আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
76 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (46 points)
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ্ ,
উস্তাদজী,


১/ কুরআন শরীফ পোড়ানো কি গোনাহ ?
কি করতে কুরআন ছিড়ে গেলে ?
আল্লাহর ৯৯ নাম ক্যালেন্ডারে লেখা থাকে, সেগুলো পোড়ালে কি গোনাহ হবে?
অনেক জায়গায় ঘরবাড়ি সব পুড়ে যায় কিন্তু কুরআন পুড়ে যায় না । এটা জন্য অনেকে বলে কুরআন পোড়ানো যায় না , পানিতে ফেলে দিতে হয় ।


২/ কেউ যদি হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয় এবং বেতের সালাত ওযর বশত বা এমনিতেই ১ রাকআত পড়ে তবে কি গোনাহ হবে ? এ সালাত কি আবার পড়ে দিতে হবে ? কিছুদিন যেহেতু এক রাকআত পড়েছে তাই ।


৩/ কেউ যদি অনেক অসুস্থ হয় , বেতের সালাত চেয়ারে বসে পড়ে যেহেতু দাঁড়িয়ে পড়তে পারছে না , সালাত কি হবে?
৪/ কোমড়ে অনেক ব্যথা, বসতে পারে না, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পারছে না, সে ক্ষেত্রে কি চেয়ারে বসে সালাত আদায় করা যাবে?
আর সে যদি চেয়ারে না বসে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে এবং সিজদায় পুরুষের মতো করে সিজদা দেয় এবং পা ভেঙ্গে বসতে পারে না, কোনভাবে কষ্ট করে বসেন এবং দুই পা ছেলেদের মতো রেখেই আবার সিজদা দেন পুরুষের মতো করে এরপর তাশাহহুদ দুরুদ পড়ার সময় অর্থাৎ শেষ বৈঠকে যদি দুই পা সামনে বিছিয়ে দিয়ে বসে পড়েন তবে কি সালাত আদায় হবে?

1 Answer

0 votes
by (63,200 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

হাদীস শরীফে এসেছে- 

وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ: أَنَّ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ قَدِمَ عَلٰى عُثْمَانَ وَكَانَ يُغَازِىْ أَهْلَ الشَّامِ فِىْ فَتْحِ أَرْمِينِيَّةَ وَأَذْرَبِيجَانَ مَعَ أَهْلِ الْعِرَاقِ فَأَفْزَعَ حُذَيْفَةَ اخْتِلَافُهُمْ فِى الْقِرَاءَةِ فَقَالَ حُذَيْفَةُ لِعُثْمَانَ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ أَدْرِكْ هٰذِهِ الْأُمَّةَ قَبْلَ أَنْ يَخْتَلِفُوْا فِى الْكِتَابِ اخْتِلَافَ الْيَهُودِ وَالنَّصَارٰى فَأَرْسَلَ عُثْمَانُ إِلٰى حَفْصَةَ أَنْ أَرْسِلِىْ إِلَيْنَا بِالصُّحُفِ نَنْسَخُهَا فِى الْمَصَاحِفِ ثُمَّ نَرُدُّهَا إِلَيْكِ فَأَرْسَلَتْ بِهَا حَفْصَةُ إِلٰى عُثْمَانَ فَأَمَرَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ وَعَبْدَ اللّٰهِ بْنَ الزُّبَيْرِ وَسَعِيْدَ بْنَ الْعَاصِ وَعَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الْحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ فَنَسَخُوهَا فِى الْمَصَاحِفِ وَقَالَ عُثْمَانُ لِلرَّهْطِ الْقُرَشِيِّيْنَ الثَّلَاثِ إِذَا اخْتَلَفْتُمْ فِىْ شَىْءٍ مِنَ الْقُرْاٰنِ فَاكْتُبُوهُ بِلِسَانِ قُرَيْشٍ فَإِنَّمَا نَزَلَ بِلِسَانِهِمْ فَفَعَلُوا حَتّٰى اِذَا نَسَخُوا الصُّحُفَ فِى الْمَصَاحِفِ رَدَّ عُثْمَانُ الصُّحُفَ إِلٰى حَفْصَةَ وَأَرْسَلَ إِلٰى كُلِّ أُفُقٍ بِمُصْحَفٍ مِمَّا نَسَخُوْا وَأَمَرَ بِمَا سِوَاهُ مِنَ الْقُرْاٰنِ فِىْ كُلِّ صَحِيفَةٍ أَوْ مُصْحَفٍ أَنْ يُحْرَقَ قَالَ ابْنِ شِهَابٍ فَاَخْبَرَنِىْ خَارِجَةُ بْنُ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ سَمِعَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ قَالَ فَقَدْتُ اٰيَةً مِنَ الْأَحْزَابِ حِينَ نَسَخْنَا الْمُصْحَفَ قَدْ كُنْتُ أَسْمَعُ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ يَقْرَأُ بِهَا فَالْتَمَسْنَاهَا فَوَجَدْنَاهَا مَعَ خُزَيْمَةَ بْنِ ثَابِتٍ الْأَنْصَارِىِّ (مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا الله عَلَيْهِ) فَأَلْحَقْنَاهَا فِىْ سُورَتِهَا فِى الْمُصْحَفِ. رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ

