بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
১.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাধারণত তাহাজ্জুদের পর বিতর নামায পড়তেন। এটি ছিল নবীজীর সাধারণ অভ্যাস। বয়স ও পারিপার্শ্বিক
বিভিন্ন অবস্থার কারণে তাহাজ্জুদের রাকাতসংখ্যা কম-বেশি হত। কিন্তু বিতর সর্বদা তিন
রাকাতই পড়তেন। এক রাকাত বিতর পড়া নবীজী থেকে প্রমাণিত নয়। যে সব রেওয়ায়াতে পাঁচ,
সাত বা নয় রাকাতের কথা এসেছে,
তাতেও বিতর তিন রাকাতই। বর্ণনাকারী আগে-পরের
রাকাত মিলিয়ে সমষ্টিকে ‘বিতর’ শব্দে ব্যক্ত করেছেন। হাদীসের রেওয়ায়াতসমূহে ব্যাপকভাবে
বিতর ও তাহাজ্জুদের সমষ্টিকে ‘বিতর’ বলা হয়েছে। এটি একটি উপস্থাপনাগত বিষয়।
নবীজী বিতর তিন রাকাত পড়তেন। এটিই তাঁর
অনুসৃত পন্থা। নিম্নের হাদীসসমূহ থেকে বিষয়টি সুপ্রমাণিত।
আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত,
তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন
যে, রমযানে
নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি
উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন
না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও
চার রাকাত পড়তেন, যার
সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।–(সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮, হাদীস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদীস ২৪০৭৩)
সা‘দ ইবনে হিশাম রাহ. বলেন,
হযরত আয়েশা রা. তাকে বলেছেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। -(সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮; হাদীস ১৬৯৮; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ১৫১ (বাবুস সালাম ফিল বিতর) মুসান্নাফে
ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯৪, হাদীস
৬৯১২; সুনানে
দারাকুতনী ২/৩২, হাদীস
১৫৬৫; সুনানে
কুবরা বাইহাকী ৩/৩১)
এই হাদীসটি ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ
রাহ.ও ‘মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। তার আরবী পাঠ এই-
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يسلم في الركعتين
الأوليين من الوتر
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বিতরের প্রথম দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। ইমাম হাকেম (রহ.) তা বর্ণনা
করার পর বলেন- هذا حديث
صحيح على شرط الشيخين অর্থাৎ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহীহ।
ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. ‘তালখীসুল মুস্তাদরাক’-এ হাকেম রাহ.-এর সিদ্ধান্তকে সমর্থন
করেছেন। -মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮০
এই হাদীস দ্বারা একদিকে যেমন প্রমাণিত
হয় যে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাধারণ নিয়মে তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন তেমনি
একথাও প্রমাণিত হয় যে, তিন
রাকাতের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের জন্য বসতেন, কিন্তু সালাম ফেরাতেন না। সালাম ফেরাতেন সবশেষে তৃতীয়
রাকাতে। যদি দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক করার নিয়ম না থাকত তাহলে সালাম করার বা না করার প্রসঙ্গতই
আসত না। কেননা সালাম তো ফেরানো হয়ে থাকে।
আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://www.ifatwa.info/859
২. নামায হয়তো কারো এক ওয়াক্ত কাযা হতে
পারে,আবার কখনো কয়েক
ওয়াক্ত কাযা হয়ে যেতে পারে।কারোর বা অনেক অনেক ওয়াক্ত কাযা হয়ে যেতে পারে।যদি কারো
জীবনে অনেক অনেক ওয়াক্ত নামায কাযা হয়ে যায় তাহলে তার সারা জীবনের সকল নামাযকে উমুরী
কাযা বলে।
ইবনে আবেদীন শামী রাহ কাযা নামায পড়ার
নিয়ম এভাবে দিয়েছেন যে,
ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ - ﻛَﺜُﺮَﺕْ
ﺍﻟْﻔَﻮَﺍﺋِﺖُ ﻧَﻮَﻯ ﺃَﻭَّﻝَ ﻇُﻬْﺮٍ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﻭْ ﺁﺧِﺮَﻩُ،
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺎﺑﺪﻳﻦ ﺍﻟﺸﺎﻣﻰ
– ( ﻗَﻮْﻟُﻪُ ﻛَﺜُﺮَﺕْ ﺍﻟْﻔَﻮَﺍﺋِﺖُ ﺇﻟَﺦْ ) ﻣِﺜَﺎﻟُﻪُ : ﻟَﻮْ ﻓَﺎﺗَﻪُ ﺻَﻠَﺎﺓُ ﺍﻟْﺨَﻤِﻴﺲِ
ﻭَﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ ﻭَﺍﻟﺴَّﺒْﺖِ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻗَﻀَﺎﻫَﺎ ﻟَﺎ ﺑُﺪَّ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺘَّﻌْﻴِﻴﻦِ ﻟِﺄَﻥَّ ﻓَﺠْﺮَ
ﺍﻟْﺨَﻤِﻴﺲِ ﻣَﺜَﻠًﺎ ﻏَﻴْﺮُ ﻓَﺠْﺮِ ﺍﻟْﺠُﻤُﻌَﺔِ، ﻓَﺈِﻥْ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺗَﺴْﻬِﻴﻞَ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮِ،
ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺃَﻭَّﻝَ ﻓَﺠْﺮٍ ﻣَﺜَﻠًﺎ، ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺇﺫَﺍ ﺻَﻠَّﺎﻩُ ﻳَﺼِﻴﺮُ ﻣَﺎ ﻳَﻠِﻴﻪِ ﺃَﻭَّﻟًﺎ
ﺃَﻭْ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺁﺧِﺮَ ﻓَﺠْﺮٍ، ﻓَﺈِﻥَّ ﻣَﺎ ﻗَﺒْﻠَﻪُ ﻳَﺼِﻴﺮُ ﺁﺧِﺮًﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻀُﺮُّﻩُ
ﻋَﻜْﺲُ ﺍﻟﺘَّﺮْﺗِﻴﺐِ ﻟِﺴُﻘُﻮﻃِﻪِ ﺑِﻜَﺜْﺮَﺓِ ﺍﻟْﻔَﻮَﺍﺋِﺖِ . ( ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ،
ﺑﺎﺏ ﻗﻀﺎﺀ ﺍﻟﻔﻮﺍﺋﺖ - 2/538
ভাবানুবাদঃ-উমুরী কাযা নামায আদায় করতে
হলে প্রথমে কোন ওয়াক্তের কতটা নামায কাযা হয়েছে তা নির্ণয় করবে।যদি সেটা নির্ণয় করা
সম্ভব না হয়। তাহলে অনুমান করে নিবে। অনুমান করে কোন ওয়াক্তের কতটি নামায কাযা হয়েছে
সেটা নির্ধারণ করে নিবে।তারপর ধারাবাহিকভাবে একে একে সবগুলোকে আদায় করে নিবে।যেমনফজরের নামায সর্বমোট ১০০ ওয়াক্তের
কাযা হয়েছে। তখন কাযা নামায আদায় করার সময় এভাবে নিয়ত করবে যে,
আমার জিম্মায় যত ফজরের নামায কাযা রয়েছে,
সে অনাদায়কৃত নামায সমূহের মধ্য থেকে প্রথম
ফজরের নামাযকে এখন কাযা আদায় করছি” এমন নিয়তে নামায আদায় করবে।এভাবে হিসেবে করে পড়তে
থাকবে। প্রতিবার অনাদায়কৃত প্রথম ফজরের নামায বলার দ্বারা তার যিম্মায় যতগুলো নামায
বাকি ছিলো, সেগুলোর
প্রথম নামাযের নিয়ত হচ্ছে, তাই
এক্ষেত্রে নিয়তটি নির্দিষ্ট নামাযেরই হচ্ছে।ঠিক উল্টোভাবেও করা যায়। অর্থাৎ যত নামায
কাযা আছে তার সর্বশেষ অনাদায়কৃত কাযার নিয়ত করছি। এভাবেও পূর্বোক্ত পদ্ধতিতে বাকি নামাযের
কাযা আদায় করা যাবে।(রদ্দুল মুহতার-২/৫৩৮)এ
ধারাবাহিকতায় বাকি নামায সমূহের ক্বাযা
আদায় করবে। যোহর, আছর,
মাগরিব, ইশা এবং সাথে বিতিরের নামাযকে ও এভাবেই আদায় করে নিবে।
একদিনে যত দিনের ইচ্ছে কাযা আদায় করা যাবে। কোন সমস্যা নেই। বিতিরের নামাযের ক্বাযা
সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/629