আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
387 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (18 points)
closed by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।

১. আমি খাটের যেদিকে পা রাখি তার একহাত দূরে একটা পড়ার টেবিল আছে। ঐ পড়ার টেবিলের উপরের তাকে কি কুরআন ও বুখারি শরীফ রাখা যাবে? রাখলে গুনাহ হবে?
যদিও যখন রাতে শোয়া হয়, পা গুলো ঐ পাশে থাকে না, বিপরীত পাশে থাকে বেশি। তবুও যেহেতু ঐ দিকেই পা দিচ্ছি আর খাট থেকে একহাতদূরে অবস্থিত, তাই গুনাহ হবে?
আর টেবিলের একদম বিপরীত পাশে উপরে রাখা যাবে কুরআন, হাদিস? মানে খাট থেকে একহাত+টেবিল পরিমাণ দূরে?

২. একবছর আগে হিদায়াত পাওয়া এক মেয়ে (বয়সঃ ১৮), সাধ্যমত দ্বীন পালন, পর্দা করার চেষ্টা করে। গান, সিনেমা ইত্যাদি জাহিলিয়াত ছেড়ে দিয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।

তবে আজকে "বোরকার উপর রং লাগলে কি করণীয়", তা গুগল থেকে দেখতে গিয়ে, বোরকাকে কটাক্ষ করা একটা নায়িকার নিউজ আসলো। তো সে কৌতুহলবশত ঐ নায়িকার নিউজটা পড়তে লাগলো। সাথে নায়িকাটার খোলামেলা পোশাকের অশালীন ছবি ছিলো। কৌতুহলবশত ঐ নায়িকার আরো কিছু নিউজ পড়ে ও অশালীন ছবি দেখে ফেললো মেয়েটি।
এমন না যে, তার এগুলো দেখে ভালো লাগছে। সে মনে মনে, ঐ নায়িকার এসব ছবিকে ঘৃণা করছে, ভাবছে, "ছিহ্, পাগল মনে হয়!" এধরণের ভাবনা।

তবে ছবিগুলো দেখার কারণ হচ্ছে, তার কৌতুহল। অর্থাৎ, শয়তানের চাল আর কি। শয়তান তাকে বারবার এই বলে আশ্বাস দেয় যে, "তুমিও মেয়ে, সেও মেয়ে, তাই এগুলো একটুআধটু দেখলে তো অসুবিধা নেই। তুমি ছেলে হলেই না, তোমার দৃষ্টির হেফাজত করতে হতো। এখন তো তুমি এগুলো দেখে ইন্সপায়ার্ড হচ্ছো না। শুধু দেখতে চাচ্ছো, তারা কতটা নিচে নামতে পারে..."

মেয়েটা নিজেও বুঝতে পারছে ফাসেকা মহিলাদের ছবি দেখে সময় নষ্ট করা মু'মিনের সাজে না। সে বারবার এসব আর না দেখার প্রতিজ্ঞা করে মনে মনে। তবুও শয়তানের প্ররোচিত পড়ে অন্য কিছু দেখতে গিয়ে, বছরে কয়েকবার এই নায়িকা নামক ফাসেকা মহিলাদের ছবি দেখা হয়ে গিয়েছে। লাস্টবার দেখে সে আবারও মনে মনে পণ করেছে, সে এসব থেকে দূরে থাকবে।

★ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মেয়েটার কি কবিরা গুনাহ হয়েছে? তার এখন কি করা উচিত? তাকে কিছু পরামর্শ দেন শায়েখ।

জাযাকুমুল্লাহ খইর
closed

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
selected by
 
Best answer
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
কুরআন মহান আল্লাহর বাণী। সুতরাং তার প্রতি সম্মান বজায় রাখা এবং অপমান-অপদস্থের হাত থেকে রক্ষা করা জরুরি।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
  
وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهٰذَا الْكِتَابِ أَقْوَامًا وَيَضَعُ بِه اٰخَرِينَ

উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা এ কিতাব কুরআনের মাধ্যমে কোন কোন জাতিকে উন্নতি দান করেন। আবার অন্যদেরকে করেন অবনত।
(মুসলিম ৮১৭, ইবনু মাজাহ ২১৮, আহমাদ ২৩২, দারিমী ৩৪০৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫১২৫, শু‘আবূল ঈমান ২৪২৮, সহীহাহ্ ২২৩৯।)

★শরীয়তের বিধান হলো কুরআন,হাদীস,দ্বীনি,শরয়ী জ্ঞান সম্বলিত কিতাব যদি সরাসরি পায়ের দিকে না হয়,বরং পা থেকে উঁচুতে রাখা হয়,অথবা পা থেকে অনেক দূরে বা আলমারি ইত্যাদিতে বন্ধ করে রাখা হয়,তাহলে সেদিকে পা দেওয়া জায়েজ আছে।
,
কিন্তু যদি একেবারে পায়ের সামনা-সামনি হয়,অথব আলমারিতেই আছে,তবে সেই আলমারি শিসার হয়,এবং আলমারী পায়ের নিকটেই হয়,তাহলে এটি মাকরুহ হবে।

الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (1 / 655):
" و) كما كره (مد رجليه في نوم أو غيره إليها) أي عمدا لأنه إساءة أدب قاله منلا ناكير (أو إلى مصحف أو شيء من الكتب الشرعية إلا أن يكون على موضع مرتفع عنالمحاذاة) فلايكره، قاله الكمال  (قوله: مرتفع) ظاهره ولو كان الارتفاع قليلاً ط قلت: أي بما تنتفي به المحاذاة عرفاً، ويختلف ذلك في القرب والبعد، فإنه في البعد لاتنتفي بالارتفاع القليل والظاهر أنه مع البعد الكثير لا كراهة مطلقاً، تأمل".
সারমর্মঃ
ঘুমের মধ্যে বা জাগ্রত অবস্থায় কুরআনের দিকে ইচ্ছাপূর্বক ভাবে পা দেওয়া মাকরুহ,কেননা এটি আদবের খেলাফ ।
কিন্তু যদি উঁচু জায়গায় হয়,অথবা দূরে হয়,তাহলে মাকরুহ হবেনা।

الفتاوى الهندية (5 / 322):
"مد الرجلين إلى جانب المصحف إن لم يكن بحذائه لايكره، وكذا لو كان المصحف معلقاً في الوتد وهو قد مد الرجل إلى ذلك الجانب لايكره، كذا في الغرائب"
সারমর্মঃ
কুরআনের মুসহাফের দিকে পা দেয়ার ক্ষেত্রে যদি এটি সরাসরি সামনা-সামনি না হয়,তাহলে মাকরুহ হবেনা।
অনুরুপভাবে মুসহাফ যদি উপরে লটকানো থাকে,তাহলে তার দিকে পা দেওয়া মাকরুহ হবেনা।   

★শয়ন কক্ষে খাট থেকে কিছুটা দূরে টেবিলের উপর কুরআন থাকলে সে দিকে পা দিয়ে ঘুমালে কোনও সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। কারণ কুরআনকে অপমানের উদ্দেশ্যে নয় বরং প্রয়োজনবোধে এমনটি করা হয়।

শাইখ বিন বায রহঃ কে প্রশ্ন করা হয়, মসজিদে মুসল্লিদের সামনের দিকে রেহাল/আলমারিতে কুরআন থাকে। মুসল্লিরা কুরআনের দিকে পা ছড়িয়ে বসে। এতে কোন গুনাহ হবে কি?
তিনি বলেন,
ما يضر، ما يضر، ما هو المقصود الاستهانة، المقصود الاستراحة.
“ক্ষতি নেই, ক্ষতি নেই। কারণ এতে কুরআনকে অপমান করা উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্যে আরাম করা।”

শাইখ আব্দুর রাহমান নাসের আল বাররাক বলেন,
وأما مد الرجل إلى المصحف فإن كان مرفوعاً في دولاب ونحوه أو بعيداً فلا حرج في ذلك، وإن كان على الأرض قريباً من القدم فلا يجوز؛ لأن ذلك صورة امتهان للمصحف وإن لم يقصد من يمد رجله ذلك، فإن امتهان المصحف لا يقصده مسلم،
“আর কুরআনের দিকে পা ছড়ানোর ব্যাপারে কথা হল, কুরআন যদি আলমারি বা অন্য কিছুর উপরে অথবা দূরে থাকে তাহলে তাতে কোনও অসুবিধা নেই। আর যদি তা মাটিতে পায়ের কাছেই থাকে তাহলে তা জায়েজ নাই। কারণ এটি কুরআনকে অপমান করার একটি রূপ-যদিও সে দিকে পা ছড়ানো দ্বারা এটা তার উদ্দেশ্য না থাকে। কারণ কুরআনকে অপমান করার নিয়ত কোনও মুসলিমেরই থাকে না।” 


প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সেই টেবিল যেহেতু পা থেকে দূরে,আবার কুরআন ও হাদীসের কিতাব রাখা হয়েছে উপরের তাকে,সুতরাং সেদিকে পা দিলেও মাকরুহ হবেনা।

★উল্লেখিত ছুরতে টেবিলের বিপরীত দিকে উপরে কুরআন হাদীসের কিতাব রাখা যাবে।  
       
(০২)
যেহেতু সেগুলো খোলামেলা পোশাকের অশালীন ছবি ছিলো, তাই মেয়েটির গুনাহ হয়েছে।  
তওবা করতে হবে,আর আল্লাহত কাছে ওয়াদাবদ্ধ হতে হবে,যে সে আর ভবিষ্যতে এহেন কিছু দেখবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...