بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
আল্লাহর বান্দাদের উপর আল্লাহর নবী খাতামুন্নাবিয়ীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক হক রয়েছে। সবচেয়ে বড় হক হল তাঁর প্রতি অন্তর থেকে ঈমান আনা এবং পিতামাতা, সন্তান-সন্ততি এমনকি নিজ প্রাণের চেয়েও অধিক তাঁর প্রতি মহববত রাখা। তাঁর যথাযথ সম্মান করা এবং অনুসরণ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল দ্বীনী আকীদাকে অন্তর থেকে বিশ্বাস করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রতি সত্যিকারের মহববত আর যথাযথ তা‘জীম ও সম্মান হচ্ছে ঈমানের জন্য অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু শিক্ষার নিছক অনুসরণ ঈমানদারীর জন্য যথেষ্ট নয়। পশ্চিমা দুনিয়াও তাদের পার্থিব স্বার্থে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক শিক্ষা অনুসরণ করে থাকে। এমন অনুসরণ কখনো যথেষ্ট নয়। বরং তাঁর শর্তহীন আনুগত্য মেনে নেওয়া, তাঁর আদব-ইহতিরাম এবং মহববত ও ভালোবাসা হচ্ছে ফরয এবং ঈমানের অপরিহার্য অংশ। এটা ছাড়া ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়। এ প্রসঙ্গে মনে রাখার মতো একটি সংক্ষিপ্ত কথা এই যে, আল্লাহকে ভালোবাসার মানদন্ড আল্লাহ নিজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বানিয়েছেন। কেউ যদি আল্লাহর প্রিয়পাত্র হতে চায় তবে এর একমাত্র পথ হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহববত রাখা এবং তাঁর আনুগত্য অবলম্বন করা। এ মানদন্ডে উত্তীর্ণ হওয়া ছাড়া আল্লাহকে ভালোবাসার দাবি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
মুমিনের হৃদয়ে নবী-মহববত কী পরিমাণ থাকা উচিত-এ প্রশ্নের উত্তর খোদ কুরআন মজীদে এসেছে-
النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ
অর্থাৎ নবীর সঙ্গে ঈমানদারের প্রাণেরও অধিক সম্পর্ক। তিনি তাদের সত্তা থেকেও তাদের কাছে অগ্রগণ্য। (সূরা আহযাব : ৬)
মুমিনের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মুমিনের যে সম্পর্ক তার প্রকৃতিই ভিন্ন, মাহাত্ম্যই আলাদা। এই সম্পর্কের সঙ্গে পার্থিব কোনো সম্পর্কের কোনো তুলনাই হতে পারে না। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানদারের জন্য তার পিতামাতার চেয়েও অধিক মেহেরবান আর তার নিজের চেয়েও অধিক কল্যাণকামী। উম্মতের ঈমানী ও রূহানী অস্তিত্ব নবীর রূহানিয়াতেরই অবদান। যে মমতা ও প্রতিপালন নবীর পক্ষ থেকে উম্মত লাভ করেছে এর কোনো নমুনা গোটা সৃষ্টি-জগতের মধ্যেও পাওয়া যাবে না। পিতামাতা এর দৃষ্টান্ত হতে পারেন না। পিতার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে দান করেছেন দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবন আর নবীর মাধ্যমে হাসিল হয় চিরস্থায়ী ‘হায়াত’। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এরূপ সহানুভূতি ও কল্যাণকামিতার সঙ্গে প্রতিপালন করে থাকেন যে সহানুভূতি ও কল্যাণকামিতা আমাদের নিজ সত্তার পক্ষেও সম্ভব নয়। স্ত্রী-সন্তান এমনকি পিতামাতাও অজ্ঞতা বা অসচেতনতার কারণে কখনো আমাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে, ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে, কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে সর্বদা ওই পথই দেখিয়ে থাকেন, যে পথে রয়েছে তাদের প্রকৃত সফলতা। মানুষ নিজের পায়ে কুঠারাঘাত করে, নির্বুদ্ধিতার কারণে নিজের ক্ষতি সাধন করে, কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে ওই নির্দেশই দান করেন যাতে বাস্তবিকই তার কল্যাণ রয়েছে। এজন্য উম্মতের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হক্ব প্রতিষ্ঠিত যে, তাঁকে নিজের পিতামাতা, স্ত্রীসন্তান এবং প্রাণের চেয়েও অধিক ভালোবাসবে। নিজের মতামতের উপর তাঁর মতামতকে এবং নিজের সিদ্ধান্তের উপর তাঁর সিদ্ধান্তকে অগ্রগণ্যতা দেবে। আর তাঁর আদেশকে শিরোধার্য করবে।
উল্লেখিত আয়াতে কারীমার মর্মবাণী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে এভাবে বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানের চেয়ে, সকল মানুষের চেয়ে, এমনকি তাঁর প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয় না হই। -সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬৬৩২; সহীহ মুসলিম ১/৪৯
প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনি ভাই / বোন!
প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যক নবীজীর নামের প্রতিও যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করা। প্রশ্নোক্ত ছুরিতে নবীজীর নামের সম্মানার্থে আপনার জন্য উচিত চেয়ার থেকে উক্ত মুহাম্মাদ লেখাটি কোন ভাবে মুছে ফেলা বা তুলে ফেলা। এরপর আপনি তা ব্যবহার করলে কোন সমস্যা হবে বলে আশা করা যায়।