আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
244 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (13 points)
আসসালামু আলাইকুম।

১. কেউ যদি বাসায় নিজে নিজে হিফজ করে এবং মনে রাখার সুবিধার জন্য খাতায় আয়াত লিখে লিখে শিখে। পরবর্তীতে সেই খাতা টা সে বাসায় রাখতে চাচ্ছে না। কারণ, অনেক বই খাতা জমে যায়, পুরনো কাগজ জমে যায়। শুধু বুক শেলফ ছাঁটাই করা উদ্দেশ্য আর কি। এমতাবস্থায় কুরআন এর আয়াত লিখা কাগজ বা খাতা সে কি করবে? কিভাবে নষ্ট করলে এর পূর্ণ সম্মান বজায় থাকবে?
২. আরবি ভাষা শিখার জন্য আরবি লিখতে হয় বা হরফ লিখতে হয়। আবার অনেক সময় অনেক লেখকদের ইসলামী বই কিনা হয়। এগুলো ও যদি কোন কারণে রাখতে না চায়, তাহলে কিভাবে নষ্ট করবে?

৩. জায়নামাজ ছাড়া কি খালি মাটি তে নামাজ পড়া যাবে?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

https://ifatwa.info/7083/ নং ফাতওয়াতে আমরা উল্লেখ করেছি যে, পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর বাণী। যা সর্বোচ্চ পবিত্র ও মর্যাদাসম্পন্ন। তাই এ পবিত্রতা ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে কোরআন স্পর্শ করার জন্য ও তা পাঠ করার জন্য দৈহিক পবিত্রতার শর্তারোপ করা হয়েছে।

হাদীস শরীফে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ  لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেন, রাসূল   আমর বিন হাযম এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না”। (মুয়াত্তা মালিক ৬৮০, কানযুল উম্মাল ২৮৩০, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার ২০৯, আল মুজামুল কাবীর ১৩২১৭, আল মুজামুস সাগীর ১১৬২, সুনানে দারেমী ২২৬৬)

عن عبد الله بن عمر أن رسول الله ﷺ قال:لا يمس القرآن إلا طاهر

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। (মাযমাউজ যাওয়ায়েদ ৫১২)

বিনা ওযুতে কোরআন পড়া যায় ; তবে কোরআন স্পর্শ করা যায় না। হাদিস শরিফে এসেছে, আলী রাযি. বলেন,

كان رسول الله ﷺ يقضي حاجته, ثم يخرج فيقرأ القرآن ويأكل معنا اللحم, ولا يحجبه ” وربما قال لا يحجزه ” من القرآن شيء ليس الجنابة

রাসুলুল্লাহ পায়খানা হতে বের হয়ে কোরআন পড়তেন এবং আমাদের সাথে গোশত খেতেন। গোসল ফরয হওয়া ছাড়া কোরআন হতে তাঁকে কোন কিছু বাধা দিতে পারত না। (মুসনাদে আহমাদ ৬৪০)

সুতরাং বোঝা গেল, যে মুসলমান কোরআন স্পর্শ করতে ও তা পাঠ করতে ইচ্ছুক- তাকে অবশ্যই দৈহিকভাবে পবিত্র হতে হবে। অন্যথায় তাকে গুনাহগার হতে হবে।

যারা অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করতে চায়, তাদের আরো একটি প্রমাণ হলোবুখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের কাছে যে পত্র পাঠিয়েছেন তাতে কোরআনের আয়াত লেখা হয়েছে। অথচ সে ছিল কাফির।

আমরা বলতে চাই, হাদিসবিশারদরা এই হাদিসের ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে পত্র প্রেরণের ঘটনাটি অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ হওয়ার আগে হয়েছিল, তাই এ বিধান রহিত হয়ে গিয়েছে। (শরহে বুখারি, ইবনে বাত্তাল : ১/১৫৮)

কোনো কোনো হাদিসবিশারদ বলেছেন, এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, কোনো পত্রাদি বা অন্য কিছুতে কোরআন শরিফের আয়াত লিখলে ওই পত্রাদি অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ করা যাবে, যদিও আয়াত স্পর্শ করা যাবে না। এ জন্যই রাসুল (সা.) আয়াতটি লিখেছিলেন। (আল মিনহাজ : ১২/১০৮)

