আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
308 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (32 points)
reopened by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু।

ওস্তাদ অনেক দিন যাবত মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, দয়া করে একটু উওর গুলো জানবেন।

১।কিছু দিন আগে ইউটিউব এ একটি ভিডিও দেখছিলাম সেখানে একজন বলে হাদিস নাকি ২০০-৩০০ বছর পর লেখা হয়েছে এজন্য নাকি ভুল থাকতে পারে ( নাউজুবিল্লাহ। ওস্তাদ বিষয় টা একটু বিস্তারিত জানালে খুব উপকার হইতো।

ওস্তাদ দয়া করে একটু জানান এগুলো আমার মাথায় ঘুরতাছে
২।জইফ ও জাল হাদিস মানা যাবে ???  এই হাদিস এর উপর আমল করা যাবে ???
৩। আর হাদিস এর বেসিক থেকে জানার জন্য কোন বই পড়া লাগবে??

৪। হাদিস অস্বীকার কারী কে কি কাফের বলা যাবে??
ওস্তাদ উওর গুলো জানালে খুব উপকার হইতো।
জাযাকাল্লাহু খাইরান।

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
হাদীস মানতেই হবে।
হাদীসে ভূল থাকতে পারে,এই অজুহাত দেখিয়ে হাদীস না মানা কোনো ভাবেই শরীয়ত সম্মত কাজ নয়।
হাদীস রাসুলুল্লাহ সাঃ এর যুগ থেকেই হেফাজতের কাজ চলছিলো।
হাদীসে ভূল থাকতে পারে,এমন কথা বলা কোনো ভাবেই সঠিক নয়।   

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
    
وَ مَاۤ اَرْسَلْنَا مِنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا لِیُطَاعَ بِاِذْنِ اللهِ.

আমি প্রত্যেক রাসূলকে কেবল এ লক্ষ্যেই পাঠিয়েছি, আল্লাহর হুকুমে তাঁর আনুগত্য করা হবে। -সূরা নিসা (৪) : ৬৪

قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللهُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ  وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.

(হে নবী!) আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩১

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِیْ رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ یَرْجُوا اللهَ وَ الْیَوْمَ الْاٰخِرَ وَ ذَكَرَ اللهَ كَثِیْرًا.

বস্তুত রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ- এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করে। -সূরা আহযাব (৩৩) : ২১

مَنْ یُّطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ اَطَاعَ اللهَ وَ مَنْ تَوَلّٰی فَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ عَلَیْهِمْ حَفِیْظًا.

যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যারা (তাঁর আনুগত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি (হে নবী!) আপনাকে তাদের তত্ত্বাবধায়ক বানিয়ে পাঠাইনি (যে, তাদের কাজের দায়-দায়িত্ব আপনার উপর বর্তাবে।) -সূরা নিসা (৪) : ৮০

وَ مَنْ یُّطِعِ اللهَ وَ الرَّسُوْلَ فَاُولٰٓىِٕكَ مَعَ الَّذِیْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَیْهِمْ مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیْقِیْنَ وَ الشُّهَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیْنَ،  وَ حَسُنَ اُولٰٓىِٕكَ رَفِیْقًا، ذٰلِكَ الْفَضْلُ مِنَ اللهِ،  وَ كَفٰی بِاللهِ عَلِیْمًا.

যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা সেইসকল লোকের সঙ্গে থাকবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সালিহগণের সঙ্গে। কত উত্তম সঙ্গী তাঁরা!
এটা কেবলই আল্লাহ প্রদত্ত শ্রেষ্ঠত্ব। আর (মানুষের অবস্থাদি সম্পর্কে) ওয়াকিবহাল হওয়ার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট। -সূরা নিসা (৪) : ৬৯-৭০

وَ مَاۤ اٰتٰىكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَ مَا نَهٰىكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَ اتَّقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ.

রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর আর তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় করে চল। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। -সূরা হাশর (৫৯) : ০৭

★রাসূলের প্রতি ঈমান আনার অর্থই হল তাঁর সুন্নাহ ও হাদীসের অনুসরণ করা, তাঁর সকল কথা ও কাজ বিনা দ্বিধায় মেনে নেওয়া এবং তাঁর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য প্রকাশ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-

قُلْ اَطِیْعُوا اللهَ وَ الرَّسُوْلَ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّ اللهَ لَا یُحِبُّ الْكٰفِرِیْنَ.

