আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
206 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (108 points)
আসসালামু 'আলাইকুম।

১,টয়লেটের মেঝে সারাক্ষণ ভেজা থাকে এটা আপ্নারা জানেন,ধরুন পুরা মেঝের এক প্রান্তে কিছু প্রসাব পড়ল বা অন্য কোনো নাপাকি,কিন্তু আমি নিশ্চিত এটা শুধু সেখানেই রয়েছে ছড়িয়ে যায়নি,তাহলে অন্য প্রান্তের ভেজা পানি কি নাপাক হয়ে যাবে? যেহেতু পুরা মেঝে অবিচ্ছিন্ন ভাবে ভেজা পানি যুক্ত।

২,কোনো শর্তযুক্ত তালাক দেবার পর সময় কত তালাক দিয়েছে তা যদি উল্লেখ না করা হয়, তবে মনে মনে নিয়াত রাখা হয় যে ৩ তালাক একসাথে তাহলে কত তালাক পড়বে।যেমন ধরুন কেউ বলছে অমুক কাজ করলে স্ত্রী চলে যাবে/তালাক হবে।সে এখানে তালাক মানে চিরতরে তালাক বুঝিয়েছে,কিন্তু তা মুখে বলেনি। তাহলে উক্ত কাজ হবার পর কত তালাক পড়বে।

৩,ধরুন প্রশ্ন ২ এর ক্ষেত্রে কাজ হবার পর এক তালাক পড়ল,পরে সে আবার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিল।তখন ও কি পূর্বের শর্ত বহাল থাকবে? যে, উক্ত কাজ আবার হলে আবার তালাক পড়বে?

৪,কেউ যদি আল্লাহর কাছে দুয়া করে যে আমার বিবাহ যদি সহীহ না হয় তাহলে এই মেয়ের সাথে তালাক করিয়ে দিন।শুধু এটুক বললে কি তালাক হবে।

৫দাম্পত্য জীবন শুরুর পর স্বামী সমস্যা ফিল করছে স্ত্রীর কারণে,এমন অবস্থায় স্বামী যদি বলে আজকে গোসল করার পর থেকে সব বাদ(মানে অবিবাহিত জীবনের মত হবে,কিন্তু ডিরেক্ট তালাকের কথা বলেনি বা নিয়াত করেছে কিনা নিশ্চিত নয়) এক্ষেত্রে তালাক পড়বে?

৬,কেউ যদি আশংকা থেকে বলে,'হায় হায় এইকাজ আমি করবনা,করলে তালাক হবে' তাহলে কি তালাকের শর্ত পড়বে?।

৭,সদ্য বিবাহিত ব্যক্তি,তাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে খালোয়াতে সহীহা পাওয়া যায়নি এমতবস্থায় যেকোনো একজন মুর্তাদ হলে পরে ইসলাম গ্রহণ করলে যে উভয়ের বিবাহ টিকে থাকবে মর্মে যে মত পাওয়া যায়,নাসির আল উলওয়ান হাফিঃ ও দাউদ জাহেরী রাহিঃ থেকে তা কি শায মত?

৮,বর্তমান জাহেলিয়াত সমাজে অনেকেই জাহেল জীবন থাকাবস্থায় বিয়ে করে,বিয়ের পর দ্বীনের বুঝ আসার পর বুঝতে পারে,বিয়ের পূর্বের জাহেল অবস্থায় তারা অজান্তেই বা জান্তেই হয়ত কাফির হয়ে গিয়েছিল,কিন্তু কোনো মুফতির কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি।তাহলে কি তাদের বিয়ে সহীহ হয়েছে?নাকি নতুন করে বিবাহ করে নিতে হবে?


৯,কেউ যদি তার স্ত্রী কে বলে এখন আসছিস কেন যা ভাগ চলে যা (তালাকের অর্থে নয়) বা তালাকের অর্থে বলেছে কিনা নিশ্চিত নয় যেহেতু স্বামমী ওয়াসোয়াসার রোগী তাহলে তালাক পড়বে কি? কত তালাক পড়বে?

,১০,দুজন দম্পত্তির মাঝে বিয়ের দিন নির্জনবাস হয়,পরবর্তীতে,স্বামী শর্তযুক্ত তালাক দেয় যে শর্ত এখনো পাওয়া যায়নি। স্বামী অনেক অনুতপ্ত।পরবর্ররতীতে বিভিন্ন ওয়াসোয়াসায় ও নিজেদের জাহেলিয়াতে সংঘঠিত শির্ক কুফরে তারা ভীত থাকা বিয়ে আদৌ টিকে আছে কিনা,একজন মুফতি সতর্কতা বশত আবার বিয়ে করে নিতে বলে। যদি তারা আবার করে নেয় সেক্ষেত্রে,


ক,পূর্বের বিবাহের মোহরানা যে বাকি আছে সেটুক এখনো শোধ হয়নি,সেটা করে তারপর বিয়ে করতে হবে কিনা? যদি না হয় এটা পরে শোধ করলে চলবে?

