উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১) রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ
عن أبي هريرة: أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من أدرك من الصبح ركعة قبل أن تطلع الشمس، فقد أدرك الصبح، ومن أدرك ركعة من العصر قبل أن تغرب الشمس، فقد أدرك العصر»
তরজমাঃ-
যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের এক রা'কাত নামাযের সময় পাবে সে যেন ফজরের নামাযকে পেয়ে গেল।যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক রা'কাত নামাযের সময় পাবে সে যেন আসরের নামাযকে পেয়ে গেল।(সহীহ বুখারী-৫৭৯,সহীহ মুসলিম-৬০৮)
কেহ যদি সূর্য হলুদ হয়ে যাওয়ার পর ঐ দিনের আছর নামাজ পড়বে,তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
এমনকি কেউ যদি সূর্যাস্তের পূর্বে ঐ দিনের আসরের নামাযে দাড়িয়ে যায়,নামাজ শুরু করে, অতঃপর নামাযের মধ্যেই সূর্যাস্ত হয়ে যায়,তাহলে তার নামায ফাসিদ হবে না।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ৩/১৫৪)
فإذا غربت الشمس في أثناء الصلاة لم يفسد العصر؛ لأنه ما بعد الغروب كامل كما دل فيه لأن ما وجب ناقصا يتادى كاملا بطريق الأولى
যদি আছরের নামাযের সময় সূর্যাস্ত হয়ে যায়,তাহলে ঐ আছরের নামায ফাসিদ হবে না।কেননা সূর্যাস্তর পর সময়টা কামিল(ত্রুটিহীন)।যেহেতু নামায শুরু করার পূর্ব মূহুর্তটা নামায ফরয হওয়ার সবব বা কারণ।তাই বলা যায় তার উপর নাক্বিসভাবে তথা ত্রুটিপূর্ণ ওয়াক্তে বা অবস্থায় নামায ফরয হয়েছে।আর যে নামায ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায় ফরয হয়েছিলো এবং শুরুও হয়েছিলো,সে নামায কামিল ওয়াক্ত তথা ত্রুটিহীন অবস্থায় উত্তমভাবে আদায় হবে।(বেনায়া শরহে হেদায়া-২/২৩-শামেলা)
,
★★সুতরাং কেহ যদি ঐ দিনের আছরের নামাজ পড়তে চায়,এবং ছহীহ ভাবে তাকবিরে তাহরিমা বলে নামাজের কার্যক্রম শুরু করে,তারপরেই যদি সূর্য ডুবে,যায়,তাহলে এমতাবস্থায় সে যদি ঐ নামাজ সম্পন্ন করে,তাহলে নামাজ হয়ে যাবে।
ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে আছেঃ
إلا عصر یومہ ذلک ، فإنہ یجوز اداء ہ عند الغروب
الفتاوی الہندیۃ: ۱/۵۲۔
যার সারমর্ম হলো ঐ দিনের আছরের নামাজ সূর্য ডুবে যাওয়ার সময়েও আদায় চালিয়ে যাওয়া যাবে।
নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
,
(০২)
দাড়ি রাখা ওয়াজিব।
কেহ যদি বলে যে দাড়ি রেখে কাজ কি?
এতে যদি সে দাড়ির প্রতি ঠাট্টা না করে থাকে,বরিং এমনিতেই বলে থাকে,তাহলে আমরা তাকে বলবো যে আপনার এমন কথা বলা ঠিক হচ্ছেনা,গুনাহের কাজ করছেন! আবার বড় বড় কথাও বলছেন!
