আসসালামু আলাইকুম উস্তায,
১) গতকাল আমি আমার স্বামীর সাথে তালাকের মাসাআলা নিয়ে আলোচনা করি। এবং কতগুলো মাসাআলা ওনাকে দেখাই। যাতে করে আমাদের মাঝে যদি রাগারাগি হয়, তাহলে উনি যাতে এই বিষয়টা খেয়াল রাখেন। এই মাসাআলা সম্পর্কে জানাবেন। আমার স্বামী এই মাসাআলা গুলো মানতে রাজি না। উনি বলেন, উনি কুরআন হাদিসে যা আছে তা মানবে, কিন্তু এই মাসাআলা মানবে না।নিম্নে আমি মাসাআলা গুলো তুলে দিচ্ছিঃ
**তালাক-*
অনেককে দেখা গেছে একটি কথার
দ্বারাই তার জীবন তছনছ হয়ে
গিয়েছে এবং সারাজীবন তার
জের বহন করছে। তাই ঝগড়াঝাঁটির
সময় শব্দ উচ্চারণের ক্ষেত্রে খুব
সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
মাসআলাঃ কেউ তার স্ত্রীকে
ঠাট্টা করে তালাক দিলে তা
পতিত হয়ে যাবে।-তিরমিজী শরীফ
হাদীস নং-১১৮৪।
মাসআলাঃ কেউ তালাকের মিথ্যা
স্বীকারোক্তি করলে তা পতিত
হয়ে যায়। অর্থাৎ পূর্বে তালাক না
দিয়েও কেউ যদি তালাক দিয়েছে
বলে থাকে তা পতিত হয়ে যাবে। -
রদ্দুল মুহতার ৩/২৩৮।
মাসআলাঃ রাগান্বিত অবস্থায়
তালাক দিলে তালাক পতিত হয়ে
যায়। অনুরূপভাবে মদ্যপ অবস্থায়
মাতাল হয়ে তালাক দিলে তা
পতিত হয়। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া
১/৩৫৩, আল মুহীতুল বুরহানী ৩/৩৪৮,
আদ্দুররুল মুখতার /২৩৫,২৪১,২৪৪।
মাসআলাঃ কেউ তার স্ত্রীকে
বলল “আমি তোমাকে ছেড়ে
দিয়েছি” এর দ্বারা তালাক হয়ে
যাবে। চাই তার তালাকের নিয়ত
থাক বা না থাক। -রদ্দুল মুহতার
৩/২৯৯, আলমগিরী ১/৩৭৯।
মাসআলাঃ তালাক পতিত হওয়ার
জন্য সাক্ষীর সামনে তালাক
দেওয়া বা স্ত্রীর উপস্থিতিতে
তালাক দেওয়া জরুরী নয়। বরং কেউ
একাকী নির্জনে তার স্ত্রীকে
তালাক দিলে তা কার্যকর হয়ে
যাবে। -ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম
৯/৪৮,৪১,৬৮।
মাসআলাঃ মৌখিকভাবে তালাক
দিলে যেমনিভাবে তালাক পতিত
হয় তেমনিভাবে মুখে উচ্চারণ
ব্যাতীত লিখিতভাবে তালাক
দিলে তা পতিত হয়। -রদ্দুল মুহতার
৩/২৪৬, ২৪৭।
মাসআলাঃ কেউ তালাকনামায়
সজ্ঞানে স্বাক্ষর করলে লিখিত
তালাকনামা অনুযায়ী তালাক
পতিত হয়। -তাতারখানিয়া ৩/৩৮০।
মাসআলাঃ কেউ উকীলকে বা অন্য
কাউকে বলল “আমি স্ত্রীকে
তালাক দিব” তালাকনামা লিখুন।
এর দ্বারাই তার স্ত্রীর উপর তালাক
পতিত হবে। চাই সে তালাকনামা
লিখুক অথবা না লিখুক। -
তাতারখানিয়া ৩/৩৭৯, রদ্দুল মুহতার
৩/২৪৬।
মাসআলাঃ স্পষ্টভাবে তালাক
দিলে (যেমন কেউ তার স্ত্রীকে
বলল আমি তোমাকে তালাক
দিলাম) নিয়তের প্রয়োজন নেই।
তার নিয়ত যা-ই থাকুক না কেন
তালাক পতিত হবে। -বাদায়েউস
সানায়ে ৪/২২২, রদ্দুল মুহতার ৩/২৪৭।
মাসআলাঃ কেউ একই মজলিসে এক
সাথে তিন তালাক দিলে তিন
তালাকই পতিত হবে। এক তালাক নয়।
চাই সে এক শব্দে তিন তালাক দিক
বা ভিন্ন শব্দে। উভয় অবস্থায় তিন
তালাক পতিত হবে। আর এটাই চার
ইমামের মাযহাব। -সুরা বাকারাহ
আয়াতঃ ২৩০, সহীহ বুখারী, হাদিস
নং ৫২৬১,৫২৫৯, সুনানে নাসাই,
হাদীস নং৩৪১, সুনানে বাইহাকী,
হাদীস নং ১৪৭৩৫, মুসান্নাফে
আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ১১৩৪৩।
মাসআলাঃ স্ত্রীকে তিন তালাক
দিলে শরঈ হালালা ব্যতীত তার
সাথে ঘর-সংসার করা নাজায়েয ও
হারাম। যদি অন্য পুরুষের সাথে
