আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
699 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (-1 points)
retagged by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

মিথ্যা কথা বললে কি কেউ কাফির হয়ে যায়?
পরিচিত কারোর মধ্যে এমন খুরুজ থাকে যে, সে প্রত্যেক মিথ্যাবাদি, সুদখোর, ঘুষখোরকে কাফির মনে করে তাকে শোধারানোর উপায় কি?

1 Answer

0 votes
by (567,180 points)
উত্তর 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তের বিধান মতে মিথ্যা কথা বলা কবিরাহ গুনাহ। 
,
কোনো কবিরাহ গোনাহ করলে মুসলমান ঈমান থেকে খারিজ হবে না।এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা এবং বিশ্বাস।
তবে সে তাওবাহ করলে হয়তো আল্লাহ তাকে ক্ষমা ও করে দেবেন।(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-১/৬৬৫)
,
কথায় কথায় মিথ্যা কথা বলা মুনাফিকের আলামত
হাদীস শরীফে এসেছে  
 حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ أَبُو الرَّبِيعِ، قَالَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، قَالَ حَدَّثَنَا نَافِعُ بْنُ مَالِكِ بْنِ أَبِي عَامِرٍ أَبُو سُهَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ " آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلاَثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ ".
আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে; ২. যখন অঙ্গীকার করে ভঙ্গ করে এবং ৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানাত করে। (বুুুুুুখারী ৩৩,২৬৮২,২৭৪৯,৬০৯৫; মুসলিম ১/২৫ হাঃ ৫৯, আহমাদ ৯১৬২)

শরীয়তের বিধান হলো  কোন মুসলিমের মধ্যে কুফরী কাজ দেখতে পেলে তাকে মুশরিক বা কাফের বলে ডাকা যাবে না। 
আল্লাহ তায়ালা বলেন,  
ولا تنابزوا  بالالقاب
তোমরা কাউকে মন্দ লকবে ডেকো না’… (হুজুরাত ৪৯/১১)। 
,
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ক্বাতাদাহ বলেন, এর অর্থ হ’ল, কাউকে হে মুনাফিক, হে ফাসেক ইত্যাদি বলে ডাকা যাবে না’ (বায়হাক্বী শু‘আব হা/৬৭৪৮, কুরতুবী, তাফসীর হুজুরাত ১১ আয়াত)। 
,
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যাকে কাফের বলা হবে সে সত্যিকারে কাফের না হ’লে যে কাফের বলল তার দিকেই সেটা ফিরে আসবে (মুসলিম হা/৬০; বুখারী হা/৬১০৩)। 
,
তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার (মুসলিম) ভাইকে কাফের বলাটা তাকে হত্যা করার মত অপরাধ (বুখারী হা/৬০৪৭; মিশকাত হা/৩৪১০)। 
,
তবে কাউকে কুফরী কোনো কাজ করতে দেখলে, তোমার এ কাজটি কুফরী পর্যায়ভুক্ত বা তোমার মধ্যে মুনাফিকের এই আলামতটা দেখা যাচ্ছে এরূপ বলা যেতে পারে।
,

শরিয়ত কোনো মুসলমানকে কাফের দোষারোপ করতে নিষিদ্ধ করেছে। এটি হচ্ছে সাধারণ নীতি। এমনকি একজন অন্যজনকে অবিশ্বাসী (কাফের) বলে সন্দেহ করার ক্ষেত্রেও এ বিধান প্রযোজ্য হবে। 
,
একইভাবে কোনো মুমিন ব্যক্তি যদি দেখতে পান, তার মতোই একজন মুসলমান এমন কথা উচ্চারণ বা কাজ করেছে যাতে মনে হবে যে, সে হয়তো কাফের হয়ে গেছে, তা সত্ত্বেও তাকে অবশ্যই সন্দেহের সুবিধা দিতে হবে এবং সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোনোক্রমেই তাকে কাফের বলা যাবে না। 

যদি কোনো মুসলমান এমন কথা বলে বা এমন কাজ করে, যার কুফরির পর্যায়ে পড়ার কেবল একটা সম্ভাবনা থাকে, তাহলেও তাকে ধর্মত্যাগী বা অবিশ্বাসী বলা যাবে না। ইমাম আবু হানিফার মতে, কোনো কথার যদি ৯৯ শতাংশই অবিশ্বাসের বোঝায় এবং মাত্র ১ শতাংশ বিশ্বাস (ঈমান) অবশিষ্ট থাকে,তাহলে তাকে কাফের বলা যাবে না। 

