ওয়া আলাইকুমুস সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম।
জবাবঃ
https://www.ifatwa.info/1577 নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি যে,
সিলাহ রেহমি কিভাবে করা হবে?
সিলাহ রেহমি অর্থ আত্মীয়তার সম্পর্কে অটুট রাখা।
খোঁজখবর নেয়া,ইত্যাদি। এই
সিলাহ রেহমি কয়েকভাবে হতে পারে। চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ
"আল-মাওসু'আতুল
ফেক্বহিয়্যায় " সিলাহ রেহমি বিষয়টাকে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন,
بِمَ تَحْصُل الصِّلَةُ؟ تَحْصُل
صِلَةُ الأَْرْحَامِ بِأُمُورٍ عَدِيدَةٍ مِنْهَا: الزِّيَارَةُ،
وَالْمُعَاوَنَةُ، وَقَضَاءُ الْحَوَائِجِ، وَالسَّلاَمُ، لِقَوْلِهِ صَلَّى
اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: بُلُّوا أَرْحَامَكُمْ وَلَوْ بِالسَّلاَمِ وَلاَ
يَكْفِي مُجَرَّدُ السَّلاَمِ عِنْدَ أَبِي الْخَطَّابِ كَمَا تَحْصُل الصِّلَةُ
بِالْكِتَابَةِ إِنْ كَانَ غَائِبًا، نَصَّ عَلَى ذَلِكَ الْحَنَفِيَّةُ
وَالْمَالِكِيَّةُ وَالشَّافِعِيَّةُ، وَهَذَا فِي غَيْرِ الأَْبَوَيْنِ، أَمَّا
هُمَا فَلاَ تَكْفِي الْكِتَابَةُ إِنْ طَلَبَا حُضُورَهُ
সাক্ষাতের মাধ্যমে, দেখার মাধ্যমে,আত্মীয়র প্রয়োজন পূর্ণ করার মাধ্যমে,সালামের মাধ্যমে সিলাহ রেহমি করা যেতে
পারে। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,আত্মীয়তার সম্পর্ককে অটুট রাখো চায় সালামের মাধ্যমেই হোক না কেন। আবুল খাত্তাব
হাম্বলী রাহ এর দৃষ্টিতে শুধুমাত্র সালাম সিলাহ রেহমির জন্য যথেষ্ট হবে না। কেউ
অনুপস্থিত থাকলে চিঠির মাধ্যমেও সিলাহ রেহমি করা যেতে পারে। এটা হানাফি, মালিকী এবং শাফেয়ী মাযহাবের সিদ্ধান্ত। এ
হুকুম মাতা-পিতা ব্যতীত অন্যান্যদের বেলায় প্রযোজ্য। মাতা-পিতা তাদের সন্তানকে
উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিলে তখন চিঠি দ্বারা সিলাহ রেহমি করা যথেষ্ট হবে না।
وَكَذَلِكَ بَذْل الْمَال
لِلأَْقَارِبِ، فَإِنَّهُ يُعْتَبَرُ صِلَةٌ لَهُمْ؛ لِقَوْلِهِ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِينِ صَدَقَةٌ، وَعَلَى ذِي
الرَّحِمِ ثِنْتَانِ: صَدَقَةٌ، وَصِلَةٌ وَظَاهِرُ عِبَارَةِ الْحَنَفِيَّةِ،
وَالشَّافِعِيَّةِ أَنَّ الْغَنِيَّ لاَ تَحْصُل صِلَتُهُ بِالزِّيَارَةِ
لِقَرِيبِهِ الْمُحْتَاجِ إِنْ كَانَ قَادِرًا عَلَى بَذْل الْمَال لَهُ.
