আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+2 votes
1,360 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (39 points)
চরমোনাই পীর সাহেব বলেছেন ইল্লাল্লহ জিকির জায়েজ।

শায়েখ হাসান জামিল সাহেবও বলেছেন আল্লাহ আল্লাহ জিকির জায়েজ।

কিন্তু  এক সালাফি ভাই বলছেন, এসব স্পষ্ট বিদাত।  সত্যিই কি বিদাত? এসবের কোনো দলিল নেই?

1 Answer

+2 votes
by (675,600 points)
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ শব্দ বলে যিকির করাঃ
শরীয়তের বিধান হলো আল্লাহ আল্লাহ বলে যিকির করা শুধু জায়েযই নয়,এটা আল্লাহ তায়ালার হুকুমের পর্যায়েও পড়ে।
,
আল্লাহ তায়ালা বলেন     
قد افلح من تزكي وذكر اسم  ربك فصلي 
অনুবাদ অনুবাদ সফলকাম তারাই যারা আত্মশুদ্ধি অর্জন করবে,আল্লাহর নামে যিকির করবে,এবং নামাজ আদায় করবে।
(সুরা দুহা ১৫.১৬)
 এখানে আল্লাহ তায়ালা কিন্তু 
وذكر ربك
বলেননি,বরং বলেছেন৷ وذكر اسم ربك 
ইহার দ্বারা এই দিকে ইশারা যে এখানে আল্লাহ শব্দ বলে যিকির করাও উদ্দেশ্য। 
( মাআরিফুল কুরআন ৮/৫৮৪)
,

★শরীয়তের মানদন্ডে ইল্লাল্লাহ যিকিরঃ  
প্রথমে বাংলায় একটি কথা বুঝে নিন। আমরা বলে থাকি অনেক সময় “এখানে কেউ আসবে না” তারপর বলি “আব্দুল্লাহ ছাড়া।”

প্রথম বারের কথা দ্বারা সবাইকে নিষধ করছি, তারপর আব্দুল্লাহ ছাড়া শব্দটি বলে শুধু আব্দুল্লাহের আগমণের অনুমতি দিচ্ছি। তাই না?

তেমনি আমাদের কালিমা “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর অর্থ। আমরা প্রথমে বলি লা-ইলাহা” মানে হল কোন ইলাহ/মাবুদ নেই”। তারপর বলি ইল্লাল্লাহ” তথা “তবে আল্লাহ আছে”।

আমরা অনেক সময় বড় মজলিসে বলি কেউ এখানে আসবে না। তারপর বেশ কিছুক্ষণ পর বলি তবে আব্দুল্লাহ, তবে আব্দুল্লাহ।

এই যে, তবে আব্দুল্লাহ বলছি এর মানে কিন্তু এখানে কেউ আসবে না তবে আব্দুল্লাহ আসবে। তাই নয় কি? আব্দুল্লাহ নাই, আব্দুল্লাহ নাই একথা কিন্তু কোন আহমকই বুঝে না।

ঠিক তেমনি  লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ জিকির করার পর  শুধু বলা হয় ইল্লাল্লাহ [তবে আল্লাহ], ইল্লাল্লাহ। এর মানে এর আগে উক্ত ব্যক্তির নিয়তে উহ্য রয়েছে লা-ইলাহা শব্দটি।

যে ব্যক্তিই ইল্লাল্লাহ জিকির করেন, তার মনে কিছুতেই একথা থাকে না যে, আল্লাহ নাই, আল্লাহ নাই নাউজুবিল্লাহ। বরং তার ব্রেইনে থাকে লা-ইলাহা আর মুখে উচ্চারণ করে ইল্লাল্লাহ। যার পরিপূর্ণতা মূলত লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। অন্তরে লা ইলাহা শব্দ আর মুখে ইল্লাল্লাহ। সুতরাং এতে কোন প্রকার অর্থের বিকৃতি ঘটে না। কুফরী কোন কথাই আবশ্যক হয় না।

আরবী ভাষায় এর  নজীর রয়েছে।

যেমন এক হাদীসে এসেছে রাসূল সাঃ হারামের সিমানার গাছ কাটতে নিষেধ করেছেন। তথন আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ বলেন, ইল্লাল্লাল ইজখির?তথা “তথা “তবে ইজখির”। তখন রাসূল সাঃ জবাবে বললেন শুধু “ইল্লাল ইজখির” তথা ইজখির  ছাড়া। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৩৫৩}