আপনাকে আল্লাহর কাছে তওবা করে ক্ষমা চাইতে হবে।
ভবিষ্যতে আর এমন কথা বলা যাবেনা।
আর যদি সে এহেন কথা বলে দাড়ির প্রতি ঠাট্টা করে,
তাহলে জানুন যে দ্বীনী বিধানকে ঠাট্টা করা অস্বিকার করা কুফরী
যদি তিনি মুসলিম হয়ে থাকেন, আর এ দু’টি বিষয়কে মনে প্রাণে অস্বিকার করে থাকেন, তাহলে সুনিশ্চিত মুরতাদ হয়ে গেছেন। কারণ দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়কে অস্বিকারকারী মুরতাদ ও কাফের হয়ে যায়।
আর দাড়ি একটি ইসলামের ভূষন। এটি নিয়ে ঠাট্টাকারী মুসলিম থাকে না। মুরতাদ হয়ে যায়। তাই তার ঈমান চলে গেছে। তাকে আবার সাচ্চা দিলে তওবা করে মুসলমান হতে হবে।
فى مجمع الأنهر، من استخف بسنة أو حديث من أحايثه عليه السلام……. كفر، (مجمع الأنهر، كتاب السير، باب المرتد، ثم إن الفاظ الكفر انواع، الثانى فى الأنبياء عليهم السلام-1/692، بزازية على هامش الهندية، كتاب الفاظ تكون اسلاما او كفرا، الفصل الثانى، النوع الرابع فى الايمان دار الاسلام-6/328)
وفى التتمة من أهان الشريعة أو المسائل التى لا بد منها كفر، (شرح الفقه الأكبر، فصل فى العلم والعلاماء-174، رد المحتار، كتاب الجهاد، باب المرتد-4/222-223)
দাড়ি রাখতে রাসূল সাঃ আদেশ দিয়েছেন। আর পবিত্র কুরআনে রাসূল সাঃ এর অনুসরণ মানেই আল্লাহর অনুসরণ বলে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিয়েছেন। তাই নবীর নির্দেশ অমান্য করা মানে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা। সুতরাং রাসূল সাঃ এর নির্দেশ দাড়ি রাখার বিধান লঙ্ঘণ করা মানে পুরো দ্বীনকেই অস্বিকার করা।
রাসূল সাঃ টাখনুর নিচে জামা পড়তে নিষেধ করেছেন। একজন মুসলমানের কাছে যুক্তির চেয়ে রাসূল সাঃ এর নির্দেশই বড়। দ্বীনে ইসলাম মানে হল আল্লাহ তাআলা ও তার নবীর আদেশ নিষেধের সামনে নিজেকে সঁপে দেয়া। যুক্তির নাম দ্বীন নয়। দ্বীন হল আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কে মান্য করার নাম।
দাড়ি রাখার নির্দেশ
রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজ উম্মতের জন্য আদর্শ। তবে কতিপয় সুনির্দিশ বৈশিষ্ট রাসূল সাঃ এর ছিল যা অন্য কারো জন্য জায়েজ নয়। যেমন চারের অধিক বিয়ে করা ইত্যাদি। এটা রাসূল সাঃ এর বৈশিষ্ট। এমন কতিপয় সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট ছাড়া রাসূল সাঃ এর প্রতিটি আমল, প্রতিটি চাল-চলন একজন নবী প্রেমিক উম্মতের কাছে আদর্শ ও পালনীয়। রাসূল সাঃ এর সকল আমলকে আদর্শ সাব্যস্ত করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا [٣٣:٢١
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে,তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। {সূরা আহযাব-২৩}
কে কী করেছে? সেটা কোন মুসলমান বিবেচনা করতে পারে না। একজন মুসলমান দেখবে আমাদের আদর্শ,আমাদের পথিকৃত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কী করেছেন? রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজের শর্তহীন ও যুক্তিহীনভাবে অনুসরণের নাম দ্বীন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ [٣:٣١
বলুন,যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। {সূলা আলে ইমরান-৩১}
সর্বক্ষেত্রে নবীজীর অনুসরণকে আল্লাহ প্রেমের নিদর্শন বলা হয়েছে। আর হাদীসে কাফেরদের অনুসরণকে জাহান্নামী হওয়ার নিদর্শন বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم– « مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ».
