আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
98 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (46 points)
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ্,
উস্তাদজী ,
১/ বাবা বেঁচে থাকতে কি মেয়েদের জমি লিখে দেওয়া যাবে ?
জমি দেওয়ার সহীহ বিধান কি ?
২/ কুরআনে ছেলে এবং মেয়েদের বাবার সম্পত্তি থেকে , ছেলেদের ২ ভাগ এবং মেয়েদের ১ ভাগ ,
এ ভাগটা কেমন ,?
ধরুন , আপনার ৪ বিঘা বেশি করে
৪ টা বাড়ি তৈরির জায়গা আছে এবং অন্যান্য খাস জমি যেখানে ফসল উৎপাদন হয় ।

তো , এখানে বিধান কি ইসলামে?
এখানে আপনি যদি আপনার ৪ ছেলেকে বাড়ি তৈরি হবে উপযুক্ত জায়গা দেন এবং আপনার মেয়েদের খাস জমি লিখে দেন , এ ক্ষেত্রে সহীহ মাসআলা কি ?
৩/ গীবত কোন কোন ক্ষেত্রে বৈধ?


৪/ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , ইহুদি মুশরিকদের দাওয়াত গ্রহণ করতেন এই হাদীস থেকে কি অন্য আলেমগণ , হালাল রিযিক না সেখানে ও দাওয়াত গ্রহণ করে , এ ক্ষেত্রে সঠিক কি হবে , সমস্যা হবে কোনো ?


৫/ বাবা মায়ের মৃত্যু তে তার ছেলে এবং মেয়েদের জন্য সহীহ কর্তব্য কি কি ?
৬/ মেয়েরা নাকি কারো কবরে সালাম দিতে পারবে না ?
এটা কি সহীহ?
৭/ ব্যবসায়ীক হারে সুদ দেওয়া যাবে, এটা কি সহীহ?
আল্লাহ্ তো সুদ দেওয়া এবং খাওয়া , সাক্ষী এর সাথে সম্পৃক্ত সবাই গোনাহগার হবে, এটা জানি ।


ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে প্রতি মাসে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া গোনাহ হবে ।
তবে , ব্যবসায়িক হারে সুদ দেওয়া কিভাবে বৈধ হয়? সহীহ হাদীস দিলে ভালো হয় ।
৮/ বাবা যদি সন্তানদের হকের ব্যাপারে ইনসাফ ঠিক না রাখেন তবে তো তার গোনাহ হবে ,
সন্তানদের জন্য বাবা কষ্ট পাক সেটা সন্তানেরা চায় না ।
এ ক্ষেত্রে কিভাবে বুঝানো যাবে তাকে?

1 Answer

0 votes
by (675,600 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
জীবিত অবস্থায় সম্পত্তি দিলে সেটাকে হেবা বলে,মৃতবরনের পর সম্পত্তির ভাগকে মিরাছ 
বলে। 

ব্যক্তি জীবিত এবং সুস্থ্য থাকা অবস্থায় তার মালিকানাধীন সম্পদ যাকে ইচ্ছে দান করতে পারে। যেখানে ইচ্ছে খরচ করতে পারে। এতে তার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তার অর্জিত সম্পদের একক মালিকানা তার হাতেই থাকে। তাতে যাচ্ছে তাই হস্তক্ষেপের অধিকার তার রয়েছে। এতে কেউ হক দাবী করার অধিকার রাখে না।
তার মালিক তার সন্তান বা অন্য কেউ নয়।
 হ্যা, মৃত্যুর পরের কথা ভিন্ন। তখন শরয়ী নীতিমালা অনুপাতে সম্পদ বন্টন করতে হয়।
সে সময় ওয়ারিশগন নীতি অনুসারে সম্পদের দাবী করতে পারবেন।
তবে জীবদ্দশায় কেহ সম্পদ দিয়ে গেলে সেটি হিবা তথা গিফট।

