আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
427 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (12 points)
edited by

 

(০১)

ইদানিং বিকাশ থেকে বলা হয়েছে যে বিকাশ App থেকে বিল পে করলে প্রতি ঘন্টায় প্রথম ০৫ জনকে পুরো বিল ফেরত দেওয়া হবে,ক্যাশব্যাক সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা।

এটি নেওয়া জায়েয আছে?

(০২) শিক্ষকের হক সংক্রান্ত বিস্তারিত জানতে চাই। 

৩) বাবার সাথে মেশার কারণে যদি সন্তানের অন্তরে মুনাফিক্বের আছর পড়ে, বাবার অন্তরের খারাবির কারণে, তবে সন্তান যদি বাবার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে নিজের ইমান রক্ষার জন্য, নিজেকে দ্বীন বিমুখ হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য, এতে সন্তানের পাপ হবে কি?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم  

(০১)
বিকাশ App দিয়ে পে বিল করলে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়,যেমন চার্জ কাটেনা,লাইনে দাড়াতে হয়না,ইত্যাদি। 
মাঝে মাঝে তারা ক্যাশব্যাক স্বরুপ কিছু টাকা হাদিয়াও দেয়,যাহা নেওয়া বৈধ।

এটি আপনার জন্য উক্ত কোম্পানীর পক্ষ থেকে হাদিয়া ধরা হবে। তাই উক্ত ক্যাশব্যাক ব্যবহার করাতে কোন সমস্যা নেই।
عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّاسَ، كَانُوا يَتَحَرَّوْنَ بِهَدَايَاهُمْ يَوْمَ عَائِشَةَ، يَبْتَغُونَ بِهَا ـ أَوْ يَبْتَغُونَ بِذَلِكَ ـ مَرْضَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, লোকেরা তাদের হাদিয়া পাঠাবার জন্য ‘আয়িশা (রাঃ) এর নির্ধারিত দিনের অপেক্ষা করত। এতে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করত। [বুখারী, হাদীস নং-২৪০৪]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “إِذَا أُتِيَ بِطَعَامٍ سَأَلَ عَنْهُ أَهَدِيَّةٌ أَمْ صَدَقَةٌ فَإِنْ قِيلَ صَدَقَةٌ. قَالَ لأَصْحَابِهِ كُلُوا. وَلَمْ يَأْكُلْ، وَإِنْ قِيلَ هَدِيَّةٌ. ضَرَبَ بِيَدِهِ صلى الله عليه وسلم فَأَكَلَ مَعَهُمْ ”
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে কোন খাবার আনা হলে তিনি জানতে চাইতেন, এটা হাদিয়া, না সাদকা? যদি বলা হতো, সাদকা তা হলে সাহাবীদের তিনি বলতেন, তোমরা খাও। কিন্তু তিনি খেতেন না। আর যদি বলা হল হাদিয়া। তাহলে তিনিও হাত বাড়াতেন এবং তাদের সাথে খাওয়ায় শরীক হতেন। [বুখারী, হাদীস নং-২৪০৬]

★ইদানিং বিকাশ থেকে বলা হয়েছে যে বিকাশ App থেকে বিল পে করলে প্রতি ঘন্টায় প্রথম ০৫ জনকে পুরো বিল ফেরত দেওয়া হবে,ক্যাশব্যাক সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা।
এটি নেওয়া জায়েয আছে।    
এটি হাদিয়া মূলক,এবং বিকাশ App থেকে বিল পে করার জন্য উৎসাহ মূলক কোম্পানি এটা দিচ্ছে।
এটি গ্রহণ করা জায়েজ আছে।     
,
(০২) উস্তাদের হক বা শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের দায়িত্ব

উস্তাদের জন্য ছাত্রের করনীয় তথা উস্তাদের হক রয়েছে। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ

১। উস্তাদের আদব রক্ষা করাঃ কথা বার্তা, শব্দ প্রয়োগ, আচার-আচারন, উঠা-বসা, চলা-ফেরা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই আদব রক্ষা করতে হবে। যেমনঃ উস্তাদের আগে বেড়ে কথা না বলা, উস্তাদের সামনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জোরে কথা না বলা, তাঁদের দিকে পিছন দিয়ে না বসা, এক সঙ্গে চলার সময় তাঁদের সামনে না চল, তাঁদের সামনে বেশি না হাসা, বৃথা কথা না বলা ইত্যাদি।

২। উস্তাদের প্রতি ভক্তি রাখাঃ উস্তাদের সাথে ভক্তি সহকারে কথা বলা, ভক্তি সহকারে তাঁদের দিকে দৃষ্টি দেয়া এবং হাবভাব ভক্তি প্রকাশ করা কর্তব্য।

৩। উস্তাদকে আজমত ও শ্রদ্ধা করাঃ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করে শ্রদ্ধা ও আজমতের সাথে তাঁদের সামনে হাজির হওয়া কর্তব্য।

৪। উস্তাদের সাথে তাওয়াজু ও বিনয়ের সাথে থাকাঃ কথা-বার্তা ও আচার-আচরণ সবকিছুইতেই বিনয় থাকতে হবে। দুনিয়ার সব ক্ষত্রেই খোশমোদ তোষামোদ নিন্দনীয়; একমাত্র উস্তাদের বেলায় তা প্রশংসনীয়। 

