নামাযে কিবলামুখী হওয়া নামায শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত।
সক্ষমতা থাকার পরেও এ শর্ত পূর্ণ না করলে নামায বাতিল হয়ে যাবে।
যদি কোন মুসলমান এমন কোন স্থানে থাকেন যে স্থান থেকে তিনি কিবলার দিক জানতে না পারেন তাহলে তিনি তাঁর প্রবল ধারণায় যে দিককে কিবলা মনে হয় সেদিকে ফিরে নামায আদায় করবেন। সেক্ষেত্রে উক্ত নামাযটি পুনরায় আদায় করা তার উপর আবশ্যক হবে না। বরং তার নামায শুদ্ধ; তাকে কোন কিছু করতে হবে না।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ ۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا ۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ ۗ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ [٢:١٤٤]
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে। {বাকারা-১৪৪}
জাবের (রাঃ) এর বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা এক যুদ্ধাভিযানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম। সেদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল। আমরা কিবলা জানার চেষ্টা করলাম; কিন্তু নিজেরাই একমত হতে পারলাম না। তাই আমাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি আলাদা আলাদা নামায আদায় করল। আমাদের প্রত্যেকে তার সামনে একটি দাগ দিয়ে রাখল যেন পরবর্তীতে জায়গাগুলো চেনা যায়। যখন ভোর হল তখন আমরা সে দাগ দেখে বুঝতে পারলাম যে, আমরা কিবলার দিকে নয় অন্য দিকে ফিরে নামায আদায় করেছি। ফলে এ বিষয়টা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি আমাদেরকে পুনরায় নামায আদায় করার নির্দেশ দেননি। বরং বললেন: তোমাদের নামায আদায় হয়েছে।[সুনানে দারাকুতনী, মুসতাদরাক হাকেম, সুনানে বাইহাকী; আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (২৯১) অন্যান্য হাদিসের আলোকে এ হাদিসকে ‘হাসান’ ঘোষণা করেছেন]
فإن علم أنہ أخطأ بعد ما صلیٰ لایعیدہا۔ (الفتاویٰ الہندیۃ ۱؍۶۴، درمختار مع الشامي ۲؍۱۱۶ زکریا، شامي ۲؍۱۰۳ بیروت، تبیین الحقائق ۱؍۲۶۷)
সারমর্মঃ
কেহ যদি নামাজ শেষে জানতে পারে যে সে ভুল দিক হয়ে নামাজ আদায় করেছে,তাহলে সেই নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবেনা।
رجل صلی في المسجد في لیلۃ مظلمۃ بالتحری فتبین أنہ صلی إلی غیر القبلۃ جازت صلاتہ۔ (البحر الرائق ۱؍۲۸۷)
সারমর্মঃ
কোনো ব্যাক্তি অন্ধকার রাত্রীতে কেবলা নির্ণয়ের চেষ্টা করে কোনো দিক হয়ে নামাজ আদায় করে,তারপর যদি প্রকাশ পেয়ে যায় যে সে কেবলা ছাড়া অন্য দিক হয়ে নামাজ আদায় করেছে,তাহলে তার নামাজ জায়েই হয়ে যাবে।
যদি কোন মুসলিম সফর অবস্থায় থাকেন কিংবা এমন কোন দেশে থাকেন যেখানে কিবলার দিক জানানোর মত কাউকে না পান তাহলে তার নামায শুদ্ধ; যদি তিনি নিজে কিবলা জানার আপ্রাণ চেষ্টা করে নিজে নিজে একটা সিদ্ধান্ত নেন; পরবর্তীতে জানা যায় যে, তিনি কিবলা ভুল করেছেন।
আর যদি তিনি মুসলমান দেশে থাকেন তাহলে তার নামায সহিহ হবে না। কেননা, তার পক্ষে কিবলা সম্পর্কে কাউকে জিজ্ঞেস করা সম্ভব। অনুরূপভাবে মসজিদের কাঠামো দেখার মাধ্যমেও কিবলা জানা সম্ভব।[মাজমুউল ফাতাওয়া (১০/৪২০)]
কিবলা জানার অনেক পদ্ধতি রয়েছে।
এখন কম্পাসের মাধ্যমে কিংবা কিছু ঘড়ির মাধ্যমে —যেগুলোতে বিশেষ কিছু প্রোগ্রাম আছে— কিবলার দিক জানা সহজ। এছাড়া সূর্যের মাধ্যমে, চন্দ্রের মাধ্যমেও কিবলা নির্ণয় করা যেতে পারে।
যেহেতু কেবলা জানার অনেক পদ্ধতি রয়েছে,তাই অর্ধমাস ধরে করে যাওয়া এহেন ভুল সমর্থিত নয়। প্রশ্নে উল্লেখিত সতর্কতামূলক আপনার স্ত্রীকে সবগুলি নামাজের কাজা আদায় করতে বলবেন।
এখানে আপনি যেই কাপড় দিয়ে পুরো শরীর মুছলেন,সেই কাপড়ে যদি রগের পেশাবের সহিত হালকা যুক্ত পানি লেগে থেকে থাকে,তাহলে আপনার শরীর নাপাক ধরা হবে।