আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
142 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (15 points)
একজন বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির প্রশ্নঃ

"আস-সালামু আলাইকুম। চাকরির ইন্টারভিউ দিতে নিজ জেলার বাইরে গিয়েছিলাম, বুঝি নি যে আমাকে ফাদে ফালানো হয়েছে। সেখানে যাওয়ার পর কয়েকজন মিলে জোরপূর্বক এক ডিভোর্সি মহিলার সাথে আমাকে বিয়ে দেন। আমি অনেক রিকুয়েষ্ট করি, আমি বিবাহিত। তবু প্রায় আমার বয়সী সন্তান আছে এমন এক মহিলার সাথে আমাকে রাতে বিয়ে দিয়ে দেয়। সেখানে এক লোক আমাকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি আমাকে হেল্প করবেন এই সমস্যা থেকে বের হতে, আপাতত যেন আমি সাইন করে দেই। তিনি এটাও বলেন, এসব কাগজ ভুয়া, তিনি আমাকে বাচাবেন। অচেনা জায়গায় রাতে একা আমার হাতে কোনো অপশনও ছিল না। তবু অনেক রিকুয়েষ্ট করলাম, স্পেশালি ওই মহিলা কোনোভাবেই আমার না শুনতে রাজি না। তিনি মোহর লিখালেন ৫ লাখ। আমি জানালাম এটা আমার সামর্থ্যের বাইরে। মহিলা তখন চেচিয়ে উঠলেন, ওই লোক আমাকে ডেকে আবারও বললেন যে সব নকল কাগজ। আপাতত আমি যেন কথামত সব মেনে এখান থেকে কেটে পরি, উনি নাকি বাকিটা সামাল দিবেন। কাজি সাহেব কেও বললাম যে আমি বিয়ে করতে আসি নি, আপনারা জোর করে বিয়ে করিয়ে দিচ্ছেন। শেষে নিরুপায় আমি কবুল বললাম, যদিও একটুও মন থেকে বলি নি, মোহরও ৫ লাখ হল যা আমার সাধ্যের বাইরে। এরপর আমি বাড়ি ফিরে এলাম। আমার সিভি থেকে নাম্বার, লোকেশন সবই তাদের জানা। এ কাহিনী পরিবারে বলার মত সাহস করতে পারছিলাম, খুব মানসিক প্রেসারের মধ্য দিয়ে দিন যাচ্ছিল। শেষমেশ পরিবারকে জানাই, আমার ওয়াইফও আমাকে সাপোর্ট করে। আমি ওই মহিলাকে মন থেকে মুখে ডিভোর্সও দেই। কিন্তু ৫ লাখ টাকা দেওয়ার মত সামর্থ্য আমার নেই। এখন এই টাকা পরিশোধ না করলে কি শরিয়ত মোতাবেক তালাক হবে না?"

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

মন থেকে সন্তুষ্ট না থাকা সত্বেও যদি দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম পুরুষ একজন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষির সামনে বিয়ের ইজাব কবুল তথা প্রস্তাব ও গ্রহণ হয়ে থাকে। তাহলে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়।যদিও পাত্র বা পাত্রী বিয়ে করতে মন থেকে রাজি না হয়ে থাকে। কারণ বিধান প্রযোজ্য হয় বাহ্যিক অবস্থার উপর। আর বাহ্যিক ইজাব কবুল প্রমাণ করে বিয়েতে পাত্র পাত্রী রাজি।

সেই হিসেবে উক্ত মেয়েকে বিয়ে করতে আপনি রাজি না থাকলেও যদি বিয়ের মজলিসে বিয়ের জন্য ইসলামের যেসব শর্ত আছে, পুরণ করে বিয়ে করে থাকেন, তাহলে বিয়ে হয়ে গেছে। তাকে কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া তালাক দেয়া ঠিক হবে না।

জোর করে বিয়ে দেয়া যদিও একটি অনৈতিক কাজ, তবে কুমারী মেয়ের  সম্মতি থাকলেই (কুমারী নারীর ক্ষেত্রে নীরবতাই সম্মতি) জোরপূর্বক হলেও বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। (রদ্দুল মুহতার ৪/৮৭ বাদায়ে’ ২/৬০২)

