আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
142 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (4 points)
আসসালামুআলাইকু। আমার লেখাটা বড় হলেও আল্লাহর জন্য আমাকে একটু সাহায্য করলে খুব উপকৃত হতাম। আমি আমার পরিবারের অমতে বিয়ে করি। আমার প্রথম বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর আমার স্বামী বলে সে আর আমার কাছে শারীরিক ভাবে সন্তুষ্টনা। আমি তাকে দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলি কিন্তু সে রাজি হয়না। একদিন আমি আমার ছোট বোনের সাথে তার অবৈধ সম্পর্কের ভিডিও দেখি। আমার ছোট বোন খারাপ সংস্পর্শে এসে কিছু ভুল করেছিলো সেটা আমার স্বামী জানতে পেড়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে। আমি যখন জানতে পারি তখন সে বলে যে সে আর এই ভুল করবেনা এবং এখন থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর সে বিভিন্ন ভাবে আমাকে টর্চার করে আমার বোনকে তার কাছে নিয়ে এসে দিতে বাধ্য করে। আমাকে বলে যে সে আমাকেই ভালোবাসে। শুধু শারীরিক চাহিদার জন্য আমার বোনের কাছে যায়।              এরপর মহান আল্লাহতায়ালা আমাকে দ্বীনের বুঝ দান করে। তখন আমার মনে হয় একদিন সে রাগের মাথায় আমাকে ৩ তালাক এবং বায়েন তালাক বলেছিল। তাকে বিষয়টা বললে সে অস্বীকার করে এবং বলে যে এভাবে বললেও নাকি তালাক হয়না। তখন আমারও মাঝেমধ্যে মনে হয় হয়তো নাও বলতে পারে।  এ বিষয়টার কোন স্বাক্ষীও নেই। তখন আমি তালাকের বিষয়টা এবং আমার বোনের বিষয়টা নিয়ে ইস্তেখারা করি। প্রথমদিন ফজরে ওঠারপরে মনে হচ্ছিল এই মানুষটা একটা শয়তান। তারপর দিন আবারও ইস্তেখারা করি এবং স্বপ্নে দেখি আমি শুদ্ধ ভাবে সুরা ফাতিহা পড়ার চেষ্টা করছি কিন্তু সে আমাকে জড়িয়ে ধরে অশুদ্ধ মাখরাজে পড়তে বলছে এবং বলছে যে এটাই সহজ। তারপর থেকে  তাকে আমার অসহ্য লাগতো। তখন আমি তাকে বলি যে আমি আর এই পাপ হতে দিবনা। তখন সে আমাকে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে অনেক অত্যাচার করে এবং আবারও আমাকে আমার বোনকে ডেকে দিতে বাধ্য করে।   আমি আর মেনে নিতে পারছিলামনা।  তখন আমার বাবা এবং ভাইকে ডাকি। কিন্তু সে আমাকে তাদের সামনে কিছু বলতে দেয়না। আমাকে অন্যরুমে আটকে রাখে এবং আমার কাছে মাফ চেয়ে বলে সে আর কোনদিনও আমার গায়ে হাত তুলবেনা। তারপর থেকে আমাকে শারীরিক নির্যাতন  করতোনা কিন্তু আমাকে অবহেলা করতো। আমি তখন সহ্য করতে না পেয়ে তার কাছে ডিভোর্স চাই। সে আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়না। বলেযে সে আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য বিয়ে করেনি।  আমার যদি দরকার হয় তাহলে যেন আমি দেই। এইসময় আমি আবারও কনসিভ করি। তখন সে আমার সাথে একটু ভালো ব্যবহার করে।  বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে আমি আবারও ইস্তেখারা করি। তখন আমার মনে হয় স্বপ্নে কেউ আমাকে বলছে এই সম্পর্কটা টিকে নেই, তুমি এখান থেকে বের হয়ে আসো। তখন আমি কান্নায় ভেঙে পরি। আমার অনাগত সন্তানের কিহবে সেই ভেবে। পরদিন আমি আবারও ইস্তেখারা করি। আমার মনে হয় স্বপ্নে কেউ আমাকে বলছে তুমি শুধু দোয়া করো। আমি জানিনা এই স্বপ্নগুলো আল্লাহর নাকি শয়তানের পক্ষ থেকে ছিল। আমি প্রতিদিন সালাতুল হাযত পড়ে আল্লাহর কাছে  দাম্পত্য সমস্যার সমাধান চাইতাম। গত জুন মাসের প্রথমদিন আমার এই বাচ্চাটাও নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমি আমার বাবার বাড়িতে ছিলাম। আমার পরিবারের সবার সাথে আলোচনা করে আমি তার সাথে নতুন করে মৌলভী ডেকে সবার দোয়া নিয়ে জীবন শুরু করতে চাইছিলাম। কিন্তু তাকে আগে থেকে কিছু জানাইনি। কারণ বিষয়টা তার কাছে হাস্যকর ছিল। তাকে যখন আমাকে নিতে আসতে বলি সে বাড়ির কাছাকাছি এসে ফিরে যায় এবং বলে যে আমি নাকি তাকে মারার জন্য ডেকেছিলাম। স্বয়ং আল্লাহ তাকে বাচিয়েছে তাই সে আগে থেকে বুঝতে পেয়ে আসেনি। সে বলে এখন যদি আমি তার কাছে যাইও তাহলেও সে আমার সাথে সংসার করবেনা। কিন্তু আল্লাহজানে আমাদের মনে কোন পাপ ছিলনা। সে পরদিন আবার ফোন করে বলে আমি যেন একাই তার বাড়িতে চলে যাই। তাহলে সে আমাকে কিছু করবেনা।  কিন্তু কাউকে সাথে নিয়ে গেলে তাদের অপমান করবে। সে কোনোদিন আর আমার বাবার বাড়িতে আসবেনা। আমি যদি একা না যাই তাহলে যেন তাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেই। কারণ সে না খেয়ে আছে। আমি যদি দুটোর একটাও না করি তাহলে সে আমার পরিবারের সবাইকে ফাঁসাবে। কোনো সময় বলে যে সবাইকে মারবে ইত্যাদ। তার ম- ভাইয়ের কাছে ফোন করলে তারাও আমাকে একা যেতে বলে। বলে আমরা নাকি তাদের ছেলেকে মারতে চেয়েছিলাম। তখন আমি বাধ্য হয়ে কোনো শর্ত ছাড়াই তাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেই। ডিভোর্স পেপার পাওয়ারপর সে বলে যে সে আমাকে চায়। আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবেনা। তার ভুল হয়েছে। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে সে আমাকে চায়। সবার কাছে অনুরোধ করছে  আমাকে ফিরে পাওয়ার জন্য। আমি দুই মাসে দুইটা নোটিশ পাঠিয়েছি। সে একটাতেও স্বাক্ষর করেনি।  চার মাস হয়ে গেছে এখনো তৃতীয় নোটিশ পাঠাইনি। আমদের কাবিননামায় উল্লেখ ছিল মুসলিম পারিবারিক আইন অমান্য করলে আমি তাকে তালাক দিতে পারব। যদিও সে হয়তো সেটা পড়ে দেখেনি। সে বলছে এভাবে নাকি ডিভোর্স হয়না। তাকে কাঁদিয়ে নাকি আমার কোন ইবাদত কবুল হবেনা। সে আমার সাথে থেকে ভালো হতে চায়। বারবার তার ভুল স্বীকার করছে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে আদৌ কি এই বিয়েটা টিকে আছে?  সেখানে যাওয়া কি আমার জন্য হালাল হবে?  আমি যদি সেখানে ফিরে না যাই তাহলে কি আমার পাপ হবে?  আর সেখানে ফিরে যেতে চাইলে আমাকে কি করতে হবে? আমি খুব দিশেহারা হয়ে পড়েছি। আমি নামাজে মনোযোগ দিতে পারছিনা। আমাকে এমন কিছু পরামর্শ দিবেন যেটাতে আমি আল্লাহর ক্ষমা পাবো এবং পরকালে সফলতা লাভ করতে পারবো। জাযাকাল্লাহ।