যদি কোনো ব্যাক্তি জীবিত অবস্থায় তার সম্পদ সন্তানদের দিয়ে যেতে চায়,সেক্ষেত্রে নিয়ম হলোঃ
প্রথমে নিজের বাকি জিবনের জন্য যাহা কিছু রাখতে চায়,ততটুকু সম্পদ রেখে দিবে,যাতে করে পরবর্তীতে মুখাপেক্ষী না হতে হয়।
অতঃপর স্ত্রী জীবিত থাকলে তাকে  সম্পদের আট ভাগের এক ভাগ দিবে।
অবশিষ্ট সম্পদ তার সন্তানদের মাঝে বরাবর করে বন্টন করে দিবে।
এই বরাবর করে বন্টন করা উত্তম।
যদি মিরাছের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েকে ছেলের তুলনায় অর্ধেক দেয়,সেটিও জায়েজ আছে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

  النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ أبَاهُ أتَى بِهِ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: إِنِّي نَحَلْتُ ابْنِي هَذَا غُلاَماً كَانَ لِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَهُ مِثْلَ هَذَا ؟» فَقَالَ: لاَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: فَأَرْجِعهُ وَفي رِوَايةٍ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَفَعَلْتَ هذَا بِوَلَدِكَ كُلِّهِمْ ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: اِتَّقُوا الله وَاعْدِلُوا فِي أَوْلاَدِكُمْ فَرَجَعَ أَبِي، فَرَدَّ تِلْكَ الصَّدَقَةَ . وفي روايةٍ : فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «يَا بَشيرُ أَلَكَ وَلَدٌ سِوَى هَذَا ؟» فَقَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «أكُلَّهُمْ وَهَبْتَ لَهُ مِثْلَ هذَا ؟» قَالَ: لاَ، قَالَ: فَلاَ تُشْهِدْنِي إِذاً فَإِنِّي لاَ أَشْهَدُ عَلَى جَوْرٍ وفي روايةٍ : «لاَ تُشْهِدْنِي عَلَى جَوْرٍ» . وفي رواية : «أَشْهِدْ عَلَى هذَا غَيْرِي !» ثُمَّ قَالَ: «أَيَسُرُّكَ أَنْ يَكُونُوا إِلَيْكَ فِي البِرِّ سَواءً؟» قَالَ: بَلَى، قَالَ: «فَلا إِذاً» . متفق عليه 

 নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাঁর পিতা তাঁকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে হাজির হয়ে বললেন, ‘আমি আমার এই ছেলেকে একটি গোলাম দান করেছি। [কিন্তু এর মা আপনাকে সাক্ষী রাখতে বলে।]’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তোমার সব ছেলেকেই কি তুমি এরূপ দান করেছ?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাহলে তুমি তা ফেরৎ নাও।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমার সব ছেলের সঙ্গেই এরূপ ব্যবহার দেখিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা কর। সুতরাং আমার পিতা ফিরে এলেন এবং ঐ সাদকাহ [দান] ফিরিয়ে নিলেন।’’

আর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে বাশীর! তোমার কি এ ছাড়া অন্য সন্তান আছে?’’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘‘তাদের সকলকে কি এর মত দান দিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী না।’ [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘‘তাহলে এ ব্যাপারে আমাকে সাক্ষী মেনো না। কারণ আমি অন্যায় কাজে সাক্ষ্য দেব না।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমাকে অন্যায় কাজে সাক্ষী মেনো না।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘এ ব্যাপারে তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে সাক্ষী মানো।’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি এ কথায় খুশী হবে যে, তারা তোমার সেবায় সমান হোক?’’ বাশীর বললেন, ‘জী অবশ্যই।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে এরূপ করো না।’’ 
(সহীহুল বুখারী ২৫৮৬, ২৫৮৭, ২৬৫০, মুসলিম ১৬২৩, তিরমিযী ১৩৬৭, নাসায়ী ৩৬৭২-৩৬৮৫, আবূ দাউদ ৩৫৪২, ইবনু মাজাহ ২৩৭৫, ২৩৭৬, আহমাদ ১৭৮৯০, ১৭৯০২, ১৭৯১১, ১৭৯৪৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৭৩)

