ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃَ وَ الدَّمَ وَ لَحۡمَ الۡخِنۡزِیۡرِ وَ مَاۤ اُہِلَّ بِہٖ لِغَیۡرِ اللّٰہِ ۚ فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّ لَا عَادٍ فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۷۳﴾
তিনি আল্লাহ তো কেবল তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশত এবং যার উপর আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারিত হয়েছে, কিন্তু যে নিরূপায় অথচ নাফরমান এবং সীমালংঘনকারী নয় তার কোন পাপ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(সুরা বাকারা ২৭৩)
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত মুরগী,বিফ যেটি আল্লাহর নাম নিয়ে জবাই করা হয়নি,এগুলো খাওয়াও হারাম।
ইবাদত, দোয়া কবুল হওয়ার বেশকিছু শর্ত রয়েছে।
তার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য পবিত্র (হালাল) হওয়া।
হারাম খাবার খেয়ে ইবাদত, দোয়া করলে কোনোভাবেই তাহা কবুল হবেনা।
,
আল্লাহ্ তাআলা বলেন, “আল্লাহ্ তো কেবল মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ২৭]
ইবাদতে ও দুআ কবুল হওয়ার ব্যাপারে হালাল খাদ্যের অনেক প্রভাব রয়েছে। খাদ্য হালাল না হলে ইবাদত ও দুআ কবুল হওয়ার যোগ্য হয় না। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
« أيها الناس إن الله طيب لا يقبل إلا طيبا وإن الله أمر المؤمنين بما أمر به المرسلين فقال ( يا أيها الرسل كلوا من الطيبات واعملوا صالحا إنى بما تعملون عليم) وقال (يا أيها الذين آمنوا كلوا من طيبات ما رزقناكم) ». ثم ذكر الرجل يطيل السفر أشعث أغبر يمد يديه إلى السماء يا رب يا رب ومطعمه حرام ومشربه حرام وملبسه حرام وغذى بالحرام فأنى يستجاب لذلك ».
তরজামা: হে লোক সকল! আল্লাহ তাআলা হলেন পবিত্র। আর তিনি পবিত্রতা ছাড়া কবুলই করেন না। আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাই নির্দেশ দিয়েছেন যা রাসূলগণকে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন “হে রাসূলগণ পবিত্র বস্তু আহার করুন এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত”।
(সূরা মুমিনুন-৫২)
তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন “হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দান করেছি। (সূরা বাকারহ -১৭২)
রাসুলুল্লাহ সাঃ এক লোকের কথা বললেন যে দীর্ঘ সফর করে আসে। এবং অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে দু‘ হাত তুলে আল্লাহর দরবারে বলতে থাকে, ইয়া পরওয়ারদেগার! ইয়া রব! । কিন্তু যেহেতু সে ব্যক্তির পানাহার সামগ্রী হারাম উপার্জনের, পরিধেয় পোষাক- পরিচ্ছদ হারাম পয়সায় সংগৃহীত, এমতাবস্থায় তার দেয়া কি করে কবুল হতে পারে?। (মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ২৩৯৩)
,
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ، ح وَحَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " لاَ تُقْبَلُ صَلاَةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ وَلاَ صَدَقَةٌ مِنْ غُلُولٍ "
ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ পবিত্রতা ছাড়া নামায কবুল হয় না। আর হারাম উপায়ে প্রাপ্ত মালের সাদকাও কুবুল হয় না। —সহীহ। তিরমিজি ০১ ইবনু মাজাহ– (২৭২)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
হারাম খাবার খেলে তার ইবাদত কবুল হয়না মর্মে হাদীস এসেছে,তবে কতদিন ইবাদত কবুল হবেনা,এই মর্মে উল্লেখ নেই।
সর্বপরি এহেন খাবার খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে।
প্রয়োজনে গোশত ব্যাতিত অন্যান্য খাবার খেতে হবে।
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
এখানে ইবাদত কবুল না হওয়া দ্বারা ইবাদতের ছওয়াব হবেনা,উদ্দেশ্য।
তবে সেই ইবাদত পুনরায় আবার আদায় করতে হবে,বিষয়টি এমন নহে।
যেমন হাদীস শরীফে এসেছেঃ
আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
مَنْ شَرِبَ الْـخَمْرَ وَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، وَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَـلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ فَشَرِبَ فَسَكِرَ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلَاةٌ أَرْبَعِيْنَ صَبَاحًا، فَإِنْ مَاتَ دَخَلَ النَّارَ، فَإِنْ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ، وَإِنْ عَادَ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَّسْقِيَهُ مِنْ رَدْغَةِ الْخَبَالِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! وَمَا رَدْغَةُ الْـخَبَالِ؟ قَالَ: عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ.
‘‘কেউ মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হলে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তবে যদি সে তওবা করে নেয় তা হলে আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবুল করবেন।
এরপর আবারও যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তা হলে আবারও তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অবশ্য যদি সে তওবা করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার তওবা কবুল করবেন।
এরপর আবারও যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তা হলে আবারও তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না এবং এমতাবস্থায় তার মৃত্যু হলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। কিন্তু যদি সে তওবা করে নেয় তা হলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন।
এরপর আবারও যদি সে মদ পান করে নেশাগ্রস্ত হয় তখন আল্লাহর হক হয়ে যায়, কিয়ামতের দিন তাকে ‘রাদগাতুল খাবাল’ পান করানো।
সাহাবিগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ‘রাদগাতুল খাবাল’ কি?
তিনি বললেন, তা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজ।”
(সহিহ ইবনে মাজা, হা/২৭৩৮, সহিহুল জামে লিশ শাইখ আলবানী, হা/৬৩১৩ নং হাদিস)
“চল্লিশ দিন সালাত কবুল হবে না” এ কথার অর্থঃ
আবু আব্দিল্লাহ ইবনে মানদাহ [মৃত্যু: ৩৯৫ হিজরি] বলেন:
لا يثاب على صلاته أربعين يوماً عقوبة لشربه الخمر ، كما قالوا في المتكلم يوم الجمعة والإمام يخطب إنه يصلي الجمعة ولا جمعة له ، يعنون أنه لا يعطى ثواب الجمعة عقوبة لذنبه .” تعظيم قدر الصلاة ” – 2 /587 ،588
“চল্লিশ দিন সালাত কবুল হবে না” অর্থ: মদপানের শাস্তি হিসেবে চল্লিশ দিনের সালাতের সওয়াব পাবে না। যেমন ফকিহগণ বলেছেন: জুমার দিন খুতবা চলাকালীন যদি কেউ কথা বলে সে জুমা পড়বে কিন্তু তার জুমা হবে না। অর্থাৎ তার এই অপরাধের কারণে তাকে জুমার সালাতের সওয়াব প্রদান করা হবে না।” (তাযীম কাদরিস সালাত ২/৫৮৭ ও ৫৮৮)
ইমাম নওবী রহ. [মৃত্যু: ৬৭৬ হি: /১২৭৭ খৃ:] বলেন:
“وَأَمَّا عَدَم قَبُول صَلاته فَمَعْنَاهُ أَنَّهُ لا ثَوَاب لَهُ فِيهَا وَإِنْ كَانَتْ مُجْزِئَة فِي سُقُوط الْفَرْض عَنْهُ , وَلا يَحْتَاج مَعَهَا إِلَى إِعَادَة” اهـ .
“আর সালাত কবুল না হওয়ার অর্থ হল, এতে তার সওয়াব হবে না। যদিও ফরয আদায়ের জন্য তা যথেষ্ট হবে এবং তা পুনরায় আদায় করার প্রয়োজন নাই।” (শরহে মুসলিম)