আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
243 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (5 points)
কোন অমুসলিম যদি আমাদের নবী রসুলদের নিয়ে এবং আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে তাহলে আমাদের কি করা উচিত?অভিশাপ দেয়া যাবে কি?

1 Answer

0 votes
by (657,800 points)
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم  
,
কখন কার উপর অভিশাপ দেয়া জায়েজ আর কখন নাজায়েয তা কুরআন ও হাদিসের আলোকে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:

◉◈ এক:
নির্দিষ্ট ভাবে কোনও ব্যক্তির উপর অভিশাপ দেওয়া জায়েজ নেই-চাই সে মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম হোক। কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
سَالِمٌ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنْ الرُّكُوْعِ فِي الرَّكْعَةِ الْآخِرَةِ مِنَ الْفَجْرِ يَقُوْلُ : اللهُمَّ الْعَنْ فُلَانًا وَفُلَانًا وَفُلَانًا بَعْدَ مَا يَقُوْلُ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ فَأَنْزَلَ اللهُ {لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ} إِلَى قَوْلِهِ {فَإِنَّهُمْ ظَالِمُوْنَ} رَوَاهُ إِسْحَاقُ بْنُ رَاشِدٍ عَنْ الزُّهْرِيِّ.
সালিম (রহ.) থেকে বর্ণিত, তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে শুনেছেন যে, তিনি ফজরের সলাতের শেষ রাকআতে রুকু থেকে মাথা তুলে ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্ (আল্লাহ তাঁর প্রশংসাকারীর প্রশংসা শোনেন। হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা)’, ‘রব্বানা ওয়ালাকাল হামদ’ বলার পর এটা বলতেনঃ হে আল্লাহ! অমুক, অমুক এবং অমুককে লানত করুন। তখন আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ لَيْسَ لَكَ مِنَ الأَمْرِ شَيْءٌ ….. فَإِنَّهُمْ ظَالِمُونَ “তিনি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদের শাস্তি দিবেন, এ বিষয়ে তোমার করণীয় কিছুই নেই। কারণ তারা জালিম।”(সূরা আলু ‘ইমরান ৩/১২৮)
[সহিহ বুখারী, অধ্যায়: তাফসীর, অনুচ্ছেদ: আল্লাহর বাণীঃ এই বিষয়ে আপনার করণীয় কিছুই নেই।]
এ হাদিস থেকে জানা গেল, আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্টভাবে কোন কাফিরকেও অভিশাপ দেয়ার অনুমতি দেন নি।
এ মর্মে আরেকটা হাদিস:
উমর ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তির নাম ছিল ‘আবদুল্লাহ, কিন্তু তাকে ‘হিমার’ (গাধা) উপাধিতে ডাকা হতো। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাসাতো। একদিন মদপানের অপরাধের জন্য নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর দণ্ড প্রয়োগ করেছিলেন। এরপর আবার একদিন তাকে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলে তিনি তাকে চাবুক মারার নির্দেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহ, এই লোকের উপর তোমার অভিসম্পাত হোক। কতবারই না তাকে এ অপরাধে আনা হল!
তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«لَا تَلْعَنُوْهُ فَوَ اللهِ مَا عَلِمْتُ أَنَّه يُحِبُّ اللّٰهَ وَرَسُوْلَه»
“তাকে অভিশাপ দিও না। আল্লাহর শপথ! আমি তার সম্পর্কে জানি যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালোবাসে।” (বুখারী)
এ হাদিসে দেখা গেলো ,প্রিয় নবি সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দিষ্টভাবে একজন পাপী ব্যক্তিকে অভিশাপ দেয়ার অনুমতি দেন নি।

◉◈ দুই:
অনির্দিষ্টভাবে পাপিষ্ঠ, কাফের-মুশরিক ও ইসলামের দুশমনদের ধ্বংস কামনা করা বা তাদেরকে অভিশাপ দেয়া জায়েজ আছে। যেমন: ,
«لَعَنَ اللَّهُ اليَهُودَ وَالنَّصَارَى، اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسْجِدًا»
“ইহুদি ও খৃষ্টানদের ওপর আল্লাহ তাআলার অভিশাপ, তারা তাদের নবিদের কবরকে (সেজদার জায়গা) মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।”
(সহিহ বুখারী ও মুসলিম)
আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে আলী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি বিষয়ে আমাকে অবহিত করেছেন:
«لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَيْهِ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ»
ক. যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করে তার উপর আল্লাহর লা’নত।
খ. যে ব্যক্তি নিজ পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত।
গ. যে ব্যক্তি কোনও পাপাচারী কিংবা বিদআতিকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত।
ঘ. যে ব্যক্তি জমিনের সীমানা পরিবর্তন করে, তার উপর আল্লাহর লা’নত’’।
[সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য পশু জবেহ করা হারাম।]
এ বিষয়ে প্রচুর হাদিস আছে।

◉◈ তিন:
নির্দিষ্ট কোন-কাফের মুশরিককে অভিসম্পাত করা জায়েজ আছে যদি কুরআন ও হাদিসে তাকে অভিসম্পাত করা হয়ে থাকে। যেমন: ইবলিসকে অভিশাপ দেয়া। আল্লাহ বলেন:
وَإِنَّ عَلَيْكَ اللَّعْنَةَ إِلَىٰ يَوْمِ الدِّينِ
”এবং তোমার প্রতি বিচারের দিন (কিয়ামত) পর্যন্ত অভিসম্পাত।” (সূরা হিজর: ৩৫)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে লানত বা অভিসম্পাত দিয়েছেন।
এছাড়াও ঐ ব্যক্তিদেরকে নির্দিষ্টভাবে লানত দেয়া জায়েজ কুরআন-হাদিস দ্বারা জানা যায় যে, তারা কুফরির উপর মারা গেছে। যেমন: ফিরআউন, নমরূদ, আবু লাহাব, আবু জাহেল ইত্যাদি।
,
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত কোন অমুসলিম যদি আমাদের নবী রসুলদের নিয়ে এবং আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে তাহলে বর্তমানে আমাদের জন্য উচিত হলো তার নামে মামলা করা। 
শরীয়ত সম্মত পন্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। 
★তাকে অভিশাপ দেয়া জায়েজ আছে।  
 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...