(হে নবী!) আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। তারপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আল্লাহ কাফেরদের পছন্দ করেন না। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩২

অন্যত্র বলেন-

وَ مَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَّ لَا مُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَی اللهُ وَ رَسُوْلُهٗۤ اَمْرًا اَنْ یَّكُوْنَ لَهُمُ الْخِیَرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْ  وَ مَنْ یَّعْصِ اللهَ وَ رَسُوْلَهٗ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًا مُّبِیْنًا.

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়সালা দান করেন, তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর নিজেদের বিষয়ে কোনো এখতিয়ার বাকি থাকে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করলে সে তো সুস্পষ্ট গোমারাহীতে পতিত হল। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৩৬

আরো বলেন-

فَلَا وَ رَبِّكَ لَا یُؤْمِنُوْنَ حَتّٰی یُحَكِّمُوْكَ فِیْمَا شَجَرَ بَیْنَهُمْ ثُمَّ لَا یَجِدُوْا فِیْۤ اَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیْتَ وَ یُسَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا.

না, (হে নবী!) আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না নিজেদের পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদের ক্ষেত্রে আপনাকে বিচারক মানবে। তারপর আপনি যে রায় দেন, সে বিষয়ে নিজেদের অন্তরে কোনরূপ কুণ্ঠাবোধ করবে না এবং অবনত মস্তকে তা গ্রহণ করবে। -সূরা নিসা (৪) : ৬৫

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
যারা শুধু কুরআন মানতে চায়,হাদীস মানতে চায়না,
 এ ধরনের লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাই তিনি উম্মতকে এদের বিষয়ে সতর্ক করে গিয়েছেন। 

মিকদাম ইবনে মা‘দীকারিব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

أَلاَ هَلْ عَسَى رَجُلٌ يَبْلُغُهُ الحَدِيثُ عَنِّي وَهُوَ مُتَّكِئٌ عَلَى أَرِيكَتِهِ، فَيَقُولُ: بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ كِتَابُ اللهِ، فَمَا وَجَدْنَا فِيهِ حَلاَلاً اسْتَحْلَلْنَاهُ. وَمَا وَجَدْنَا فِيهِ حَرَامًا حَرَّمْنَاهُ، وَإِنَّ مَا حَرَّمَ رَسُولُ اللهِ كَمَا حَرَّمَ اللهُ.

শুনে রাখ! হয়ত এমন ব্যক্তির উদ্ভব হবে যে, সে তার সুসজ্জিত আসনে ঠেস দিয়ে বসে থাকবে; তখন তার কাছে আমার কোনো হাদীস পৌঁছলে সে বলে উঠবে, আমাদের মাঝে এবং তোমাদের মাঝে তো আল্লাহর কিতাবই আছে। এতে আমরা যা হালাল হিসেবে পাব তা হালাল হিসেবে গ্রহণ করব আর যা হারাম হিসেবে পাব তা হারাম মনে করব। অথচ (প্রকৃত অবস্থা হল এই যে,) রাসূলুল্লাহ যা হারাম করেছেন তা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক হারামকৃত বস্তুর মতই হারাম। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৬৪; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬০৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১২

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
হাদীস সংকলনের ইতিহাস জানলেই প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়টি স্পষ্ট হবে,ইনশাআল্লাহ।       

কুরআনুল কারীম যেভাবে নাযিলের সূচনাকাল থেকে নিয়মিতভাবে লিপিবদ্ধ হয়, হাদীস এমনিভাবে রাসুল সা. এর যুগে নিয়মিত লিপিবদ্ধ না হলেও তিনটি শক্তিশালী সুত্রে তা আমাদের কাছে এসে পৌছেছে।

(১) উম্মতের নিয়মিত আমল
(২) রাসুল সা. এর লিখিত ফরমান, বিভিন্ন সাহাবীর কাছে লিখিত আকারে সংরক্ষিত হাদীস ও পুস্তিকা
(৩) হাদীস মুখস্ত করে স্মৃতি ভান্ডারে সংরক্ষণ এবং পরে বর্ণনা ও অধ্যাপনার মাধ্যমে ব্যক্তি পরস্পরায় তার প্রচার।

প্রথম যুগে নিয়মিতভাবে হাদীস লিপিবদ্ধ করা না হলেও রাসুল সা. এর অনুমতিক্রমে বহু সংখ্যক হাদীস লিখিতভাবে সংরক্ষিত হয়েছিল। দ্বিতীয় হিজরী শতকের শুরু থেকে এ কাজ একটি নতুর মোড় নেয়। তবে নিয়মিতভাবে হাদীস লিপিবদ্ধ করার কাজটি চলে হিজরী তৃতীয় যুগে। এ যুগটিকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি হিজরী দ্বিতীয় শতকের শেষার্ধ থেকে চতুর্থ শতকের শেষ পর্যন্ত।