অন্য বর্ণনায় এসেছে হযরত নোমান ইবনে বশীর (রাযি.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা (সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে) তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো। তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো।’
(সহীহ বুখারী : ১/৩৫২; সুনানে আবুদাউদ : ৩৫৪৪)

আরো জানুনঃ 
,
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে মেয়েদের জমি লিখে দেওয়ার সময় উপরে উল্লেখিত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।
,
(০২)
জীবিত অবস্থায় সম্পদ দিতে চাইলে ছেলেকে যেই পরিমান দিবে,মেয়েকেও সেই পরিমানই দিতে হবে।
এটি মুস্তাহাব তরীকা।
,
জীবিত অবস্থায় ভাগ না করে দিলে মারা যাওয়ার পর সম্পদের মিরাছ হিসেবে ভাগ করা হলে মেয়ের তুলনায় ছেলে ডাবল পাবে।
এটি নিরপেক্ষ মাথায় ছেলে সন্তান আর মেয়ে সন্তানের জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তার দিকে লক্ষ্য করলেই তাকে ডাবল দেওয়ার বিষয়টি বুঝে আসবে,ইনশাআল্লাহ।     

ছেলেকে ভালো জমি,আর মেয়েকে খাস জমি দেওয়ার বিষয়টি মেয়ের অসন্তুষ্টিতে ইসলাম সমর্থন করেনা।
 
(০৩)
এ সংক্রান্ত বিধান জানুনঃ
https://ifatwa.info/1715/

(০৪)
হালাল রিযিক না হলে সেই দাওয়াতে অংশগ্রহণ জায়েজ হবেনা। 

(০৫)
সদকায়ে জারিয়াহ করতে পারে।
এছাড়া অন্য উপায়ে  ঈসালে  ছওয়াব করতে পারে। 
ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যেসব কাজ করা যায়ঃ

মৃতের নামে সদকা করা।
কুরবানী করা।
মৃতের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা।
মৃতের জন্য দুআ করা।
ইস্তিগফার করা।
হজ্ব করা।

ইত্যাদি পূণ্যের কাজ করে মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব করা যায়। যা কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত।

আরো জানুনঃ 

শরীয়তের বিধান হলো কুরআন কারীম তেলাওয়াত করে বা ছদকাহ করে ঈসালে ছওয়াব করা যাবে।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১/৩৭৫)

বিস্তারিত জানুনঃ 

(০৬)
তারা পর্দার সহিত কবরের পাশে গিয়ে আওয়াজের সাথে কান্নাকাটি ছাড়া সালাম,দোয়া,যিয়ারত করতে পারবে। 

বিস্তারিত জানুনঃ
  
(০৭)
এটিও সূদ। 
বিধায় তাহা হারামের অন্তর্ভুক্ত।  

(০৮)
এই বিষয়ে আল্লাহর আদালতে শাস্তি ভোগের কথা বাবাকে ভালোভাবে বুঝাতে হবে। 
প্রয়োজনে মুরব্বি/আলেমদের মাধ্যমে বুঝাতে পারেন।
শত বুঝানোর পরেও কাজ না হলে সন্তানদের দায়িত্ব আর থাকবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (46 points)
জাযাকাল্লাহু খইরন ফিদ্দুনয়া ওয়াল আখিরাহ্
by (3 points)
একাধিক উত্তর নাম্বারিং এর শুরুতে সংক্ষেপে প্রশ্ন উল্লেখ/ প্রশ্নের কিছু কথাবার্তা দিয়ে উত্তর করলে ভালো হয়। অন্যথায় বারবার উপরে এসে প্রশ্ন দেখতে হয়।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...