আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
340 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (17 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।

আমার চেয়ে পাঁচ-ছয় বছরের ছোট মামাতো এবং খালাতো ভাই। তাদের সাথে ছোটবেলা থেকেই বড় হয়ে আসছি স্বাভাবিকভাবে পর্দা ছাড়া। আমি যখন পর্দা শুরু করি, তখনো তারা বালেগ হয় নি, অর্থাৎ পনেরো বছর পূর্ণ হয় নি। তাই অন্যান্য গায়রে মাহরাম এর সামনে পর্দা করলেও, তাদের সামনে শুধু শালীন পোশাক পরেই থাকতাম।

এখন সামনে তাদের যখন ১৫ বছর পূর্ণ হবে, বালেগ হয়ে যাবে তখন ইন শা আল্লাহ, ভালো করে হিজাব পরেই তাদের সামনে যাবো। কিন্তু ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে নিকাব পরা এবং পা না ঢাকলে সমস্যা হবে কি? আমার নিকাব পরতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু পরিবার থেকে এই ব্যাপারে বাধা আসবে। কারণ তারা ছোট থেকে আমাকে অনেক সম্মানের সাথে দেখে।

তবে ফিতনার আশঙ্কা দেখলে আমি অবশ্যই নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো মুখ ঢেকে রাখার ইন শা আল্লাহ।
তবে আশঙ্কা না থাকলে, আমি যদি ঢিলেঢালা শালীন পোশাক, বড় হিজাব দিয়ে সারা শরীর ঢেকে রাখি, শুধু মুখ এবং পায়ের পাতা খোলা রাখি, তাহলে কি আমার গুনাহ হবে?

(অবশ্যই কোনো ধরনের প্রসাধনী থাকবে না এবং প্রয়োজন ছাড়া তাদের সামনে না আসার চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহ।)

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

 চেহারার পর্দা করাও আবশ্যক।   

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١] 

ঈমানদার নারীদেরকে বলুনতারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমানতা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামীপিতাশ্বশুরপুত্রস্বামীর পুত্রভ্রাতাভ্রাতুস্পুত্রভগ্নিপুত্রস্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদীযৌনকামনামুক্ত পুরুষও বালকযারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞতাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করেতারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণতোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা করযাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}

 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

আবদুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

 وَلاَ تَنْتَقِبِ المَرْأَةُ المُحْرِمَةُ، وَلاَ تَلْبَسِ القُفَّازَيْنِ

আর ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নিকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে।’ (বুখারী : ১৮৩৮)

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়নবী  ﷺ যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও চেহারা ঢাকতেন।

 

আয়েশা রাযি. হজ অবস্থায় মহিলা সাহাবীদের পর্দার যে বিবরণ দিয়েছেন তা থেকে অনুমান করা যায় পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা আন্তরিক ছিলেন। তাঁরা স্বাভাবিক অবস্থায় তো বটেই ইহরাম অবস্থায় যখন মুখ ঢাকতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানেও পরপুরুষের সামনে থেকে নিজেদের চেহারা আড়াল করেছেন। আয়েশা রাযি. বলেন,

كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهﷺ مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا إِلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ.

আমরা ইহরাম অবস্থায় সাল্লাল্লাহু -এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আরোহীরা আমাদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। যখন তারা আমাদের আড়াআড়ি হনআমাদের সঙ্গীনীরা তাদের বড় চাদর মাথা থেকে চেহারায় ঝুলিয়ে দেন। তারা আমাদের অতিক্রম করে চলে যাবার পরই আমরা তা উন্মুক্ত করি।’ (আবূ দাঊদ : ৫৩৮১বাইহাকী : ৩৩৮৮)

 

মুফতী মুহাম্মদ শাফী রহ. লিখেছেন, ‘ইমাম চতুষ্টয়ের মধ্য থেকে ইমাম মালিকইমাম শাফি’ঈ ও ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. তিনজনই মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার মোটেই অনুমতি দেন নি- তা ফিতনার আশংকা থাকুক বা না থাকুক। ইমাম আবূ হানীফা রহ. ফিতনার আশংকা যদি না থাকে- এই শর্তে খোলা রাখার কথা বলেন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এই শর্ত পূরণ হবার নয়তাই হানাফী ফকীহগণ গায়র মাহরাম পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার অনুমতি দেন নি।’ (মা‘আরিফুল কুরআন : ৭/২১৪)

 

 মহিলাদের পা সতরের অন্তর্ভূক্ত কি না?

অধিকাংশ আলেমের মতে মহিলাদের পাও সতরের অন্তর্ভূক্ত । সুতরাং মহিলাদের জন্য পা খোলা রেখে পর পুরুষের সামনে যাওয়া যাবে না। এর দলীল হলো আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। {সূরা নূর-৩১উক্ত আয়াতের মধ্যে মহিলাদের জন্য গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা করতে নিষেধ করা হয়েছে। জোরে পদচারণা যদি নিষেধ হয় তাহলে তো পা দেখানো নিষেধ হবেই।

 

পর্দা সম্পর্কে আরো জানুনhttps://ifatwa.info/22283/

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

 

. গায়রে মাহরামদের সাথে পর্দা করতে হবে এটা আল্লাহ তায়ালার বিধান তাই তাদের সামনে মুখ ও পায়ের পাতা খোলা অবস্থায় কোনো ভাবে যাওয়া জায়েজ হবে না এখানে ফিতনার আশংকা থাক বা না থাক সুতরাং তাদের সামনে মুখ ও পায়ের পাতা খোলা অবস্থায় গেলে গুনাহ হবে আপনার থেকে তারা বয়সে ছোট এটা কোনো বিষয় নয় তারা বালেগ হয়ে গেলে তাদের সামনে আপনাকে পর্দা করতে হবে

 . আত্মীয়তার সম্পর্কের চেয়ে আল্লাহর বিধান মান্য করা বেশী জরুরী তারা রাগ করুক বা না করুক কোনো ভাবে তাদেরকে খুশি করতে গিয়ে আল্লাহর বিধান উপেক্ষা করার অনুমতি শরীয়তে নেই


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...