হাজারো মুহাদ্দিস তাদের সমগ্র জীবন হাদীস সংকলন করার মত দ্বীনের মহান এ কাজে ব্যায় করেন। এ কাজকে তারা জীবনের একক মিশন ও চ্যলেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করে নেন। হাদীস সংকলনের দ্বিতীয় যুগ থেকে এ যাচাই বাছাইয়ের কাজ শুরু হয় এবং তৃতীয় যুগে এ কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে যায়।
হাদীস সংগ্রহ, বিন্যাস ও পুস্তকাকারে সংকলনের সময়টাকে চার যুগে বিভক্ত করা যায়।

★প্রথম যুগ
রাসুল সা. এর যুগ থেকে প্রথম হিজরী শতকের শেষ পর্যন্তঃ এ যুগের হাদীস সংগ্রহক, সংকলক ও মুখস্থকারীগণের পরিচয় নিম্নে তুলে ধরা হল :
এই যুগের সংকলনসমূহ

(১) সহীফায়ে সাদেকা এটা হযরত আবদল্লাহ ইবনে আমর রা. ইবনুল আস কর্তৃক সংকলিত হাদীস গ্রন্থ। পুস্তক রচনার প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি রাসুল (সা) এর নিকট যা কিছু শুনতেন তা লিখে রাখতেন। এজন্য স্বয়ং রাসূল (সা) তাঁকে অনুমতি প্রদান করেছিলেন। ৭৭ বছর বয়সে ৬৩ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন।

(২) সহীফায়ে সহীহা হাম্মাম ইবনে মুনাব্বেহ (মৃত্যু ১০১ হিজরী) এটা সংকলন করেন। তিনি হযরত আবু হুরায়রার রা. ছাত্র ছিলেন। তিনি তাঁর উস্তাদ মুহতারামের বর্ণিত হাদীসগুলো এই গ্রন্থে একত্রে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এতে ১৩৮ টি হাদীস রয়েছে।
এই সংকলনটি হযরত আবু হুরায়রা রা. কর্তৃক বর্ণিত সমস্ত হাদীসের একটি অংশমাত্র। এর অধিকাংশ হাদীস সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও পাওয়া যায়। মূল পাঠ প্রায় একই, বিশেষ কোন তারতম্য নাই। হযরত আবু হুরায়রার রা. অপর ছাত্র বশীর ইবনে নাহীকও একটি সংকলন প্রস্তুত করেছিলেন। আবু হুরায়রার রা. ইন্তিকালের পূর্বে তিনি তাঁকে এই সংকলন পড়ে শুনান এবং তিনি তা সত্যায়িত করেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ড. হামীদল্লাহ কর্তৃক সম্পাদিত সহীফায়ে ইবনে হাম্মাম এর ভ‚মিকা।

(৩) মুসনাদে আবু হুরায়রা রা.
সাহাবাদের যুগেই এই সংকলন প্রস্তুত করা হয়েছিল। এর একটি হস্তলিখিত কপি উমর ইবনে আবদুল আযীয রহ. এর পিতা এবং মিশরের গভর্নর আবদুল আযীয ইবনে মারওয়ান (মৃত্যু ৮৬ হিজরী) এর নিকট ছিল। তিনি কাসীর ইবনে মুররাকে লিখে পাঠিয়েছিলেন, তোমাদের কাছে সাহাবায়ে কিরামের যেসব হাদীস বর্তমান আছে তা লিপিবদ্ধ করে পাঠাও। কিন্তু হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীস লিখে পাঠানোর প্রয়োজন নেই। কেননা তা আমাদের কাছে লিখিত আকারে বর্তমান আছে। আল্লামা ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এর স্বহস্তে লিখিত মুসনাদে আবি হুরায়রা রা. এর একটি কপি জার্মানির গ্রন্থাগারসমূহে বর্তমান আছে। (তিরমিযি শরাহ তুহফাতুল আহওয়াযী গ্রন্থের ভূমিকা, পৃষ্ঠা ১৬৫)

(৪) সহীফায়ে হযরত আলী রা.
ইমাম বুখারী রহ. এর ভাষ্য থেকে জানা যায়, এই সংকলনটি বেশ বড় ছিল। এর মধ্যে যাকাত, মদীনার হেরেম, বিদায় হজ্জের ভাষণ ও ইসলামী সংবিধানের ধারাসমূহ বিবৃত ছিল। (সহীহ বুখারী কিতাবুল ইতসাম বিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ, ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ৪৫১)

(৫) রাসুল সা. এর লিখিত ভাষণ
মক্কা বিজয়কালে রাসুলুল্লাহ সা. আবু শাহ ইয়ামানী রা. এর আবেদনক্রমে তাঁর দীর্ঘ ভাষণ লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (সহীহ বুখারী ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২০)

(৬) সহীফা হযরত জাবির রা.
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসসমূহ তাঁর ছাত্র ওয়াহব ইবনে মুনাব্বিহ (মৃত্যু১১০ হিজরী) ও সুলাইমান ইবনে কায়েস লশকোরী লিখিত আকারে সংকলন করেছিলেন। এই সংকলনে হজ্জের নিয়মাবলী ও বিদায় হজ্জের ভাষণ স্থান লাভ করে।

(৭) রেওয়ায়াতে আয়েশা সিদ্দীকা রা.
হযরত আয়েশা রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসসমূহ তাঁর ছাত্র বোন-পুত্র উরওয়া ইবনুয যুবায়ের রহ. লিখে নিয়েছিলেন। (তাহযীবুত তাহযীব, ৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৮৩)
(৮) আহাদীসে ইবনে আব্বাস রা.
হযরত আবদুল্লাাহ ইবনে আব্বাস রা. এর রিওয়ায়াতসমূহের সংকলন। তাবিঈ হযরত সাঈদ ইবন জুবায়েরও তাঁর হাদীসসমূহ লিখিত আকারে সংকলন করতেন। (দারমী, পৃষ্ঠা ৬৮)
(৯) সহীফা আনাস মালেক রা.
সাঈদ ইবনে হেলাল বলেন, আনাস রা. তাঁর ¯^হস্ত লিখিত সংকলন বের করে আমাদের দেখাতেন এবং বলতেন, এই হাদীসগুলো আমি সরাসরি রাসুল সা. এর নিকট শুনেছি এবং লিপিবদ্ধ করার পর তা পাঠ করে তাঁকে শুনিয়ে সত্যায়িত করে নিয়েছি। (সহীফায়ে হাম্মামের ভূমিকা পৃষ্ঠা ৩৪)

★★দ্বিতীয় যুগ
এই যুগটি প্রায় দ্বিতীয় হিজরী শতকের প্রথমার্ধে গিয়ে শেষ হয়। এই যুগে তাবিঈদের একটি বিরাট দল তৈরি হয়ে যায়। তাঁরা প্রথম যুগের লিখিত ভান্ডারকে ব্যাপক সংকলনসমূহে একত্র করেন।
এই যুগের হাদীস সংকলকগণ হলেন :

(১) মুহাম্মাদ ইবনে শিহাব
ইমাম যুহরী নামে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ (মত্যু ১২৪ হিজরী)। তিনি নিজ যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. আনাস ইবন মালেক রা. সাহল ইবনে সাদ রা. এবং তাবিঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব রহ. ও মাহমুদ ইবনে রাবী রহ. প্রমুখের নিকট হাদীসের শিশ্বত্য লাভ করেন। ইমাম আওযাঈ রহ. ও ইমাম মালেক রহ. এবং সুফিয়ান ইবন উয়াইনা রহ. এর মত হাদীসের প্রখ্যাত ইমামগণ তাঁর ছাত্রদের মধ্যে গণ্য। ১০১ হিজরীতে উমার ইবনে আব্দুল আযীয রহ. তাঁকে হাদীস সংগ্রহ করে তা একত্র করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাছাড়া তিনি মদীনার গভর্নর আবু বাকর মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে হাযমকে নির্দেশ দেন যেন তিনি আবদুর রহমান কন্যা আমরাহ ও কাসিম ইবনে মুহাম্মাদের নিকট হাদীসের যে ভান্ডার রয়েছে তা লিখে নেন। এই আমরাহ রহ. হযরত আয়েশা সিদ্দীকার রা. বিশিষ্ট ছাত্রী ছিলেন এবং কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ তাঁর ভ্রাতুস্পুত্র। হযরত আয়েশা রা. নিজের তত্তাবধানে তাদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করেছিলেন। (তাহযীবুত তাহযীব, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা.১৭২)

কেবল এখানেই শেষ নয়, বরং হযরত উমার ইবনে আবদুল আযীয রহ. ইসলামী রাষ্ট্রের সকল দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে হাদীসের এই বিরাট ভান্ডার সংগ্রহ ও সংকলনের জোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে হাদীসের বিরাট সম্পদ রাজধানীতে পৌঁছে গেল। খলীফা হাদীসের সংকলন প্রস্তুত করিয়ে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিলেন। (হাযকিরাতুল হুফফাজ, খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ১০৬, জামিউল ইলম, পৃষ্ঠা.৩৮)