وَيَدْخُل فِي الصِّلَةِ جَمِيعُ أَنْوَاعِ الإِْحْسَانِ مِمَّا تَتَأَتَّى بِهِ
الصِّلَةُ
ঠিকতেমনি নিকটাত্মীয়র জন্য মাল খরচ করাও
সিলাহ রেহমির আওতাধীন। কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,মিসকিনকে সদকাহ করলে শুধুমাত্র সদকাহর সওয়াব
পাওয়া যাবে,আর নিকটাত্মীয়
কাউকে সদকাহ করলে এক্ষেত্রে দু'টি সওয়াব পাওয়া যাবে,প্রথমটি সদকাহর
সওয়াব এবং দ্বিতীয়টি আত্মীয়তার সম্পর্ককে অটুট রাখার সওয়াব। হানাফি এবং শাফেয়ী
মাযহাবের কিতাব বিশ্লেষণ করলে এটাই বুঝা যায় যে,স্বাবলম্বী ব্যক্তির জন্য মুখাপেক্ষী নিকটাত্মীয়র
বেলায় মাল খরচ করা ব্যতীত সিলাহ রেহমী যথেষ্ট হবে না। সিলাহ রেহমির মধ্যে সকল
প্রকার ইহসান এবং অনুগ্রহ শামিল রয়েছে।(৩/৮৫)
আত্মীয়তার সম্পর্ক দুই প্রকারঃ-
الرَّحِمُ نَوْعَانِ: رَحِمٌ مَحْرَمٌ،
وَرَحِمُ غَيْرُ مَحْرَمٍ. وَضَابِطُ الرَّحِمِ الْمَحْرَمِ: كُل شَخْصَيْنِ
بَيْنَهُمَا قَرَابَةُ لَوْ فُرِضَ أَحَدُهُمَا ذَكَرًا وَالآْخَرُ أُنْثَى لَمْ
يَحِل لَهُمَا أَنْ يَتَنَاكَحَا
(ক) এমন আত্মীয়
যাদেরকে বিয়ে করা হারাম।
(খ) এমন আত্মীয়
যাদেরকে বিয়ে করা হারাম নয়।
ভিন্ন লিঙ্গের মধ্য পরিচয় লাভ করা তো সহজ।
যেমন আমরা সাধারণত পরিচয় লাভ করে থাকি। তবে সমলিঙ্গ দু'জনের মধ্যে মাহরাম আত্মীয়ের পরিচয় লাভের
পদ্ধতি কি?
এ সম্পর্কে বলা যায় যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে, এমন দু'জন পরুষ বা মহিলার মধ্য থেকে কোনো একজনকে
পুরুষ এবং অন্যজনকে মহিলা নির্ধারণ করলে যদি তাদের মধ্যকার পরস্পর বিয়ে শাদী হারাম
বলে পরিগণিত হয়, তাহলে বুঝতে হবে
যে,এদের মধ্যকার
সম্পর্ক হলো,আত্মীয়
মাহরাম।যেমন, ফুফু-বাইজ্বি,চাচা-ভাতিজ্বা,ইত্যাদি।তাদের মধ্যে একজনকে পুরুষ
নির্ধারণ করলে পরস্পর পরস্পরে বিয়ে শাদি হারাম বলে গরিগণিত হবে। (৩/৮২)
কুরআন-হাদীসে বর্ণিত সিলাহ-রেহমি তথা
উত্তম ব্যবহারের আশা কার কাছ থেকে করা হবে। অন্যকথায় বললে বলা যায় যে, কার কাছ থেকে সিলাহ রেহমি তথা আত্মীয়তার
সম্পর্কের উঞ্চতাকে অনুভূত করা হবে? এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরাম থেকে দু'টি বর্ণনা পাওয়া যায়।যথাঃ-
لِلْعُلَمَاءِ فِي الرَّحِمِ الَّتِي