1 Answer

0 votes
by (675,600 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছে যে ""এরপর মহান আল্লাহতায়ালা আমাকে দ্বীনের বুঝ দান করে। তখন আমার মনে হয় একদিন সে রাগের মাথায় আমাকে ৩ তালাক এবং বায়েন তালাক বলেছিল। তাকে বিষয়টা বললে সে অস্বীকার করে এবং বলে যে এভাবে বললেও নাকি তালাক হয়না""

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার স্বামী যে আপনাকে তিন তালাক দিয়েছিলো,এটি সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করার প্রেক্ষিতে সে এ কথাও বলেছিলো যে "এভাবে বললেও তালাক হয়না"

স্বামীর এই কথার দ্বারা স্পষ্ট যে সে আপনাকে এক বাক্যে বা এক মজলিসে তিন তালাক দিয়েছিলো। 

শরীয়তের বিধান হলো এব বৈঠকে ৩ তালাক দেওয়া হোক,বা একাধিক বৈঠকে,
এক শব্দে ৩ তালাক দেওয়া হোক বা একাধিক শব্দে ৩ তালাক দেওয়া হোক,সব ছুরতেই ৩ তালাকই পতিত হয়ে যাবে।       
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ঠিক তখন থেকেই আপনার উপর তিন তালাক পতিত হয়ে গিয়েছে।    

সেই তালাকের পর থেকে আপনাদের ঘর সংসার যেনা হয়েছে।
যেহেতি তিন তালাকের পরে কনসিভ হয়েছিলো,তাই এই সন্তান হারাম সন্তান হয়েছে।
আপনাদের তখনই কোনো ফতোয়া বিভাগে যোগাযোগ করতে হতো। 
এখন মহান আল্লাহর কাছে খালেস দিলে তওবা করতে হবে।  
,
তিন তালাক দেবার পর আপনি আর তার নিজের স্ত্রী থাকেন না। স্ত্রী পর মানুষ হয়ে যায়। এটিই অমোঘ বিধান। তাই তালাক দেবার আগে চিন্তা করতে হয়। রাগ হলেই তালাক দিতে হবে, এ মানসিকতা পরিহার করতে হবে।

এক্ষেত্রে সেই স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চাইলে সূরত একটিই বাকি আছে। তা হল, আপনার অন্যত্র বিবাহ হতে হবে। তারপর সেই স্বামীর সাথে স্বাভাবিক ঘর সংসার করতে হবে। এমনকি শারিরীক সম্পর্ক হতে হবে। তারপর উক্ত স্বামী যদি আপনাকে তালাক দেয়, তারপর ইদ্দত শেষ হয়, তাহলেই কেবল আপনি আবার উক্ত স্বামীকে বিবাহ করতে পারবেন। এবং আবার ঘর সংসার করতে পারবেন। এছাড়া দ্বিতীয় কোন রাস্তা খোলা নেই।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ    

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠] 

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা;যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]

وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك

হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাঃ এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। কারণ,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। {সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩}

আরো জানুনঃ


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম। এখানে আমার প্রশ্নের প্রথম অংশের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। আর  সে যদি তালাক না বলে থাকে তাহলে তার পরবর্তী যে ব্যবহার এবং আমার নোটিশ পাঠানো সব মিলিয়ে কি তালাক হয়ে গেছে?  আসলে একটা মানুষ আমার জন্য অনেক কান্নাকাটি করছে এটা আমার খুব খারাপ লাগছে। অনেকে তার কান্না দেখে আমাকে ফিরে যাওয়ার জন্য বলছে। আমি আবারও ইস্তেখারা করেছি কিন্তু কিছু বুঝতে পারছিনা। সেখানে ফিরে গেলে যদি আবার আমি ভুল পথে চলে যাই?  আমি আমার পরকাল নিয়ে খুব চিন্তিত। আমাকে আল্লাহর জন্য সাহায্য করুন। জাযাকাল্লাহ।                                                                                       

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...