ইমাম যুহরীর সংগৃহীত হাদীস সংকলন করার পর এই যুগের অপরাপর আলেমগণও হাদীসের গ্রন্থ সংকলনের কাজ শুরু করেন। আবদুল মালেক ইবনে জুরাইজ (মৃত্যু ১৫০হিজরী) মক্কায়, ইমাম আওযাঈ (মৃত্যু ১৫৭ হিজরী) সিরিয়ায় মামার ইবনে রাশেদ (মৃত্যু ১৫৩ হিজরী) ইয়ামানে, ইমাম সুফিয়ান সাওরী (মৃত্যু ১৬১ হিজরী) কুফায়, ইমাম হাম্মাদ ইবনে সালামা (মৃত্যু ১৬৭ হিজরী) বসরায় এবং ইমাম আবদল্লাহ ইবনুল মুবারক (মৃত্যু ১৮১ হিজরী) খোরাসানে হাদীস সংগ্রহ ও সংকলনের কাজে সর্বাগণ্য ছিলেন।

(২) ইমাম মালেক ইবন আনাস রহ.
(জন্ম ৯৩ হিজরী, মৃত্যু ১৭৯ হিজরী) ইমাম যুহরীর পরে মদীনায় হাদীস সংকলন সর্বাগ্রগণ্য ছিলেন। তিনি নাফে, যুহরী ও অপরাপর আলেমের ইলম দ্বারা উপকৃত হন। তাঁর জ্ঞানের প্রসবণ থেকে সরাসরি হেজায, সিরিয়া, ইরাক, ফিলিস্তিন, মিসর, আফ্রিকা ও আন্দালুসিয়ার (স্পেন) হাজারো হাদীসের কেন্দ্র তৃপ্ত হয়েছে। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে লাইস ইবনে সাদ (মৃত্যু ১৭৫ হিজরী), ইবনুল মুবারক (মৃত্যু ১৮১ হিজরী), ইমাম শাফিঈ (মৃত্যু ২০৪ হিজরী) ও ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান আশ শায়বানী (মৃত্যু ১৮৯ হিজরী) এর মত মহান ইমামগণ অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
এই যুগে হাদীসের অনেকগুলো সংকলন রচিত হয়, যার মধ্যে ইমাম মালেক রহ. এর মুয়াত্তা বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। এই গ্রন্থ ১৩০ হিজরী থেকে ১৪১ হিজরীর মধ্যে সংকলিত হয়। এতে মোট ১৭০০ রিওয়ায়াত আছে। তার মধ্যে ৬০০টি মারুফ, ২২৮ টি মুরসাল, ৬১৩টি মাওকুফ রিওয়ায়াত এবং তাবেঈদের ২৮৫টি বাণী রয়েছে। এ যুগের আরও কয়েকটি সংকলনের নাম নিম্নে দেয়া হল :


১। জামে সুফিয়ান সাওরী (মৃত্যু ১৬১হিজরী) ২। জামে ইবনুল মুবারাক, ৩। জামে ইবনে আওযাঈ (মৃত্যু ১৫৭হিজরী) ৪। জামে ইবনে জুরাইজ (মৃত্যু ১৫০হিজরী), ৫। ইমাম আবু ইউসুফ (মৃত্যু ১৮৩হিজরী) এর কিতাবুল খিরাজ, ৬। ইমাম মুহাম্মাদের কিতাবুল আসার। এই যুগে রাসুল (সা) এর হাদীস, সাহাবাদের আসার (বাণী) এবং তাবিঈদের ফতোয়াসমূহ একই সংকলনে সন্নিবিষ্ট করা হত। কিন্তু সাথে একথাও বলে দেওয়া হত যে, কোনটি রাসূল (সা) এর হাদীস এবং কোনটি সাহাবা অথবা তাবিঈদের বাণী।
তৃতীয় যুগ
এই যুগে প্রায় দ্বিতীয় হিজরী শতকের শেষার্ধ থেকে চতুর্থ শতকের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। এই যুগের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরুপ

(১) এই যুগে রাসুল সা. হাদীসসমূহকে সাহাবাগণের আসার ও তাবিঈদের বাণী থেকে পৃথক করে সংকলন করা হয়।
(২) নির্ভরযোগ্য হাদীসসমূহের পৃথক সংকলন প্রস্তুত করা। এভাবে যাচাই বাচাই এবং গবেষণা ও অনুসন্ধানের পর দ্বিতীয় যুগের সংকলনসমূহ তৃতীয় যুগের বিরাট গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
(৩) এই যুগে হাদীসসমূহ কেবল জমা করাই হয়নি, বরং ইলমে হাদীসের হেফাযতের জন্য মুহাদ্দিসগণ এই ইলমের এক শতাধিক শাখার ভিত্তি স্থাপন করলেন, যার উপর বর্তমান কাল পর্যন্ত হাজার হাজার গ্রন্থ রচিত হয়েছে।


