ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহাম।
জবাবঃ-
পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের জন্য আল্লাহর একত্ববাদকে স্বীকার করা এবং মুহাম্মদ সাঃ কে আল্লাহর রাসূল বলে বিশ্বাস করা ফরয। তারপর দ্বীনের প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করা ও সেই অনুযায়ী আ'মল করা ফরয।
শুধুমাত্র নিজে ঈমান নিয়ে আসলে হবে না এবং শুধুমাত্র নিজে আ'মল করলে হবে না বরং অন্যকেও দাওয়াত দিতে হবে।
অন্যকে দাওয়াত পৌঁছানো সম্পর্কে
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
{ ﻳَﺎﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺑَﻠِّﻎْ ﻣَﺂ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﻣِﻦ ﺭَّﺑِّﻚَ ﻭَﺇِﻥ ﻟَّﻢْ ﺗَﻔْﻌَﻞْ ﻓَﻤَﺎ ﺑَﻠَّﻐْﺖَ ﺭِﺳَﺎﻟَﺘَﻪُ [ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ 67: ]
হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা আপনি প্রচার করুন। যদি আপনি তা না করেন তাহলে আপনি আল্লাহর বার্তা প্রচার করলেন না। (সূরা মায়েদা : ৬৭)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
দাওয়াত ও তাবলীগ সমস্ত মুসলমানের উপর ফরযে কেফায়া,যেমন জিহাদ ফরযে কেফায়া। মুসলিমদেরকে আ'মলের দিকে দাওয়াত দেওয়া জরুরী।তবে তার চেয়েও বেশী জরুরী অমুসলিমদেরকে দ্বীনে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়া । কেননা মুসলিম গোনাহের কাজে লিপ্ত থাকার পরও কালিমা তাইয়িবাহর কারণে একদিন না একদিন জান্নাতে যেতে পারবে।কিন্তু অমুসলিম অবস্থায় মারা গেলে সে তো কখনই জান্নাতে যেতে পারবে না। তাই এদিক দিয়ে অমুসলিমদের মাঝে দাওয়াত পৌছানো অতিব জরুরী।
সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
(১)
যারা এই দাওয়াহ’র কাজ করতেছেন তারা শয়তানের কাজ করতেছে, শয়তানি করার জায়গা পাচ্ছে না। এই কথা বলার কোনো যুক্তি নাই। ইসলামকে কলুষিত করার জন্য কেউ এমনটা বললে,তার ঈমান -আক্বিদা ঠিক থাকবে না।
(২)
জ্বী, প্রচলিত তাবলীগ এর মেহনত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেহনতের বিরোধী নয়, যদিও রাসূলুল্লাহ সাঃ অমুসলিমকে মুসলমান বানানো, এবং মু'মিনদের তাযকিয়াহ, উভয়টিই করেছেন।সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মেহনতের আংশিক মেহনত বর্তমান তাবলীগ দ্বারা হচ্ছে।
(৩)
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَىٰ رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنزَلَ مِن قَبْلُ ۚ وَمَن يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রসূলও তাঁর কিতাবের উপর, যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রসূলের উপর এবং সেসমস্ত কিতাবের উপর, যেগুলো নাযিল করা হয়েছিল ইতিপূর্বে। যে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রসূলগণের উপর ও কিয়ামতদিনের উপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।
দেখুন, আল্লাহ তা'আলা ঈমানদারকে ঈমান আনয়ন করতে বলেছেন। গাফেল মুসলমানকে দাওয়াতের প্রয়োজনিয়তা রয়েছে। তাই বলে হাজার কাফিরকে মুসলমান বানানো থেকে উত্তম সেটা বলা যাবে না। এমনকি কাফেরদেরকে একত্বাবাদের দাওয়াত দেওয়া আরো বেশী জরুরী। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
বলে দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তার রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।(সূরা আরাফ-১৫৮)
দেখুন অত্র আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাঃ সমস্ত মানব জাতীর প্রতি দাওয়াত দিয়ে বলতেছেন যে, তোমাদের সবার প্রতি আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।সুতরাং তোমরা ঈমান আনো।
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ
“তোমার মাধ্যমে যদি আল্লাহ একজন লোককেও হেদায়েত দেন তবে তা তোমার জন্য একটি লাল উট পাওয়া থেকেও উত্তম।” (বুখারী ১২/৩৭)
তিনি আরো বলেন:
مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنْ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا
“যে ব্যক্তি হেদায়েতের পথে আহবান করে সে ঐ পরিমাণ সওয়াবের অধিকারী হয় যে ব্যক্তি তদনুযায়ী আমল করে। কিন্তু এতে আহ্বানকারীর সওয়াব কমানো হয় না।”(সুনানু আবি দাউদ-৪৬০৯)
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ " وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلاَ نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ "
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সে সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! ইয়াহুদী হোক আর খৃস্টান হোক, যে ব্যক্তিই আমার এ রিসালাতের খবর শুনেছে অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে, অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে। (সহীহ মুসলিম-১৫৩)
এই হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, অমুসলিমদের নিকট দাওয়াত পৌছানোও এই উম্মতের গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব।
(৪)
তাবলীগের ১ চিল্লা,৩ চিল্লা, নিঃসন্দেহে ভালো ও উত্তম কাজ। তবে ঢালাওভাবে রাসূলুল্লাহ এবং সাহাবাদের সফরের সাথে তুলনা করা সর্বদিক থেকে যৌক্তিক হবে বলে মনে হচ্ছে না, কেননা সাহাবাগণ বদর উহুদের জন্যও সফর করেছেন। মুতা,ইয়ারমুকের মত কঠিন পরিস্থিতির জন্যও সফর করেছেন।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-https://www.ifatwa.info/5240