بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
https://ifatwa.info/25633/?show=25633#q25633 নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সফর কমপক্ষে ৪৮ মাইলের
( যা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার মত) চেয়ে কম হলে মহিলাগণ পর্দার সাথে একা একা সফর করতে
পারবেন । আর ৪৮ মাইলের চেয়ে বেশি হলে স্বামী বা মাহরাম ছাড়া কারো সাথে বা একা সফর করা
জায়েজ নয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ
الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
‘আর তোমরা স্বগৃহে
অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়াতযুগের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’(সূরা আহযাব
৩৩)
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ : قَالَ
رَسُولُ اللهِ ﷺ الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ من بيتها
اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ وَإِنَّهَا لَا تَكُونُ أَقْرَبَ إِلَى اللَّهِ
مِنْهَا فِي قَعْرِ بَيْتِهَا.
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, মেয়ে মানুষ (সবটাই) লজ্জাস্থান (গোপনীয়)। আর সে যখন নিজ
বাড়ি থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাকে পুরুষের দৃষ্টিতে সুশোভন করে
তোলে। সে নিজ বাড়ির অন্দর মহলে অবস্থান ক’রে আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী থাকে। (তাবরানী
২৯৭৪)
বিশুদ্ধ মতানুযায়ী মাহরাম না থাকলে মহিলার উপর হজ্বও ফরয হবে
না। হাদীস শরীফে এসেছে-
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: لَا يَخْلُوَنَّ
رَجُلٌ بِاِمْرَأَةٍ وَلَا تُسَافِرَنَّ امْرَأَةٌ إِلَّا وَمَعَهَا مَحْرَمٌ.
فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ اكْتُتِبْتُ فِىْ غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا
وَخَرَجَتِ امْرَأَتِىْ حَاجَّةً قَالَ: اِذْهَبْ فَاحْجُجْ مَعَ اِمْرَأَتِكَ.
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
[‘আব্দুল্লাহ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন পুরুষ যেন কক্ষনো কোন স্ত্রীলোকের সাথে এক জায়গায় নির্জনে
একত্র না হয়, আর কোন স্ত্রীলোক যেন কক্ষনো আপন কোন মাহরাম ব্যতীত
একাকিনী সফর না করে। তখন এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর
রসূল! অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম লেখানো হয়েছে। আর আমার স্ত্রী একাকিনী হজের উদ্দেশে
বের হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যাও
তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্জ/হজ করো।
সহীহ : বুখারী ৩০০৬,
মুসলিম ১৩৪১, আহমাদ ১৯৩৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৫২৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী
১০১৩৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৩৭৫৭।
ইমাম নববী রাহ বলেন,
"فَالْحَاصِل
أَنَّ كُلّ مَا يُسَمَّى سَفَرًا تُنْهَى عَنْهُ الْمَرْأَة بِغَيْرِ زَوْج أَوْ
مَحْرَم " انتهى
মোটকথাঃ স্বামী বা মাহরাম পুরুষ ব্যতীত যেকোনো প্রকার সফর থেকে
মহিলাকে বাধা প্রদান করা হবে।
সফরের ধর্তব্য হল দূরত্ব। কত সময়ে উক্ত স্থানে পৌঁছতে পারছে
সেটা ধর্তব্য নয়। উদাহরণতঃ ঢাকার থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব চারশত কিলোমিটার। কিন্তু
বিমানে যেতে লাগে ৩০মিনিট। এক্ষেত্রে বিমানে সফর করলেও মহিলাদের জন্য স্বামী বা মাহরাম
থাকা আবশ্যক। একা সফর করা জায়েজ নয়। মহিলাদের মাহরাম ঐ সকল ব্যক্তিদের বলা হয়, যাদের সাথে আজীবন বিবাহ নিষিদ্ধ। যেমন- পিতা,
দাদা, ছেলে, নাতি,
ভাগিনা, মামা, ভাই,
ভাতিজা, শ্বশুর, চাচা,
মেয়ের জামাই প্রমূখ।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
১. জ্বী না । মাহরাম ব্যতিত ৪৮ মাইল বা ৭৮ কি:মি: এর চেয়ে অধিক
পথ স্বামী বা মাহরাম ছাড়া কারো সাথে বা একা সফর করা জায়েজ নয়।
২,৩.কোন স্ত্রীর
জন্য স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘরের বাহিরে যাওয়া মোটেও উচিত নয় ।
বিশেষ প্রয়োজনে মহিলারা মাহরাম ব্যতিত কাছাকাছি বাজারে যেতে
পারবে।অবশ্যই সম্পূর্ণ পর্দাকে রক্ষা করে যেতে হবে। যদি আপনার কোনো মাহরাম না থাকে, তাহলে আপনি নেককার মহিলাদের সাথে সফর করতে পারবেন।
আপনি দিনের প্রথমাংশে সফর শুরু করবেন।যাতে করে সন্ধ্যার পূর্বেই গন্তব্যস্থলে পৌছে
যেতে পারেন। সর্বপ্রথম আপনি নেককারদের জামাতের অনুসন্ধান করবেন। ফিতনার আশংকা থাকলে
কিন্তু আপনি সফর করতে পারবেন না।
৪. স্ত্রীর জন্য স্বামীর আনুগত্য করা ফরয যদি তা গুনাহের কাজ
বা সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কাজের নির্দেশ না হয়। সুতরাং স্ত্রীর জন্য জরুরি হল, বিশেষ কোনো কাজে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে স্বামীর
নিকট অনুমতি নেয়া। স্বামী অনুমতি দিলে পরিপূর্ণ পর্দা সহকারে এবং নিজেকে ফিতনা থেকে
হেফাযতে রেখে স্ত্রী বাইরে যেতে পারে। দূরে কোথাও যাওয়ার দরকার হলে অবশ্যই তার পিতা,
ভাই ইত্যাদি মাহরাম পুরুষের সাথে যাবে। কিন্তু স্বামী যদি তাকে যেতে
নিষেধ করে তাহলে স্ত্রীর জন্য তা লঙ্ঘন করা বৈধ নয়। অন্যথায় সে স্বামীর ‘অবাধ্য’ হিসেবে
গণ্য হবে এবং গুনাহগার হবে।
পারিবারিক শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই এই আনুগত্য করা জরুরি। আল্লাহ
তাআলা পুরুষকে পরিবারের মূল পরিচালনার দায়িত্ব এবং স্ত্রীর উপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা
অর্পণ করেছেন। (সূরা নিসা: ৩৪ নং আয়াত)।
সুতরাং স্ত্রী যদি এই আনুগত্যের বিষয়টিকে উন্মুক্ত হৃদয়ে গ্রহণ
না করে তাহলে পরিবারিক শৃঙ্খলা ভেঙ্গে যেতে পারে। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমীন।