আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
196 views
in সালাত(Prayer) by (97 points)
আসসালামু আলাইকুম
(১) বাইরে থাকার সময় আমার লিঙ্গ হতে কিছু বের হওয়ার অনুভূতি হয়, আমার ধারণা কিছু বের হয়ে থাকলে সেটা মযী ছিল। কিন্তু সাথে সাথে কিছু বের হয়েছে কিনা দেখা সম্ভব ছিল না। তাই আমি কিছুক্ষণ পর লিঙ্গ ধুয়ে অন্তর্বাসে কিছু পানি ঢেলে দেই। কিন্তু এর ৪/৫ মিনিট পর আমি ওযু করার সময় আমার লিঙ্গে আবার কিছু অনুভব হয়। কিন্তু নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না কিছু বের হয়েছে কিনা, কারণ আমার অন্তর্বাস এমনিতেই ভেজা, দেখলে বোঝা যাবে না কিছু বের হয়েছে কিনা। যেহেতু আমি নিশ্চিত ছিলাম না কিছু বের হয়েছে কিনা, তাই সেই অবস্থাতেই যোহর নামাজ পড়ে নিয়েছি। তবে লিঙ্গে কিছু একটা বের হওয়ার অনুভব হয়েছিল তা নিশ্চিত, তবে এমন অনুভূতি পেলেও অনেক সময় আমার কিছু বের হয়না। তাই অনিশ্চিত ছিলাম, আমার নামাজ কি আদায় হয়েছে?

(২) বেশ কিছুদিন অনেক ওয়াসওয়াসায় ভুগছি। ওজু করতে গেলে মনে হয় এই বুঝি নাকে পানি ঢুকেনি, তাই আবার দেই, পরে আবার  মনে হয় ৩ বারের বেশি নাকে পানি দিলে বিদআত হবে, তাই নতুন করে ওজু শুরু করি। অনেকসময় নাকি পানি দিয়ে অনেক জোড়ে টান দেওয়ায় পানি মাথার পেছনে/গলায় চলে যায়। পা ধুতে গেলেও মনে হয় ঠিকমতো পা ধুইনি, প্রায় আধা বালতি পানি চলে যায় পা ধুতে ধুতে। কাপড় ধোয়ার পর মনে হয় কাপড় নাপাক ছিল, তাই যে পানিতে ধুয়েছি তাও নাপাক হবে, সেখানে হাত  দেওয়ায় আমার হাতও নাপাক, হাত দিয়ে যা ধরেছি সব নাপাক। আবার মনে হয় ডিটারজেন্ট পাউডার নাপাকি ধ্বংস করতে পারে, তাই ওই পানি নাপাক হিসেবে গন্য না করে চলে আসি আমি।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, প্রায় প্রতি নামাজেই সন্দেহ হয় যে বায়ু বেরিয়েছে। গন্ধ বেরিয়েছে কিনা যাচাই করলে কেমন একটা গন্ধ পাই। সাধারণত আমি নিশ্চিত বায়ু ত্যাগ করলে এমন গন্ধ পাওয়া যায় বলে মনে হয়না, কিন্তু নামাজে এই গন্ধ পাই। আরও দ্বিধায় পড়ে যাই এটা বায়ু বের হওয়ার গন্ধ নাকি অন্য গন্ধ। ওয়াসওয়াসা এড়িয়ে যেতেও ভয় লাগে, মনে হয় যদি সত্যিই ওজু না হয়ে থাকে, অথবা যদি সত্যিই নাপাকি ছড়িয়ে থাকে, অথবা যদি সত্যিই নামাজ বাতিল হয়ে যায়..... এরকম ওয়াসওয়াসায় কি করণীয়?
(৩) নামাজে এমন সন্দেহ জাগলে, আমার মনের কথা অনুসরণ করা যাবে? যেমন আমার যদি ধারণা হয়ে থাকে যে এটা আমার বায়ু বের হওয়ার গন্ধ নয় তাহলে নামাজ চালিয়ে যাব, যদি ধারণা হয় বায়ু বের হয়েছে তাহলে নামাজ ভেঙে ওজু করতে যাব... এমনটা করা যাবে?

(৪) গেল কিছুদিন এসব কারণে কেন যেন মনে হচ্ছে নামাজ ঠিকঠাক হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে আল্লাহ আমার উপর নারাজ। এক্ষেত্রে আমার কি করণীয়?
(৫) আমি মূত্রত্যাগের পর প্যান্ট পড়া অবস্থায় আমার আবার এক ফোটা তরল বের হয় লিঙ্গ হতে। তো আমি ভাবলাম যে পড়ে গোসল করে প্যান্ট ধুয়ে নিব। কিম্তু এরপর ২ ঘন্টার মতো বিছানায় শুয়ে ছিলাম। যেহেতু ওয়াশরুম থেকে এসেছি প্যান্ট হালকা ভেজা ছিলই। কিন্তু একদম নাপাকির জায়গা বিছানায় লেগেছে কিনা আমি নিশ্চিত নয়। এক্ষেত্রে আমার বিছানা চাদর কি নাপাক হয়েছে? বিছানার ওপর আমার আরও কিছু কাপড় ছিল। বিছানা চাদর এবং কাপড়গুলো কি আমার ধুতে হবে?

