আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
143 views
in সালাত(Prayer) by (28 points)
edited by

আসসালামু আলাইকুম। আমি আমার বাবাকে বুঝালেও সে বুঝতে পারছে না যে আমার উপর জামাতে নামাজ ওয়াজিব। আমি যে মসজিদে নামাজ আদায় করি সে মসজিদের ইমামকে আমি জিজ্ঞাসা করলেও তিনি SURE হয়ে উত্তর দিতে পারেন নি। আমি বুঝাতে গেলেই বাবা আগেই খারাপ আচরন করে এমনকি বাসা থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়। আজকে আমি তার কারণে মাগরীবের নামাজ মসজিদে আদায় করতে পারি নি। আজকে তার একটা কথা আমাকে মন থেকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। বলেছে, বেশি ধার্মিক হওয়ার দরকার নেই। আমার মতো ছেলে তার দরকার নাই। বাসা থেকে বের করে দিবে। আবার বাবা নিজেও জামাতে নামাজ আদায় করে না। তার চরিত্রও ভালো না। সে দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয় ও আমি আখিরাতকে প্রাধান্য দিই। আমার প্রশ্ন:

১. আমি বুঝাতে গেলেও না বুঝলে কি করবো?

২. আমি যদি কুরআন হাদীস থেকে রেফারেন্স দিই কিন্তু সে যদি না বুঝে বরং বলার আগেই খারাপ আচরন করে ও দুর্ব্যবহার করে তবে আমার করণীয় কি? আমার বয়স কম হওয়ায় সে যদি না বুঝে তবে কি করবো? যে যদি করোনার অজুহাত দেখায় তবে কি মসজিদে যাওয়া থেকে বিরত থাকবো?

৩. বাবা যদি জামাতে নামাজ আদায় করার কারণে বাসা থেকে বের করে দেয় তবে আমি কি করবো ও কোথায় সাহায্য চাইবো?

৪. তার কারণে জামাতে নামাজ আদায় করতে না পারলে কি আমার গুণাহ হবে?

৫. তার এই সমস্ত কাজকর্ম কি আমি সহ্য করবো না প্রতিরোধ করবো? নামাজে বাধা দেওয়ার ফলে কি তার গুণাহ হচ্ছে?

৬. তার খারাপ আচরণের কারণে তার প্রতি আমার মনে ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে যা কাটিয়ে উঠা আমার পক্ষে সম্ভব না। কোনো কারণে পিতা মাতার প্রতি ঘৃণা জন্মালে কি সন্তানের গুণাহ হবে? আমার কি গুণাহ হচ্ছে?

৭. আমি যেহেতু স্কুলে পড়াশোনা করি তাই ইসলাম সম্পর্কে এত কিছু জানি না। তবে আমি জানতে চাই ও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে চাই। কিভাবে আমি কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী চলে জান্নাতে যেতে পারবো?

৮. ইসলাম পালনের ক্ষেত্রে কেন সবসময় পরিবার থেকে বাধা আসে? এর দ্বারা কি আল্লাহ আমাকে পরীক্ষা করছেন? যদি পরীক্ষা করেন তবে কিভাবে আমি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ন হবো?

৯. "বেশি ধার্মিক হওয়ার দরকার নেই। আমার মতো ছেলে তার দরকার নাই। বাসা থেকে বের করে দিবে।" বাবার এই বক্তব্যের কারণে আমি প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছি। এই বক্তব্যের কারণে সে কি গুণাগার?

১০. আমি যদি তার এই অত্যাচারে বাধ্য হয়ে তার জন্য বদদোয়া করি তবে তা কি আমার জন্য জায়েজ হবে? তার কারণে যদি আমার দুনিয়ার জীবন ধ্বংস হয় তবে কি হবে?

