আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
235 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (77 points)
edited by
আসসালামুয়ালাইকুম ওরাহমাতুল্লা। আমার কিছু প্রশ্ন ছিল

১।আমি পড়া লেখা,করলে স্বামীর বাড়ি থেকে দূরে থাকতে হবে।তাই স্বামী বলেছিল যদি আমার সাথে সংসার করতে চাও তাহলে পড়ালেখা বাদ,দিতে হবে।আর পড়ালেখা চাইলে আমাকে বাদ দিতে হবে বা আমি সংসার করতে পারব না।ঠিক কি বলেছিল  মনে নেই।ওনার কথার সারাংস হচ্ছে এই রকম। এখন আবার বলতেছে পড়িও।এখন হুজুর আমি যদি পড়ি তাহলে কি আমার বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে?
২।আমার আর আমার স্বামি কে আমার পরিবার মেনে নেই নি।তহ ওনি বলেছিলেন আগে যদি তুমার পরিবার মেনে না নেই সম্পর্ক রাখবা না /যোগাযোগ করবা না / রাখবা না ওনাদের সাথে যদি আমাকে চাও,আর যদি আমাকে না চাও তাহলে রাখিও।এখন আবার বলতেছে তুমার ইচ্ছে হলে রাখিও যোগাযোগ বা সম্পর্ক।আসলে হুজুর ঠিক কোনটা বলেছিল মনে নেই তাই বা দিয়ে দিয়ে লিখেছি।এখন যদি আমি আমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করি তাহলে কি আমাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হবে?

৩।আমার স্বামী না বুঝে আমাকে তালাকের অধিকার দিয়ে দিছে।তহ আমি মাসআালা পড়ার সময় মেয়েরা যে নিজের ওপর তালাক নিতে পারে যে কথাটা বললে ওটা মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে।মানে প্রশ্ন পড়ার সময়।এইভাবে কি পড়ার সময় মুখ দিয়ে ভুলে বের হলে আমার উপর পতিত হবে তালাক? প্রশ্নে যা ছিল তা পড়েছি নিজেকে দি নাই।

৪।স্বামী আমার কাছ থেকে দূরে থাকে।তহ ওনাকে সময় কম দিতে পারায় যদি রাগ করে বলে রাখ ফোন,ওদের সাথে থাক যারা আছে,কল দিও না আর,ঘুমাও এসব  কথা দ্বারা কি তালাক হবে?

৫।হুজুর স্বামী আমাকে মাঝে মাঝে যা যা বলত।মনে হয় আমি নিজে চলে যাব বললে বলত।আমি চলে যাব বললেও ওনাকে তালাক দিয়ে চলে যাব ওটা না।দূরে কোথাও চলে যাব আর খুজে পাবা  এইরকম কিছু।তখন মনে হয় বলত যা যা।ঝগড়ার সময়।ওনি নিজ থেকে চলে যেতে বলে নি কোনদিন।তালাকের কথাও বলে নি। কিন্তু কোন কথার জন্য বলত আমার মনে নেই।কি জন্য বলত সেটাও মনে নেই।স্বামী কে বার বার প্রশ্ন করাই সে বিরক্ত হয়ে বলেছিল আর জিগ্যেস করিও না এই ব্যাপারে।"কসম আমার কিছু মনে নেয়" এই কথা স্বামী বলেছিল আরেকবার।আর বললেও তালাকের নিয়তে বলি নি কোন কথা কোনদিন এইরকম বলেছে।আর বিরক্ত করিও না প্লিজ নিতে পারতেছিনা আর এইরকমও বলেছিল।তাই স্বামীকেও আর জিগ্যেস করতে পারি নি।আমার ও মনে নেই হুজুর কেন,কোন নিয়তে বলেছে,তালাকের মজলিস ছিল কিনা।এতে কি তালাক হবে?

৬।হুজুর আরেকটা প্রশ্ন।ফেসবুকে কতগুলো মাঝে মাঝে ভাগ্য পরিক্ষা করার মত খেলা আসে।ওইগুলো তহ বিশ্বাস করি না।তবু সবাই  দিচ্ছে ওইরকম মজার ছলে আমিও  দিয়েছিলাম।কিন্তুু একফোটা বিশ্বাস করতাম না ওইগুলো কারণ আমি জানি আমার ভাগ্য আল্লাহ লিখে রাখছেে।এইরকম করার কারণে আমি কি বেইমান বা কাফের হয়ে যাব।আমার স্বামীও দিয়েছিল।ওনিও মনে হয় মজা করে দিয়েছিল।আর আগে আমরা রাশিমালা পড়তাম মজা করে দুজনেই।ওনিও কি বেইমান   বা কাফের হয়ে যাবে?

1 Answer

0 votes
by (548,730 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


তালাক খুবই মারাত্মক  একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যে,  আল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক।

(আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।) 

এ ভয়ানক শব্দটি নিয়ত থাকুক বা না থাকুক রাগে বলুক আর ভালবেসে বলুক স্ত্রীকে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ দিয়ে এ শব্দ বের হলেই তালাক পতিত হয়ে যায়। 

হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ “

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}


তালাক স্পষ্ট বাক্য দ্বারাও হতে পারে,আবার কেনায়া শব্দ,ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারাও হতে পারে।
কেনায়া তালাক বলা হয় স্পষ্ট তালাক শব্দ না বলে বরং তালাকের ইঙ্গিতসূচক শব্দ বলে তালাক দেওয়া। 

★★শরিয়তের পরিভাষায় ইঙ্গিত সূচক শব্দে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ 

وَالضَّرْبُ الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.

احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت
برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية

সারমর্মঃ  
কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে তোমাকে আমি ছেড়ে  দিলাম, যা খুশি তাই করো,তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন, তুমি স্বামী খুজো,বা স্বামী তালাশ করো,তাহলে এটিও কেনায়া তালাক।
কেনায়া তালাক হলো ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা যেটা হয়।
কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয়।

আরো জানুনঃ 

(০১)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
এরপরেও যদি আপনি লেখা পড়া চালিয়ে যান,তাহলে
প্রশ্নে উল্লেখিত কথার দ্বারা আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবেনা।
তালাক পতিত হবেনা। 

(০২)
উল্লেখিত ছুরতে আপনি যদি আপনার  
পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন, তাহলে  আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হবেনা।

(০৩)
এতে তালাক হবেনা।

(০৪)
এসব কথার দ্বারা তালাক হবেনা।

(০৫)
এতেও তালাক হবেনা।

(০৬)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনাদের কেহই বেইমান বা কাফের হয়ে যাবেনা।
নিশ্চিন্তে থাকুন।  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...