৫। উস্তাদের খেদমত করাঃ এই খেদমতের মধ্যে উস্তাদ অভাবী এবং ছাত্র স্বচ্ছল হলে উস্তাদের বৈষয়িক সহযোগিতা করা এবং তাঁদেরকে হাদিয়া-তোহফা প্রদান করাও অন্তর্ভক্ত।

৬।  উস্তাদে হক অনেকটা পিতার মত। বস্তুত উস্তাদ হলেন রুহানী পিতা, তাই পিতার ন্যায় উস্তাদের হকও তাঁর মৃত্যুর পরও বহাল থাকে। এ জন্যই উস্তাদের মৃত্যুর পরও সর্বদা তাঁর জন্য দুয়া করা কর্তব্য। উস্তাদের নিকটাত্নীয়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, তাঁদের খেদমত করা, এমনিভাবে উস্তাদের বন্ধু-বান্ধব ও সমসাময়িক অন্যান্য শিক্ষকদের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং প্রয়োজনে তাঁদের খেদমত করা কর্তব্য।

৭। উস্তাদের খেদমতে লিপ্ত হলে আদব হল তাঁর অনুমতি ব্যতীত চলে না যাওয়া। (অনুমতি প্রকাশ্যে হোক বা লক্ষণ থেকে বুঝ হোক।)

৮। কোন কারনে উস্তাদ অসন্তুষ্ট হলে বা উস্তাদের মেজাযের পরিপন্থী কোনো কথা বলে ফেললে সাথে সাথে নিজের ত্রুটির জন্য ওজরখাহী করা এবং উস্তাদকে সন্তুষ্ট করা জরুরি।

৯। ছাত্রের কোনো অসংগত প্রশ্ন বা অসংগত আচরনের কারনে উস্তাদ রাগ করলে, বকুনি দিলে বা মারধর করলে ছাত্রের কর্তব্য সেটা সহ্য করা। এমনকি অন্যায়ভাবে কিছু বললেও তাঁর নিন্দা-শেকায়েত না করা এবং মন খারাপ না করা উচিত।

১০। ছাত্রের কর্তব্য মনোযোগের সাথে উস্তাদের বক্তব্য ও ভাষণ শ্রবন করা, অন্যমনষ্ক না হওয়া এবং উস্তাদের কথা ভাল করে ইয়াদ/মুখস্ত করা।

১১। উস্তাদ কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করতে নিষেধ করলে তা মান্য করা উচিত এবং কখনো তাঁকে অসুবিধায় ফেলতে চেষ্টা না করা উচিত। কোনো বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্ন করাও নিষেধ। নিজের মেধার গৌরব প্রদর্শনের জন্য প্রশ্ন করা বা সস্পষ্ট কিংবা অর্থহীন প্রশ্ন করাও উচিত নয়।

১২। উস্তাদের কোনো বক্তব্য বোধগম্য না হলে সে জন্য উস্তাদের প্রতি কুধারনা পোষন করবে না বরং বুঝতে না পারাকে নিজের বোধশক্তির ত্রুটি মনে করবে।

১৩। উস্তাদের মতের বিপরীত অন্য কারও মত তাঁর সামনে বয়ান করবে না।

১৪। পাঠ দানের সময় সম্পূর্ণ নীরব থাকা উচিত। এদিক-সেদিক তাকানো, কথা-বার্তা বলা বা হাসি তামাশায় লিপ্ত হওয়া সম্পূর্ণ বর্জনীয়।

১৫। নিজের কোন ত্রুটি হলে উস্তাদের সামনে অকপটে তা স্বীকার করে নেয়া কর্তব্য। অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমানিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত না হওয়া উচিত।
,

★উস্তাদের জন্য উচিত হলো ছাত্রের লেখাপড়ার হক পুরোপুরি আদায় করা।
অন্যথায় মহান রব্বুল আলামীনের কাছে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।
তাদের থেকে দৈহিক খেদমত নেওয়া যাবেনা।

হ্যাঁ যদি কঠিন অপারগ হয়ে দৈহিক খেদমতের খুবই প্রয়োজন হয়,তাহলে শরয়ী সীমারেখার আওতায় থেকে খেদমত নেওয়া যাবে।
তাদের থেকে জোড় করে কোনো খাবার ইত্যাদি নেওয়া যাবেনা।
তারা যদি খুশি মনে হাদিয়া হিসেবে দেয়,তাহলে তা গ্রহন করতে কোনো সমস্যা নেই।
,
তাদের লেখাপড়া,আমল ইত্যাদির উন্নতির ফিকির সর্বদায় রাখতে হবে।
দোয়া এবং পুরোপুরি চেষ্টা  চালিয়ে  যেতে হবে।
,
(০৩) বাবার সাথে মেশার কারণে যদি সন্তানের অন্তরে মুনাফিক্বের আছর পড়ে, বাবার অন্তরের খারাবির কারণে।
তবে সন্তান যদি বাবার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে নিজের ইমান রক্ষার জন্য, নিজেকে দ্বীন বিমুখ হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য, এতে সন্তানের কোনো গুনাহ হবেনা।
তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে কথা বন্ধ করা যাবেনা,দেখা সাক্ষাৎ পুরোপুরি ভাবে  বন্ধ করা যাবেনা।
বাবার হক আদায় করতে হবে।
খেদমতের প্রয়োজন হলে খেদমত করতে হবে।
তারা কষ্ট পায়,এমন কোনো কাজ করা যাবেনা।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...