يُطْلَبُ وَصْلُهَا رَأْيَانِ الأَْوَّل: أَنَّ الصِّلَةَ خَاصَّةٌ بِالرَّحِمِ
الْمَحْرَمِ دُونَ غَيْرِهِ، وَهُوَ قَوْلٌ لِلْحَنَفِيَّةِ، وَغَيْرُ
الْمَشْهُورِ عِنْدَ الْمَالِكِيَّةِ، وَهُوَ قَوْل أَبِي الْخَطَّابِ مِنَ
الْحَنَابِلَةِ (١) ،. قَالُوا: لأَِنَّهَا لَوْ وَجَبَتْ لِجَمِيعِ الأَْقَارِبِ
لَوَجَبَ صِلَةُ جَمِيعِ بَنِي آدَمَ، وَذَلِكَ مُتَعَذِّرٌ، فَلَمْ يَكُنْ بُدٌّ
مِنْ ضَبْطِ ذَلِكَ بِقَرَابَةٍ تَجِبُ صِلَتُهَا وَإِكْرَامُهَا وَيَحْرُمُ
قَطْعُهَا، وَتِلْكَ قَرَابَةُ الرَّحِمِ الْمَحْرَمِ. وَقَدْ قَال رَسُول اللَّهِ
صَلَّى اللَّه لاَ تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ عَلَى عَمَّتِهَا وَلاَ عَلَى خَالَتِهَا
وَلاَ عَلَى بِنْتِ أَخِيهَا وَأُخْتِهَا، فَإِنَّكُمْ إِذَا فَعَلْتُمْ ذَلِكَ
قَطَعْتُمْ أَرْحَامَكُمْ. (٢)
(ক) কুরআন হাদীসে
বর্ণিত সিলাহ রেহমি দ্বারা মাহরাম আত্মীয় উদ্দেশ্য। অন্য কেউ উদ্দেশ্য নয়। এটা
হানাফি মাযহাবের একটি সিদ্ধান্ত। মালিকি মাযহাব থেকে অপ্রসিদ্ধ একটি উক্তি এবং
আবুল খাত্তাব হাম্বলী রাহ থেকেও এমন একটি অভিমত পাওয়া যায়। তাদের বক্তব্যর সারমর্ম
হলো,যদি মাহরাম
আত্মীয় ছাড়া অন্যদের ব্যাপারেও সিলাহ রেহমি সিদ্ধান্ত দেয়া হয়,তাহলে সমস্ত মানবজাতি এর মধ্যে ঢুকে যাবে।
আর এটা অসম্ভব একটা বিষয়। সুতরাং সীমিত পরিসরে এমন একটা আত্মীয়তার সম্পর্ককে
উল্লেখ করা যেতে পারে,যে সম্পর্ক-কে
অটুট রাখা, এবং বিচ্ছিন্ন না
করার নির্দেশ প্রদাণ করা হবে। আর এটাকে মাহরাম আত্মীয় হিসেবেই নির্ধারণ করা
হবে।রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,মহিলাকে তার ফুফুর সাথে একত্র করে বিয়ে করা যাবে না এবং তার খালার সাথেও বিয়ে
করা যাবে না এবং তার ভাই বা বোনের মেয়ের সাথেও বিয়ে করা যাবে না। যদি তোমরা এমনটা
করো তাহলে তোমরা আত্মীয়তার সম্পর্ককে বিচ্ছিন্ন কারী হিসেবে গণ্য হবে।
الثَّانِي: أَنَّ الصِّلَةَ تُطْلَبُ
لِكُل قَرِيبٍ، مَحْرَمًا كَانَ أَوْ غَيْرَهُ، وَهُوَ قَوْلٌ لِلْحَنَفِيَّةِ،
وَالْمَشْهُورُ عِنْدَ الْمَالِكِيَّةِ، وَهُوَ نَصُّ أَحْمَدَ، وَهُوَ مَا
يُفْهَمُ مِنْ إِطْلاَقِ الشَّافِعِيَّةِ، فَلَمْ يُخَصِّصْهَا أَحَدٌ مِنْهُمْ
بِالرَّحِمِ الْمَحْرَمِ (٣) .