হাদীসটির আরবী অংশ

فَقَالَ الْعَبَّاسُ: – وَكَانَ مِنْ أَهْلِ الْبَلَدِ، قَدْ عَلِمَ الَّذِي لَا بُدَّ لَهُمْ مِنْهُ – إِلا الْإِذْخِرَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَإِنَّهُ لَا بُدَّ لَهُمْ مِنْهُ، فَإِنَّهُ لِلقُبُورِ وَالْبُيُوتِ، قَالَ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِلا الْإِذْخِرَ

শুধু ইল্লাল ইজখির বললেন আল্লাহর রাসূল। মুস্তাসনা মিনহু তথা কার থেকে ইজখিরকে পৃথক করলেন তা উল্লেখ করেননি। কারণ এটি জানা বিষয় এবং মনের মাঝে উহ্য আছে সকল বিষয় কাটা হারাম তবে ইজখির ছাড়া। যেহেতু মনের মাঝে সকল কিছু কাটা হারাম শব্দটি উহ্য আছে। তাই মুখের শব্দে ইজখির বলার দ্বারা অর্থের বিকৃতি ঘটেনি।

তেমনি মনের মাঝে লা-ইলাহা লুকায়িত থাকা অবস্থায় মুখে ইল্লাল্লাহ বলার দ্বারাও কোন প্রকার অর্থের বিকৃতি ঘটে না।  কোন কুফরী কথা লাজিম আসে না।
,
(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ {যাকারিয়া}১/৫৮৪)   


যেসমস্ত ভাইয়েরা  ইল্লাল্লাহ জিকিরকে নাজায়েজ বলেন। তারা একটি দলীল পেশ করে থাকেন। বলেন ইল্লাল্লাহ মানে হল “আল্লাহ নেই” [নাউজুবিল্লাহ]।

আবার কেউ কেউ বলেন ইল্লাল্লাহ মানে হল “আল্লাহ ছাড়া সবাই ইলাহ”।[নাউজুবিল্লাহ]।

যদি ইল্লাল্লাহ অর্থ উপরের দু’টি অর্থই হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত ভাইদের কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা, তাহলে পূর্ণ কালিমার অর্থটা কি একটু আমাদের জানাবেন কি?

লা-ইলাহা মানে যদি কোন ইলাহ নেই হয়, আর ইল্লাল্লাহ অর্থ যদি হয় “আল্লাহ নেই” বা “আল্লাহ ছাড়া সবাই ইলাহ”। তাহলে তাদের মত কথা হিসেবে কালিমার অর্থটা কি দাঁড়ায়? দু’টি অর্থ হিসেবে হচ্ছে-

১ [লা ইলাহা] কোন ইলাহ নেই [ইল্লাল্লাহ] আল্লাহ নেই!

২-[লা ইলাহা] কোন ইলাহ নেই [ইল্লাল্লাহ] আল্লাহ ছাড়া সবাই ইলাহ!

এমন কুফরী অর্থবোধক অনুবাদ কালিমার হতে পারে?

সুতরাং বুঝা গেল ইল্লাল্লাহ জিকির এটি কোন দোষণীয় নয়। সেই সাথে এতে কোন প্রকার কুফরী কথাও লাজিম আসে না।

বাকি কথা হল, শায়েখের নির্ধারিত অজিফা আদায় করার সময় ছাড়া অন্য সময় কুরআন ও হাদীসে সরাসরি আসেনি এমন জিকির না করা উচিত। বিশেষ করে ইল্লাল্লাহ জিকির। বরং হাদীসে বর্ণিত জিকির করাই উত্তম। 
.
,
উল্লেখ্য যে যেহেতু কুরআন হাদীসে স্পষ্ট আকারে উপরোক্ত  যিকিরের কথা নেই,বা যেহেতু এমন যিকির কুরআন হাদিসে  সরাসরি আসেনি, তাই অনেক আলেমরা এটাকে বিদয়াত বলে আখ্যায়িত করেন।
সুতরাং বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে  তাদের মতানুসারীরা সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন।
এতে কোনো সমস্যা নেই।        
এই মতটিও আমলযোগ্য।  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...