ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
পানি থাকা ও পানি ব্যবহারের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তায়াম্মুম করা জায়েয নয়। কিন্তু, রোগী যদি নিজে পানি ব্যবহার করতে না পারেন কিংবা পানি ব্যবহার করলে ক্ষতির আশংকা করেন কিংবা পানি ব্যবহার করতে গিয়ে তার তীব্র কষ্ট হয়; সেক্ষেত্রে তার জন্য তায়াম্মুম করা জায়েয হবে।
এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِن كُنتُم مَّرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
অর্থ : যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করো, অতঃপর পানি না পাও, তাহলে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। আল্লাহ তোমাদের অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদের পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করো।(সুরা মায়েদা : ৬)
আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেন: "আর যদি তোমরা অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে (মলমুত্র ত্যাগ করে) আসে কিংবা তোমরা নারী-সম্ভোগ কর এবং (গোসল করার জন্য) পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং (যথারীতি) মুখমণ্ডল ও হাত মুছে নেবে। আল্লাহ্ তো মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।"[সূরা নিসা, আয়াত: ৪৩]
আরো জানুনঃ
মুসলিমের উপর পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা ওয়াজিব। যদি কোন রোগের কারণে কিংবা অন্য কোন কারণে পানি ব্যবহার করতে অক্ষম হয় তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে। যদি তায়াম্মুমও করতে না পারে তাহালে তার উপর থেকে পবিত্রতার বিধান মওকুফ হয়ে যাবে এবং সে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় নামায পড়বে। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "তোমরা সাধ্যমত আল্লাহ্কে ভয় কর"। আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: "তবে দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোন কষ্ট চাপিয়ে দেননি।"[সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৭৮] পক্ষান্তরে, পেশাব ও পায়খানার যা কিছু বের হয় সেটা পাথর দিয়ে কিংবা পবিত্র টিস্যুপেপার দিয়ে পরিষ্কার করাই যথেষ্ট। এগুলো দিয়ে ময়লা বের হওয়ার স্থানটি তিন বা ততোধিকবার পরিষ্কার করবে; যাতে করে স্থানটি নির্মল হয়ে যায়।"[ফাতাওয়াল লাজনাদ্ দায়িমা (৫/৩৪৬)]
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার আব্বু তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
★শরীয়তের বিধান হলো,নামাজি অসুস্থ হলে এবং দাঁড়াতে অপারগ হলে তাকে চতুষ্পদ (চারজানু) হয়ে বসে অথবা তাশাহহুদের বৈঠকের ন্যায় বসে নামাজ আদায় করতে হবে।
যদি বসেও আদায় করতে অক্ষম হয় তবে ডান পার্শ্বের উপর ভর দিয়ে। তাও যদি কষ্টকর হয় তবে বাম পার্শ্বের উপর ভর দিয়ে নামাজ আদায় করতে হবে।
এ ভাবেও যদি নামাজ পড়তে সক্ষম না হয়, তবে কিবলার দিকে পা দিয়ে চিত হয়ে শুয়ে মাথা দ্বারা বুকের দিকে ইশারা করে রুক ও সিজদা আদায় করবে। তবে সিজদার সময় রুকুর চেয়ে একটু বেশি মাথা ঝুকাবে।
সর্বোপরি জ্ঞান থাকা পর্যন্ত কোনো নামাজির নামাজ মাফ হবে না। অসুস্থ ব্যক্তি তার সুবিধা মতো নামাজ আদায় করবে।হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসুস্থ ব্যক্তির নামাজের বিবরণ দিয়েছেন-
عن عمران بن حصين رضي الله عنهما قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم: ((صلِّ قائمًا، فإن لم تستطع فقاعدًا، فإن لم تستطع فعلى جنب
رواه البخاري في أبواب تقصير الصلاة، باب إذا لم يُطِقْ قاعدًا 1/ 376 (1066)
হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার অশ্ব রোগ ছিল, তাই এ অবস্থায় কিভাবে নামাজ আদায় করবো তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ‘দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় কর, যদি না পার তবে বসে কর, তাও যদি না পার তাহলে এক পার্শ্বের উপর আদায় কর।’ (বুখারি ১/৩৭৬)
বিস্তারিত জানুনঃ
★সুতরাং আপনার বাবা বসে নামাজ আদায় করবে।
বসে নামাজ আদায় করতে সমস্যা হলে শুয়ে থেকে নামাজ আদায় করবে।
ইশারা করে রুক ও সিজদা আদায় করবে। তবে সিজদার সময় রুকুর চেয়ে একটু বেশি মাথা ঝুকাবে।