ধরে সালাত কুরআন পড়া বাদ দিয়েছে , এবং পরে দেখা গেছে ২ দিন ২ রাত থাকতে সে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং পাক তবে এ ক্ষেত্রে তার দুটোই ইস্তেহাযা ধরতে হবে সূত্র অনুযায়ী ?
যদি ইস্তেহাযা ধরে তবে তো ফরয গোসলের ও দরকার নেই , সে এমনিতেই আবার সালাত কুরআন পড়তে পারবে ।


৭/ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপুড় হয়ে ঘুমাতে বারণ করেছেন , কেউ যদি উপুড় হয়ে মোবাইল দেখে বা পড়ালেখা করে বা এমনি জেগে থাকা অবস্থায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকে তবে কি গোনাহ হবে ? একজনকে বলেছিলাম নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপুড় হয়ে থাকাকে বারণ করেছেন , সে বললো ওগুলো দুর্বল হাদীস ।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম। হাদীসের মাঝে পরিস্কার নিষেধাজ্ঞা এসেছে। তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ছেলের ক্ষেত্রে সামান্য সময়ের জন্যেও তা ব্যবহার করা বৈধ হবে না।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ فِي يَدِ رَجُلٍ، فَنَزَعَهُ فَطَرَحَهُ، وَقَالَ: «يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِي يَدِهِ»، فَقِيلَ لِلرَّجُلِ بَعْدَ مَا ذَهَبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: خُذْ خَاتِمَكَ انْتَفِعْ بِهِ، قَالَ: لَا وَاللهِ، لَا آخُذُهُ أَبَدًا وَقَدْ طَرَحَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এক ব্যক্তির হাতে স্বর্ণের আংটি দেখতে পেলেন। তখন তিনি তা খুলে ছুড়ে ফেলে দিলেন। বললেনঃ তোমাদের কেউ কেউ জাহান্নামের জলন্ত অঙ্গার নিয়ে হাতে পরিধান করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্ত স্থান থেকে প্রস্থানের পর উক্ত ব্যক্তিকে বলা হল, উক্ত আংটিটি নিয়ে কাজে লাগাও। সাহাবাটি বললেন, না, আল্লাহর কসম! যে বস্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফেলে দিয়েছেন তা আমি কখনোই গ্রহণ করবো না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২০৯০]

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: ” مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلَا يَلْبَسْ حَرِيرًا وَلَا ذَهَبًا “

হযরত উমামা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা উপর এবং আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন রেশমী কাপড় এবং স্বর্ণ ব্যবহার না করে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২২৪৮]

قَالَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عَمْرٍو: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مَنْ لَبِسَ الذَّهَبَ مِنْ أُمَّتِي، فَمَاتَ وَهُوَ يَلْبَسُهُ لَمْ يَلْبَسْ مِنْ ذَهَبِ الْجَنَّةِ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের মাঝে যে ব্যক্তি স্বর্ণ পরিহিত অব্স্থায় মারা যায়, তাকে জান্নাতের স্বর্ণ পরিধান করানো হবে না। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৬৯৪৭]

أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ حَدَّثَهُ، أَنَّ رَجُلًا قَدِمَ مِنْ نَجْرَانَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ خَاتَمٌ مِنْ ذَهَبٍ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «إِنَّكَ جِئْتَنِي وَفِي يَدِكَ جَمْرَةٌ مِنْ نَارٍ

হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। নাজরান থেকে এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসল। তার হাতে ছিল স্বর্ণের আংটি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন, নিশ্চয় তুমি জাহান্নামের জলন্ত অঙ্গার তোমার হাতে নিয়ে এসেছো। [সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৫১৮৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১১১০৯, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৪৮৯]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ «نَهَى عَنْ خَاتَمِ الذَّهَبِ»

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতে নিষেধ করছেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৮৬৪]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلْبَسُ خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ، فَنَبَذَهُ فَقَالَ: «لاَ أَلْبَسُهُ أَبَدًا» فَنَبَذَ النَّاسُ خَوَاتِيمَهُمْ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণের আংটি পরিধান করলেন। তারপর তার খুলে ফেলে দিলেন, এবং বললেন, কখনোই এটি পরিধান করো না। তখন সমস্ত সাহাবাগণ তাদের (স্বর্ণের) আংটি খুলে ফেলে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৮৬৭]


(০২)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
এটি হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি,   ইসলামে এটি জায়েজ নেই।
এতে গুনাহ হবে।

বিস্তারিত জানুনঃ

(০৩)
এগুলো অনেকটা মেয়ের বাবার উপর জুলুমের নামান্তর।
,
হ্যাঁ যদি মেয়ের বাবা কোনো সামাজিকতা নয়,বরং  নিজ থেকেই সন্তুষ্টি চিত্তে খাট পালং দেয়,আথিতেয়তার ব্যবস্থা করে,তাহলে তাহা জায়েজ আছে।   

(০৪)
সুন্নতি বিয়ে সংক্রান্ত জানুনঃ-

ওলিমা হলো বাসর রাতের পর ছেলের বাসায় যেই খাবার খাওয়ানো হয়,সেটি ওলিমা।

মেয়ের বাসায় খাওয়ানো ওলিমা নয়।

(০৫)
মোহরানা যেহেতু মেয়ের অধিকার,তাই সে যা খুশি তাই ধরতে পারে।

তবে মানবিকতার দিকে লক্ষ্য করে ছেলের সামর্থ দেখা উচিত।
(০৬)
হ্যাঁ এ ক্ষেত্রে তার দুটোই ইস্তেহাযা ধরতে হবে।

সুুতরাং ফরয গোসলের দরকার নেই , সে এমনিতেই আবার সালাত কুরআন পড়তে পারবে ।

(০৭)
কাজটি নাজায়েজ। 
তাই এ থেকে বিরত থাকতে হবে। 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে গুনাহ হবে।  

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

★প্রখ্যাত সাহাবী ইয়ায়ীশ রা. বলেন, আমার পিতা তিখফা ইবনে কায়েস আল গিফারী রা. ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন:
“আমি একদিন (ভোররাতে) মসজিদে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে দেখলাম যে, কে যেন আমাকে পা দিয়ে নাড়াচ্ছেন আর বলছেন, হে জুনাইদিব,
إِنَّ هَذِهِ ضِجْعَةٌ يُبْغِضُهَا اللَّهُ
“শোয়ার এ পদ্ধতি আল্লাহ ঘৃণা করেন।”
আমি চোখ মেলে দেখি, সে ব্যক্তিটি হচ্ছে স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
(আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১৯৯)

(হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ প্রমুখ এবং আলবানী এটিকে হাসান হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।)

★অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু জর (রা.) বলেন, আমি উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় নবী (সা.) আমার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে তাঁর পা দ্বারা খোঁচা মেরে বলেন, হে জুনাইদিব! 

إِنَّمَا هَذِهِ ضِجْعَةُ أَهْلِ النَّارِ

এটা তো জাহান্নামের শয়ন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৭২৪)

(এ হাদিসটিকে আহমদ, আলবানী ও আহমদ শাকের সহীহ বলেছেন)

★রাসুল (সা.)-এর বাণী ‘এটা তো জাহান্নামের শয়ন’ 

এর পক্ষে পবিত্র কোরআনের আয়াতও পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে জাহান্নামিদের প্রতি ইরশাদ হয়েছে, ‘যেদিন তাদের উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে; সেদিন বলা হবে, জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদন করো।’ (সুরা : কমার, আয়াত : ৪৮)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...