 

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, হুযায়ফাহ্ ইবনু ইয়ামান, খলীফা ‘উসমান (রাঃ)-এর কাছে মাদীনায় এলেন। তখন হুযায়ফাহ্ ইরাক্বীদের সাথে থেকে আরমীনিয়্যাহ্ (আরমেনিয়া) ও আযরাবীজান (আযারবাইজান) জয় করার জন্য শামবাসীদের (সিরিয়াবাসীদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিলেন। এখানে তাদের অমিল কুরআন তিলাওয়াত তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলল। তিনি ‘উসমান (রাঃ)-কে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! ইয়াহূদী-খৃষ্টানদের মতো আল্লাহর কিতাবে ভিন্নতা আসার আগে আপনি এ জাতিকে রক্ষা করুন। তাই ‘উসমান (রাঃ) উম্মুল মু’মিনীন হাফসাহ্’র নিকট রক্ষিত মাসহাফ (কুরআন মাজীদ) তার নিকট পাঠিয়ে দেবার জন্য খবর পাঠালেন। তিনি বললেন, আমরা সেটাকে বিভিন্ন মাসহাফে অনুলিপি করে আবার আপনার নিকট তা পাঠিয়ে দিব। হাফসাহ্ (রাঃ) সে সহীফাহ্ ‘উসমানের নিকট পাঠিয়ে দিলেন। ‘উসমান (রাঃ) সাহাবী যায়দ ইবনু সাবিত, ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র, সা‘ঈদ ইবনু ‘আস ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু হারিস ইবনু হিশামকে এ সহীফা কপি করার নির্দেশ দিলেন।

 

হুকুম মতো তারা এ সহীফার অনেক কপি করে নিলেন। সে সময় ‘উসমান কুরায়শী তিন ব্যক্তিকে বলে দিয়েছিলেন, কুরআনের কোন স্থানে যায়দ-এর সাথে আপনাদের মতভেদ হলে তা কুরায়শদের রীতিতে লিখে নিবেন। কারণ কুরআন মূলত তাদের রীতিতেই নাযিল হয়েছে। তারা নির্দেশ মতো কাজ করলেন। সর্বশেষ সমস্ত সহীফাহ্ বিভিন্ন মাসহাফে কপি করে নেবার পর ‘উসমান মূল সহীফাহ্ হাফসাহ্’র নিকট ফেরত পাঠালেন। তাদের কপি করা সহীফাহসমূহের এক এক কপি রাজ্যের এক এক এলাকায় পাঠিয়ে দিলেন। এ কপি ছাড়া অন্য সব আগের সহীফায় লিখিত কুরআনকে জ্বালিয়ে ফেলতে নির্দেশ জারী করেছিলেন।

 