★তৃতীয় যুগের হাদীস সংকলকবৃন্দ
এ যুগের প্রসিদ্ধ হাদীস সংকলকবৃন্দ ও নির্ভরযোগ্য সংকলনসমূহের পরিচয় নিম্নে দেয়া হল :
(১) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.
(জন্ম ১৬৪ হিজরী, মৃত্যু ২৪১ হিজরী) এর গুরুত্বপূর্ণ সংকলন মুসনাদে আহমাদ নামে পরিচিত। এতে তিরিশ হাজার হাদীস (পুনরাবৃত্তিসহ) বর্তমান রয়েছে। গ্রন্থটি ৫খন্ডে বিভক্ত। উল্লেখযোগ্য সব হাদীস এতে সংগৃহীত হয়েছে। এতে বিষয়সূচি অনুযায়ী বিন্যাসের পরিবর্তে প্রত্যেক সাহাবীর বর্ণিত সব হাদীস একত্রে সন্নিবেশ করা হয়েছে। এই গ্রন্থের হাদীসগুলো বিষয়সূচি অনুযায়ী বিন্যাস করার কাজ শায়খ হাসানুল বান্না শহীদের পিতা আহমাদ আবদুর রহমান সা আতী শুরু করেছিলেন। তার এ গ্রন্থটি ২৪খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে।

(২) ইমাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী রহ.
(জন্ম ১৯৪হিজরী, মৃত্যু ২৫৬হিজরী)। তাঁর জন্ম তারিখ সত্যবাদিতা এবং মৃত্যু তারিখ নূর বিচ্ছুরণ করে। তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে সহীহ বুখারী। এর পূর্ণ নাম আল জামিউস সহীহুল মুসানাদুল মুখতাসার মিন উমুরি রাসুলিল্লাহি সা.
এই গ্রন্থ সংকলনে ১৬ বছর সময় লেগেছে। তাঁর কাছে সরাসরি সহিহ বুখারী অধ্যয়নকারী ছাত্রের সংখ্যা ৯০ হাজার পর্যন্ত পৌঁছেছে। কখনও কখনও একই মজলিসে উপস্থিতিদের সংখ্যা ২ হাজারে পৌঁছে যেত। এই ধরনের মজলিসে পরপর পৌঁছে দেয়া লোকদের সংখ্যা তিন শতের অধিক হত (কারণ তখন মাইক বা লাউডস্পিকারের সুবিধা ছিল না) এই গ্রন্থে মোট ৯,৬৮৪টি হাদীস রয়েছে। পুনরুক্তি ও তালীকাত (সনদবিহীন রিওয়ায়াত), শাওয়াহিদ (সাহাবাদের বাণী) ও মুরসাল হাদীস বাদ দিলে শুধু মারফু হাদীসের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬, ২৩০ এর। ইমাম বুখারী রহ. অপরাপর মুহাদ্দিসের তুলনায় অধিক শক্ত মানদন্ডে রাবীদের যাচাই বাছাই করেছেন।
(৩) ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আবুল হুইসাইন আল কুশাইরী রহ.
(জন্ম ২০২ হিজরী, মৃত্যু ২৬১ হিজরী)। তাঁর সংকলিত গ্রন্থ সহীহ মুসলিম বিন্যাসগত দিক থেকে সুপ্রসিদ্ধ। এই গ্রন্থে মোট ৯,১৯০ টি হাদীস 
(৪) ইমাম আবু দাউদ আশআছ ইবনে সুলাইমান আস সিজিস্তানী রহ.
(জন্ম ২০২ হিজরী, মৃত্যু ২৭৫) সুনানে আবি দাউদ নামে প্রসিদ্ধ। এই গ্রন্থে আহকাম সম্পর্কিত হাদীস পরিপূর্ণরূপে একত্র করা হয়েছে। ফিকহী ও আইনগত বিষয়ের জন্য এই গ্রন্থ এ কটি উত্তম উৎস। এতে ৪,৮০০ হাদীস রয়েছে।
(৫) ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী রহ.
(জন্ম ২০৯ হিজরী, মৃত্যু ২৭৯ হিজরী) তাঁর সংকলিত গ্রন্থ জামে আত তিরমিযী নামে পরিচিত। এতে ফিকহী বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে এবং একই বিষয়ে যে যে সাহাবীর হাদীস রয়েছে তাঁর নামও উল্লেখ করা হয়েছে।
(৬) ইমাম আহমদ ইবনে শুআইব নাসাঈ রহ.
(মৃত্যু ৩০৩ হিজরী)। তাঁর সংকলনের নাম আস সুনানুল মুজতবা, যা সুনানে নাসাঈ নামে প্রসিদ্ধ।
(৭) ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মাজা কাযবীনী রহ.
(মৃত্যু ২৭৩ হিজরী)। তাঁর সংকলিত গ্রন্থ সুনানে ইবনে মাজা নামে প্রসিদ্ধ। মুসনাদে আহমাদ গ্রন্থ ছাড়া উল্লিখিত ছ’টি গ্রন্থকে হাদীস বিশারদদের পরিভাষায় সিহাহ সিত্তা বলা হয়। কোন কোন বিশেষজ্ঞ আলেম ইবনে মাজাহ গ্রন্থের পরিবর্তে ইমাম মালেকের মুয়াত্তা গ্রন্থকে সিহা সিত্তার মধ্যে গণ্য করেন।
উল্লিখিত গ্রন্থগুলি ছাড়া এ যুগে আরও অনেক প্রয়োজনীয় এবং পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচিত হয়েছে, যার বিস্তাারিত বিবরণ এখানে দেয়া সম্ভব নয়। বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী এই তিনটি গ্রন্থকে একত্রে জামি বলা হয় অর্থাৎ আকীদা বিশ্বাস, ইবাদাত, নৈতিকতা, পারস্পরিক লেনদেন ও আচার ব্যবহার ইত্যাদি শিরোনামের অধীন হাদীসসমূহ এতে বর্তমান আছে। আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজাকে একত্রে সুনান বলা হয়। অর্থাৎ এই গ্রন্থগুলোতে বাস্তব কর্মজীবনের সাথে সম্পর্কিত হাদীসই বেশী স্থান পেয়েছে।