১১. আমাকে কিছু নসিহা করবেন যার মাধ্যমে আমি গুণাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারি ও সৎপথ পেতে পারি।

উল্লেখ্য, আমি বুঝতে পারছি না সে কেন বাধা দিচ্ছে? সে কি করোনার কারণে বাধা দিচ্ছে না মনের ইসলাম বিদ্বেষ থেকে বাধা দিচ্ছে? মসজিদে যেতে না দিলেও অন্য জায়গায় গেলে কিছু হয় না।

1 Answer

0 votes
by (675,600 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-

পূর্বের ফতোয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
 
বুখারী শরীফে এসেছেঃ  
بَابُ وُجُوبِ صَلَاةِ الْجَمَاعَةِ،

জামা‘আতে সলাত আদায় করা ওয়াজিব করা সংক্রান্ত অধ্যায়।

 وَقَالَ الْحَسَنُ : إِنْ مَنَعَتْهُ أُمُّهُ عَنِ الْعِشَاءِ فِي الْجَمَاعَةِ شَفَقَةً لَمْ يُطِعْهَا.

হাসান বাসরী (রহ.) বলেন, কোনো মা যদি তার সন্তানের প্রতি স্নেহবশত ‘ইশার সালাত জামা‘আতে আদায় করতে নিষেধ করেন, তবে এ ক্ষেত্রে সন্তান তার মায়ের আনুগত্য করবে না।

عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ أَبِي الزِّنَادِ عَنِ الْأَعْرَجِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِحَطَبٍ فَيُحْطَبَ ثُمَّ آمُرَ بِالصَّلاَةِ فَيُؤَذَّنَ لَهَا ثُمَّ آمُرَ رَجُلاً فَيَؤُمَّ النَّاسَ ثُمَّ أُخَالِفَ إِلَى رِجَالٍ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ يَعْلَمُ أَحَدُهُمْ أَنَّهُ يَجِدُ عَرْقًا سَمِينًا أَوْ مِرْمَاتَيْنِ حَسَنَتَيْنِ لَشَهِدَ الْعِشَاءَ.

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! আমার ইচ্ছা হয়, জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দেই, অতঃপর সালাত কায়েমের আদেশ দেই, অতঃপর সালাতের আযান দেয়া হোক, অতঃপর এক ব্যক্তিকে লোকদের ইমামত করার নির্দেশ দেই। অতঃপর আমি লোকদের নিকট যাই এবং তাদের (যারা সালাতে শামিল হয়নি) ঘর জ্বালিয়ে দেই। যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম! যদি তাদের কেউ জানত যে, একটি গোশ্তহীন মোটা হাড় বা ছাগলের ভালো দু’টি পা পাবে তাহলে অবশ্যই সে ‘ইশা সালাতের জামা‘আতেও হাযির হতো। (বুখারী শরীফ ৬৪৪.৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪; মুসলিম ৫/৪২, হাঃ ৬৫১, আহমাদ ৭৩৩২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬১৬)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
শরীয়তের খেলাফ বাবা মায়ের আদেশ মানা যাবেনা।
মসজিদে গিয়েই নামাজ আদায় করতে হবে।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/
(০১)
আপনি নিজ পরিবারের মুরব্বিদের মাধ্যমে বুঝাতে পারেন।
,
(০২)
বর্তমান পরিস্থিতিতে উক্ত উজুহাত ওযর হবেনা। 
আপনি যথাসম্ভব মসজিদেই নামাজ আদায়ের চেষ্টা করুন।
,
(০৩)
এক্ষেত্রে পরিস্থিতি সাভাবিক হওয়া পর্যন্ত বাসাতে নামাজ আদায় করুন।
,
(০৪)
এতে আপনার গুনাহ হবেনা।
তবে আপনি চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
,
(০৫)
আপনি প্রতিরোধ করতে পারেন।
তবে ধৈর্য ধারনের পরামর্শ থাকবে। 
নামাজে বাধা দেওয়ার ফলে অবশ্যই  তার গুণাহ হচ্ছে।

(০৬)
এতে আপনার গুনাহ হবেনা।
,
(০৭)
৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি শরীয়তের যাবতীয় আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হবে।
শরীয়াহ খেলাফ কাজ কতা যাবেনা।
নেককার বান্দাদের সাথে বেশি বেশি উঠাবসা করবেন। প্রয়োজনে তাবলিগে সময় লাগাবেন।
দ্বীনি ইলম অর্জন করবেন। 
,

