উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
মহানবী (সাঃ), হযরত আবূ বাকর ও হযরত উমার (রাঃ)-এর যামানায় জুমআর মাত্র ১টি আযানই প্রচলিত ছিল। আর এ আযান দেওয়া হত, যখন ইমাম খুতবাহ্ দেওয়ার জন্য মিম্বরে চড়ে বসতেন তখন মসজিদের দরজার সামনে উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে। এইরুপ আযান চালু ছিল হযরত আবূ বাকর, উমারের খেলাফত কাল পর্যন্ত।
,
অতঃপর হযরত উসমান (রাঃ) মদ্বীনার বাড়ি-ঘর দূরে দূরে এবং জনসংখ্যা বেশী দেখে উক্ত আযানের পূর্বে আরো একটি অতিরিক্ত আযান চালু করলেন। যাতে লোকেরা পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে জুমআর খুতবাহ্ শুনতে প্রথম থেকেই উপস্থিত হয়।
,
এ আযান শুনে লোকেরা জুমুআহর সময় উপস্থিত হয়েছে বলে জানতে পারত। এইভাবে ঐ আযান প্রচলিত থাকল। এতে কেউ তাঁর প্রতিবাদ বা সমালোচনা করল না। অথচ মিনায় (২ রাকআতের জায়গায়) ৪ রাকআত নামায পড়ার কারণে লোকেরা তাঁর সমালোচনা করেছিল।
,
হাদীস শরীফে এসেছে
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ الْمُرَادِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ يُونُسَ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي السَّائِبُ بْنُ يَزِيدَ، أَنَّ الأَذَانَ، كَانَ أَوَّلُهُ حِينَ يَجْلِسُ الإِمَامُ عَلَى الْمِنْبَرِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِي عَهْدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ - رضى الله عنهما - فَلَمَّا كَانَ خِلاَفَةُ عُثْمَانَ وَكَثُرَ النَّاسُ أَمَرَ عُثْمَانُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِالأَذَانِ الثَّالِثِ فَأُذِّنَ بِهِ عَلَى الزَّوْرَاءِ فَثَبَتَ الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ .
মুহাম্মদ ইবনে সালামা (রহঃ) ........... আস-সাইব ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)-এর যুগে ইমাম যখন খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্যে মিম্বরের উপর বসতেন, তখন যে আযান দেয়া হত তাই ছিল জুমার প্রথম আযান। অতঃপর . উসমান (রাঃ)-এর খিলাফতকালে যখন মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তখন তিনি তৃতীয় আযানের প্রবর্তন করেন। এই ধরণের প্রথম আযান ‘জাওরা’ নামক স্থানে সর্বপ্রথম প্রদত্ত হয়। অতঃপর এই নিয়ম ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে।
(আবু দাউদ ১০৮৭)
বলাই বাহুল্য যে, যে কাজ একজন খলীফায়ে রাশেদ করেছেন তা বিদআত হতে পারে না। বিশেষ করে মহানবী (সাঃ)-এর বিরোধিতা নেই যেখানে সেখানে সাহাবীর ইজতিহাদ ও আমল আমাদের জন্যও সুন্নত।
,
অনেকেই বলেন যে রাসুলের সময় তারাবিহ এর জামাতের সাথে না হওয়ার কারনে যখন ওমর রাঃ এর খেলাফতের যামানায় তারাবিহ জামাতের সাথে হতে লাগলো,তখন সে ক্ষেত্রে ওমর রাঃ বলেছিলেন যে
نعمة البدعة هذه
এটি উত্তম বিদয়াত।
তাহলে উসমান রাঃ এর চালু করা জুময়ার ২য় আযানও বিদয়াত হবে।
আসলে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) উক্ত উক্তি দ্বারা বিদ‘আতের আভিধানিক অর্থ বুঝিয়েছেন; পারিভাষিক অর্থ নয়। কেননা তিনি এমন একটি ইবাদত সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন, যা স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাস্তবায়ন করে গেছেন। সুতরাং ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর আমল রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলের সাথে মিলে গেছে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলের সাথে যা মিলে যায়, তা বিদ‘আত হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।
উছমান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)-এর দ্বিতীয় আযান চালুর বিষয়ে বলব, যে কয়জন খলীফার সুন্নাত অনুসরণের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আদেশ করেছেন, উছমান (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাঁদের মধ্যে একজন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ»
“তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাত আঁকড়ে ধর”।
,
অপর রেওয়ায়েতে মহানবী (সাঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে আমার পরে জীবিত থাকবে, সে বহু মতভেদ দেখতে পাবে। অতএব তোমরা আমার সুন্নাহ্ (পথ ও আদর্শ) এবং আমার পরবর্তী সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাহ্ অবলম্বন করো। তা দৃঢ়ভাবে ধারণ করো, দাঁতে কামড়ে ধরো। আর দ্বীনে নবরচিত কর্ম থেকে সাবধান থেকো। কারণ প্রত্যেক নবরচিত (দ্বীনী) কর্মই হল ‘বিদআত’। আর প্রত্যেক বিদআতই হল ভ্রষ্টতা।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৪৬০৭, তিরমিযী, সুনান ২৮১৫ নং, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত ১৬৫নং)
সেজন্য খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাত ব্যতীত অন্য কারো সুন্নাত আমরা গ্রহণ করব না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দিষ্ট করে তাঁর নিজের সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাতের কথাই বলেছেন; অন্য কারো কথা তিনি উল্লেখ করেননি।
,
তাই এটা কোনো ভাবেই বিদয়াত হতে পারেনা।
এবং এটা সেই সময় থেকেই মক্কা মদিনা সহ সারাবিশ্বে এখন পর্যন্ত জারী আছে।
,
★★★তবে কিছু আহলে হাদিসের উলামায়ে কেরামগন এই আযান কে বিদয়াত বলেছেন।
তাদের অনুসারীরা সেই মত অবলম্বন করতে পারবেন।
,
★উল্লেখ্য যে প্রশ্নে উল্লেখিত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ এই আযানকে সরাসরি বিদয়াত বলেছেন মর্মে কোনো হাদীস আমি খুজে পাইনি।