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং তাদের
মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়
অতঃপর দ্বিতীয় স্বামী তাকে
স্বেচ্ছায় তালাক দেয় তবে ইদ্দত
পালনের পর ১ম স্বামীর সাথে
পূনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে
পারে। -সূরা বাকারাহ, আয়াত নং
২৩০, সহীহ বুখারী, হাদীস
নং৫২৬১,৫২৫৯।
মাসআলাঃ কেউ রাগান্বিত
অবস্থায় স্ত্রীকে বলল তুমি ইদ্দত
পালন কর বা তুমি এখন থেকে একা
বা তুমি স্বাধীন বা তোমার সাথে
সম্পর্ক ছিন্ন করলাম তবে এর দ্বারা
একটি বায়েন তালাক পতিত হবে
যদিও তার তালাকের নিয়ত না
থাকে। -আদ্দুরুল মুখতার ৩/২৯৬-২৯৮,
আলবাহরুর বায়েক ৩/৫১৮-৫২৩,
ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম ৯/৩১০।
মাসআলাঃ স্ত্রী বা অন্য কেউ
স্বামীর নিকট তালাক চাইল।স্বামী
স্ত্রীকে জবাবে বলল তুমি মুক্ত বা
তুমি আমার জন্য হারাম বা তুমি
আমার থেকে বিচ্ছিন্ন বা তুমি
ইদ্দত পালন কর বা তুমি এখন থেকে
একা বা তুমি স্বাধীন তবে কোন
নিয়ত ব্যতীত স্ত্রীর উপর একটি
বায়েন তালাক পতিত হবে। -
আদ্দুররুল মুখতার
৩/২৯৬-২৯৮,তাবয়ীনুল হাকায়েক
৩/৭৮।
মাসআলাঃকেউ তার স্ত্রীকে বলল
“তুমি আমার জন্য হারাম”এর দ্বারা
তার স্ত্রীর উপর একটি বায়েন
তালাক পতিত হবে ।-রদ্দুল মুহতার
৩/৪৩৩, ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম
৯/৩০২।
মাসআলাঃ তালাক বায়েন হলে
নতুন করে মোহর ধার্য্য করে দুজন
সাক্ষীর সামনে ঈজাব কবুলের
দ্বারা বিবাহ দোহরানো ব্যতীত
স্ত্রী হালাল হবে না। -ফাতওয়ায়ে
হিন্দিয়া ১/৪৭২
২) এখন আমার স্বামীর প্রশ্ন হচ্ছে, যদি স্ত্রী স্বামীর গায়ে হাত তুলে আর এমতাবস্থায় স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে তাহলে কি তালাক হয়ে যাবে? আর মুখে যদি বলে, "এই রকম মেয়ে তার সংসারে দরকার নাই, তাকে তালাক দেওয়া উচিৎ " তাহলেও কি তালাক হয়ে যাবে?
স্ত্রী স্বামীর গায়ে হাত তুলেছে এই ঘটনা ঘটেছে এভাবেঃ স্ত্রী বিয়ের পরপরি বলে দিয়েছে যে, তার স্বামী যদি চায় দ্বিতীয় বিয়ে করতে তাহলে তার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু বিয়ে ছাড়া কোন মেয়ের সাথে সে কোন ধরনের সম্পর্ক করতে পারবে না। আর তার স্বামীর অর্থনৈতিক আয়ও ভালো যে তিনি আর একটা বিয়ে করে সংসার চালাতে পারবে। কিন্তু তার স্বামী অন্য মেয়ের সাথে কথা বলে এমন কি এই স্ত্রীর ভাগ্নির সাথেও মেসেজের মাধ্যমে উল্টো পাল্টা কথা বলেছে। যখন স্বামী স্ত্রীর কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে তখন সে তার স্ত্রীকে তালাকের ভয় দেখায়। এমতাবস্থায় তাদের মাঝে রাগারাগি হয়, এরপর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। স্ত্রীর প্রেগন্যান্সির যখন ২মাস চলে তখন আবার তার স্বামী আর এক মেয়ের সাথে কথা বলতে থাকে, এমনকি তারা ভিডিও কলেও কথা বলে। এই কাজ যখন স্ত্রীর হাতে ধরা পরে তখন সে রাগ সামলাতে না পেরে তার স্বামীকে থাপ্পড় মারার মত ভুল কাজটা করে বসে। এমতাবস্থায় তার স্বামী তাকে তালাক দেওয়া উচিৎ এই কথা বলে।পরবর্তীতে সে তার স্বামীর কাছে মাফ চায়। এখন কি তাদের মধ্যে তালাক হয়ে গেছে?