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে (আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৪০৩৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৯৬৬, মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-২০৯০৮৬)
রাসূলে কারীম সাঃ এর প্রতিটি কর্মের অনুসরণকে রাসূল সাঃ এর সাথে জান্নাতে যাওয়ার পথ বলে ঘোষণা করে বলেন-
ومن أحيا سنتي فقد أحبني ومن أحبني كان معي في الجنة
যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত তথা পথ-পদ্ধতিকে জিন্দা করবে তথা পালন করবে, সে আমাকে ভালবাসল, আর যে, আমাকে ভালবাসল, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬৭৮}
ইসলামে দাড়ির প্রমান
কোরআনের আলোকেঃ-
কোরআন শরীফে সরাসরি দাড়ি রাখার কথা বলা হয়নি তবে হারুন আঃ এর ঘটনায় দাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে । যথাঃ আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেনঃ- قَالَ يَا ابْنَ أُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِي
তথা হে আমার আপন ভাই! আপনি আমার দাড়ি ধরবেন না। {সূরা ত্বহা-৯৪}
এ আয়াত দ্বারা একথাও বুঝা যায় যে, হযরত হারুন আঃ এর দাড়ি এক মুষ্টির চেয়ে কম ছিল না। কারণ এক মুষ্টির চেয়ে কম দাড়িতে মুঠ করে ধরা যায় না।
হাদীসের আলোকেঃ-
عن ابن عمر : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال ( خالفوا المشركين وفروا اللحى وأحفوا الشوارب . وكان ابن عمر إذا حج أو اعتمر قبض على لحيته فما فضل أخذه
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর।
আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩}
দাড়ি লম্বা রাখার ব্যাপারে হাদীসে বিভিন্ন শব্দ এসেছে। যেমন-
১-إعفاء اللحى [ইফা] সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৪৭৫
২- وأعفوا اللحى [উফু] সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৪
৩-وَأَرْخُوا اللِّحَى [আরখু] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৬
৪-وَأَوْفُوا اللِّحَى [আওফু] সহীহ মুসলিম হাদীস নং-৬২৫
৫- وَفِّرُوا اللِّحَى [ওয়াফফিরু] সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩
দাড়ি না রাখা , মুন্ডিয়ে ফেলা বা এক মুষ্ঠির কম রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে দাড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়েও ছোট করে ফেলে তার আমল নামায় পুনরায় দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত গুনাহ লিখা হতে থাকে। কেননা শরীয়তের হুকুম হল-দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখা। তাই এর চেয়ে দাড়ি ছোট করে ফেললে বা মুন্ডিয়ে ফেললে যতক্ষন পর্যন্ত দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ না হবে ততক্ষন পর্যন্ত সে শরীয়তের হুকুম অমান্যকারী সাব্যস্ত হবে এবং তার নামে গুনাহ লিখা হতে থাকবে । অন্যান্য গুনাহ সাময়িক ও অস্থায়ী, কিন্তু দাড়ি ছোট করা বা মুন্ডানোর গুনাহ দীর্ঘস্থায়ী ,যে ব্যক্তি দাড়ি মুন্ডায় বা ছোট করে (এক মুঠের চেয়ে ) সে ফাসিক।
,
(৩.৪.৫) এক্ষেত্রে সকলেই মিলে মিমাংসায় আসা উচিত।
এটা যেকোনো ভাবেই হতে পারে,তালাক (বিবাহ বিচ্ছেদ) এর মাধ্যমেও হতে পারে,আবার আইনী ভাবেও হতে পারে।
তবে মিমাংসা না করে সন্তানরা যদি এর বিহিত করতে চায়,তাহলে বিহিত দ্বারা বাবাকে প্রহার করা উদ্দেশ্য হয়,তাহলে তা কোনো ভাবেই জায়েজ নেই।
বাবাকে কোনো ভাবেই গালিগালাজ করা যাবেনা।
বাবাকে কোনো ভাবেই মারা যাবেনা,এগুলো সবই হারাম।
আপনারা আইনের সহায়তা নিতে পারেন,বা মুরব্বিদের দিয়ে বৈঠক ডেকে এর মিমাংসা করতে পারেন।