বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম।
জবাবঃ
□ হাদীস শরীফে
এসেছে-
وَعَن
عَبدِ اللهِ بنِ مُغَفَّلٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِيِّ صلى
الله عليه وسلم: يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَاللهِ إنِّي لأُحِبُّكَ،
فَقَالَ: «انْظُرْ مَاذَا تَقُولُ ؟ » قَالَ: وَاللهِ إنِّي لأُحِبُّكَ، ثَلاَثَ
مَرَّات، فَقَالَ: «إنْ كُنْتَ تُحِبُّنِي فَأَعِدَّ لِلْفَقْرِ تِجْفَافاً، فإنَّ
الفَقْرَ أسْرَعُ إِلَى مَنْ يُحِبُّني مِنَ السَّيْلِ إِلَى مُنْتَهَاهُ ». رواه
الترمذي، وقال: حديث حسن » .
আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক
ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল!
আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যা বলছ, তা চিন্তা করে বল।’’ সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি
নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ এরূপ সে তিনবার বলল। তিনি বললেন, ‘‘যদি তুমি আমাকে ভালবাসো,
তাহলে দারিদ্রের জন্য বর্ম প্রস্তুত রাখো। কেননা, যে আমাকে
ভালবাসবে স্রোত তার শেষ প্রান্তের দিকে যাওয়ার চাইতেও বেশি দ্রুতগতিতে দারিদ্র্য
তার নিকট আগমন করবে।’’ (তিরমিযী,
হাদীস নং-
২৩৫০,
হাদিসটি হাসান)।
হাদীসটি আরো অনেক কিতাবে এসেছে- মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১০/২৭৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-১১৩৭৯; শুয়াবুল ঈমান, ২/৬৩৭
□ যুহুদ হল, হারাম থেকে
দূরত্ব অবলম্বন করা, বিলাসিতা
পরিহার করা, অতিরিক্ত
দুনিয়া সম্ভোগ থেকে দুরে থাকা,
আল্লাহর
আনুগত্যের কাজে অগ্রগামী থাকা এবং আখিরাতের জন্য সর্বোত্তম পাথেয় সংগ্রহ করা।
যুহুদের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যাখ্যা হল, রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কর্ম জীবন।
আখিরাতে যে সব কাজ উপকারে আসবে না সেসব কাজ ত্যাগ করাকে যুহুদ তথা দুনিয়া
বিমুখতা বলে।
দুনিয়া বিমুখতা কয়েক প্রকার। হারাম কাজে লিপ্ত না হওয়ার যুহুদ। আর এটি করা
ফরযে আইন। দ্বিধা-সংশয়যুক্ত কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা। দ্বিধা-সংশয়ের
স্তরভেদে এর যুহুদেরও স্তর রয়েছে। দ্বিধা-সংশয় শক্তিশালী হলে তা থেকে বিরত থাকা
ওয়াজিব, আর
দ্বিধা-সংশয় কম হলে তা থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব। আরেক প্রকার যুহুদ হলো অনর্থক
কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা। যেমন, অনর্থক
কথাবার্তা, দৃষ্টি, প্রশ্ন, সাক্ষাৎ
ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা। আরেক ধরণের যুহুদ হলো মানুষের কাছে কিছু চাওয়া থেকে বিরত
থাকা, নফসের
ব্যাপারে যুহুদ, তা হলো
আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে নফসের ওপর যে কোনো কাজকে সহজ মনে করা। সবচেয়ে উত্তম
যুহুদ হলো আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে কোনো কিছু চাওয়া ও তোমার প্রয়োজন
বলা থেকে বিরত থাকা।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا عَبْدُ
اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ بْنِ قَعْنَبٍ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ، - يَعْنِي ابْنَ
بِلاَلٍ - عَنْ جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ
رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ بِالسُّوقِ دَاخِلاً مِنْ بَعْضِ
الْعَالِيَةِ وَالنَّاسُ كَنَفَتَهُ فَمَرَّ بِجَدْىٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ فَتَنَاوَلَهُ
فَأَخَذَ بِأُذُنِهِ ثُمَّ قَالَ " أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنَّ هَذَا لَهُ
بِدِرْهَمٍ " . فَقَالُوا مَا نُحِبُّ أَنَّهُ لَنَا بِشَىْءٍ وَمَا نَصْنَعُ
بِهِ قَالَ " أَتُحِبُّونَ أَنَّهُ لَكُمْ " . قَالُوا وَاللَّهِ لَوْ
كَانَ حَيًّا كَانَ عَيْبًا فِيهِ لأَنَّهُ أَسَكُّ فَكَيْفَ وَهُوَ مَيِّتٌ
فَقَالَ " فَوَاللَّهِ لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللَّهِ مِنْ هَذَا
عَلَيْكُمْ
" .
আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কা'নাব (রহঃ)
... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আলীয়া (অঞ্চল) হতে মদীনায় আসার পথে এক বাজার দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উভয় পার্শ্বে বেশ লোকজন ছিল। যেতে যেতে তিনি
ক্ষুদ্র কান বিশিষ্ট একটি মৃত বকরীর বাচ্চার নিকট পৌছলেন। অতঃপর তিনি এর কান ধরে
বললেন, তোমাদের কেউ
কি এক দিরহামের বিনিময়ে এটা নিতে আগ্রহী হবে। তখন উপস্থিত লোকেরা বললেন, কোন কিছুর বিনিময়ে আমরা উহা নিতে আগ্রহী নই
এবং এটি নিয়ে আমরা কি করব? তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ (বিনা পয়সায়) তোমরা কি উহা
নিতে আগ্রহী? তারা বললেন, এ যদি জীবিত তে তবুও তো এটা দোষী। কেননা এর
কান হচ্ছে ক্ষুদ্র ,ক্ষুদ্র। আর এখন তো তা মৃত, কিভাবে আমরা তা গ্রহণ করব? এরপর তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এ তোমাদের নিকট যতটা তুচ্ছ, আল্লাহর নিকট দুনিয়া এর চেয়েও অধিক তুচ্ছ। (মুসলিম শরীফ ৭১৫০)
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
উক্ত হাদীস দ্বারা রাসূল সা. এটা বুঝাতে চেয়েছেন যে, একজন মুমিনকে আল্লাহ তায়ালা অভাব অনটন দিয়ে পরীক্ষা করে
থাকেন। তাকে ধন সম্পদ কম দেয়। আর এটাই হলো দুনিয়ার বাস্তবতা। কাফেররা সুখে ও অনেক
সম্পদের মধ্যে থাকে। আর মুমিনদেরকে আল্লাহ তায়ালা অভাবে রাখেন। যার কারণে রাসূল
সা. বলেই দিয়েছেনযে, দুনিয়া হলো মু’মিনদের জন্য
কারাগারস্বরূপ এবং কাফিরদের জন্য জান্নাতস্বরূপ।
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "
الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ وَجَنَّةُ الْكَافِرِ " . وَفِي الْبَابِ عَنْ
عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
.
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুনিয়া (পার্থিব জীবন) মু’মিনদের জন্য
কারাগারস্বরূপ এবং কাফিরদের জন্য জান্নাতস্বরূপ। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৩২৪) সহীহ্ , মুসলিম (৮/২১০)।
অন্য এক হাদীসে এসেছে-
عَنْ
أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا
يَزَالُ الْبَلاَءُ بِالْمُؤْمِنِ وَالْمُؤْمِنَةِ فِي نَفْسِهِ وَوَلَدِهِ
وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى اللَّهَ وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ " . قَالَ
أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন নারী-পুরুষের উপর, তার
সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ্
তা‘আলার সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং- ২৩৯৯) হাসান সহীহ্ , সহীহাহ্
(২২৮০)।