★চতুর্থ যুগ
এই যুগ হিজরী পঞ্চম শতক থেকে শুরু হয় এবং তা বর্তমান কাল পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এই সুদীর্ঘ সময়ে তৃতীয় যুগের গ্রন্থ রচনার কাজ সমাপ্তি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এই যুগে যে কাজ হয়েছে তার বর্ণনা নি¤েœ দেয়া হল।
(১) হাদীসের গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থাবলীর ভাষ্যগ্রন্থ, টীকা অন্যান্য ভাষায় তরজমা গ্রন্থ রচিত হয়েছে।
(২) হাদীসের যেসব শাখা প্রশাখার কথা ইতিপূর্বে উল্লিখিত হয়েছে, সেসব বিষয়ের উপর এই যুগেই অসংখ্য গ্রন্থ এবং এসব গ্রন্থের ব্যাখ্যা ও সারসংক্ষেপ রচিত হয়েছে।
(৩) বিশেষজ্ঞ আলেমগণ নিজেদের আগ্রহ অথবা প্রয়োজনের তাগিদে তৃতীয় যুগের রচিত গ্রন্থাবলী থেকে হাদীস চয়ন করে প্রয়োজনীয় গ্রন্থ পস্তুত করেছেন। এ ধরনের কয়েকটি গ্রন্থের নাম এখানে উল্লেখ করা হলঃ
(ক) মিশকাতুল মাসাবীহ : সংকলক ওয়ালীউদ্দীন খতীব তাবরীযী। নির্বাচিত সংকলনগুলোর মধ্যে এটাই সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ। এতে সিহাহ সিত্তার প্রায় সব হাদীস এবং আরও দশটি মৌলিক গ্রন্থের হাদীস সন্নিবেশিত হয়েছে। এই গ্রন্থে আকিদা, বিশ্বাস, ইবাদাত, পারস্পরিক লেনদেন ও আচার ব্যবহার, চরিত্র, নৈতিকতা, শিষ্টাচার এবং আখিরাত সম্পর্কিত রিওয়ায়াতসমূহ একত্র করা হয়েছে।
(খ) রিয়াদুস সালেহীন : সংকলক ইমাম আবু যাকারিয়া ইবনে শারাফুদ্দনি নববী (মৃত্যু ৬৭৬ হিজরী)। তিনি সহীহ মুসলিমেরও ভাষ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। এটা বেশীর ভাগ চরিত্র, নৈতিকতা ও শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদীস স¤^লিত একটি চয়নিকা। প্রতিটি অনুচ্ছেদের প্রারম্ভে প্রাসঙ্গিক আয়াতও উল্লেখ করা হয়েছে। এটাই এই গ্রন্থের গুরুত্ব¡পূর্ণ বৈশিষ্ট্য। সহীহ বুখারীর সংকলন এবং বিন্যাস পদ্ধতিও এইরূপ।
(গ) মুনতাকাল আখবার : সংকলক মাজদুদ্দীন আবুল বারাকাত আবদুস সালাম ইবনে তাইমিয়া (মৃত্যু ৬৫২ হিজরী)। তিনি শায়খুল ইসলাম তাকিউদ্দীন আহমাদ ইবনে তাইমিয়া (মৃত্যু ৭২৮ হিজরী) এর দাদা। আল্লামা শাওকানী নাইনুল আওতার নামে (আট খন্ড) এই গ্রন্থের একটি শরাহ (ভাষ্য গ্রন্থ) লিখেছেন।
(ঘ) বুলুগুল মারাম : সংকলক সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার হাফেজ ইবনে হাজার আল আসকালীন (মৃত্যু ৮৫২ হিজরী)। এই চয়নিকায় ইবাদত ও মুআমালাত সম্পর্কিত হাদীসই অধিক সন্নিবেশিত হয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আস সানআনী (মৃত্যু ১১৮২ হিজরী) সুবুলুস সালাম শিরোনামে আরবী ভাষায় এবং নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান (মৃত্যু ১৩০৭ হিজরী), মিসকুল খিতাম নামে ফারসী ভাষায় এর ভাষ্য লিখেছেন।
হিমালয়ান উপমহাদেশে সর্বপ্রথম শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দিললবী (মৃত্যু ১০৫২ হিজরী) সুসংগঠিতভাবে ইলমে হাদীসের চর্চা শুরু করেন। তাঁর পরে শাহ ওয়ালীউল্লাহ (মৃত্যু ১১৭৬ হিজরী), তাঁর পুত্রগণ, পৌত্রগণ এবং সুযোগ্য শাগরিদবৃন্দের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় পৃথিবীর এই অংশ সুন্নাতে নববীর আলোকে সমুজ্জ্বল হয়ে উঠে।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ রহ. এর পর থেকে হাদীসের অনুবাদ গ্রন্থ, ব্যাখ্যা এবং চয়নিকা গ্রন্থ প্রণয়ন ও প্রকাশের পূণ্যময় কাজ আজ পর্যন্ত অব্যাহত আছে। এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে অনুমান করা যায় যে, নবী সা. যুগ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত কোন একটি যুগেও হাদীসের চর্চা বন্ধ হয়নি।
(সংগৃহীত।)