 কেননা, হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাযি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

ثَلاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ : النِّكَاحُ ، وَالطَّلاقُ ، وَالرَّجْعَةُ

তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যা গোস্বায় হোক বা হাসি ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় কার্যকরী হয়ে থাকে। বিবাহ, তালাক ও রজয়াত। (আবু দাউদ ২১৯৪ তিরমিযি ১১৮৪)

 বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে কিংবা মেয়ের সম্মতি অপরিহার্য। ইসলামের দৃষ্টিতে জোর করে বিয়ে দেয়া অভিভাবকের জন্য নাজায়েজ এবং আল্লাহর নাফরমানির শামিল।। কেননা, এর কারণে দাম্পত্যজীবনের মূল নিয়ামক শক্তি প্রেম-ভালোবাসা ও পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্প্রীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আল্লাহর কাছে পানাহ চাই, অনেক সময় এই দাম্পত্য-কলহ উত্যুঙ্গ আকার ধারণ করে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে যায়।

وإذا أكرهت المرأة على النكاح، ففعلت، فإنه يجوز العقد (الفتاوى الهندية-1/294)

যদি কোন মেয়েকে বিয়ের জন্য বাধ্য করা হয় সে  (বাধ্য হয়ে ) বিয়ে করে তাহলে বিয়ে হয়ে যাব। (ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৯৪)

*প্রিয় ভাই যদি আপনার বর্ণনা সত্যি হয় তাহলে অবশ্যই তারা আপনার উপর জুলুম করেছে এবং আপনি যদি মুখে উচ্চারণ করতঃ তাকে তালাক দেন তাহলে তালাক হয়ে যাবে। যদি মোহর ধার্য করে বিয়ে করে থাকেন, তাহলে উক্ত মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক বা একান্ত সাক্ষাৎ ছাড়া তালাক দিলে অর্ধেক মোহর পরিশোধ করতে হবে। আর একান্ত সাক্ষাতের পর তালাক দিলে পূর্ণ মোহর দিতে হবে।

আর যদি মোহর ধার্য করা ছাড়া বিয়ে করে থাকেন, তাহলে একান্ত সাক্ষাৎ ছাড়া বিয়ে করলে স্ত্রীকে এক জোড়া কাপড় দিতে হবে। আর একান্ত সাক্ষাতের পর তালাক দিলে উক্ত মেয়ের নিকটাত্মীয়দের বিয়েতে যে পরিমাণ মোহর ধার্য করা হয়ে থাকে, তার সমমানের মোহর পরিশোধ করতে হবে।আর যদি ঐ মহিলা আপনার মোহরানা ক্ষমা করে দেয় তাহলে তা মাফ হয়ে যাবে। আপনার উপর পরিশোধ করা আবশ্যক হবে না।

( বি:দ্র: আপনি যেহেতু বিয়েটি ইচ্ছাকৃতভাবে করেননি বরং আপনাকে বাধ্য করা হয়েছে সেক্ষেত্রে আপনাকে আমরা পরামর্শ দিব যে, আপনি স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করবেন। আল্লাহ তায়ালা আপনার জন্য সব কিছু সহজ করে দিন।)

وَإِن طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّا أَن يَعْفُونَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِي بِيَدِهِ عُقْدَةُ النِّكَاحِ ۚ [٢:٢٣٧]

আর যদি মোহর সাব্যস্ত করার পর স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিয়ে দাও,তাহলে যে,মোহর সাব্যস্ত করা হয়েছে তার অর্ধেক দিয়ে দিতে হবে। অবশ্য যদি নারীরা ক্ষমা করে দেয় কিংবা বিয়ের বন্ধন যার অধিকারে সে (অর্থাৎ, স্বামী) যদি ক্ষমা করে দেয় তবে তা স্বতন্ত্র কথা। [সূরা বাকারা-২৩৭]


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...