খ,পূর্বের বিবাহের পর যে শর্তযুক্ত তালাক দিয়েছিল তা নতুন বিবাহ চুক্তিতে অটুট থাকবে কিনা? এরপর সে শর্ত পাওয়া গেলে বিয়ে ভাংবে কিনা(উল্লেখ্য সেই শর্তে বলা ছিল,স্বামীর কামাই নিয়ে বেশি অভিযোগ করলে সে বাদ( মানে স্ত্রী) এখানে কত তালাক বলা ছিলনা,আর স্বামীর এক তালাক দুই তিন তালাক এসবে আইডিয়া না থাকায় সে মনে করেছে বাদ অর্থ সমস্ত একবারে তিন তালাক)

গ,নতুন বিবাহ করলে সর্বনিম্ন কত মোহরানা রাখা যাবে? ২/৩হাজার?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
আপনি যেহেতু নিশ্চিত নাপাকি শুধু সেখানেই রয়েছে ছড়িয়ে যায়নি,তাহলে অন্য প্রান্তের ভেজা পানি নাপাক হয়ে যাবেনা।

(০২)

তালাক খুবই জঘন্য একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যে,  আল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক।

(আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।) 

★★শরিয়তের পরিভাষায় সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়া,বিবাহ সম্পর্ক চলে যাওয়া শব্দে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷
যদি তিন তালাকের নিয়ত করে,তাহলে তিন তালাক পতিত হবে।  

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ 

وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.

احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت
برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية

সারমর্মঃ  
কেনায়ার কিছু বাক্য ব্যাতিত অন্যান্য বাক্য গুলোতে এক তালাকের নিয়ত করলে এক তালাক হবে,তিন তালাকের নিয়ত করলে তিন তালাক হবে।
দুই তালাকের নিয়ত করলে এক তালাক পতিত হবে। 
কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে তোমাকে আমি ছেড়ে  দিলাম, যা খুশি তাই করো,তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন, তুমি স্বামী খুজো,বা স্বামী তালাশ করো,তাহলে এটিও কেনায়া তালাক।
কেনায়া তালাক হলো ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা যেটা হয়।
কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয়।

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত বাক্য ২ টি।
এক, অমুক কাজ করলে স্ত্রী চলে যাবে।
এটি অস্পষ্ট, এখানে স্ত্রী/বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে উদ্দেশ্য? 
তাই হয়ে থাকলে এটি কেনায়া তালাক হবে।এক্ষেত্রে তার নিয়ত কি ছিলো?      
একেবারে তালাকের নিয়ত সে করলেও যেহেতু তারা নিয়তে তিন বা তার চেয়ে বেশি তালাকের সংখ্যা ছিলোনা।
তাই উক্ত কাজ করলে এক তালাকই পতিত হবে।
 
যদি "অমুক কাজ করলে স্ত্রী চলে যাবে"
বলার দ্বারা, এখানে স্ত্রী/বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে উদ্দেশ্য না হয়ে থাকে,তাহলে এটি কেনায়া তালাকের বাক্য না হওয়ায় শর্তযুক্ত তালাক হবেনা।

,
""অমুক কাজ করলে স্ত্রী তালাক হবে" বলার দ্বারা চিরতরে তালাক বা তিন তালাক বুঝিয়ে থাকলেও এক তালাকই পতিত হবে।
,
(০৩)
শর্ত আর বহাল থাকবেনা।
পরবর্তী বিবাহের ক্ষেত্রে সে উক্ত কাজ করতে পারবে।
সমস্যা হবেনা।
,
(০৪)
এই ভাবে দোয়া করার দ্বারা তালাক পতিত হবেনা।
,
(০৫)
এক্ষেত্রে সে যদি ""স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক বাদ"" এমনটি নিয়ত করে থাকে,তাহলে কেনায়া বাক্য ব্যবহারের ভিত্তিতে এক তালাকে বায়েন পতিত হবে।
,
এমনটি নিয়ত করে না থাকলে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে কোনো সমস্যা হবেনা।
,
(০৬)
হ্যাঁ তালাকের শর্ত পড়বে।
তথা এটি শর্তযুক্ত তালাকের অন্তর্ভুক্ত হবে।
,
(০৭)
হ্যাঁ এটি শায। 
হানাফি মাযহাব মতে নতুন করে বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে।
,
(০৮)
শুধুমাত্র সম্ভাবনার ভিত্তিতে তাকে কাফের হওয়ার হুকুম দেওয়া যায়না।
তাই তাদের  বিবাহ সহীহ। 
নতুন করে বিবাহ করতে হবেনা।
কাফের হয়ে যাওয়ার মতো সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ/কথা বলে থাকলে বিধান ভিন্ন হবে।
,
(০৯)
তালাক পতিত হবেনা। 
,
(১০)
নতুন ভাবে এখানে বিবাহের কোনো দরকার নেই।
তাই নতুন করে বিবাহ করলে সেই নতুন বিবাহের কোনো মূল্য শরীয়তে থাকবেনা।
আগের বিবাহই ধর্তব্য থাকবে।
তাই শুধুমাত্র আগের মোহরানাই শোধ করতে হবে,নতুনটি নয়।
যেহেতু এই বিবাহ শরীয়তে ধর্তব্য নয়,তাই
আগের সেই শর্তযুক্ত তালাক বহাল থাকবে।
শর্ত পাওয়া গেলে এক তালাকে বায়েন পতিত হবে। 
,
এখানে নতুন বিবাহের যেহেতু ধর্তব্য নেই,তাই
 মোহরানার প্রশ্নই উঠেনা।

(রুপা ৯০০ টাকা ভড়ি হলে সর্বনিম্ন মোহরানা  ২৫০০ টাকার মতো হয়।
সতর্কতামূলক ৩০০০ টাকা সর্বনিম্ন মোহরানা হিসেবে ধরা যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...