ইবনু শিহাব যুহরী বলেন, যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) এর ছেলে খারিজাহ্ আমাকে জানিয়েছেন, তিনি তাঁর পিতা যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমরা যখন কুরআন নকল করি, সূরা আল আহযাব-এর একটি আয়াত খুঁজে পেলাম না। এ আয়াতটি আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পড়তে শুনেছি। তাই আমরা তা খোঁজ করতে লাগলাম। খুযায়মাহ্ ইবনু সাবিত আল আনসারী-এর নিকট অবশেষে আমরা তা পেলাম। এরপর আমরা তা মাসহাফে সংযোজন করে দিলাম। আর সে আয়াতটি হলো, ‘‘মিনাল মু’মিনীনা রিজা-লুন সদাকূ মা- ‘আ-হাদুল্ল-হা ‘আলায়হি’’ (অর্থাৎ- মু’মিনদের মধ্যে কতক লোক আল্লাহর সঙ্গে কৃত তাদের অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছে)- (সূরা আল আহযাব ৩৩ : ২৩)

সহীহ : বুখারী ৪৯৮৭, তিরমিযী ৩১০৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৩৭৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৫০৬।

 

কোরআনে কারিম বেশি দিন থাকতে থাকতে পাতাগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং পড়ার যোগ্য থাকে না। আবার অনেক সময় কোনো কাগজে কুরআনের আয়াত লেখা হয় এবং সেটাও অনেক পুরাতন হয়ে যায় যদি এমন হয় তাহলে উত্তম হচ্ছে একটা ভালো জায়গা বেছে মাটিতে কোরআন শরিফটি বা ঐ কাগজটি পুঁতে ফেলা।

 

 

যদি এটি করতে সক্ষম না হয় তাহলে পানিতেও ফেলে দেওয়া যেতে পারে । যদি মনে করা হয় যে, মাটিতে রাখলে কেউ হয়তো উঠিয়ে ফেলতে পারে অথবা কোনোভাবে কোরআনের অবমাননা হতে পারে, সেক্ষেত্রে পুড়ে ফেলে মাটিতে পুঁতে ফেলা যেতে পারে, এটিও জায়েজ রয়েছে।

 

কিন্তু কোরআনে কারিমের যাতে কোনোভাবে অবমাননা না হয়, এটা ডাস্টবিনে অথবা রাস্তায় ফেলা যাবে না অথবা এমন জায়গায় নিক্ষেপ করা যাবে না যেখানে কোরআনে কারিমের অবমাননা হতে পারে। কোরআন শরিফ যদি নষ্টও হয়ে যায় বা যেই পর্যায়েই থাক না কেন কোরআন যেখানে-সেখানে ফেলা যাবে না।

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. কোরআনে কারিম বেশি দিন থাকতে থাকতে পাতাগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং পড়ার যোগ্য থাকে না। আবার অনেক সময় কোনো কাগজে কুরআনের আয়াত লেখা হয় এবং সেটাও অনেক পুরাতন হয়ে যায় যদি এমন হয় তাহলে উত্তম হচ্ছে একটা ভালো জায়গা বেছে মাটিতে কোরআন শরিফটি বা ঐ কাগজটি পুঁতে ফেলা। যদি এটি করতে সক্ষম না হয় তাহলে পানিতেও ফেলে দেওয়া যেতে পারে । যদি মনে করা হয় যে, মাটিতে রাখলে কেউ হয়তো উঠিয়ে ফেলতে পারে অথবা কোনোভাবে কোরআনের অবমাননা হতে পারে, সেক্ষেত্রে পুড়ে ফেলে মাটিতে পুঁতে ফেলা যেতে পারে, এটিও জায়েজ রয়েছে।

 

২. হানাফী মাযহাব অনুসারে  বেতেরের নামাজ তিন রাকআত। তাই তা তিন রাকআতই পড়তে হবে। সুতরাং কেউ তা এক রাকআত পড়লে পুনরায় সে বেতরের নামাজ কাযা করতে হবে।

৩. কেউ যদি এতো অসুস্থ হয় যে, সে দাড়িয়ে নামাজ পড়তে সক্ষম না হয় তাহলে সে বসে নামাজ পড়বে।

৪. প্রথমে দাড়িয়ে দাড়িয়ে নামায পড়ার চেষ্টা করবে অথবা মাঠিতে বসে নামায পড়ার চেষ্টা করবে এবং উভয়টা না পারলে চেয়ারে বসে নামায পড়তে পারবে।

৫. চেয়ারে বসে নামাজ পড়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/10313/?show=10313#q10313


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...