(০৮)
হ্যাঁ এটি পরিক্ষা।
আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করে ধৈর্য ধারন করে আস্তে-ধীরে তাদের বুঝিয়ে,নিজ পরিবারের মুরব্বিদের মাধ্যমে বুঝিয়ে সমাধানের চেষ্টা করবেন। 

(০৯)
হ্যাঁ তিনি গুনাহগার হবেন।
,
(১০)
বদ দুয়া করা ঠিক হবেনা।
,
(১১)
গুনাহ থেকে বাঁচতে উলামায়ে কেরামগন কিছু পদ্ধতি বলেছেন।
সেগুলো অবলম্বন করুন।

★গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য তওবা করতে হবে।

★একটু ভেবে দেখুন, কোন্ কোন্ পথে গোনাহ হয়ে যাচ্ছে। কোন্ কোন্ দরজা দিয়ে গোনাহ প্রবেশ করছে। ঘরের দরজা বন্ধ না করলে যেমন চোর ঢুকবে, তেমনি গোনাহের দরজা বন্ধ না করলেও অনিচ্ছায় আপনি গোনাহে জড়িয়ে পড়বেন। সুতরাং গোনাহের দরজা যদি বন্ধ করতে পারেন, তাহলে গোনাহ থেকে বাঁচা সহজ হয়ে যাবে। আর যেসমস্ত পথে গোনাহ হয়ে যায় সেগুলো নিয়ে ভাবলে দেখবেন, তালিকার প্রথমেই আসবে অসৎ সঙ্গ বা খারাপ বন্ধু। সুতরাং যে কোনো মূল্যে আপনাকে অসৎ সঙ্গ থেকে বাঁচতে হবে। নইলে তারা আপনাকে গোনাহে জড়িয়েই ছাড়বে। এজন্যই তো প্রবাদ আছে, সৎ সঙ্গে সর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন– ‘মানুষ তার বন্ধুর দীনের উপর থাকে, অতঃপর কার সাথে বন্ধুত্ব করছ তা বিবেচনা করে নাও’। (সুনান তিরমিযী ২৩৭৮)

গোনাহের আরেকটি দরজা হল, মোবাইল ও কম্পিউটার। এর সাথে সাথে ইন্টারনেট। এগুলো ভাল কাজেও ব্যবহার করা যায়, আবার এগুলো দিয়ে গোনাহও হয়ে যায়। প্রয়োজনের কথা বলে এগুলো হাতে আসে, আর তা দিয়ে প্রযুক্তির তুলনায় গোনাহই বেশি প্রবেশ করে। সুতরাং  বাস্তবেই যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে এগুলোর নিরাপদ ব্যবহার করবেন। বিশেষ করে কম্পিউটারের বাস্তব প্রয়োজন হলে সেটা বাড়ির এমন স্থানে স্থাপন করবেন যেন সকলের নযরে পড়ে, আর আপনি গোনাহ থেকে বাঁচতে পারেন।

★ আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহন করুন। তাদের মজলিসে আসা যাওয়া করুন। 

★গোনাহ যদি যৌবনতাড়িত হয় তাহলে বিবাহের ব্যাপারে সিরিয়াসলি চিন্তা করুন। প্রয়োজনে আপনার গার্জিয়ানকে এ ব্যাপারে খোলাখুলি বলে বিবাহের আগ্রহ ব্যক্ত করতেও কোনো সমস্যা নেই। 
যদি বিবাহ আপাতত সম্ভব না হয়,তাহলে রোযা রাখুন।

★কখনো একাকী নিভৃতে থাকবেন না। কেননা একাকীত্ব গোনাহ চিন্তা করার কারণ হতে পারে। আর আপনার সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হোন। যেমন- সৎকাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, নামাজ ইত্যাদি।

★পরকালের মুরাকাবা করুন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 110 views
...