হাদীস শরীফে এসেছে  
রাসুল সাঃ বলেনঃ  যে ব্যক্তি আমাদের মতো নামাজ পড়বে, আমাদের কিবলা যেদিকে তার কিবলাও সেদিকে অথবা আমরা যা জবাই করি সে তা খায়, তাহলে সে একজন মুসলমান। আমাদের যেসব অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে তারও তা থাকবে।

ইসলামী ভ্রাতৃত্বের মূলভিত্তি হলো ঈমানের ঐক্য। এ কারণে রাসূল সা: মুমিনদের পরস্পরকে কাফের বলে অভিযুক্ত না করতে সতর্ক করে দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এ বিষয়ে বলা হয়েছে :
যখন কোনো ব্যক্তি তার ভাইকে ‘কাফের’ বলে অভিহিত করে, তখন তাদের যেকোনো একজনের ওপর এ অভিযোগ বর্তাবে। হয় বিষয়টি যেভাবে বলেছে সে রকমই হবে অথবা (অভিযোগ যদি সত্য না হয় তাহলে) উচ্চারণকারীর ওপরই তা বর্তাবে।

আবুজার গিফারি রা: থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে :
‘কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে কাফের বা আল্লাহর ‘দুশমন’ বলে অভিযুক্ত করল, অথচ এটি সত্য নয়, তাহলে ওই অভিযোগ তার ওপরই বর্তাবে।’

উপরিউক্ত হাদিসগুলোর বার্তা কেবল কোনো ব্যক্তিকে তাকফির বলা নিষিদ্ধের মধ্যেই সীমিত থাকেনি; উপরন্তু তা সীমালঙ্ঘন বা গুনাহ (ফিসক) এবং অপরের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অপরাধ ও গুনাহের অভিযোগ আরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। তাই কোনো মুসলমান কর্তৃক অপর কাউকে ফিসকের অভিযোগ করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

,আরেকটি হাদিসে ব্যাপক ভাবে এ কথা ঘোষণা করা হয়েছে :
‘কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে সীমালঙ্ঘনকারী (ফিসক) বা অবিশ্বাসী (কাফের) বলে অভিযুক্ত করবে না এবং তার অভিযোগের দাবি অনুযায়ী সে যদি অনুরূপ না হয়, তাহলে তার দায় তাকেই বহন করতে হবে।’

হাদিসবিশারদ আবু জাহরাহ এ প্রসঙ্গে এক মন্তব্যে বলেন, কোনো ব্যক্তি সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া অপর কোনো ব্যক্তিকে ধর্ম অবমাননাকারী, মুরতাদ, কাফের ও ফাসিক বলে অভিযুক্ত করতে পারবে না এবং কেউ এরূপ করলে তাকেই অভিযোগের দায়ভার বহন করতে হবে। এর সুস্পষ্ট অর্থ যা আবু জাহরাহ উল্লেখ করেছেন, তা হলো ‘অভিযোগকারী মিথ্যা বললে সে নিজেই কাফের হয়ে যাবে।’

ইসলামে কাউকে কাফের বা তাকাফির বলা হলো মারাত্মক গুনাহের কাজ এবং অপরাধ। তাই কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তিকে সুস্পষ্ট ভাষায় কাফের বলে অভিযুক্ত করলে অথবা এমন অভিযোগ করল যার অর্থ কাফের বলা বোঝায় : তাহলে তাকে তাজিরের অধীনে প্রতিরোধমূলক দণ্ড ভোগ করতে হবে এবং একজন উপযুক্ত বিচারক সেই শাস্তি নির্ধারণ করবেন।
,

★★★প্রিয় ভাই! 
উপরোক্ত আলোচনা  উক্ত ব্যাক্তিকে শোনানো হলে আশা করা যায় সে প্রত্যেক মিথ্যাবাদী, সুদখোর, ঘুষখোর কে আর কাফের বলবেনা।  ইনশাআল্লাহ 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...