জাযাকাল্লাহু খাইরান। দুঃখিত উস্তাদ এতো বড় প্রশ্ন করায়, কিন্তু ওয়াওয়াসার কারণে বেশ দ্বিধায় আছি তাই এতো বড় প্রশ্ন করলাম।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي خَلَفٍ، قَالَا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، وَعَبَّادِ بْنِ تَمِيمٍ، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ: شُكِيَ إِلَى النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم الرَّجُلُ يَجِدُ الشَّىْءَ فِي الصَّلَاةِ حَتَّى يُخَيَّلَ إِلَيْهِ فَقَالَ " لَا يَنْفَتِلُ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيحًا " . - صحيح : 

‘আব্বাদ ইবনু তামীম হতে তাঁর চাচার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করল যে, কখনো সলাতের মধ্যে কিছু একটা সন্দেহ হয় যে, তার অযু হয়ত নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বললেন, (বায়ু নির্গত হওয়ার) শব্দ না শুনা কিংবা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত সলাত ছাড়বে না।

বুখারী (অধ্যায়ঃ উযু, অনুঃ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহ বশতঃ উযু করতে হবে না, হাঃ ১৩৭), মুসলিম ৩৬২ (অধ্যায়ঃ হায়িয, অনুঃ পবিত্রতার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর উযু নষ্ট হওয়ার সন্দেহ হলেও ঐ অবস্থায় সালাত আদায় করা জায়িয,মিশকাতুল মাসাবিহ ৩০৬)

এই হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসিনে কেরামগন বলেছেনঃ

ব্যাখ্যা: قَوْلُهٗ (حَتّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَو يَجِدَ رِيْحًا) (যতক্ষণ না সে বায়ু বের হওয়ার শব্দ বা নির্গত বায়ুর গন্ধ পাবে ততক্ষণ নামাজ ছেড়ে আসবে না)। এর অর্থ হলো যতক্ষণ না সে শব্দ শ্রবণ বা গন্ধ পাওয়া বা অন্য যে কোন পন্থায় তার বায়ু নির্গত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয় ততক্ষণ নামাজ পরিত্যাগ করবে না বা ছেড়ে আসবে না। তবে এতে সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য শুধুমাত্র শব্দ শ্রবণ বা গন্ধ পাওয়াটিই শর্ত নয়।

এ হাদীস আরও প্রমাণ করে যে, শারী‘আতের কোন বিষয়ে সন্দেহের মাধ্যমে সুনিশ্চিত বিষয় বাতিল হয়ে যাবে না। অতএব যার সন্দেহ হবে বায়ু নির্গত হয়েছে কিনা তবে সে তার অজু ভঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত থাকবে। নিশ্চিত না হাওয়া পর্যন্ত এ সন্দেহ তার কোন ক্ষতি করবে না। আর এটি অন্যান্য বিষয়েও সমভাবে প্রযোজ্য।
,
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ১ম বার আপনি যখন লিঙ্গ ধুয়ে নিয়েছিলেন,সেই সময়ে কি লিঙ্গে/অন্তর্বাসে মযি/পেশাবের কোনো চিন্হ ছিলো কিনা?
যদি কোনো চিন্হ পাওয়া যায়,তাহলে প্রশ্নে উল্লেখিত নামাজ আপনার হয়নি।
কেননা আপনি সেই সময়ে লিঙ্গ ধুয়ে অন্তর্বাসে শুধু পানি ছিটিয়ে দিয়েছেন,যার দ্বারা সেটি নাপাকই থেকে গিয়েছিলো।
তাই সেই কাপড়ে নামাজ হবেনা।
,
আর যদি লিঙ্গে/অন্তর্বাসে মযি/পেশাবের কোনো চিন্হ না পেয়ে থাকেন,তাহলে পরের বার কিছু বের হওয়া সম্পর্কে আপনার সন্দেহ হলে কোনোক্রমে নিশ্চিত না হতে পারলে,যেহেতু আপনি সেই সম্পর্কে নিশ্চিত নন, তাই উক্ত নামাজ হয়ে যাবে,বলে ধরা হবে।
,
(০২)
এ সমস্ত ওয়াসওয়াসা কে আপনি এড়িয়ে চলবেন।
,
(০৩)
যদি কোনো আওয়াজ বা দুর্গন্ধ না পান,সেক্ষেত্রে মনের প্রবল ধারনার ভিত্তিতে আমল করতে পারবেন।
,
(০৪)
এগুলো এড়িয়ে চলা,আর বেশি বেশি এহেন অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া চাওয়া।  

(০৫)
যেহেতু আপনি সেই সময়ে প্যান্ট পরিহিত অবস্থাতে ছিলেন,সুতরাং সেই এক ফোটা তরল নাপাকি আপনার বিছানা, চাদর,কাপড়ে যে তাহা লাগেনি,এটি নিশ্চিত। 
সুতরাং সেগুলো ধোয়া লাগবেনা।
 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 177 views
...