(খ) মাহরাম গায়রে
মাহরাম সবার বেলায় সিলাহ রেহমি প্রযোজ্য হবে। এটা হানাফি মাযহাবের একটি সিদ্ধান্ত।
মালিকী মাযহাবের মাশহুর সিদ্ধান্ত এবং ইমাম আহমদ রাহ এর থেকেও এরকম একটি বর্ণনা
পাওয়া যায়।শাফেয়ী মাযহাবে আমভাবে মাহরাম গায়রে মাহরাম উভয়ের ব্যাপারে পাওয়া যায়।
(৩/৮৩)
সিলাহ রেহমির স্থর
دَرَجَاتُ الصِّلَةِ: ذَهَبَ فُقَهَاءُ
الْحَنَفِيَّةِ وَالشَّافِعِيَّةِ إِلَى أَنَّ دَرَجَاتِ الصِّلَةِ تَتَفَاوَتُ
بِالنِّسْبَةِ لِلأَْقَارِبِ، فَهِيَ فِي الْوَالِدَيْنِ أَشَدُّ مِنَ الْمَحَارِمِ،
وَفِيهِمْ أَشَدُّ مِنْ غَيْرِهِمْ . وَلَيْسَ الْمُرَادُ بِالصِّلَةِ أَنْ
تَصِلَهُمْ إِنْ وَصَلُوكَ؛ لأَِنَّ هَذَا مُكَافَأَةٌ، بَل أَنْ تَصِلَهُمْ
وَإِنْ قَطَعُوكَ . فَقَدْ رَوَى الْبُخَارِيُّ وَغَيْرُهُ لَيْسَ الْوَاصِل
بِالْمُكَافِئِ وَلَكِنَّ الْوَاصِل الَّذِي إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا
হানাফি ফুকাহায়ে কেরাম,এবং শাফেয়ী ফুকাহায়ে কেরাম মনে করেন,সিলাহ রেহমি আত্মীয়তার স্থরভেদে প্রযোজ্য
হবে। মাহরামের তুলনায় মাতা-পিতার জন্য উচ্ছস্থরের সিলাহ রেহমি প্রযোজ্য হবে।আর
গায়রে মাহরামের তুলনায় মাহরামের জন্য উচ্ছস্থরের সিলাহ রেহমি প্রযোজ্য হবে। সিলাহ
রেহমির অর্থ এটা নয় যে,কেউ আপনার সাথে
ভালো ও উত্তম ব্যবহার করল,আর বিনিময়ে আপনিও
তার সাথে ভালো ব্যবহার করলেন।কেননা এটার নাম তখন সিলাহ রেহমি না হয়ে মুকাফা'। বরং আত্মীয় কেউ আপনার সাথে আত্মীয়তার
সম্পর্ককে ছিন্ন করার পরও আপনি তার দিকে উত্তম ব্যবহার নিয়ে অগ্রসর হবেন এটাই হলো
মূলত সিলাহ রেহমি।যেমন সহীহ বুখারী সহ বিভিন্ন রেওয়াতে এসেছে, সিলাহ রেহমি এটা নয় যে,আত্মীয় কারো ভালো ব্যবহারের বিনিময়ে আপনিও
তার সাথে ভালো ব্যবহার করলেন,বরং সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার পরও তার সাথে ভালো ব্যবহার করার নামই হলো সিলাহ
রেহমি। (৩/৮৪)
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. শ্বশুর শাশুড়ি যেহেতু মাহরামের
অন্তর্ভূক্ত। তাই তাদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাদেরকে নিজের পিতার
মাতার মত দেখতে হবে। তাদের সাথে খারাপ আচরণ, কড়া কথা ও ধমক দিয়ে কথা বলা যাবে না।
২. তার কাছে যদি মাফ চেয়ে নেন এবং সে যদি তার
পাওনা মাফ করে দেয় তাহলে তার হক আদায় হয়ে যাবে। তাকে আর তার পাওনা টাকা দেওয়া
লাগবে না। আর সে যদি তার পাওনা টাকা মাফ না করে তাহলে আল্লাহ তায়ালাও সেই হক মাফ
করবেন না। কারণ, এটা বান্দার হক।
৩. হ্যাঁ, নিজের সন্তান থাকার পরেও এতিম সন্তানকে নিজের সন্তানের মত লালন
পালন করা যাবে। তবে তারা বালেগ-বালেগা হয়ে গেলে যেই পিতা মাতা দেখা শোনা করছে
তাদেরকে পর্দা করতে হবে। কারণ, তারা মাহরাম না।
৪. এমন কোন নির্দিষ্ট দোয়া নেই। তবে আপনি
আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশী বেশী দোয়া করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা কবুল করলে হবে
ইনশাআল্লাহ।