★★সাহাবায়ে কেরামদের থেকেও হাদীস লেখার প্রমান রয়েছে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি হাদিস বর্ণনা করতে চাই। তাই যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমি স্মরণশক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে লেখনীরও সাহায্য গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। তিনি বললেন, আমার হাদিস কণ্ঠস্থ করার সঙ্গে সঙ্গে লিখেও রাখতে পারো।’ –দারেমি

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) আরও বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট যা কিছু শুনতাম, মনে রাখার জন্য তা লিখে নিতাম। কতিপয় সাহাবি আমাকে তা লিখে রাখতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন মানুষ, কখনও স্বাভাবিক অবস্থায় আবার কখনও রাগান্বিত অবস্থায় কথা বলেন। এ কথা বলার পর আমি হাদিস লেখা থেকে বিরত থাকলাম, অতঃপর তা হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) জানালাম। তিনি নিজ হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে স্বীয় মুখের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘তুমি লিখে রাখো। যেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, এই মুখ দিয়ে সত্য ছাড়া অন্য কিছু বের হয় না।’ –আবু দাউদ

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক আনসারি সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যা কিছু বলেন, আমার কাছে খুবই ভালো লাগে, কিন্তু মনে রাখতে পারি না। নবী করিম (সা.) বললেন, ‘তুমি ডান হাতের সাহায্য নাও।’ তারপর তিনি হাতের ইশারায় লিখে রাখার প্রতি ইঙ্গিত করলেন।’ 
তিরমিজি।

(০২)
জাল হাদীসের উপর আমল করা যাবেনা।
ফজিলত মূলক জয়ীফ হাদীসের উপর অনেকেই আমল করার কথা ব্যাক্ত করেছেন।

(০৩)
হাদীস সংকলনের ইতিহাস
লেখক, আব্দুর রশিদ নোমানী

(০৪)
এ সংক্রান্ত জানুনঃ   


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (32 points)
হাদীস সংকলনের ইতিহাস
কোন প্রকাশনীর ভালো হবে ওস্তাদ 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 193 views
...