আরো জানুনঃ  https://www.ifatwa.info/793

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

১.শরীয়তের বিধান হলো যদি কোনো কিতাবে বা খাতায় কুরআনে কারীমের সাথে অন্য লিখা সংযোজিত থাকে,এবং অন্যান্য লিখার তুলনায় কুরআন বেশী থাকে,তাহলে সে কিতাবকে স্পর্শকে করা যাবে না।

তবে যদি কুরআনের তুলনায় অন্য লিখা বেশী থাকে,চায় সেটা তাফসীর হোক বা অন্য কিছু,তখন উক্ত কিতাব বা খাতাকে বিনা অজুতে যদিও স্পর্শ জায়েয,তবে স্পর্শ না করাই উত্তম।এবং এমতাবস্থায় ঐ কিতাব বা খাতার যে সকল স্থানে কুরআনের আয়াত অঙ্কিত রয়েছে,সরাসরি ঐ স্থানে বিনা অজুতে স্পর্শ করা কিন্তু জায়েয হবে না। অর্থাৎ সম্পূর্ণ কিতাবকে স্পর্শ করা জায়েয হলেও সরাসরি কুরআনের আয়াতের উপর হাত রাখা যাবে না। ঐ খাতা বা বইকে মাটিতে বা নিচু জায়গায় রাখা কুরআনের আদবের পরিপন্থি। বরং তা উচু জায়গায় রাখতে হবে। সেগুলিকে সরাসরি কুরআনে শরীফের উপরে রাখা যাবে না বরং কুরআন শরীফের নিচে রাখাই উত্তম।

২.কুরআনের আয়াত লেখা বই খাতা কোন ফেরীওয়ালার নিকট বিক্রি করা উচিত নয়। কারণ, এতে কুরআনের আয়াতের অবমাননার আশঙ্কা থাকে। কোনো কোরআনের কপি যদি পুরনো হয়, ছিড়ে যায় ও তার পৃষ্ঠাগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়, তাহলে এমন জায়গায় রাখা যাবে না, যেখানে ওইসব পাতার অমর্যাদা হয়, ময়লা-আবর্জনায় পতিত হয়, মানুষ বা জীব-জন্তু দ্বারা পিষ্ট হয়।

এভাবে শুধু পবিত্র কোরআনে কারিম নয়, হাদিস গ্রন্থ থেকে শুরু করে, কায়দা, আমপাড়া এমনকি ইসলামি বই-পুস্তক যেখানে কোরআনের আয়াত লিপিবদ্ধ আছে সেসবেরও একই হুকুম। এদিকে লক্ষ্য রেখেই ইসলামি স্কলাররা বলেন, যত্রতত্র বিশেষ করে পোস্টার হ্যাণ্ডবিলে কোরআনের আয়াত বা হাদিসের উদ্ধৃতি না লেখা। কারণ, এসবের সংরক্ষণ হয় না।

তবে পুরনো বা ভুলছাপার কোরআন যদি একেবারেই পাঠ উপযোগী করা সম্ভব না হয়, তাহলে অসম্মান ও বিকৃতি থেকে সুরক্ষার জন্য কোরআনের ওই কপিগুলো নিরাপদ স্থানে দাফন করা জরুরি। নিরাপদ স্থান বলতে ওই স্থানকে বুঝায়, যেখানে মানুষ চলাচল করে না, ভবিষ্যতে অপমানের সম্মুখিন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

পুরনো ও ব্যবহার অনুপযুক্ত কোরআন সুরক্ষার আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে তা পুড়িয়ে দেয়া। হজরত উসমান (রা.) কোরাইশি হরফের কোরআন রেখে অবশিষ্ট কোরআনের কপিগুলো পোড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন মর্মে একটি বর্ণনা ইমাম বোখারি (রহ.) উল্লেখ করেছেন।

তবে পুরনো কোরআনের কপি পোড়ানোর ক্ষেত্রে আলেমরা বলেন, এসব ভালো করে পুড়ে ছাই করা জরুরি, কারণ অনেক সময় পোড়ানোর পরও হরফ অবশিষ্ট থাকে। পুরনো কোরআন দাফন করা অপেক্ষা পোড়ানো উত্তম। কারণ, দাফনের পর কখনো ওপর থেকে মাটি সরে গেলে দাফনকৃত কোরআনের অসম্মান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পোড়ানো ও পোড়ানোর পর ছাইগুলো দাফন করা অধিক শ্রেয়।

৩.জায়নামাজ থাকা জরুরী নয়। যেকোন পবিত্র স্থানে নামাজ আদায় করা যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...